বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকবে প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা

নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, দাবি ব্যবসায়ীদের

গ্যাস সংকটের কারণে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে অনেক দিন ধরে। তবে রমজান ও গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এই প্রেক্ষাপটে প্রতিদিন চার ঘণ্টা শিল্প-কারখানায় গ্যাসের ব্যববহার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে পেট্রোবাংলা। সংস্থাটি জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) থেকে পরবর্তী ১৫ দিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা শিল্প গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহার বন্ধ থাকবে।

এখন সিএনজি স্টেশনে বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দিনে ৬ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকে।

এদিকে শিল্পে গ্যাস সরবরাহ কমালে উৎপাদন বিঘিœত হবে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ঈদকে সামনে রেখে কারখানাগুলো পূর্ণ উদ্যোমে চালানো হচ্ছে। যদিও প্রায়শই চাহিদা অনুসারে গ্যাস পাওয়া যায় না। এরমধ্যে গ্যাস রেশনিং ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দেবে।

সূত্র জানিয়েছে, রমজান ও গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু গ্যাস সংকটে উৎপাদন হচ্ছে কম। ফলে সক্ষমতা থাকলেও চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

পরিস্থিতি সামলাতে সোমবার ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে মঙ্গলবার থেকে পরের ১৫ দিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা শিল্পে গ্যাস ব্যববহার বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়।

বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, রমজানের এই সময় বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়ে। আগামী ১৫ দিন তাই এ সময়টুকু সব শিল্প শ্রেণীর গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহার বন্ধ রাখতে পারলে ভালো হয়।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ব্যবসাবান্ধব গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা হয়। আলোচনা শেষে, শিল্পে চার ঘণ্টা গ্যাস রেশনিংয়ের বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতারা সম্মত হন।

মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী ও শিল্প প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএ’র প্রেসিডেন্ট মো. আলী খোকন, ঢাকা চেম্বারস’র পরিচালক তালহা ইসমাইল বারী, পলমল গ্রুপের পক্ষে অবসরপ্রাপ্ত মেজর মিজান, বিটিএমএ’র পরিচালক প্রকৌশলী রেজাউল করিম, বিজিএমইএ’র পরিচালক আসিফ আশরাফ প্রমুখ।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে সভায় অংশ নেন বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ, বিদ্যুৎ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব এটিএম মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান মোহা. সেলিম উদ্দিন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান, পিডিবির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এফবিসিসিআই’র জসিম উদ্দিন বলেন, বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে ১৫ দিন গ্যাস রেশনিংয়ের জন্য বলা হয়। এমনটি হলে শিল্প কারখানার উৎপাদনে হ্রাস পাবে। ঈদকে সামনে রেখে কারখানাগুলোতে প্রচুর চাপ রয়েছে। এরমধ্যে দিনে চার ঘণ্টা গ্যাস বন্ধ উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ভিজিল্যান্স টিমগুলো নিয়মিত মনিটরিং করবে বলেও উল্লেখ করা হয় পেট্রেবাংলার বিজ্ঞপ্তিতে। সিদ্ধান্ত অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘গ্যাস আইন’ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করা হয়।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাস সংকট মোকবিলায় অনুসন্ধানে জোর না দিয়ে আমদানি নির্ভরতা বাড়ানোর প্রবণাতাই দেশে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২ , ২৯ চৈত্র ১৪২৮ ১০ রমাদ্বান ১৪৪৩

বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকবে প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা

নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, দাবি ব্যবসায়ীদের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

গ্যাস সংকটের কারণে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে অনেক দিন ধরে। তবে রমজান ও গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এই প্রেক্ষাপটে প্রতিদিন চার ঘণ্টা শিল্প-কারখানায় গ্যাসের ব্যববহার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে পেট্রোবাংলা। সংস্থাটি জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) থেকে পরবর্তী ১৫ দিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা শিল্প গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহার বন্ধ থাকবে।

এখন সিএনজি স্টেশনে বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দিনে ৬ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকে।

এদিকে শিল্পে গ্যাস সরবরাহ কমালে উৎপাদন বিঘিœত হবে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ঈদকে সামনে রেখে কারখানাগুলো পূর্ণ উদ্যোমে চালানো হচ্ছে। যদিও প্রায়শই চাহিদা অনুসারে গ্যাস পাওয়া যায় না। এরমধ্যে গ্যাস রেশনিং ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দেবে।

সূত্র জানিয়েছে, রমজান ও গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু গ্যাস সংকটে উৎপাদন হচ্ছে কম। ফলে সক্ষমতা থাকলেও চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

পরিস্থিতি সামলাতে সোমবার ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে মঙ্গলবার থেকে পরের ১৫ দিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা শিল্পে গ্যাস ব্যববহার বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়।

বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, রমজানের এই সময় বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়ে। আগামী ১৫ দিন তাই এ সময়টুকু সব শিল্প শ্রেণীর গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহার বন্ধ রাখতে পারলে ভালো হয়।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ব্যবসাবান্ধব গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা হয়। আলোচনা শেষে, শিল্পে চার ঘণ্টা গ্যাস রেশনিংয়ের বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতারা সম্মত হন।

মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী ও শিল্প প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএ’র প্রেসিডেন্ট মো. আলী খোকন, ঢাকা চেম্বারস’র পরিচালক তালহা ইসমাইল বারী, পলমল গ্রুপের পক্ষে অবসরপ্রাপ্ত মেজর মিজান, বিটিএমএ’র পরিচালক প্রকৌশলী রেজাউল করিম, বিজিএমইএ’র পরিচালক আসিফ আশরাফ প্রমুখ।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে সভায় অংশ নেন বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ, বিদ্যুৎ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব এটিএম মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান মোহা. সেলিম উদ্দিন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান, পিডিবির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এফবিসিসিআই’র জসিম উদ্দিন বলেন, বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে ১৫ দিন গ্যাস রেশনিংয়ের জন্য বলা হয়। এমনটি হলে শিল্প কারখানার উৎপাদনে হ্রাস পাবে। ঈদকে সামনে রেখে কারখানাগুলোতে প্রচুর চাপ রয়েছে। এরমধ্যে দিনে চার ঘণ্টা গ্যাস বন্ধ উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ভিজিল্যান্স টিমগুলো নিয়মিত মনিটরিং করবে বলেও উল্লেখ করা হয় পেট্রেবাংলার বিজ্ঞপ্তিতে। সিদ্ধান্ত অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘গ্যাস আইন’ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করা হয়।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাস সংকট মোকবিলায় অনুসন্ধানে জোর না দিয়ে আমদানি নির্ভরতা বাড়ানোর প্রবণাতাই দেশে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।