পাহাড়ে তিন দিনব্যাপী বৈসুক-সাংগ্রাই-বিজু বিষু-বিহু শুরু আজ

পাহাড়ের তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু উৎসব আজ মঙ্গলবার শুরু হয়েছে। উৎসবের প্রথমদিন আজ ফুল বিজু। এ উৎসবকে ঘিরে সমগ্র পাহাড়ী জনপদ এখন উৎসবে মুখরিত। বাংলা বর্ষের শেষ দুদিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন এই উৎসব পালন করে থাকে পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসী পাহাড়ীরা। তবে গত দুই বছরে মহামারী করোনার কারণে উৎসবের আমেজের ভাটা পড়েছিল। কিন্তু এবার করোনা প্রার্দুভাব কমে আসায় পাহাড়ের প্রতিটি ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। পাহাড়ে বইছে এখন উৎসবের আমেজ। পার্বত্য চট্টগ্রামের (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) ১১ ভাষাভাষি ১৫টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাহাড়ি জাতিসত্তাদের ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব হচ্ছে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু। উৎসবটির উচ্চারণগতভাবে বিভিন্ন নামের পালন করলেও এর নিবেদন কিন্তু একই। তাই এ উৎসবটি আদিবাসী পাহাড়িদের শুধু আনন্দের নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সম্প্রদায়ের সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক, ঐক্য ও মৈত্রী বন্ধনের প্রতীকও বটে। মূলত পূরনো বছরের সব দুঃখ কষ্ট ও গ্লানিকে মূছে ফেলে দিয়ে নতুন বছরের নব উদ্যোগের শুভ কামনা করা হল এ উৎসবের মূল উদ্দেশ্য। আজ বৃহম্পতিবার উৎসবের প্রথম দিন ফুল বিজু। এ দিন ভোরে পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এদিনে পাহাড়ী শিশু-কিশোর-কিশোরীরা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বনফুল সংগ্রহ করে বাড়ি অঙ্গিনা সাজায় ও তরুণ-তরুণীরা পাড়ায় পাহাড় বৃদ্ধদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্নœান করায়। পাহাড়ি মেয়েরা বাড়ি-ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকে। সন্ধ্যায় বৌদ্ধ মন্দির, নদীর ঘাটে, বাড়িতে প্রদীপ প্রজ্জালন করা হয়। রাঙামাটির রাজ বন বিহারের পূর্ব ঘাট এলাকায় ফুল ভাসানো হবে। এছাড়া এ দিন নানান খেলাধুলা ও সংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কাল বুধবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন মূল বিজু। এ দিনে বাড়িতে বাড়িতে শুধু চলে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব ও আন›ন্দ-পূর্তি। বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু খাবার দাবার আগত অতিথিদের পরিবেশন করা হয়।

উৎসবের তৃতীয় দিনে অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল ‘গজ্যাপজ্যা বিজু’। এদিনে পাহাড়িরা সারাদিন ঘরে বসে বিশ্রাম নিয়ে থাকে। এ দিন বৌদ্ধ মন্দিরে প্রার্থনা ও বয়োজ্যেষ্ঠদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসে যতœসহকারে ভাত খাওয়ানোসহ আর্শীবাদ নেয়া হয়। এদিনটিকে পাহাড়িরা মনে করে থাকে সারাদিন আনন্দ আর হাসি-খূশিতে কাটাতে পারলে সারা বছর সূখে শান্তিতে ও ধন-ধৌলতে কেটে যাবে। এ দিন তারা যে কোন প্রাণী হত্যা থেকে বিরত থাকে। অন্যদিকে মারমা সম্প্রদায় এদিন ঐতিহ্যবাহী পানি খেলার আয়োজন করে থাকে। তারা পানি খেলার মাধ্যমে পূরনো বছরের সমস্ত গ্ল­ানি ও দূঃখ কষ্টকে দূর করে নতুন বছরকে বরণ করে থাকে। আগামী ১৬ এপ্রিল কাউখালী বেতবুনিয়া মারমা সাংস্কৃতিক সংসদের উদ্যোগের পানি খেলা অনুষ্ঠিত হবে।

মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২ , ২৯ চৈত্র ১৪২৮ ১০ রমাদ্বান ১৪৪৩

পাহাড়ে তিন দিনব্যাপী বৈসুক-সাংগ্রাই-বিজু বিষু-বিহু শুরু আজ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পার্বত্যাঞ্চল

image

পাহাড়ের তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু উৎসব আজ মঙ্গলবার শুরু হয়েছে। উৎসবের প্রথমদিন আজ ফুল বিজু। এ উৎসবকে ঘিরে সমগ্র পাহাড়ী জনপদ এখন উৎসবে মুখরিত। বাংলা বর্ষের শেষ দুদিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন এই উৎসব পালন করে থাকে পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসী পাহাড়ীরা। তবে গত দুই বছরে মহামারী করোনার কারণে উৎসবের আমেজের ভাটা পড়েছিল। কিন্তু এবার করোনা প্রার্দুভাব কমে আসায় পাহাড়ের প্রতিটি ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। পাহাড়ে বইছে এখন উৎসবের আমেজ। পার্বত্য চট্টগ্রামের (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) ১১ ভাষাভাষি ১৫টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাহাড়ি জাতিসত্তাদের ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব হচ্ছে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু। উৎসবটির উচ্চারণগতভাবে বিভিন্ন নামের পালন করলেও এর নিবেদন কিন্তু একই। তাই এ উৎসবটি আদিবাসী পাহাড়িদের শুধু আনন্দের নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সম্প্রদায়ের সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক, ঐক্য ও মৈত্রী বন্ধনের প্রতীকও বটে। মূলত পূরনো বছরের সব দুঃখ কষ্ট ও গ্লানিকে মূছে ফেলে দিয়ে নতুন বছরের নব উদ্যোগের শুভ কামনা করা হল এ উৎসবের মূল উদ্দেশ্য। আজ বৃহম্পতিবার উৎসবের প্রথম দিন ফুল বিজু। এ দিন ভোরে পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এদিনে পাহাড়ী শিশু-কিশোর-কিশোরীরা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বনফুল সংগ্রহ করে বাড়ি অঙ্গিনা সাজায় ও তরুণ-তরুণীরা পাড়ায় পাহাড় বৃদ্ধদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্নœান করায়। পাহাড়ি মেয়েরা বাড়ি-ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকে। সন্ধ্যায় বৌদ্ধ মন্দির, নদীর ঘাটে, বাড়িতে প্রদীপ প্রজ্জালন করা হয়। রাঙামাটির রাজ বন বিহারের পূর্ব ঘাট এলাকায় ফুল ভাসানো হবে। এছাড়া এ দিন নানান খেলাধুলা ও সংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কাল বুধবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন মূল বিজু। এ দিনে বাড়িতে বাড়িতে শুধু চলে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব ও আন›ন্দ-পূর্তি। বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু খাবার দাবার আগত অতিথিদের পরিবেশন করা হয়।

উৎসবের তৃতীয় দিনে অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল ‘গজ্যাপজ্যা বিজু’। এদিনে পাহাড়িরা সারাদিন ঘরে বসে বিশ্রাম নিয়ে থাকে। এ দিন বৌদ্ধ মন্দিরে প্রার্থনা ও বয়োজ্যেষ্ঠদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসে যতœসহকারে ভাত খাওয়ানোসহ আর্শীবাদ নেয়া হয়। এদিনটিকে পাহাড়িরা মনে করে থাকে সারাদিন আনন্দ আর হাসি-খূশিতে কাটাতে পারলে সারা বছর সূখে শান্তিতে ও ধন-ধৌলতে কেটে যাবে। এ দিন তারা যে কোন প্রাণী হত্যা থেকে বিরত থাকে। অন্যদিকে মারমা সম্প্রদায় এদিন ঐতিহ্যবাহী পানি খেলার আয়োজন করে থাকে। তারা পানি খেলার মাধ্যমে পূরনো বছরের সমস্ত গ্ল­ানি ও দূঃখ কষ্টকে দূর করে নতুন বছরকে বরণ করে থাকে। আগামী ১৬ এপ্রিল কাউখালী বেতবুনিয়া মারমা সাংস্কৃতিক সংসদের উদ্যোগের পানি খেলা অনুষ্ঠিত হবে।