শত শত মানুষ খোলা আকাশের নিচে
নীলফামারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে হাজার হাজার ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড ও ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে। এর মধ্যে নীলফামারীর তিনটি উপজেলার চার হাজার পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে খোলা আকাশের নিচে। ক্ষতি হয়েছে উঠতি ভুট্টা ও বোরো ধান।
অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও তিনটি উপজেলায় ভোররাতের আকস্মিক ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়েছে ৪শ’ ঘরবাড়ি ও আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক মানুষ। জেলা বার্তা পরিবেশক ও প্রতিনিধির পাঠানো খবরে এ তথ্য জানা গেছে।
নীলফামারী জেলাবার্তা পরিবেশক ও ডিমলা প্রতিনিধি জানায়, হঠাৎ ধেয়ে আসা বর্জ্যঝড়ের তাণ্ডবে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে নীলফামারীর জলঢাকা, ডিমলা ও ডোমার উপজেলার কিছু এলাকা। ঝড় ও শিলার আঘাতে অন্তত চার হাজার পরিবারের ঘরবাড়ী ও উঠতি ভূট্টা এবং বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা এখন খোলা আকাশের নিচে।
রোববার বিকেলে আকস্মিক আঘাত হানা এই ঝড়ে উপড়ে ও ভেঙে গেছে অসংখ্য ছোট-বড় গাছ পালা। ঝড়ের তাণ্ডবে দুমড়ে মুচড়ে গেছে অন্তত ছয় হাজার ঘর বাড়ি। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। অনেকের স্থান হয়েছে এখন খোলা আকাশের নিচে।
ক্ষতিগ্রস্থরা জানিয়েছেন, মাত্র ১০ মিনিট স্থায়ী ঘুর্ণিঝড়ে মুহূর্তের মধ্যে সাজানো গোছানো সংসার হয়ে যায় লণ্ডভণ্ড। এ সময় তারা আত্মরক্ষার্থে ছুটোছুটি করে দিকবিদিক। অনেকেরই ঘরের উপর গাছ ভেঙে পড়ে বিধ্বস্ত হয় ঘরবাড়ি। ঝড়ের সময় প্রচুর শিলাপাত হয়েছে। প্রতিটি শিলার ওজন কমপক্ষে আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ গ্রাম। শিলার আঘাতে ও ঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষেতে থাকা উঠতি ভূট্টা ও বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও শিলার আঘাতে ঘরের টিন ফুটো হওয়ায় তাতে আর বসবাস করার মতো অবস্থায় নেই।
ডিমলা তিতপাড়া এলাকার ভ্যান চালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ভ্যান নিয়ে বাইরে গেছিলাম। এদিকে হঠাৎ ঝড়ে ৩টা ঘরই পড়ে যায়। দুই কন্যা শিশু ঘরের নিচে চাপা পড়েছিল। প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাদেরকে উদ্ধার করে। এমনি অভাবের সংসার তার উপর এই দুর্যোগ। এখন কি করব না করব ভেবে পাচ্ছিনা।
একই এলাকার কৃষক আহাদ আলি বলেন, দুই বিঘা জমির ভুট্টা ঝড়ে ভেঙে গিয়ে মাটির সঙ্গে লেপ্টে গেছে। এ ফসল আর ঘরে তোলা সম্ভব নয়। এ বছর কিভাবে চলব কি খাব আল্লাহ মাবুদই জানে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক
জানায়, হঠাৎ ঝড়ো হাওয়া আর শিলা বৃষ্টির কারণে উঠতি ফসল ভুট্টা ও বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরপণের চেষ্টা চলছে।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেলায়েত হোসেন জানান, ডিমলায় প্রায় তিন হাজার পরিবার সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের কাজ চলছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপণ হলে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। আশা রাখি খুব তাড়াতাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হবে।
অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা বার্তা পরিবেশক জানান
সোমবার ভোররাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৩টি উপজেলায় ঘূর্নিঝড় আঘাত হেনেছে। এতে অন্তত ৪শ’ ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ও ৫৫ জন আহত হয়েছে। ঝড়ে ফসলি জমিরও ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
ভোর ৩টা ১১ মিনিটে নাসিরনগরে ঘুর্ণিঝড়ে ২ শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে অন্তত ৪০ জন নারী-পুরুষসহ শিশু আহত হয়। আহত একজনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘুর্ণিঝড়ের সময় প্রচণ্ড শীলাবৃষ্টির কারণে ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে বিভিন্ন গ্রামের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ভলাকুট ও চাতলপাড় ইউনিয়নের উপর দিয়ে ঘুর্ণিঝড় বয়ে যায়। এ দুটি ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভলাকুট, কান্দি, বালিখোলা, দূর্গপূড়, খাগালিয়া, কাহেতুড়া, বাঘি গ্রাম ক্ষতি গ্রস্ত হয়। পূর্ব বালিখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ধ্বসে পরায় বিদ্যালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অভিজিত রায় জানান, ঘূর্ণিঝড়ে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। একটি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
এদিকে, সরাইল উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে পাকা ধান ও ঘর- বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকায় রাত ৩টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। ঝড়ের সময় প্রচুর শিলাবৃষ্টি হয়। উপজেলা অরুয়াইল-পাকশিমুল সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। অরুয়াইল গ্রামের নুর মাহমুদের বাড়ির পার্শ্ববর্তী আখড়ার বিশালাকার গাছ পড়ে তিনটি ঘর ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। রাণীদিয়ার মাদরাসার টিনশেড ঘরের চালা উড়ে গিয়ে পাশের বাড়িতে আঘাত করেছে।
দুবাজাইল গ্রামের আনিসুর রহমানের বিল্ডিংয়ের সিঁড়ির ছালাটি উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় ১৫ জন আহত হয়েছে। উপড়ে গেছে গাছপালা, ভেঙে গেছে ঘরবাড়ি, ধান ও ভুট্টা গাছগুলো হেলে পড়েছে। গাছ থেকে মরিচ ঝরে পড়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ঝড়ের আঘাতে অধিকাংশ ঝুপড়ি ঘর, টিনশেড ঘর, গাছপালা ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবাররা জানান, রাত ৩টায় হঠাৎ আকাশ অন্ধকার হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরেই প্রবল বেগে ঝড় শুরু হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আকরাম হোসেন বলেন, ঝড়ে নুয়ে পড়া পাকা ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। তবে শিলা বৃষ্টিতে সামান্য ক্ষতি হয়েছে। আমরা ঝড়ে ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষয় ক্ষতির তালিকা তৈরী করছি।
এদিকে বিজয়নগর উপজেলার চর-ইসলামপুরের নাজিরাবাড়ি, হরষপুর ইউনিয়নের বুল্লা, চান্দুরা ইউনিয়নের রামপুরা, ভাটি কালিসীমা, বেকিনগর, রসুলপুর, বুধ, পেটুয়াজুড়ি, বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন’সহ উপজেলার অন্তত শতাধিক ঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এছাড়াও বিজয়নগর উপজেলায় ১০০ হেক্টর ধান ও ৫০ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয় বলে জানান উপজেলা কৃষি অফিস। নাসিরনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাইদ তারে জানা, শিলাবৃষ্টিতে বিচ্ছিন্নভাবে ক্ষতি হয়েছে ১৫০ হেক্টর জমি।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমীন জানান, ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করে সার্বিক সহায়তা করা হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঝড়ে লণ্ডভণ্ড ঘরবাড়ি -সংবাদ
আরও খবরমঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২ , ২৯ চৈত্র ১৪২৮ ১০ রমাদ্বান ১৪৪৩
শত শত মানুষ খোলা আকাশের নিচে
সংবাদ ডেস্ক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঝড়ে লণ্ডভণ্ড ঘরবাড়ি -সংবাদ
নীলফামারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে হাজার হাজার ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড ও ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে। এর মধ্যে নীলফামারীর তিনটি উপজেলার চার হাজার পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে খোলা আকাশের নিচে। ক্ষতি হয়েছে উঠতি ভুট্টা ও বোরো ধান।
অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও তিনটি উপজেলায় ভোররাতের আকস্মিক ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়েছে ৪শ’ ঘরবাড়ি ও আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক মানুষ। জেলা বার্তা পরিবেশক ও প্রতিনিধির পাঠানো খবরে এ তথ্য জানা গেছে।
নীলফামারী জেলাবার্তা পরিবেশক ও ডিমলা প্রতিনিধি জানায়, হঠাৎ ধেয়ে আসা বর্জ্যঝড়ের তাণ্ডবে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে নীলফামারীর জলঢাকা, ডিমলা ও ডোমার উপজেলার কিছু এলাকা। ঝড় ও শিলার আঘাতে অন্তত চার হাজার পরিবারের ঘরবাড়ী ও উঠতি ভূট্টা এবং বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা এখন খোলা আকাশের নিচে।
রোববার বিকেলে আকস্মিক আঘাত হানা এই ঝড়ে উপড়ে ও ভেঙে গেছে অসংখ্য ছোট-বড় গাছ পালা। ঝড়ের তাণ্ডবে দুমড়ে মুচড়ে গেছে অন্তত ছয় হাজার ঘর বাড়ি। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। অনেকের স্থান হয়েছে এখন খোলা আকাশের নিচে।
ক্ষতিগ্রস্থরা জানিয়েছেন, মাত্র ১০ মিনিট স্থায়ী ঘুর্ণিঝড়ে মুহূর্তের মধ্যে সাজানো গোছানো সংসার হয়ে যায় লণ্ডভণ্ড। এ সময় তারা আত্মরক্ষার্থে ছুটোছুটি করে দিকবিদিক। অনেকেরই ঘরের উপর গাছ ভেঙে পড়ে বিধ্বস্ত হয় ঘরবাড়ি। ঝড়ের সময় প্রচুর শিলাপাত হয়েছে। প্রতিটি শিলার ওজন কমপক্ষে আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ গ্রাম। শিলার আঘাতে ও ঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষেতে থাকা উঠতি ভূট্টা ও বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও শিলার আঘাতে ঘরের টিন ফুটো হওয়ায় তাতে আর বসবাস করার মতো অবস্থায় নেই।
ডিমলা তিতপাড়া এলাকার ভ্যান চালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ভ্যান নিয়ে বাইরে গেছিলাম। এদিকে হঠাৎ ঝড়ে ৩টা ঘরই পড়ে যায়। দুই কন্যা শিশু ঘরের নিচে চাপা পড়েছিল। প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাদেরকে উদ্ধার করে। এমনি অভাবের সংসার তার উপর এই দুর্যোগ। এখন কি করব না করব ভেবে পাচ্ছিনা।
একই এলাকার কৃষক আহাদ আলি বলেন, দুই বিঘা জমির ভুট্টা ঝড়ে ভেঙে গিয়ে মাটির সঙ্গে লেপ্টে গেছে। এ ফসল আর ঘরে তোলা সম্ভব নয়। এ বছর কিভাবে চলব কি খাব আল্লাহ মাবুদই জানে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক
জানায়, হঠাৎ ঝড়ো হাওয়া আর শিলা বৃষ্টির কারণে উঠতি ফসল ভুট্টা ও বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরপণের চেষ্টা চলছে।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেলায়েত হোসেন জানান, ডিমলায় প্রায় তিন হাজার পরিবার সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের কাজ চলছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপণ হলে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। আশা রাখি খুব তাড়াতাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হবে।
অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা বার্তা পরিবেশক জানান
সোমবার ভোররাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৩টি উপজেলায় ঘূর্নিঝড় আঘাত হেনেছে। এতে অন্তত ৪শ’ ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ও ৫৫ জন আহত হয়েছে। ঝড়ে ফসলি জমিরও ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
ভোর ৩টা ১১ মিনিটে নাসিরনগরে ঘুর্ণিঝড়ে ২ শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে অন্তত ৪০ জন নারী-পুরুষসহ শিশু আহত হয়। আহত একজনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘুর্ণিঝড়ের সময় প্রচণ্ড শীলাবৃষ্টির কারণে ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে বিভিন্ন গ্রামের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ভলাকুট ও চাতলপাড় ইউনিয়নের উপর দিয়ে ঘুর্ণিঝড় বয়ে যায়। এ দুটি ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভলাকুট, কান্দি, বালিখোলা, দূর্গপূড়, খাগালিয়া, কাহেতুড়া, বাঘি গ্রাম ক্ষতি গ্রস্ত হয়। পূর্ব বালিখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ধ্বসে পরায় বিদ্যালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অভিজিত রায় জানান, ঘূর্ণিঝড়ে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। একটি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
এদিকে, সরাইল উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে পাকা ধান ও ঘর- বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকায় রাত ৩টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। ঝড়ের সময় প্রচুর শিলাবৃষ্টি হয়। উপজেলা অরুয়াইল-পাকশিমুল সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। অরুয়াইল গ্রামের নুর মাহমুদের বাড়ির পার্শ্ববর্তী আখড়ার বিশালাকার গাছ পড়ে তিনটি ঘর ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। রাণীদিয়ার মাদরাসার টিনশেড ঘরের চালা উড়ে গিয়ে পাশের বাড়িতে আঘাত করেছে।
দুবাজাইল গ্রামের আনিসুর রহমানের বিল্ডিংয়ের সিঁড়ির ছালাটি উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় ১৫ জন আহত হয়েছে। উপড়ে গেছে গাছপালা, ভেঙে গেছে ঘরবাড়ি, ধান ও ভুট্টা গাছগুলো হেলে পড়েছে। গাছ থেকে মরিচ ঝরে পড়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ঝড়ের আঘাতে অধিকাংশ ঝুপড়ি ঘর, টিনশেড ঘর, গাছপালা ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবাররা জানান, রাত ৩টায় হঠাৎ আকাশ অন্ধকার হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরেই প্রবল বেগে ঝড় শুরু হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আকরাম হোসেন বলেন, ঝড়ে নুয়ে পড়া পাকা ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। তবে শিলা বৃষ্টিতে সামান্য ক্ষতি হয়েছে। আমরা ঝড়ে ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষয় ক্ষতির তালিকা তৈরী করছি।
এদিকে বিজয়নগর উপজেলার চর-ইসলামপুরের নাজিরাবাড়ি, হরষপুর ইউনিয়নের বুল্লা, চান্দুরা ইউনিয়নের রামপুরা, ভাটি কালিসীমা, বেকিনগর, রসুলপুর, বুধ, পেটুয়াজুড়ি, বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন’সহ উপজেলার অন্তত শতাধিক ঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এছাড়াও বিজয়নগর উপজেলায় ১০০ হেক্টর ধান ও ৫০ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয় বলে জানান উপজেলা কৃষি অফিস। নাসিরনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাইদ তারে জানা, শিলাবৃষ্টিতে বিচ্ছিন্নভাবে ক্ষতি হয়েছে ১৫০ হেক্টর জমি।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমীন জানান, ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করে সার্বিক সহায়তা করা হবে।