বন্যায় বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাওরের বাঁধ

৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত এবার

হাওর এলাকায় বন্যায় বার বার বাঁধ ভেঙে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রতি সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় আকস্মিক বন্যা বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের জমি। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, মোট দুই লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে মাত্র পাঁচ হাজার হেক্টরের জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জে ৫৩৫ কিলোমিটার বাঁধের তিন স্থানে ১৩০ মিটার ভেঙে বলে জানিয়েছে পানি উন্নায়ন বোর্ড।

বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগে দীর্ঘদিন। ২০১৭ সালে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল ৮ জন প্রকৌশলী বিরুদ্ধে কিন্তু কি ব্যবস্থা নেয়াছিল তা জানা যায়। তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতির কথা নিজেই শিকার করলেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।

গতকাল সচিবালয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি বলব না পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ দুর্নীতি করে না। দুর্নীতি করে, তবে আমরা চেষ্টা করছি সেটি কমিয়ে আনার জন্য, সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য।’

বার বার বাঁধ ভাঙার অভিযোগ আসে কিন্তু জড়িতদের শাস্তি হয় না-এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৭ সালে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এমন ৮ জন প্রকৌশলীকে কিন্তু আমরা সাসপেন্ড করেছি। এটা আইনের মাধ্যমে করতে হবে। এটা তো আর্মি না যে, একজন লোককে রিটায়ার্ড করে দেয়া যায়। নিয়মের বাইরে কাউকে সাসপেন্ড করতে পারব না। দুদকের মামলা চলবে, নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে সেই ৮ জনের বিরুদ্ধে। আমরা রাতারাতি একজন প্রকৌশলীকে বলতে পারি না তোমরা বাড়ি চলে যাও। আমরা নিয়মের মধ্যে চলছি।’

হাওয়ে বাঁধ ভাঙায় তদন্ত কমিটি গঠন

সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ ভেঙে ফসলের ক্ষতির ঘটনায় কারো গাফিলতি থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। কৃষকদের কৃষি ঋণ মওকুফের কথা সরকার ভাবছে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এবং উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম।

সংবাদ সম্মেলনে জাহিদ ফারুক বলেন, ‘মোট দুই লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে মাত্র পাঁচ হাজার হেক্টরের জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। এটা আমি মনে করি পারসেন্টেজে কম। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা

বলে নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে। কৃষির ক্ষেত্রে কৃষি ঋণ যদি কারো থাকে সেটা যেন মওকুফ হয় সেটা সরকার ভাবছে এবং এভাবেই এগোচ্ছে। নদীর পাড়ে যে পলিমাটিগুলো নরম থাকে, যখন পানি নামতে পারে না তখন বাঁধগুলো নরম হয়ে যায় এবং প্রাকৃতিক কারণে নদী ভাঙন হয়ে যায়। এটা কিন্তু বন্ধ করা যাবে না। এটার মধ্যে বসবাস করতে হবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষিমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হাওরে যাবো এবং কত পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটা জানতে পারবো। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সর্বাবস্থায় সক্রিয় আছি। আমরা চাই না ফসলের হানি হোক। মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে মতামতসহ প্রতিবেদন দেবে কমিটি।’

ভারতে হঠাৎ বৃষ্টিপাতের কারণে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে

সুনামগঞ্জ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পানি উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, ‘৫৩৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে তিন জায়গায় যথাক্রমে ৫০, ৫০ ও ৩০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। একটা জায়গায় বন্ধ করতে পেরেছিলাম এবং আরেকটা জায়গায় পানির গভীরতা ৫০-৬০ মিটার। আরেকটা মেরামতের কাজ চলছে। আমরা পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। হাওর আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি, তাদের পরামর্শ মাথায় রেখে কাজ করছি। আজ থেকে ১৩ বছর আগে ভাঙন ছিল সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর, এখন সেটা সাড়ে ৩ হাজার হেক্টরে এসেছে।’

গত ১-৬ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে রেকর্ড পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একদিনে ১৩০ মিলিমিটার এবং মোট ১২শ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। হঠাৎ এই বৃষ্টিপাতের কারণে এই ক্ষতি হয়েছে। যেখানে গাফিলতি আছে তাদের চিহ্নিত করে বিভাগীয় এবং আইনের আওতায় আনার জন্য যে প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়া মাথায় রেখে এগোচ্ছি।’

সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘১৮-১৯ সালে স্টাডি করে দেখেছি কোন জায়গা দিয়ে পানি গড়ায়। যেখানে প্রতিবছর কাটা হয় এবং ভরাট করা হয় সেখানে। সেখানে জিও ব্যাগ ব্যবহার করা হবে। সেখানে নৌ চলাচল হবে। যখন খোলার প্রয়োজন হবে তখন খুলে দেব আর যখন বন্ধ করা দরকার তখন বন্ধ করে দেব।’

মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২ , ২৯ চৈত্র ১৪২৮ ১০ রমাদ্বান ১৪৪৩

বন্যায় বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাওরের বাঁধ

৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত এবার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

হাওর এলাকায় বন্যায় বার বার বাঁধ ভেঙে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রতি সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় আকস্মিক বন্যা বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের জমি। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, মোট দুই লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে মাত্র পাঁচ হাজার হেক্টরের জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জে ৫৩৫ কিলোমিটার বাঁধের তিন স্থানে ১৩০ মিটার ভেঙে বলে জানিয়েছে পানি উন্নায়ন বোর্ড।

বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগে দীর্ঘদিন। ২০১৭ সালে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল ৮ জন প্রকৌশলী বিরুদ্ধে কিন্তু কি ব্যবস্থা নেয়াছিল তা জানা যায়। তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতির কথা নিজেই শিকার করলেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।

গতকাল সচিবালয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি বলব না পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ দুর্নীতি করে না। দুর্নীতি করে, তবে আমরা চেষ্টা করছি সেটি কমিয়ে আনার জন্য, সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য।’

বার বার বাঁধ ভাঙার অভিযোগ আসে কিন্তু জড়িতদের শাস্তি হয় না-এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৭ সালে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এমন ৮ জন প্রকৌশলীকে কিন্তু আমরা সাসপেন্ড করেছি। এটা আইনের মাধ্যমে করতে হবে। এটা তো আর্মি না যে, একজন লোককে রিটায়ার্ড করে দেয়া যায়। নিয়মের বাইরে কাউকে সাসপেন্ড করতে পারব না। দুদকের মামলা চলবে, নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে সেই ৮ জনের বিরুদ্ধে। আমরা রাতারাতি একজন প্রকৌশলীকে বলতে পারি না তোমরা বাড়ি চলে যাও। আমরা নিয়মের মধ্যে চলছি।’

হাওয়ে বাঁধ ভাঙায় তদন্ত কমিটি গঠন

সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ ভেঙে ফসলের ক্ষতির ঘটনায় কারো গাফিলতি থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। কৃষকদের কৃষি ঋণ মওকুফের কথা সরকার ভাবছে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এবং উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম।

সংবাদ সম্মেলনে জাহিদ ফারুক বলেন, ‘মোট দুই লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে মাত্র পাঁচ হাজার হেক্টরের জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। এটা আমি মনে করি পারসেন্টেজে কম। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা

বলে নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে। কৃষির ক্ষেত্রে কৃষি ঋণ যদি কারো থাকে সেটা যেন মওকুফ হয় সেটা সরকার ভাবছে এবং এভাবেই এগোচ্ছে। নদীর পাড়ে যে পলিমাটিগুলো নরম থাকে, যখন পানি নামতে পারে না তখন বাঁধগুলো নরম হয়ে যায় এবং প্রাকৃতিক কারণে নদী ভাঙন হয়ে যায়। এটা কিন্তু বন্ধ করা যাবে না। এটার মধ্যে বসবাস করতে হবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষিমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হাওরে যাবো এবং কত পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটা জানতে পারবো। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সর্বাবস্থায় সক্রিয় আছি। আমরা চাই না ফসলের হানি হোক। মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে মতামতসহ প্রতিবেদন দেবে কমিটি।’

ভারতে হঠাৎ বৃষ্টিপাতের কারণে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে

সুনামগঞ্জ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পানি উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, ‘৫৩৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে তিন জায়গায় যথাক্রমে ৫০, ৫০ ও ৩০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। একটা জায়গায় বন্ধ করতে পেরেছিলাম এবং আরেকটা জায়গায় পানির গভীরতা ৫০-৬০ মিটার। আরেকটা মেরামতের কাজ চলছে। আমরা পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। হাওর আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি, তাদের পরামর্শ মাথায় রেখে কাজ করছি। আজ থেকে ১৩ বছর আগে ভাঙন ছিল সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর, এখন সেটা সাড়ে ৩ হাজার হেক্টরে এসেছে।’

গত ১-৬ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে রেকর্ড পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একদিনে ১৩০ মিলিমিটার এবং মোট ১২শ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। হঠাৎ এই বৃষ্টিপাতের কারণে এই ক্ষতি হয়েছে। যেখানে গাফিলতি আছে তাদের চিহ্নিত করে বিভাগীয় এবং আইনের আওতায় আনার জন্য যে প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়া মাথায় রেখে এগোচ্ছি।’

সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘১৮-১৯ সালে স্টাডি করে দেখেছি কোন জায়গা দিয়ে পানি গড়ায়। যেখানে প্রতিবছর কাটা হয় এবং ভরাট করা হয় সেখানে। সেখানে জিও ব্যাগ ব্যবহার করা হবে। সেখানে নৌ চলাচল হবে। যখন খোলার প্রয়োজন হবে তখন খুলে দেব আর যখন বন্ধ করা দরকার তখন বন্ধ করে দেব।’