বিদ্যুৎ উৎপাদনে গোলকধাঁধা, সারাদেশেই লোডশেডিং

শতভাগ বিদ্যুতায়নের মাইলফলক অর্জন এবং চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা (ওভার ক্যাপাসিটি) নিয়ে আলোচনার মধ্যে ইদানীং গ্রামাঞ্চল থেকে প্রায়ই লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের মতো অত বেশি না হলেও শহরেও হচ্ছে লোডশেডিং।

নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন বিদ্যুতের অভাবে বোরো খেতে সেচ দিতে পারছে না ময়মনসিংহের ফুলপুর, হালুয়াঘাট, তারাকান্দা, পূর্বধলা, নকলা-নলিতাবাড়ীর চাষিরা।

শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চলগুলোতে একই অবস্থা বলে জানা গেছে। এদিকে মেহেরপুরেও লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ নিয়ে সংকটে পরেছেন স্থানীয় বোরো কৃষকরা।

লোশেডিংয়ের খবর এসেছে রংপুর থেকেও। বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে আবাসিক হলের সামনে বিক্ষোভ করেছেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, ইফতার, তারাবি ও সেহেরির সময়ও লোডশেডিং হচ্ছে কোন কোন এলাকায়। ফলে ভুক্তভোগী গ্রাহকেদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। বিদ্যুৎ স্থাপনায় নাশকতার আশঙ্কায় পিডিবির এক কর্মকর্তা স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে চিঠি দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রীষ্মে এমনিতেই বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকে। তার ওপর রমজানের কারণে বিশেষ করে ইফতার ও তারাবির সময় চাহিদা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে অনেক দিন ধরে। তবে রমজান ও গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সংকট মোকাবিলায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে শিল্প কারখানা ও সিএনজি স্টেশনগুলেতে যথাক্রমে ৪ ও ৬ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, গরমের কারণে চাহিদা যদি আরও কিছুটা বেড়ে যায়, উৎপাদনের যে অবস্থা, তাতে গ্রামের পাশপাশি রাজধানীতেও লোড ম্যানেজমেন্ট (লোডশেডিং) করতে হবে।

সঞ্চালান ও বিতরণ লাইনের নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রীষ্মে ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। এসব কারণেও অনেক সময় বিদ্যুৎ বিতরণে বিঘœ ঘটে। ওভারলোড ট্রান্সফরমারের কারণে পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় এই বিভ্রাট প্রায়ই ঘটে।

দেশে বর্তমানে পিক আওয়ারে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু সে অনুযায়ী বিদ্যুতের উৎপাদন হচ্ছে না। গড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। গত ৭ এপ্রিল দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৮ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ক্যাপটিভ ও অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও আমদানিসহ দেশে সরকারি-বেসরকারি স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে ২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট ক্যাপটিভ এবং ৪০৪ মেগাওয়াট অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাদ দিলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা দাঁড়ায় প্রায় ২২ হাজার মেগাওয়াট।

অর্থাৎ সরল হিসাবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি। তবে কেন এই লোডশেডিং?

ওভার ক্যাপাসিটির কথা ‘ঠিক নয়’

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যানুযায়ী, কারিগরি নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সক্ষমতার শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় না। আইপিপি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) চুক্তি অনুযায়ী, একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘প্ল্যান্ট ক্যাপাসিটি’ ধরা হয় ৮৫ শতাংশ।

কোন একটি কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে অথবা ফ্রিকোয়েন্সি ড্রপ করলে ‘স্পিনিং রিজার্ভ’ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং গ্রিড সিস্টেমের ফ্রিকোয়েন্সি ঠিক রাখতে ব্যবহৃত এফজিএমওর (ফ্রি গভর্নর মোড অব অপারেশন) কারণেও সক্ষমতার চেয়ে ৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে আসে।

বিদ্যুতের ওভার ক্যাপাসিটির বিষয়ে জানতে চাইলে গত বছর অক্টোবরে পিডিবির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেন সংবাদকে বলেছিলেন, ‘অনেকে বলছেন, আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ওভার ক্যাপাসিটি। বিষয়টি সঠিক নয়। অন্তত ৪৩ শতাংশ ব্যবহার করার মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ওভার ক্যাপাসিটি সিস্টেমের জন্য ভালো। সম্প্রতি গ্যাস সংকটে এই বিষয়টি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুরোদমে চালিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হচ্ছে। তেলের কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যেত না।’

প্রকৌশলী বেলায়েত বলেন, ‘গ্যাস কম পেলেই তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে উৎপাদন করতে হচ্ছে। এবছর ১৪ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ডিমান্ড হবে। সিস্টেমের জন্য প্রতি ৬০ মেগাওয়াটের জন্য ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্যাপাসিটি রাখতে হবে। ফলে বলা যায় আমাদের কোন ওভার ক্যাপাসিটি নেই।’

দুই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট ক্যাপটিভ জেনারেশন বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এগুলো গ্রিড থেকে সরবরাহ করতে হলেই আমাদের বিদ্যুৎ সংকট হবে। তাহলে ওভার ক্যাপাসিটি কোথায়।’

দেশে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সক্ষমতা প্রসঙ্গে এক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাই শতভাগ বিদ্যুতের কথা বলেন। তবে কিছু নেতা এই অর্জনের সঙ্গে মেগাওয়াট, গিগাওয়াট যোগ করে জটিলতা তৈরি করেন। কেউ কেউ বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে সরকার’। এ ধরনের বক্তব্যে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হন। মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে, এত বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে, বিদ্যুৎ চলে যায় কেন? এর উত্তর কিন্তু সেসব নেতাদের বক্তব্যে থাকে না। কারণ বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই।’

সম্প্রতি বিবিয়না গ্যাসক্ষেত্রের ছয়টি কূপ দিয়ে বালি আসায় গ্যাস উৎপাদন হঠাৎ কমে যায়। রাজধানীসহ সারাদেশে গ্যাস সরবরাহে সংকট তৈরি হয়। ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় রান্নার গ্যাস বন্ধ হয়ে যায়। দুই-তিন দিন পর পরিস্থিতির উত্তোরণ হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সংকট রয়েই গেছে।

পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, দেশে মোট বিদ্যুৎ গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ২২ লাখ। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ১৬ লাখ। আপাতত বিপাকে আছেন আরইবির গ্রাহকরাই। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, অনেক গ্রামেই দিনে তিন-চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।

বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২ , ৩০ চৈত্র ১৪২৮ ১১ রমাদ্বান ১৪৪৩

বিদ্যুৎ উৎপাদনে গোলকধাঁধা, সারাদেশেই লোডশেডিং

ফয়েজ আহমেদ তুষার

image

শতভাগ বিদ্যুতায়নের মাইলফলক অর্জন এবং চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা (ওভার ক্যাপাসিটি) নিয়ে আলোচনার মধ্যে ইদানীং গ্রামাঞ্চল থেকে প্রায়ই লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের মতো অত বেশি না হলেও শহরেও হচ্ছে লোডশেডিং।

নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন বিদ্যুতের অভাবে বোরো খেতে সেচ দিতে পারছে না ময়মনসিংহের ফুলপুর, হালুয়াঘাট, তারাকান্দা, পূর্বধলা, নকলা-নলিতাবাড়ীর চাষিরা।

শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চলগুলোতে একই অবস্থা বলে জানা গেছে। এদিকে মেহেরপুরেও লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ নিয়ে সংকটে পরেছেন স্থানীয় বোরো কৃষকরা।

লোশেডিংয়ের খবর এসেছে রংপুর থেকেও। বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে আবাসিক হলের সামনে বিক্ষোভ করেছেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, ইফতার, তারাবি ও সেহেরির সময়ও লোডশেডিং হচ্ছে কোন কোন এলাকায়। ফলে ভুক্তভোগী গ্রাহকেদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। বিদ্যুৎ স্থাপনায় নাশকতার আশঙ্কায় পিডিবির এক কর্মকর্তা স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে চিঠি দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রীষ্মে এমনিতেই বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকে। তার ওপর রমজানের কারণে বিশেষ করে ইফতার ও তারাবির সময় চাহিদা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে অনেক দিন ধরে। তবে রমজান ও গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সংকট মোকাবিলায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে শিল্প কারখানা ও সিএনজি স্টেশনগুলেতে যথাক্রমে ৪ ও ৬ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, গরমের কারণে চাহিদা যদি আরও কিছুটা বেড়ে যায়, উৎপাদনের যে অবস্থা, তাতে গ্রামের পাশপাশি রাজধানীতেও লোড ম্যানেজমেন্ট (লোডশেডিং) করতে হবে।

সঞ্চালান ও বিতরণ লাইনের নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রীষ্মে ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। এসব কারণেও অনেক সময় বিদ্যুৎ বিতরণে বিঘœ ঘটে। ওভারলোড ট্রান্সফরমারের কারণে পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় এই বিভ্রাট প্রায়ই ঘটে।

দেশে বর্তমানে পিক আওয়ারে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু সে অনুযায়ী বিদ্যুতের উৎপাদন হচ্ছে না। গড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। গত ৭ এপ্রিল দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৮ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ক্যাপটিভ ও অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও আমদানিসহ দেশে সরকারি-বেসরকারি স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে ২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট ক্যাপটিভ এবং ৪০৪ মেগাওয়াট অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাদ দিলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা দাঁড়ায় প্রায় ২২ হাজার মেগাওয়াট।

অর্থাৎ সরল হিসাবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি। তবে কেন এই লোডশেডিং?

ওভার ক্যাপাসিটির কথা ‘ঠিক নয়’

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যানুযায়ী, কারিগরি নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সক্ষমতার শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় না। আইপিপি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) চুক্তি অনুযায়ী, একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘প্ল্যান্ট ক্যাপাসিটি’ ধরা হয় ৮৫ শতাংশ।

কোন একটি কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে অথবা ফ্রিকোয়েন্সি ড্রপ করলে ‘স্পিনিং রিজার্ভ’ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং গ্রিড সিস্টেমের ফ্রিকোয়েন্সি ঠিক রাখতে ব্যবহৃত এফজিএমওর (ফ্রি গভর্নর মোড অব অপারেশন) কারণেও সক্ষমতার চেয়ে ৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে আসে।

বিদ্যুতের ওভার ক্যাপাসিটির বিষয়ে জানতে চাইলে গত বছর অক্টোবরে পিডিবির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেন সংবাদকে বলেছিলেন, ‘অনেকে বলছেন, আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ওভার ক্যাপাসিটি। বিষয়টি সঠিক নয়। অন্তত ৪৩ শতাংশ ব্যবহার করার মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ওভার ক্যাপাসিটি সিস্টেমের জন্য ভালো। সম্প্রতি গ্যাস সংকটে এই বিষয়টি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুরোদমে চালিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হচ্ছে। তেলের কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যেত না।’

প্রকৌশলী বেলায়েত বলেন, ‘গ্যাস কম পেলেই তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে উৎপাদন করতে হচ্ছে। এবছর ১৪ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ডিমান্ড হবে। সিস্টেমের জন্য প্রতি ৬০ মেগাওয়াটের জন্য ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্যাপাসিটি রাখতে হবে। ফলে বলা যায় আমাদের কোন ওভার ক্যাপাসিটি নেই।’

দুই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট ক্যাপটিভ জেনারেশন বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এগুলো গ্রিড থেকে সরবরাহ করতে হলেই আমাদের বিদ্যুৎ সংকট হবে। তাহলে ওভার ক্যাপাসিটি কোথায়।’

দেশে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সক্ষমতা প্রসঙ্গে এক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাই শতভাগ বিদ্যুতের কথা বলেন। তবে কিছু নেতা এই অর্জনের সঙ্গে মেগাওয়াট, গিগাওয়াট যোগ করে জটিলতা তৈরি করেন। কেউ কেউ বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে সরকার’। এ ধরনের বক্তব্যে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হন। মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে, এত বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে, বিদ্যুৎ চলে যায় কেন? এর উত্তর কিন্তু সেসব নেতাদের বক্তব্যে থাকে না। কারণ বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই।’

সম্প্রতি বিবিয়না গ্যাসক্ষেত্রের ছয়টি কূপ দিয়ে বালি আসায় গ্যাস উৎপাদন হঠাৎ কমে যায়। রাজধানীসহ সারাদেশে গ্যাস সরবরাহে সংকট তৈরি হয়। ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় রান্নার গ্যাস বন্ধ হয়ে যায়। দুই-তিন দিন পর পরিস্থিতির উত্তোরণ হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সংকট রয়েই গেছে।

পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, দেশে মোট বিদ্যুৎ গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ২২ লাখ। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ১৬ লাখ। আপাতত বিপাকে আছেন আরইবির গ্রাহকরাই। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, অনেক গ্রামেই দিনে তিন-চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।