মাহাবুব আলম লিটন, মুন্সীগঞ্জ
রমজান মাসকে ঘিরে ইফতার সামগ্রী দ্রব্যের দাম যখন ঊর্ধ্বগতি, তখন নিম্নআয়ের মানুষের জন্য ১০ টাকায় ইফতার সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিক্রমপুর মানব সেবা ফাউন্ডেশন।
গতকাল সকাল ১০টায় মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া স্কুল মাঠে ‘১০ টাকায় ইফতার বাজার’ নামক এক ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। অস্থায়ী এই বাজার থেকে ১০ টাকার বিনিময়ে তেল, খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, চিড়া ও মুড়িসহ ইফতারে ৭টি পণ্য কিনে নেন নিম্নআয়ের মানুষজন। এমন আয়োজনে অসহায় নিম্নআয়ের মানুষের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে।
সরেজমিন দেখা যায়, অস্থায়ী এই বাজারের ভিন্ন ভিন্ন স্টলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তেল, খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, চিড়া ও মুড়ি। অন্যসব বাজারের মতো নিম্নআয়ের মানুষজন
নিজ পছন্দ মতো পণ্য সংগ্রহ করছেন। তবে সবগুলোর পণ্যের মোট দাম রাখা হচ্ছে মাত্র ১০ টাকা।
দিঘীরপাড় এলাকার রুনা বেগম (৫৫) নামের এক বৃদ্ধা নারী বলেন, পাশের বাড়ির একজন ছোলা-মুড়ি দিছিল। পাঁচ রোজায় সব শেষ হয়ে গেছে। পরে আর কিনে খাইতে পারি নাই। এহন ১০ টাকা দিয়া কত কিছু কিনে নিলাম। যা দিয়া বাকি রমজানগুলো কাটাইয়া দিতে পারমু। আল্লাহ কাছে দোয়া করি যারা আমাগো এত কম দামে এতো কিছু দিলো তাদের আল্লাহ ভালো রাখুক।
পূবরাখি এলাকার বাসিন্দা লুৎফর বেপারি (৬০) বলেন, আগের দিন বাজারে কয়েকজনের কাছে শুনলাম এখানে ১০ টাকা দিয়ে বাজার করা যাইবো। প্রথমে বিশ্বাস না করলেও আজ সকালে এসে সত্যি সত্যি ১০ টাকা দিয়ে বাজার থেকে সবকিছু কিনছি। এর আগেও তাদের সংগঠন থেকে ঈদের খাবার, শীতের কম্বল পাইছি বিনামূল্যে। ছোট ছোট পোলাপানগুলা আমাদের জন্য কতকিছুই না করছে।
রাউৎভোগ গ্রামের নাজমা বেগম (৩৫) বলেন, বাজারে যেখানে ১ লিটার তেলের দাম ৭০ টাকা সেখানে ৭টা পণ্য মাত্র ১০ টাকায় পাইছি। এখানে এসে মনে হলো বাপ-দাদার আমলের অল্প টাকায় আমরা বাজার থেকেই পণ্য নিতেছি। রোজার বাকি দিনগুলা ভালোভাবে কাটবে, চিন্তামুক্ত।
সংগঠনের সদস্য মুন্নি আক্তার বলেন, আমরা চাইলে ইফতার সামগ্রীগুলো বিনামূল্যে তাদের দেয়া যেতো। তবে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা চান, তারা সামান্য মূল্যে ক্রয় করুক। এতে তাদের আত্মসম্মান অক্ষুণœ থাকবে। পাশাপাশি বাজার থেকে ক্রয় করার মতো একটি অনুভূতি লাভ করবেন।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াদ হোসাইন বলেন, বর্তমান বাজারের অবস্থা বিবেচনা করে আমরা এই অস্থায়ী বাজারের আয়োজন করেছি। সংগঠনের সদস্যদের দান ও মাসিক চাঁদা দিয়ে বাজার পরিচালনা করা হচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনা আরও বড় ছিল। তবে আর্থিক সংকটের কারণে কিছুটা সীমিত পরিসরে করা হচ্ছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা এবছর যে হারে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি আগামীতে তার কয়েকগুণ বেশি মানুষকে সহযোগিতা করতে পারবো। এই কাজটি দেখে যাতে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয় ও এগিয়ে আসে সেটিই আমাদের এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য।
সংগঠনের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক হিরা বলেন, প্রথম পর্যায় এই বাজার থেকে দুই শতাধিক মানুষ সহায়তা পেয়েছেন। আমরা অসহায় মানুষের আগ্রহ ও তৃপ্তির হাঁসি দেখে আমরা আনন্দিত হয়েছি। ঈদকে কেন্দ্র করে ঈদ বাজার আয়োজনেরও পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেখানে নামমাত্র মূল্যে নিম্নআয়ের অসহায় মানুষদের খাদ্য সহায়তা করা হবে।
মুন্সীগঞ্জ : ১০ টাকার ইফতার বাজার -সংবাদ
আরও খবরমঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২ , ২৯ চৈত্র ১৪২৮ ১০ রমাদ্বান ১৪৪৩
মুন্সীগঞ্জ : ১০ টাকার ইফতার বাজার -সংবাদ
মাহাবুব আলম লিটন, মুন্সীগঞ্জ
রমজান মাসকে ঘিরে ইফতার সামগ্রী দ্রব্যের দাম যখন ঊর্ধ্বগতি, তখন নিম্নআয়ের মানুষের জন্য ১০ টাকায় ইফতার সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিক্রমপুর মানব সেবা ফাউন্ডেশন।
গতকাল সকাল ১০টায় মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া স্কুল মাঠে ‘১০ টাকায় ইফতার বাজার’ নামক এক ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। অস্থায়ী এই বাজার থেকে ১০ টাকার বিনিময়ে তেল, খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, চিড়া ও মুড়িসহ ইফতারে ৭টি পণ্য কিনে নেন নিম্নআয়ের মানুষজন। এমন আয়োজনে অসহায় নিম্নআয়ের মানুষের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে।
সরেজমিন দেখা যায়, অস্থায়ী এই বাজারের ভিন্ন ভিন্ন স্টলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তেল, খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, চিড়া ও মুড়ি। অন্যসব বাজারের মতো নিম্নআয়ের মানুষজন
নিজ পছন্দ মতো পণ্য সংগ্রহ করছেন। তবে সবগুলোর পণ্যের মোট দাম রাখা হচ্ছে মাত্র ১০ টাকা।
দিঘীরপাড় এলাকার রুনা বেগম (৫৫) নামের এক বৃদ্ধা নারী বলেন, পাশের বাড়ির একজন ছোলা-মুড়ি দিছিল। পাঁচ রোজায় সব শেষ হয়ে গেছে। পরে আর কিনে খাইতে পারি নাই। এহন ১০ টাকা দিয়া কত কিছু কিনে নিলাম। যা দিয়া বাকি রমজানগুলো কাটাইয়া দিতে পারমু। আল্লাহ কাছে দোয়া করি যারা আমাগো এত কম দামে এতো কিছু দিলো তাদের আল্লাহ ভালো রাখুক।
পূবরাখি এলাকার বাসিন্দা লুৎফর বেপারি (৬০) বলেন, আগের দিন বাজারে কয়েকজনের কাছে শুনলাম এখানে ১০ টাকা দিয়ে বাজার করা যাইবো। প্রথমে বিশ্বাস না করলেও আজ সকালে এসে সত্যি সত্যি ১০ টাকা দিয়ে বাজার থেকে সবকিছু কিনছি। এর আগেও তাদের সংগঠন থেকে ঈদের খাবার, শীতের কম্বল পাইছি বিনামূল্যে। ছোট ছোট পোলাপানগুলা আমাদের জন্য কতকিছুই না করছে।
রাউৎভোগ গ্রামের নাজমা বেগম (৩৫) বলেন, বাজারে যেখানে ১ লিটার তেলের দাম ৭০ টাকা সেখানে ৭টা পণ্য মাত্র ১০ টাকায় পাইছি। এখানে এসে মনে হলো বাপ-দাদার আমলের অল্প টাকায় আমরা বাজার থেকেই পণ্য নিতেছি। রোজার বাকি দিনগুলা ভালোভাবে কাটবে, চিন্তামুক্ত।
সংগঠনের সদস্য মুন্নি আক্তার বলেন, আমরা চাইলে ইফতার সামগ্রীগুলো বিনামূল্যে তাদের দেয়া যেতো। তবে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা চান, তারা সামান্য মূল্যে ক্রয় করুক। এতে তাদের আত্মসম্মান অক্ষুণœ থাকবে। পাশাপাশি বাজার থেকে ক্রয় করার মতো একটি অনুভূতি লাভ করবেন।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াদ হোসাইন বলেন, বর্তমান বাজারের অবস্থা বিবেচনা করে আমরা এই অস্থায়ী বাজারের আয়োজন করেছি। সংগঠনের সদস্যদের দান ও মাসিক চাঁদা দিয়ে বাজার পরিচালনা করা হচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনা আরও বড় ছিল। তবে আর্থিক সংকটের কারণে কিছুটা সীমিত পরিসরে করা হচ্ছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা এবছর যে হারে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি আগামীতে তার কয়েকগুণ বেশি মানুষকে সহযোগিতা করতে পারবো। এই কাজটি দেখে যাতে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয় ও এগিয়ে আসে সেটিই আমাদের এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য।
সংগঠনের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক হিরা বলেন, প্রথম পর্যায় এই বাজার থেকে দুই শতাধিক মানুষ সহায়তা পেয়েছেন। আমরা অসহায় মানুষের আগ্রহ ও তৃপ্তির হাঁসি দেখে আমরা আনন্দিত হয়েছি। ঈদকে কেন্দ্র করে ঈদ বাজার আয়োজনেরও পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেখানে নামমাত্র মূল্যে নিম্নআয়ের অসহায় মানুষদের খাদ্য সহায়তা করা হবে।