ডিজিটাল দেশ বিনির্মাণে ডিজিটাল সংযুক্তি খাতের অর্জন

মোস্তাফা জব্বার

এক ॥

ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে ডিজিটাল সংযুক্তি ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে ডিজিটাল মহাসড়ক নির্মাণ, ডিজিটাল ডিভাইস উদ্ভাবন, উৎপাদন ও রপ্তানি এবং ডিজিটাল ডিভাইসের সহজ লভ্যতা নিশ্চিতকরণ। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ডিজিটাল সংযুক্তি অপরিহার্য। এরই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা ডিজিটাল রূপান্তরের স্থপতি সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়ের দিকনির্দেশনায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ডিজিটাল সংযুক্তি নিশ্চিত করতে ডিজিটাল মহাসড়ক নির্মাণসহ বহুমুখী ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তুলতে বিগত ১৩ বছরে যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। আমার সৌভাগ্য যে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে মাত্র একমাস ব্যতীত পুরো সময়টাতেই এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরেছি। প্রাসঙ্গিকভাবেই স্মরণ করতে হবে যে, ডিজিটাল সংযুক্তির সূচনা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। তিনি টিএনটি বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন, টেলিফোন লাইন চালু করেন, আইটিইউর সদস্যপদ গ্রহণ করেন ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক টেলিসেবার ব্যবস্থা করেন। এটিও স্মরণ করতে হবে যে, বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগের বিপ্লবটি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হতে ধরেই হয়েছে। তিনি ১৯৯৭ সালে মোবাইলের মনোপলী ভাঙেন ও ২জি চালু করেন। এরপর তিনি ২০১৩ সালে থ্রিজি চালু করেন। ২০১৮ সালে ৪জি ও ২০২১ সালে ৫জি চালু করেন। তার হাত ধরে সিমিউই৫ চালু হয়েছে। সিমিউই৬ আসছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ আকাশে আছে ২ ও ৩ এর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দেশব্যাপী ফাইবার অপটিক্স কানেক্টিভিটি ও সেটিকে ইউনিয়ন পর্যন্ত পৌছানোর কাজটাও শেখ হাসিনাই করেন। দুর্গম প্রত্যন্ত পাহড়ি এলাকা বা সুন্দরবনে মোবাইল সেবাও তিনিই দিয়েছেন।

বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্বভার গ্রহণকালে বাংলাদেশের টেলিডেনসিটি ছিল ৩০ শতাংশ। বর্তমানে এই হার প্রায় শতভাগে উন্নীত হয়েছে। ২০০৮ সালে যেখানে মোবাইল গ্রাহক ছিল ৪ কোটি ৪৬ লাখ, বর্তমানে তা ১৭ কোটি ৬৪ লাখে অতিক্রম করেছে। এ সময়ে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল মাত্র ৪০ লাখ, বর্তমানে এ সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৯২ লাখ। ব্যান্ডউইডথের ব্যবহার যেখানে ছিল ৭ দশমিক ৫ জিবিপিএস বর্তমানে তা ৩৪৪০ জিবিপিএস অতিক্রম করেছে। ২০০৮ সালে টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত লাইসেন্স ছিল ৬০৮টি, বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এ সংখ্যা ৩,৩৯৬টি। ২০০৮ সালে এক এমবিপিএস ব্যান্ডউইডথ চার্জ ছিলো ২৭০০০ টাকা; যা এখন সর্বনিম্ন ৬০ টাকা নির্ধারিত হয়। সবচেয়ে বড় সুখবর হচ্ছে যে মোবাইল ডাটার ক্যারি ফরোয়ার্ডের পাশাপাশি ডাটাকে মেয়াদহীন করা হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল সংযোগ প্রতিষ্ঠায় ডিজিটাল অবকাঠামো সম্প্রসারণে ২০১৮ সালের পর গত চার বছরে অভাবনীয় পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ফোরজি যুগে পদার্পণ করে।

২০১৮ সালে বিশ্ব যখন ফাইভজি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবছে বাংলাদেশ সেই বছরই এই প্রযুক্তির পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় দেশে ফাইভজির সফল এ পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। এর আগে ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ফোরজি বেতার তরঙ্গ নিলাম এবং ২০ ফেব্রুয়ারি মোবাইল অপারেটরদের ফোরজি লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে ফোরজি সেবা চালু করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত তিন বছরে ফাইভজি প্রযুক্তির নীতিমালা প্রণয়ন ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বহুপাক্ষিক আলোচনা ও বিচার বিশ্লেষণ করেই ফাইভজি যুগে প্রবেশের রোডম্যাপ তৈরি করেছি আমরা। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ ডিসেম্বর ২০২১ বাংলাদেশ ফাইভ যুগে প্রবেশ করেছে। ২২ সালের মাঝেই বাণিজ্যিকভাবে তা চালু করার বিষয়ে ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছি। এরই মাঝে ২০১৮, ২১ ও ২২ সালে তরঙ্গ নিলাম হয়েছে।

মহাকাশে বাংলাদেশের পদচারণার প্রথম সোপান ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ জাতীয় জীবনে এক ঐতিহাসিক সূচনার অবিশ্বাস্য অগ্রযাত্রা। এ অগ্রযাত্রা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরে সংগ্রাম এগিয়ে নেওয়ার উজ্জ¦ল সোপান অতিক্রম করা। অবিস্মরণীয় এ অভিযাত্রা উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশক। ১২ মে ২০১৮ তারিখ শনিবার রাত ২টা ১৪ মিনিটে বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এরই মধ্য দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশ অভিসিক্ত হলো ৫৭তম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের মর্যাদায়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সুবিধার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সমগ্র বাংলাদেশের স্থল ও জলসীমায় নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচারের নিশ্চয়তা, বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ প্রদেয় বার্ষিক ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয়, ট্রান্সপন্ডার লিজের মাধ্যমে প্রচুর বৈদিশিক মুদ্রা আয়, টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবার পাশাপাশি টেলিমেডিসিন, ডিজিটাল-লার্নিং, ডিজিটাল-এডুকেশন, ডিটিএইচ প্রভৃতি সেবা প্রদান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাবমেরিন ক্যাবল বা টেরিস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ সুবিধা প্রদান, স্যাটেলাইটের বিভিন্ন সেবার লাইসেন্স ফি ও স্পেকট্রাম চার্জ বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, স্যাটেলাইট টেকনোলজি ও সেবার প্রসারের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি।

মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। মহাকাশ বিষয়ক রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গ্লাভকসমসের সঙ্গে স?্যাটেলাইট তৈরি ও উৎক্ষেপণ বিষয়ে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ?্য দিয়ে আর্থ-অবজারভেটরি ক?্যাটাগরির এই স?্যাটেলাইটটির নির্মাণের অভিযাত্রা শুরু হয়। আমার উপস্থিতিতে গত ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে ঢাকায় বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি কার্যালয়ে বিএসসিএলের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং গ্লাভকসমসের মহাপরিচালক দিমিত্রি লস্কুতন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সহযোগিতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ২০২৩ সালের মধ্যে এটির কার্যক্রম চালু করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। দেশের প্রথম স্যাটেলাইটের মাধ্যমে স্যাটেলাইটনির্ভর সম্প্রচার ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন করে। অন্যান্য প্রকৃতি ও ধরনের স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ডিজিটাল সংযুক্তির সক্ষমতা তৈরি সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ জাতীয় জীবনের জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হতে যাচ্ছে।

কুয়াকাটায় দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের পর দেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বহুল প্রত্যাশিত তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সি-মি-৬ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স এগ্রিমেন্ট এবং কনসোর্টিয়ামের সরবরাহকারীগণের সঙ্গে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

২০২৪ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটি চালু হবে বলে আমি দৃঢ় আশাবাদী। এটি চালু হওয়ার পর দেশে ডিজিটাল সংযুক্তি বিকাশে আরও একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হবে। সেই সঙ্গে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ, ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু এবং তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগে নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একটি বড় সফলতা। নির্বাচনী এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২০১৯ সাল থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি।

২০১৮ সালের নভেম্বরে টেলিযোগাযোগ খাতে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয় সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার বা এসএমপি নীতিমালা।

২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি উদ্বোধন করা হয়েছে আইএমইআই ডাটা সেন্টার। রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তা বিধানে অনিবন্ধিত সিমকার্ড বিক্রি, অনুমোদনহীন মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রয় ও বাজারজাতকরণ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

১৫০ টাকায় বিটিসিএল ল্যান্ড ফোনে যতখুশি তত কথা বলা চালু লাইনরেন্ট মওকুফ এবং ৫২ পয়সা মিনিটে অন্য অপারেটরে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট এই সেবাটি চালু করা হয়।

বিনামূল্যে দেশের ৫৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফ্রি ওয়াইফাই জোন স্থাপনের কার্যক্রম আমরা বাস্তবায়ন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় দ্বীপ, চর ও হাওর অঞ্চলসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ডিজিটাল কানেক্টিভিটি পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের অর্থে আমরা ইতোমধ্যে দুর্গম প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল শিক্ষার কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছি। এরই মধ্য দিয়ে দেশে ডিজিটাল শিক্ষা বিস্তারের সূচনা হতে চলেছে। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ফাইবার অপটিক ক্যাবল সম্প্রসারণ করা হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল, হাওর, পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম পাহাড় উপকূলীয় ও দ্বীপ এলাকায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হচ্ছে।

২০২১ সালে আমরা আইএসপি নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। এর ফলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের এক দেশ এক রেট নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ৬ জুন ২০২১ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে এক দেশ এক রেট চালু করা হয়। কোভিডকালে মানুষের জীবনযাত্রা সচল রাখতে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত শতভাগ টাওয়ার ফোরজি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। দেশ ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন ও রপ্তানি শুরু হয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষেণ ও অবকাঠামো ব্যবস্থাপনায় বিপুল ব্যয়ের পাশাপাশি টাওয়ারের অনিয়ন্ত্রিত সংখ্যা, ভূমি ও বিদ্যুতের সংকট ছাড়াও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাবের বিভিন্ন দিক বিবেচনায় মানসম্মত টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানে গত ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর ৪টি কোম্পানিকে টাওয়ার লাইসেন্স দেওয়া হয়।

মোবাইল ফোন ও নেটওয়ার্ক এখন মানুষের জীবনের শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রযুক্তিবান্ধব বিনিয়োগ নীতির ফলে দেশে বর্তমানে মোবাইল ফোনের চাহিদার শতকরা ৭০ ভাগই বাংলাদেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। স্যামসাং, অপ্পো ও শাওমিসহ দেশে ১৪টি মোবাইল কোম্পানি অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে মেড-ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ডের মোবাইল রপ্তানি করছে। দেশে আরও চারটি মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন কারখানা স্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।

[লেখক : ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী]

ঢাকা। ১০ এপ্রিল, ২০২২।

মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২ , ২৯ চৈত্র ১৪২৮ ১০ রমাদ্বান ১৪৪৩

ডিজিটাল দেশ বিনির্মাণে ডিজিটাল সংযুক্তি খাতের অর্জন

মোস্তাফা জব্বার

এক ॥

ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে ডিজিটাল সংযুক্তি ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে ডিজিটাল মহাসড়ক নির্মাণ, ডিজিটাল ডিভাইস উদ্ভাবন, উৎপাদন ও রপ্তানি এবং ডিজিটাল ডিভাইসের সহজ লভ্যতা নিশ্চিতকরণ। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ডিজিটাল সংযুক্তি অপরিহার্য। এরই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা ডিজিটাল রূপান্তরের স্থপতি সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়ের দিকনির্দেশনায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ডিজিটাল সংযুক্তি নিশ্চিত করতে ডিজিটাল মহাসড়ক নির্মাণসহ বহুমুখী ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তুলতে বিগত ১৩ বছরে যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। আমার সৌভাগ্য যে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে মাত্র একমাস ব্যতীত পুরো সময়টাতেই এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরেছি। প্রাসঙ্গিকভাবেই স্মরণ করতে হবে যে, ডিজিটাল সংযুক্তির সূচনা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। তিনি টিএনটি বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন, টেলিফোন লাইন চালু করেন, আইটিইউর সদস্যপদ গ্রহণ করেন ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক টেলিসেবার ব্যবস্থা করেন। এটিও স্মরণ করতে হবে যে, বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগের বিপ্লবটি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হতে ধরেই হয়েছে। তিনি ১৯৯৭ সালে মোবাইলের মনোপলী ভাঙেন ও ২জি চালু করেন। এরপর তিনি ২০১৩ সালে থ্রিজি চালু করেন। ২০১৮ সালে ৪জি ও ২০২১ সালে ৫জি চালু করেন। তার হাত ধরে সিমিউই৫ চালু হয়েছে। সিমিউই৬ আসছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ আকাশে আছে ২ ও ৩ এর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দেশব্যাপী ফাইবার অপটিক্স কানেক্টিভিটি ও সেটিকে ইউনিয়ন পর্যন্ত পৌছানোর কাজটাও শেখ হাসিনাই করেন। দুর্গম প্রত্যন্ত পাহড়ি এলাকা বা সুন্দরবনে মোবাইল সেবাও তিনিই দিয়েছেন।

বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্বভার গ্রহণকালে বাংলাদেশের টেলিডেনসিটি ছিল ৩০ শতাংশ। বর্তমানে এই হার প্রায় শতভাগে উন্নীত হয়েছে। ২০০৮ সালে যেখানে মোবাইল গ্রাহক ছিল ৪ কোটি ৪৬ লাখ, বর্তমানে তা ১৭ কোটি ৬৪ লাখে অতিক্রম করেছে। এ সময়ে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল মাত্র ৪০ লাখ, বর্তমানে এ সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৯২ লাখ। ব্যান্ডউইডথের ব্যবহার যেখানে ছিল ৭ দশমিক ৫ জিবিপিএস বর্তমানে তা ৩৪৪০ জিবিপিএস অতিক্রম করেছে। ২০০৮ সালে টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত লাইসেন্স ছিল ৬০৮টি, বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এ সংখ্যা ৩,৩৯৬টি। ২০০৮ সালে এক এমবিপিএস ব্যান্ডউইডথ চার্জ ছিলো ২৭০০০ টাকা; যা এখন সর্বনিম্ন ৬০ টাকা নির্ধারিত হয়। সবচেয়ে বড় সুখবর হচ্ছে যে মোবাইল ডাটার ক্যারি ফরোয়ার্ডের পাশাপাশি ডাটাকে মেয়াদহীন করা হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল সংযোগ প্রতিষ্ঠায় ডিজিটাল অবকাঠামো সম্প্রসারণে ২০১৮ সালের পর গত চার বছরে অভাবনীয় পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ফোরজি যুগে পদার্পণ করে।

২০১৮ সালে বিশ্ব যখন ফাইভজি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবছে বাংলাদেশ সেই বছরই এই প্রযুক্তির পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় দেশে ফাইভজির সফল এ পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। এর আগে ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ফোরজি বেতার তরঙ্গ নিলাম এবং ২০ ফেব্রুয়ারি মোবাইল অপারেটরদের ফোরজি লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে ফোরজি সেবা চালু করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত তিন বছরে ফাইভজি প্রযুক্তির নীতিমালা প্রণয়ন ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বহুপাক্ষিক আলোচনা ও বিচার বিশ্লেষণ করেই ফাইভজি যুগে প্রবেশের রোডম্যাপ তৈরি করেছি আমরা। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ ডিসেম্বর ২০২১ বাংলাদেশ ফাইভ যুগে প্রবেশ করেছে। ২২ সালের মাঝেই বাণিজ্যিকভাবে তা চালু করার বিষয়ে ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছি। এরই মাঝে ২০১৮, ২১ ও ২২ সালে তরঙ্গ নিলাম হয়েছে।

মহাকাশে বাংলাদেশের পদচারণার প্রথম সোপান ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ জাতীয় জীবনে এক ঐতিহাসিক সূচনার অবিশ্বাস্য অগ্রযাত্রা। এ অগ্রযাত্রা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরে সংগ্রাম এগিয়ে নেওয়ার উজ্জ¦ল সোপান অতিক্রম করা। অবিস্মরণীয় এ অভিযাত্রা উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশক। ১২ মে ২০১৮ তারিখ শনিবার রাত ২টা ১৪ মিনিটে বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এরই মধ্য দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশ অভিসিক্ত হলো ৫৭তম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের মর্যাদায়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সুবিধার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সমগ্র বাংলাদেশের স্থল ও জলসীমায় নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচারের নিশ্চয়তা, বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ প্রদেয় বার্ষিক ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয়, ট্রান্সপন্ডার লিজের মাধ্যমে প্রচুর বৈদিশিক মুদ্রা আয়, টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবার পাশাপাশি টেলিমেডিসিন, ডিজিটাল-লার্নিং, ডিজিটাল-এডুকেশন, ডিটিএইচ প্রভৃতি সেবা প্রদান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাবমেরিন ক্যাবল বা টেরিস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ সুবিধা প্রদান, স্যাটেলাইটের বিভিন্ন সেবার লাইসেন্স ফি ও স্পেকট্রাম চার্জ বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, স্যাটেলাইট টেকনোলজি ও সেবার প্রসারের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি।

মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। মহাকাশ বিষয়ক রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গ্লাভকসমসের সঙ্গে স?্যাটেলাইট তৈরি ও উৎক্ষেপণ বিষয়ে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ?্য দিয়ে আর্থ-অবজারভেটরি ক?্যাটাগরির এই স?্যাটেলাইটটির নির্মাণের অভিযাত্রা শুরু হয়। আমার উপস্থিতিতে গত ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে ঢাকায় বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি কার্যালয়ে বিএসসিএলের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং গ্লাভকসমসের মহাপরিচালক দিমিত্রি লস্কুতন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সহযোগিতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ২০২৩ সালের মধ্যে এটির কার্যক্রম চালু করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। দেশের প্রথম স্যাটেলাইটের মাধ্যমে স্যাটেলাইটনির্ভর সম্প্রচার ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন করে। অন্যান্য প্রকৃতি ও ধরনের স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ডিজিটাল সংযুক্তির সক্ষমতা তৈরি সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ জাতীয় জীবনের জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হতে যাচ্ছে।

কুয়াকাটায় দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের পর দেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বহুল প্রত্যাশিত তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সি-মি-৬ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স এগ্রিমেন্ট এবং কনসোর্টিয়ামের সরবরাহকারীগণের সঙ্গে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

২০২৪ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটি চালু হবে বলে আমি দৃঢ় আশাবাদী। এটি চালু হওয়ার পর দেশে ডিজিটাল সংযুক্তি বিকাশে আরও একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হবে। সেই সঙ্গে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ, ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু এবং তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগে নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একটি বড় সফলতা। নির্বাচনী এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২০১৯ সাল থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি।

২০১৮ সালের নভেম্বরে টেলিযোগাযোগ খাতে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয় সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার বা এসএমপি নীতিমালা।

২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি উদ্বোধন করা হয়েছে আইএমইআই ডাটা সেন্টার। রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তা বিধানে অনিবন্ধিত সিমকার্ড বিক্রি, অনুমোদনহীন মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রয় ও বাজারজাতকরণ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

১৫০ টাকায় বিটিসিএল ল্যান্ড ফোনে যতখুশি তত কথা বলা চালু লাইনরেন্ট মওকুফ এবং ৫২ পয়সা মিনিটে অন্য অপারেটরে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট এই সেবাটি চালু করা হয়।

বিনামূল্যে দেশের ৫৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফ্রি ওয়াইফাই জোন স্থাপনের কার্যক্রম আমরা বাস্তবায়ন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় দ্বীপ, চর ও হাওর অঞ্চলসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ডিজিটাল কানেক্টিভিটি পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের অর্থে আমরা ইতোমধ্যে দুর্গম প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল শিক্ষার কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছি। এরই মধ্য দিয়ে দেশে ডিজিটাল শিক্ষা বিস্তারের সূচনা হতে চলেছে। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ফাইবার অপটিক ক্যাবল সম্প্রসারণ করা হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল, হাওর, পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম পাহাড় উপকূলীয় ও দ্বীপ এলাকায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হচ্ছে।

২০২১ সালে আমরা আইএসপি নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। এর ফলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের এক দেশ এক রেট নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ৬ জুন ২০২১ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে এক দেশ এক রেট চালু করা হয়। কোভিডকালে মানুষের জীবনযাত্রা সচল রাখতে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত শতভাগ টাওয়ার ফোরজি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। দেশ ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন ও রপ্তানি শুরু হয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষেণ ও অবকাঠামো ব্যবস্থাপনায় বিপুল ব্যয়ের পাশাপাশি টাওয়ারের অনিয়ন্ত্রিত সংখ্যা, ভূমি ও বিদ্যুতের সংকট ছাড়াও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাবের বিভিন্ন দিক বিবেচনায় মানসম্মত টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানে গত ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর ৪টি কোম্পানিকে টাওয়ার লাইসেন্স দেওয়া হয়।

মোবাইল ফোন ও নেটওয়ার্ক এখন মানুষের জীবনের শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রযুক্তিবান্ধব বিনিয়োগ নীতির ফলে দেশে বর্তমানে মোবাইল ফোনের চাহিদার শতকরা ৭০ ভাগই বাংলাদেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। স্যামসাং, অপ্পো ও শাওমিসহ দেশে ১৪টি মোবাইল কোম্পানি অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে মেড-ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ডের মোবাইল রপ্তানি করছে। দেশে আরও চারটি মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন কারখানা স্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।

[লেখক : ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী]

ঢাকা। ১০ এপ্রিল, ২০২২।