ঐতিহাসিক ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের দিনটিকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে পদযাত্রা করে গণভবন গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ গত ৭ এপ্রিল নিজের ভেরিফাইড ফেইসবুক পেজে তিন দফা দাবিসহ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন।
গতকাল পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী জাতীয় সংসদ ভবনের মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে পদযাত্রা শুরু করেন তিনি। এ সময় ব্যানার-ফেস্টুনসহ তার সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন বয়সী কয়েকশ’ মানুষ। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গণভবনের ফটকে পৌঁছান তিনি। সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি
পেশ করেন সোহেল তাজ।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন তার বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-(২) গাজী হাফিজুর রহমান লিকু।
স্মারকলিপি পেশ করার পর সোহেল তাজ সাংবাদিকদের বলেন, আজকের দিনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার লক্ষ্যে প্রথম সরকার গঠিত হয়। এই মুজিবনগর দিবসে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনটি দাবি নিয়ে এসেছি।
এক- আজকের এই দিনটিকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণা করতে হবে।
দ্বিতীয়- আপনারা জানেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করার পর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া জাতীয় ৪ নেতাকে কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই ৪ নেতা জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন তারা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। তাই ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবসকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করতে হবে।
তৃতীয়- মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সামরিক, বেসামরিক, রাজনৈতিক ও কূটনীতিকসহ যারা সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন তাদের জীবনী, ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ আমি মনে করি আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে যদি কোন ফাঁক থাকে তাহলে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি সেগুলো পূরণ করার সুযোগ পাবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটি সুন্দর সোনার বাংলা গড়তে চাইলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গৌরবের ইতিহাস। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই ইতিহাস থেকেই আমরা প্রাণশক্তি খুঁজে পাব। তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গভাবে তুলে ধরতে হবে।
গণভবনে স্মারকলিপি গ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি সংসদ ভবন থেকে হেঁটে গণভবনে স্মারকলিপি দিতে এসেছি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিরা স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন। আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একমাত্র ব্যক্তি যিনি এই তিনটি দাবি বাস্তবায়ন করতে পারবেন। তার প্রতি আমার আস্থা আছে। আশা করি অতি সত্তর তিনি এই তিনটি দাবি পূরণ করবেন।
ফেইসবুকে ঘোষণা দেয়া দাবিগুলো ছিলÑ
যেহেতু ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়, সেহেতু বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র (প্রজাতন্ত্র) হিসেবে জন্ম লাভ করে এই দিনে। তাই এই দিনটিকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণা করতে হবে।
৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবসকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে হবে।
জাতীয় চার নেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সব বেসামরিক ও সামরিক সংগঠক, পরিচালক, অমর শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, অবদান ও জীবনীসহ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে সর্বস্তরের পাঠ্যপুস্তকে এবং সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
তবে জেলাহত্যা দিবসকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালনের কথা না বলে গতকাল তিনি শুধু রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি জানান।
ওই ফেইসবুক পোস্টে সোহেল তাজ বলেন, এটা একান্তই আমার নিজের উদ্যোগ। আপনারা কেউ যোগ দিতে চাইলে আসতে পারেন। আর না এলে আমি একাই যাব- জয় বাংলা।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি জরিপ রিপোর্টের তথ্যের উদ্বৃতি দিয়ে সোহেল তাজ ৮ এপ্রিল গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, নতুনপ্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানে না। জাতীয় নেতা কারা, তা শিক্ষার্থীরা বলতে পারে না। শহিদ মিনার ও স্মৃতিসৌধের পার্থক্য তারা বোঝে না। স্বাধীনতাবিরোধী কারা, তাও বলতে পারে না।
তিন দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিতে গতকাল সোহেল তাজ মিছিল নিয়ে গণভবনে যান -সংবাদ
আরও খবরসোমবার, ১১ এপ্রিল ২০২২ , ২৮ চৈত্র ১৪২৮ ০৯ রমাদ্বান ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
তিন দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিতে গতকাল সোহেল তাজ মিছিল নিয়ে গণভবনে যান -সংবাদ
ঐতিহাসিক ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের দিনটিকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে পদযাত্রা করে গণভবন গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ গত ৭ এপ্রিল নিজের ভেরিফাইড ফেইসবুক পেজে তিন দফা দাবিসহ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন।
গতকাল পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী জাতীয় সংসদ ভবনের মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে পদযাত্রা শুরু করেন তিনি। এ সময় ব্যানার-ফেস্টুনসহ তার সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন বয়সী কয়েকশ’ মানুষ। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গণভবনের ফটকে পৌঁছান তিনি। সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি
পেশ করেন সোহেল তাজ।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন তার বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-(২) গাজী হাফিজুর রহমান লিকু।
স্মারকলিপি পেশ করার পর সোহেল তাজ সাংবাদিকদের বলেন, আজকের দিনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার লক্ষ্যে প্রথম সরকার গঠিত হয়। এই মুজিবনগর দিবসে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনটি দাবি নিয়ে এসেছি।
এক- আজকের এই দিনটিকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণা করতে হবে।
দ্বিতীয়- আপনারা জানেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করার পর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া জাতীয় ৪ নেতাকে কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই ৪ নেতা জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন তারা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। তাই ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবসকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করতে হবে।
তৃতীয়- মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সামরিক, বেসামরিক, রাজনৈতিক ও কূটনীতিকসহ যারা সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন তাদের জীবনী, ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ আমি মনে করি আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে যদি কোন ফাঁক থাকে তাহলে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি সেগুলো পূরণ করার সুযোগ পাবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটি সুন্দর সোনার বাংলা গড়তে চাইলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গৌরবের ইতিহাস। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই ইতিহাস থেকেই আমরা প্রাণশক্তি খুঁজে পাব। তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গভাবে তুলে ধরতে হবে।
গণভবনে স্মারকলিপি গ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি সংসদ ভবন থেকে হেঁটে গণভবনে স্মারকলিপি দিতে এসেছি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিরা স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন। আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একমাত্র ব্যক্তি যিনি এই তিনটি দাবি বাস্তবায়ন করতে পারবেন। তার প্রতি আমার আস্থা আছে। আশা করি অতি সত্তর তিনি এই তিনটি দাবি পূরণ করবেন।
ফেইসবুকে ঘোষণা দেয়া দাবিগুলো ছিলÑ
যেহেতু ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়, সেহেতু বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র (প্রজাতন্ত্র) হিসেবে জন্ম লাভ করে এই দিনে। তাই এই দিনটিকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণা করতে হবে।
৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবসকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে হবে।
জাতীয় চার নেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সব বেসামরিক ও সামরিক সংগঠক, পরিচালক, অমর শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, অবদান ও জীবনীসহ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে সর্বস্তরের পাঠ্যপুস্তকে এবং সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
তবে জেলাহত্যা দিবসকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালনের কথা না বলে গতকাল তিনি শুধু রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি জানান।
ওই ফেইসবুক পোস্টে সোহেল তাজ বলেন, এটা একান্তই আমার নিজের উদ্যোগ। আপনারা কেউ যোগ দিতে চাইলে আসতে পারেন। আর না এলে আমি একাই যাব- জয় বাংলা।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি জরিপ রিপোর্টের তথ্যের উদ্বৃতি দিয়ে সোহেল তাজ ৮ এপ্রিল গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, নতুনপ্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানে না। জাতীয় নেতা কারা, তা শিক্ষার্থীরা বলতে পারে না। শহিদ মিনার ও স্মৃতিসৌধের পার্থক্য তারা বোঝে না। স্বাধীনতাবিরোধী কারা, তাও বলতে পারে না।