প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা

একাত্তরের ১২ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। এদিনই জেনারেল ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

১২ এপ্রিল রাতে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করা হয়। সে ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ও রাষ্ট্রপ্রধান, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করা হয়। মন্ত্রিসভার অপরাপর সদস্য হিসেবে খন্দকার মুশতাক আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানের নাম ঘোষিত হয়েছিল। এই বেতার ঘোষণায় একইসঙ্গে মন্ত্রিসভার দায়িত্বও বণ্টন করা হয়েছিল।

এদিন পাকিস্তানি বাহিনী পরিকল্পিত কায়দায় ঢাকার বাইরে নীলফামারীর সৈয়দপুরের বালারখাইল গণহত্যায়। এটাই প্রথম বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভূমি ছাড়া আর কোথাও এতো অধিক সংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে একসঙ্গে হত্যা করা হয়নি। মধ্যরাতে নীলফামারীর সৈয়দপুরের প্রায় ১৫০ জন বুদ্ধিজীবীকে ২৫ মার্চ থেকে দীর্ঘ ১৮ দিন নির্যাতনের পর রংপুর

সেনানিবাসের পশ্চিম পাশের উপশহরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। সেদিনের হত্যাকা-ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া কমলা প্রসাদের সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যে, সেদিন বালারখাইলে প্রায় ১৫০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। এই শহীদদের মধ্যে ছিলেন সংসদ সদস্য প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. জিকরুল হক, রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী তুলসীরাম আগরওয়ালা, ডা. শামসুল হক, ডা. বদিউজ্জমান, ডা. ইয়াকুব আলী, যমুনা প্রসাদ, কেডিয়া, রামেশ্বর লাল আগরওয়ালাসহ অনেকে।

এদিন ঢাকায় গোলাম আজমের নেতৃত্বে প্রথম মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মিছিল হয়েছিল বাইতুল মোকাররম মসজিদের সামনে থেকে। মিছিলে বহনকারী প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুনে লেখা ছিল ‘দুষ্কৃতকারীরা দূর হও - মুসলিম জাহান এক হও’, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ, কায়েদে আযম জিন্দাবাদ’, ‘পাকিস্তানের উৎস কি? লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’। মিছিল শেষে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার এবং পাকিস্তান সরকারের মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন গোলাম আজম।

১২ এপ্রিল ঢাকায় নিযুক্ত একজন বিদেশি কূটনীতিকের ভাষ্য দিয়ে বিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘টাইম’ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে ‘কোন সন্দেহ নেই যে পূর্ব পাকিস্তানে ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে। এটি আক্ষরিক অর্থেই রক্তস্নান। চেঙ্গিস খানের নৃশংস হত্যাকা-ের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যাকা-ের কোন পার্থক্য নেই। সেনাবাহিনীরা কথিত বিদ্রোহীদের দমন কাজে ব্যস্ত। ট্যাংক চড়ে বেড়াচ্ছে ঢাকার বুকে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বহু বাড়িঘর, মানুষের আবাসস্থল।

এদিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক ‘আমেরিকান ফ্রেন্ডস অব পাকিস্তান’ সংগঠনের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে পাঠানো এক আবেদনে যতো দ্রুত সম্ভব পূর্ব বাংলার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। তারা পাঠানো বার্তায় বলেন, ‘কোন সরকার অস্ত্র ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার রাখে না। পাকিস্তান সরকারের উচিত সামরিক বল প্রয়োগ থেকে সরে আসা।

এদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ট্যাংক গোলাবারুদ ও ভারী অস্ত্রের সাহায্যে মুক্তিযোদ্ধাদের হাবরা ঘাঁটি আক্রমণ করে। পাকিস্তানিদের সম্মিলিত আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের চারটি কোম্পানি ও অতিরিক্ত একটি প্লাটুন সম্মিলিতভাবে লালমনিরহাট বিমানবন্দর এলাকাতে অবস্থানরত পাকিস্তানি হানাদারদের ওপর বড় রকমের আক্রমণ করে। সে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ফিল্ড কমান্ডের দায়িত্বে ছিলেন সুবেদার আরব আলী। তিনি বলেন ‘কয়েক ঘণ্টার সংঘর্ষে বেশ কিছু পাকসেনা নিহত হলেও শেষ পর্যন্ত পাকসেনাদের ব্যাপক আক্রমণের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ঘাঁটিতে ফিরে আসে।’

এদিন দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর পাকিস্তানি হানাদারেরা পুনরায় গোলাবর্ষণ করে। পাকিস্তানি হানাদারদের মর্টার থেকে গোলাবর্ষণের মুখে এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেছিল। এ যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন।

ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের পুরো বাহিনী এদিন কালুরঘাট থেকে রাঙ্গামাটি চলে আসে এবং সেখানে প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তোলে। রাঙ্গামাটির মহালছড়িতে ব্যাটালিয়নের হেড কোয়ার্টার স্থাপিত হয়।

এদিন রাজশাহীর নাটোরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর পাকিস্তানি হানাদারেরা ব্যাপক শেলিংয়ের মাধ্যমে আক্রমণ চালিয়েছিল। এ অতর্কিত আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে রাজশাহীর বানেশ্বরে অবস্থান নিয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনী তিস্তা দখলের লক্ষ্যে তিস্তা পুলে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যুহে ভারী অস্ত্রের সাহায্যে ত্রিমুখী আক্রমণ চালিয়েছিল।

এদিন ঢাকার সামরিক কর্তৃপক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও সরকারি বিভাগ, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার সব কর্মচারীকে ২১ এপ্রিলের মধ্যে কাজে যোগদানের নির্দেশনা জারি করে। নির্দেশনায় বলা হয় ২১ তারিখের পর কাজে যোগ না দিলে অনুপস্থিত কর্মচারীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে।

মুসলিম লীগ নেতা খান এ.সবুর এক বেতার ভাষণে বিন্দুমাত্র দয়া না দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারীদের হত্যা করার আহ্বান জানান। অন্যদিকে এদিন মুসলিম লীগ সভাপতি শামসুল হুদার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল জেনারেল টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং পাকিস্তানি হানাদারদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।

এছাড়া এদিন সারদা পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ ডিআইজি আ. খালেক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে অসম্মত হয়ে একাডেমি ত্যাগ করলে সুবেদার লস্কর সিরাজউদ্দীন পুলিশ একাডেমির অ্যালার্ম বাজিয়ে পুলিশ সদস্যদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। এ সময় সুবেদার লস্কর সিরাজউদ্দীন সারদা পুলিশ একাডেমি অস্ত্রাগারের তালা ভেঙে পুলিশ সদস্যদের হাতে অস্ত্র তুলে দেন। মূলত তার আহ্বানেই রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের ক্যাপ্টেন আ. রশীদ এবং অধ্যাপক আবু বকর সিদ্দিকী তাদের অনুসারীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় হন।

মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২ , ২৯ চৈত্র ১৪২৮ ১০ রমাদ্বান ১৪৪৩

১২ এপ্রিল ১৯৭১

প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

একাত্তরের ১২ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। এদিনই জেনারেল ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

১২ এপ্রিল রাতে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করা হয়। সে ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ও রাষ্ট্রপ্রধান, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করা হয়। মন্ত্রিসভার অপরাপর সদস্য হিসেবে খন্দকার মুশতাক আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানের নাম ঘোষিত হয়েছিল। এই বেতার ঘোষণায় একইসঙ্গে মন্ত্রিসভার দায়িত্বও বণ্টন করা হয়েছিল।

এদিন পাকিস্তানি বাহিনী পরিকল্পিত কায়দায় ঢাকার বাইরে নীলফামারীর সৈয়দপুরের বালারখাইল গণহত্যায়। এটাই প্রথম বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভূমি ছাড়া আর কোথাও এতো অধিক সংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে একসঙ্গে হত্যা করা হয়নি। মধ্যরাতে নীলফামারীর সৈয়দপুরের প্রায় ১৫০ জন বুদ্ধিজীবীকে ২৫ মার্চ থেকে দীর্ঘ ১৮ দিন নির্যাতনের পর রংপুর

সেনানিবাসের পশ্চিম পাশের উপশহরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। সেদিনের হত্যাকা-ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া কমলা প্রসাদের সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যে, সেদিন বালারখাইলে প্রায় ১৫০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। এই শহীদদের মধ্যে ছিলেন সংসদ সদস্য প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. জিকরুল হক, রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী তুলসীরাম আগরওয়ালা, ডা. শামসুল হক, ডা. বদিউজ্জমান, ডা. ইয়াকুব আলী, যমুনা প্রসাদ, কেডিয়া, রামেশ্বর লাল আগরওয়ালাসহ অনেকে।

এদিন ঢাকায় গোলাম আজমের নেতৃত্বে প্রথম মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মিছিল হয়েছিল বাইতুল মোকাররম মসজিদের সামনে থেকে। মিছিলে বহনকারী প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুনে লেখা ছিল ‘দুষ্কৃতকারীরা দূর হও - মুসলিম জাহান এক হও’, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ, কায়েদে আযম জিন্দাবাদ’, ‘পাকিস্তানের উৎস কি? লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’। মিছিল শেষে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার এবং পাকিস্তান সরকারের মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন গোলাম আজম।

১২ এপ্রিল ঢাকায় নিযুক্ত একজন বিদেশি কূটনীতিকের ভাষ্য দিয়ে বিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘টাইম’ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে ‘কোন সন্দেহ নেই যে পূর্ব পাকিস্তানে ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে। এটি আক্ষরিক অর্থেই রক্তস্নান। চেঙ্গিস খানের নৃশংস হত্যাকা-ের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যাকা-ের কোন পার্থক্য নেই। সেনাবাহিনীরা কথিত বিদ্রোহীদের দমন কাজে ব্যস্ত। ট্যাংক চড়ে বেড়াচ্ছে ঢাকার বুকে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বহু বাড়িঘর, মানুষের আবাসস্থল।

এদিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক ‘আমেরিকান ফ্রেন্ডস অব পাকিস্তান’ সংগঠনের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে পাঠানো এক আবেদনে যতো দ্রুত সম্ভব পূর্ব বাংলার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। তারা পাঠানো বার্তায় বলেন, ‘কোন সরকার অস্ত্র ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার রাখে না। পাকিস্তান সরকারের উচিত সামরিক বল প্রয়োগ থেকে সরে আসা।

এদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ট্যাংক গোলাবারুদ ও ভারী অস্ত্রের সাহায্যে মুক্তিযোদ্ধাদের হাবরা ঘাঁটি আক্রমণ করে। পাকিস্তানিদের সম্মিলিত আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের চারটি কোম্পানি ও অতিরিক্ত একটি প্লাটুন সম্মিলিতভাবে লালমনিরহাট বিমানবন্দর এলাকাতে অবস্থানরত পাকিস্তানি হানাদারদের ওপর বড় রকমের আক্রমণ করে। সে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ফিল্ড কমান্ডের দায়িত্বে ছিলেন সুবেদার আরব আলী। তিনি বলেন ‘কয়েক ঘণ্টার সংঘর্ষে বেশ কিছু পাকসেনা নিহত হলেও শেষ পর্যন্ত পাকসেনাদের ব্যাপক আক্রমণের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ঘাঁটিতে ফিরে আসে।’

এদিন দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর পাকিস্তানি হানাদারেরা পুনরায় গোলাবর্ষণ করে। পাকিস্তানি হানাদারদের মর্টার থেকে গোলাবর্ষণের মুখে এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেছিল। এ যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন।

ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের পুরো বাহিনী এদিন কালুরঘাট থেকে রাঙ্গামাটি চলে আসে এবং সেখানে প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তোলে। রাঙ্গামাটির মহালছড়িতে ব্যাটালিয়নের হেড কোয়ার্টার স্থাপিত হয়।

এদিন রাজশাহীর নাটোরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর পাকিস্তানি হানাদারেরা ব্যাপক শেলিংয়ের মাধ্যমে আক্রমণ চালিয়েছিল। এ অতর্কিত আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে রাজশাহীর বানেশ্বরে অবস্থান নিয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনী তিস্তা দখলের লক্ষ্যে তিস্তা পুলে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যুহে ভারী অস্ত্রের সাহায্যে ত্রিমুখী আক্রমণ চালিয়েছিল।

এদিন ঢাকার সামরিক কর্তৃপক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও সরকারি বিভাগ, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার সব কর্মচারীকে ২১ এপ্রিলের মধ্যে কাজে যোগদানের নির্দেশনা জারি করে। নির্দেশনায় বলা হয় ২১ তারিখের পর কাজে যোগ না দিলে অনুপস্থিত কর্মচারীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে।

মুসলিম লীগ নেতা খান এ.সবুর এক বেতার ভাষণে বিন্দুমাত্র দয়া না দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারীদের হত্যা করার আহ্বান জানান। অন্যদিকে এদিন মুসলিম লীগ সভাপতি শামসুল হুদার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল জেনারেল টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং পাকিস্তানি হানাদারদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।

এছাড়া এদিন সারদা পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ ডিআইজি আ. খালেক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে অসম্মত হয়ে একাডেমি ত্যাগ করলে সুবেদার লস্কর সিরাজউদ্দীন পুলিশ একাডেমির অ্যালার্ম বাজিয়ে পুলিশ সদস্যদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। এ সময় সুবেদার লস্কর সিরাজউদ্দীন সারদা পুলিশ একাডেমি অস্ত্রাগারের তালা ভেঙে পুলিশ সদস্যদের হাতে অস্ত্র তুলে দেন। মূলত তার আহ্বানেই রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের ক্যাপ্টেন আ. রশীদ এবং অধ্যাপক আবু বকর সিদ্দিকী তাদের অনুসারীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় হন।