সব শরণার্থীই সমবেদনা পাওয়ায় যোগ্য

নিল ডেং

গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে যখন রাশিয়ার সেনাবাহিনী রাজধানী কিয়েভের দিকে অগ্রসর হওয়া শুরু করে, তখন ইউক্রেনীয়দের শেষ আশার প্রদীপও নিভে যায়। ইউক্রেনের বড় বড় শহরগুলো ক্রমে ধ্বংস হতে শুরু করে। শত সহগ্র মানুষ প্রাণ হারান। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় পাওয়ার আশায় উদ্বাস্তু হন ৪ মিলিয়নেরও বেশি নাগরিক।

মায়েরা বাচ্চাদের কোলে নিয়ে দৌড়াচ্ছে, পরিবারগুলো তাদের বাড়ির ধ্বংসস্তূপে প্রিয়জনের লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছে, হাজার হাজার উদ্বাস্তু সীমান্তে ভিড় করছে এমন হৃদয়বিদারক অথচ পরিচিত দৃশ্য আমরা দিনের পর দিন টিভি পর্দায় দেখছি।

কিন্তু আমরা ইউক্রেনে কিছু নতুন দৃশ্যের অবতারণা লক্ষ্য করছি। যেমন সীমান্তরক্ষী কর্তৃক শরণার্থীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো, প্রতিবেশী দেশের নাগরিকরা নিজেদের বাড়িতে শরণার্থীদের আশ্রয় দান, ইউক্রেনের শরণার্থীদের জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ভাষণের পর ভাষণ, শরণার্থী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ এমন অনেক বিষয় আমরা লক্ষ্য করছি, যা সাধারণত শরণার্থীদের ক্ষেত্রে ঘটে না।

ইউক্রেনের শরণার্থীদের সহযোগিতায় বিশ্বের একতা দেখে আমি অবশ্যই খুশি। কারণ যুদ্ধের ভয়াবহতার দরুন শরণার্থীদের দুর্দশার কথা আমি ভালো করেই জানি। তাই আমি রাশিয়ার নিষ্ঠুর ও পাশবিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয়দের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি। কিন্তু যখন ১১ বছর আগে দক্ষিণ সুদানে আমার গ্রাম সশস্ত্র আক্রমণ করে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল তখন কোথায় ছিল আজকের এই বিশ্ব নেতৃত্ব, বিভিন্ন সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো? কোথায় ছিল সেসব ব্যক্তিবর্গ, যারা এক দশক ধরে শরণার্থী শিবিরে আটকে থাকার পরেও তাদের দেশে ন্যূনতম জায়গাটুকু দিতে অস্বীকার করেছিল? অন্য অনেকের মতো আমি এই প্রশ্নগুলো উত্থাপন না করে পারছি না।

আমি আজীবন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি এবং যুদ্ধ দেখে আসছি। সুদানের গৃহ যুদ্ধের ফলে আমার পিতা ইথিওপিয়ার একটি ছোট্ট গ্রামে পালিয়ে আসেন। সেখানেই আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। কিছুটা বোঝার বয়স হলে আমার পিতা দক্ষিণ সুদানে তার দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার ঘটনাগুলো আমাকে অগণিত বার বলেছেন। তিনি শুধু নীল নদের পাড়ে আমাদের ছোট্ট গ্রামের সৌন্দর্যের কথাই বলেননি তিনি দক্ষিণ সুদান থেকে জীবন বাজি রেখে পালিয়ে আসার ভয়াবহ স্মৃতির কথাও বলেছেন।

২০১০ সালে আমার পিতার ঘটনাগুলো আমার নিজের ঘটনায় রুপান্তরিত হয়। ইথিওপিয়াতে আমার ছোট্ট গ্রামটিতে সশস্ত্র মিলিশিয়া কর্তৃক আক্রান্ত হয় এবং আমি আবারও শরণার্থী হই। ১১ বছর পরেও, আমি এখনো শরণার্থী। আমি খুব ভাগ্যবান যে, আমি কানাডায় অস্থায়ীভাবে পড়াশোনা এবং থাকার জন্য সুযোগ পেয়েছি কিন্তু আমার পরিবার এখনো শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

যুদ্ধ শুধু আমার বাড়ি এবং শৈশবকেই কেড়ে নেয়নি, যুদ্ধ আমার পরিবারের ভবিষ্যৎকেও কেড়ে নিয়েছে।

বিশ্ববাসী এখন যেভাবে ইউক্রেনীয়দের সহযোগিতা করছে যদি একই মমতা ও যতেœর সঙ্গে পাঁচ দশক আগেও আমার বাবার জন্য এগিয়ে আসতেন তাহলে আমাদের জীবন কতই না ভিন্ন হতো। কিংবা ১১ বছর আগে যখন ইথিওপিয়াতে আমাদের গ্রাম আক্রান্ত হলো তখনো যদি বিশ্ববাসী খানিকটা সহানুভূতি ও দয়া দেখাত!

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণের পূর্বে পৃথিবীতে ৮২.৪ মিলিয়ন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষ আছে, যা ইউক্রেনের সমগ্র জনসংখার থেকেও বেশি। আমি এবং আমার পরিবার সেই বিশাল জনগোষ্ঠীর একটি ক্ষুদ্র অংশ।

ইথিওপিয়া থেকে বাংলাদেশ, লেবানন থেকে তুরস্ক বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা শরণার্থী শিবিরের অগণিত শিশু, নারী ও পুরুষের বেশি কিছু চাহিদা নেই। তারা শুধু জীবনের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং মাথা গোঁজার একটু জায়গার প্রার্থনা করেন। তারা নিষ্ঠুর অতীতকে পেছনে ফেলে সমাজে কিছু অবদান রাখাই শরণার্থী শিবিরের অগণিত মানুষের চাওয়া।

ইউক্রেন সংকটের প্রথম দিন থেকেই আমরা দেখে আসছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একত্রে উদ্বাস্তু মানুষের দুর্ভোগ কমানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। ইউক্রেনীয়রা পার্শ্ববর্তী যে কোন দেশে যে কোন সময়ে যেতে পারবেন এবং তাদের সাদরে অভ্যর্থনা জানানো হবে এমন ঘোষণা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

অবশ্যই ইউক্রেনের শরণার্থী সংকটে গৃহীত পদক্ষেপগুলো কোনভাবেই স্বয়ংসম্পূর্ণ না। কিন্তু আমরা অতীতে যেসব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি তার থেকে বহুগুণ ভালো এবং ইউক্রেনের শরণার্থী সমস্যা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে, ইচ্ছা করলেই শরণার্থী সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। শুধু দরকার একটু ভালোবাসার, একটু মমত্ববোধের।

ইউক্রেনের শরণার্থী সংকট আরও দেখিয়ে দিয়েছে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শরণার্থীদের ব্যাপারে এক হতে পারে, পার্শ্ববর্তী সরকারগুলো শরণার্থী প্রত্যাশীদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে পারেন, স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শরণার্থী শিশুদের শিক্ষারব্যবস্থা করতে পারে, সেই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নাগরিকরাও মানবাধিকারের প্রশ্নে শরণার্থীদের সম্মান করতে পারেন।

বিগত যুদ্ধগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে আমার এ আশঙ্কা হচ্ছে যে, কিছুদিন পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইউক্রেনের শরণার্থীদের ব্যাপারে আজকের মতো পদক্ষেপ নেওয়া বন্ধ করে দিবেন, যেমনটি তারা পূর্বেকার শরণার্থীদের ক্ষেত্রে করেছেন। আমার এই আশঙ্কাও হচ্ছে যে, ইউক্রেন সংকট সমাধান হয়ে গেলে বর্তমানে যে সরকারগুলো উদ্বাস্তুদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছেন তারা আবারও শরণার্থীদের দুর্দশার কথা, তাদের ভোগান্তির কথা ভুলে গিয়ে নিজেদের স্বার্থে মনোনিবেশ করবেন।

অনেকেই বলে থাকেন যে, পশ্চিমারা ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছেন কারণ ইউক্রেনীয়রা দেখতে তাদের মতো। সম্ভবত এটি তিক্ত সত্য। কিন্তু ইউক্রেনীয়দের মতো ভিন্ন বর্ণের, ভিন্ন অঞ্চলের শরনার্থীদেরও আশ্রয় পাওয়ার অধিকার আছে।

গত একমাস যাবৎ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটা দেখিয়েছে যে, যুদ্ধের কারণে শরণার্থী মানুষের জন্য তারা কি করতে পারে। আমাদের এই অর্জন ভবিষ্যতে ভুলে যাওয়া উচিত হবে না এবং সাফল্যের এই উদাহরণ অন্যান্য সংঘাতময় অঞ্চলেও ধরে রাখতে হবে। কারণ বিশ্বের সর্বত্র প্রতিটি শিশু, প্রতিটি নারী এবং প্রতিটি মানুষই জীবনের নিরাপত্তা, শান্তি এবং নিজের একটি বাসস্থানের অধিকার রাখে।

সূত্র : আল জাজিরা।

(ভাবান্তর : এনামুল হাসান আরিফ, শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)

[লেখক : দক্ষিণ সুদানের শরণার্থী লেখক ও সমাজকর্মী]

মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২ , ২৯ চৈত্র ১৪২৮ ১০ রমাদ্বান ১৪৪৩

সব শরণার্থীই সমবেদনা পাওয়ায় যোগ্য

নিল ডেং

গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে যখন রাশিয়ার সেনাবাহিনী রাজধানী কিয়েভের দিকে অগ্রসর হওয়া শুরু করে, তখন ইউক্রেনীয়দের শেষ আশার প্রদীপও নিভে যায়। ইউক্রেনের বড় বড় শহরগুলো ক্রমে ধ্বংস হতে শুরু করে। শত সহগ্র মানুষ প্রাণ হারান। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় পাওয়ার আশায় উদ্বাস্তু হন ৪ মিলিয়নেরও বেশি নাগরিক।

মায়েরা বাচ্চাদের কোলে নিয়ে দৌড়াচ্ছে, পরিবারগুলো তাদের বাড়ির ধ্বংসস্তূপে প্রিয়জনের লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছে, হাজার হাজার উদ্বাস্তু সীমান্তে ভিড় করছে এমন হৃদয়বিদারক অথচ পরিচিত দৃশ্য আমরা দিনের পর দিন টিভি পর্দায় দেখছি।

কিন্তু আমরা ইউক্রেনে কিছু নতুন দৃশ্যের অবতারণা লক্ষ্য করছি। যেমন সীমান্তরক্ষী কর্তৃক শরণার্থীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো, প্রতিবেশী দেশের নাগরিকরা নিজেদের বাড়িতে শরণার্থীদের আশ্রয় দান, ইউক্রেনের শরণার্থীদের জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ভাষণের পর ভাষণ, শরণার্থী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ এমন অনেক বিষয় আমরা লক্ষ্য করছি, যা সাধারণত শরণার্থীদের ক্ষেত্রে ঘটে না।

ইউক্রেনের শরণার্থীদের সহযোগিতায় বিশ্বের একতা দেখে আমি অবশ্যই খুশি। কারণ যুদ্ধের ভয়াবহতার দরুন শরণার্থীদের দুর্দশার কথা আমি ভালো করেই জানি। তাই আমি রাশিয়ার নিষ্ঠুর ও পাশবিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয়দের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি। কিন্তু যখন ১১ বছর আগে দক্ষিণ সুদানে আমার গ্রাম সশস্ত্র আক্রমণ করে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল তখন কোথায় ছিল আজকের এই বিশ্ব নেতৃত্ব, বিভিন্ন সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো? কোথায় ছিল সেসব ব্যক্তিবর্গ, যারা এক দশক ধরে শরণার্থী শিবিরে আটকে থাকার পরেও তাদের দেশে ন্যূনতম জায়গাটুকু দিতে অস্বীকার করেছিল? অন্য অনেকের মতো আমি এই প্রশ্নগুলো উত্থাপন না করে পারছি না।

আমি আজীবন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি এবং যুদ্ধ দেখে আসছি। সুদানের গৃহ যুদ্ধের ফলে আমার পিতা ইথিওপিয়ার একটি ছোট্ট গ্রামে পালিয়ে আসেন। সেখানেই আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। কিছুটা বোঝার বয়স হলে আমার পিতা দক্ষিণ সুদানে তার দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার ঘটনাগুলো আমাকে অগণিত বার বলেছেন। তিনি শুধু নীল নদের পাড়ে আমাদের ছোট্ট গ্রামের সৌন্দর্যের কথাই বলেননি তিনি দক্ষিণ সুদান থেকে জীবন বাজি রেখে পালিয়ে আসার ভয়াবহ স্মৃতির কথাও বলেছেন।

২০১০ সালে আমার পিতার ঘটনাগুলো আমার নিজের ঘটনায় রুপান্তরিত হয়। ইথিওপিয়াতে আমার ছোট্ট গ্রামটিতে সশস্ত্র মিলিশিয়া কর্তৃক আক্রান্ত হয় এবং আমি আবারও শরণার্থী হই। ১১ বছর পরেও, আমি এখনো শরণার্থী। আমি খুব ভাগ্যবান যে, আমি কানাডায় অস্থায়ীভাবে পড়াশোনা এবং থাকার জন্য সুযোগ পেয়েছি কিন্তু আমার পরিবার এখনো শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

যুদ্ধ শুধু আমার বাড়ি এবং শৈশবকেই কেড়ে নেয়নি, যুদ্ধ আমার পরিবারের ভবিষ্যৎকেও কেড়ে নিয়েছে।

বিশ্ববাসী এখন যেভাবে ইউক্রেনীয়দের সহযোগিতা করছে যদি একই মমতা ও যতেœর সঙ্গে পাঁচ দশক আগেও আমার বাবার জন্য এগিয়ে আসতেন তাহলে আমাদের জীবন কতই না ভিন্ন হতো। কিংবা ১১ বছর আগে যখন ইথিওপিয়াতে আমাদের গ্রাম আক্রান্ত হলো তখনো যদি বিশ্ববাসী খানিকটা সহানুভূতি ও দয়া দেখাত!

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণের পূর্বে পৃথিবীতে ৮২.৪ মিলিয়ন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষ আছে, যা ইউক্রেনের সমগ্র জনসংখার থেকেও বেশি। আমি এবং আমার পরিবার সেই বিশাল জনগোষ্ঠীর একটি ক্ষুদ্র অংশ।

ইথিওপিয়া থেকে বাংলাদেশ, লেবানন থেকে তুরস্ক বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা শরণার্থী শিবিরের অগণিত শিশু, নারী ও পুরুষের বেশি কিছু চাহিদা নেই। তারা শুধু জীবনের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং মাথা গোঁজার একটু জায়গার প্রার্থনা করেন। তারা নিষ্ঠুর অতীতকে পেছনে ফেলে সমাজে কিছু অবদান রাখাই শরণার্থী শিবিরের অগণিত মানুষের চাওয়া।

ইউক্রেন সংকটের প্রথম দিন থেকেই আমরা দেখে আসছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একত্রে উদ্বাস্তু মানুষের দুর্ভোগ কমানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। ইউক্রেনীয়রা পার্শ্ববর্তী যে কোন দেশে যে কোন সময়ে যেতে পারবেন এবং তাদের সাদরে অভ্যর্থনা জানানো হবে এমন ঘোষণা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

অবশ্যই ইউক্রেনের শরণার্থী সংকটে গৃহীত পদক্ষেপগুলো কোনভাবেই স্বয়ংসম্পূর্ণ না। কিন্তু আমরা অতীতে যেসব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি তার থেকে বহুগুণ ভালো এবং ইউক্রেনের শরণার্থী সমস্যা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে, ইচ্ছা করলেই শরণার্থী সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। শুধু দরকার একটু ভালোবাসার, একটু মমত্ববোধের।

ইউক্রেনের শরণার্থী সংকট আরও দেখিয়ে দিয়েছে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শরণার্থীদের ব্যাপারে এক হতে পারে, পার্শ্ববর্তী সরকারগুলো শরণার্থী প্রত্যাশীদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে পারেন, স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শরণার্থী শিশুদের শিক্ষারব্যবস্থা করতে পারে, সেই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নাগরিকরাও মানবাধিকারের প্রশ্নে শরণার্থীদের সম্মান করতে পারেন।

বিগত যুদ্ধগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে আমার এ আশঙ্কা হচ্ছে যে, কিছুদিন পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইউক্রেনের শরণার্থীদের ব্যাপারে আজকের মতো পদক্ষেপ নেওয়া বন্ধ করে দিবেন, যেমনটি তারা পূর্বেকার শরণার্থীদের ক্ষেত্রে করেছেন। আমার এই আশঙ্কাও হচ্ছে যে, ইউক্রেন সংকট সমাধান হয়ে গেলে বর্তমানে যে সরকারগুলো উদ্বাস্তুদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছেন তারা আবারও শরণার্থীদের দুর্দশার কথা, তাদের ভোগান্তির কথা ভুলে গিয়ে নিজেদের স্বার্থে মনোনিবেশ করবেন।

অনেকেই বলে থাকেন যে, পশ্চিমারা ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছেন কারণ ইউক্রেনীয়রা দেখতে তাদের মতো। সম্ভবত এটি তিক্ত সত্য। কিন্তু ইউক্রেনীয়দের মতো ভিন্ন বর্ণের, ভিন্ন অঞ্চলের শরনার্থীদেরও আশ্রয় পাওয়ার অধিকার আছে।

গত একমাস যাবৎ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটা দেখিয়েছে যে, যুদ্ধের কারণে শরণার্থী মানুষের জন্য তারা কি করতে পারে। আমাদের এই অর্জন ভবিষ্যতে ভুলে যাওয়া উচিত হবে না এবং সাফল্যের এই উদাহরণ অন্যান্য সংঘাতময় অঞ্চলেও ধরে রাখতে হবে। কারণ বিশ্বের সর্বত্র প্রতিটি শিশু, প্রতিটি নারী এবং প্রতিটি মানুষই জীবনের নিরাপত্তা, শান্তি এবং নিজের একটি বাসস্থানের অধিকার রাখে।

সূত্র : আল জাজিরা।

(ভাবান্তর : এনামুল হাসান আরিফ, শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)

[লেখক : দক্ষিণ সুদানের শরণার্থী লেখক ও সমাজকর্মী]