বিশুদ্ধ পানির সংকট, দুর্ভোগে মানুষ

রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ীর বিবিরবাগিচা। গত সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় পানির দুটি খালি পাত্র নিয়ে গলিপথে হাঁটছিলেন এক যুবক। প্রায় আধ ঘণ্টা হাঁটাহাটি করে একটি মসজিদের সামনে গিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।

কাছে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুই দিন ধরে বাসায় পানি নেই। তাই মসজিদে আসছি পানির জন্য। মসজিদের গেট বন্ধ। তাই অপেক্ষা করছি। বাসায় ছোট বাচ্চা আছে। পানি না থাকার কারণে অনেক সমস্যা হচ্ছে। বাড়িওয়ালা বলে লাইনে পানি নেই। আমরা কি করবো।’

মিজানুর রহমান নামের উত্তর যাত্রাবাড়ী এক বাড়িওয়ালা বলেন, ‘যাত্রাবাড়ী এলাকায় পানির সংকট অনেক আগে থেকেই। তবে এখন তো মহাসংকট। ওয়াসার লাইনে কোন পানি থাকে না। রাত ২-৩টার দিকে লাইনে কিছু পানি আসে। কিন্তু তা এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। আর যাত্রাবাড়ী এলাকায় পানিতে মারাত্মক দুর্গন্ধ। পানির লাইন পুরাতন হয়ে গেছে।’

পানির জন্য হাহাকার শুধু যাত্রাবাড়ী নয়, পুরো ঢাকা নগরেই পানি সংকট দেখা দিয়েছে। চৈত্রের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুতে পানির চরম সংকটে পড়েছে রাজধানীবাসী। ঢাকা ওয়াসা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

রাজধানীতে ১০টি ও নারায়ণগঞ্জে একটিসহ মোট ১১টি জোনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করে ঢাকা ওয়াসা। গরমের সময়ে রাজধানীবাসীর পানির চাহিদা বাড়লেও ঢাকা ওয়াসার উৎপাদন কমেছে। পানির গাড়ির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ চাহিদামাফিক সেটাও সরবরাহ করতে পারছে না। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার ১, ৩, ৮, ৯ ও ১০ নম্বর জোনে পানির সংকট বেশি।

এর মধ্যে মোহাম্মদপুর-লালমাটিয়া, উত্তরা, নতুন বাজার-ভাটারা-বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, পুরানা পল্টন, মিরপুরের সেনপাড়া, পর্বতা, কাফরুল, মানিকনগর, ফকিরাপুল এলাকার পানি সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকায় চাহিদা মাফিক পানি গাড়ি পাওয়া যায় না

বলে স্থানীয়রা জানান।

রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় বাসিন্দা মো. তারিক সংবাদকে বলেন, ‘গত দুই-তিন দিন ধরে পুরো পল্টন এলাকায় পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এ বিষয়টি ওয়াসার হট লাইনে (১৬১৬২) অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু উপকার পাইনি। পানি না থাকার কারণে রোজার মাসে ঠিক মতো অজু-গোসল করতে পারছি না। ওয়াসার লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’ পানির গাড়ি চাওয়া হলেও তা ঠিকমত পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ তার।

পানি সংকটের অজুহাতে ঢাকা ওয়াসার পানির গাড়ির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন লোকজন। আশরাফুল নামের বাড্ডার এক বাড়িওয়ালা সংবাদকে বলেন, ‘গত তিন সপ্তাহ ধরে লাইনে পানি নাই। পানি সংকটের কারণে গাড়ির জন্য টাকা জমা দিয়ে পানির গাড়ি পাচ্ছি না। পানি সংকটের কারণে রমজান মাসে অজু, গোসল করতে পারছি না। আর ৩০০ টাকার পানির গাড়ি এখন ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে।’

কামাল নামের বাড্ডার অন্য এক বাসিন্দা বলেন, তিন সপ্তাহ ধরে পানির সংকটে রয়েছেন। ‘গভীর রাত পর্যন্ত পানির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। রাত-দুপুরে পাইপলাইনে কিছু পানি এলেও ১ থেকে দেড় ঘণ্টা পর আর পানি থাকে না।’

পুরানা পল্টন এলাকার বাসিন্দা বাকিবিল্লাহ বলেন, ‘হঠাৎ করে গত কয়েকদিন ধরে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। সারাদিন থাকে না। রাতে একটু আসে। তাও বেশি সময় থাকে না।’

পানি সমস্যার কারণে ঢাকা ওয়াসার ফকিরাপুল অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু গত তিন দিন ধরে পানি সংকটের সমস্যার সমাধান হয়নি বলে জানান তিনি।

দৈনিক পানি উৎপাদন কমেছে

ঢাকা ওয়াসা দৈনিক ২৭০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করার সক্ষমতা দাবি করলেও বর্তমান গ্রীষ্ম মৌসুমে সেটা হচ্ছে না বলে সূত্র জানায়। সায়েদাবাদ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট-১ ও ২ থেকে স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক পানি উৎপাদন হতো ৪৮ কোটি লিটার।

বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৪২ কোটি লিটার। চাঁদনীঘাট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে স্বাভাবিক সময়ে ২ কোটি লিটার পানির উৎপাদন হতো, এখন ১ কোটি লিটার উৎপাদন হচ্ছে। ভাকুর্তা প্রকল্প থেকে স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক ১৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হতো। এখন দৈনিক ৪ কোটি লিটার কম উৎপাদন হচ্ছে।

পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে স্বাভাবিক সময়ের মতো ২৭ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে। আর ঢাকা ওয়াসার প্রায় ৯০০ গভীর নকলকূপ রয়েছে। সেগুলো থেকে যে পরিমাণ পানি উৎপাদন হতো, এখন এর চেয়ে অন্তত ১০ ভাগ কম উৎপাদন হচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন ঘাটতি হচ্ছে। অর্থাৎ, গভীর নলকূপ থেকেও দৈনিক প্রায় ১৬ থেকে ১৭ কোটি লিটার পানি উৎপাদন কম হচ্ছে। এছাড়া ২০ ভাগ সিস্টেম লস হচ্ছে।

সে হিসাবে ২৭০ কোটি লিটার পানির মধ্যে দৈনিক ৫৪ কোটি লিটার পানি অপচয় হচ্ছে। এ হিসাব অনুযায়ী, গ্রীষ্ম মৌসুমে ঢাকা ওয়াসায় দৈনিক অন্তত ৮১ কোটি লিটার পানির উৎপাদন কম হচ্ছে।

এছাড়া ঢাকা ওয়াসার হিসাব অনুযায়ী, দৈনিক ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে পানি উৎপাদন করা হয় ৯১ কোটি লিটার। আর বাকি ১৭৯ কোটি লিটার গভীর নলকূপ থেকে উৎপাদন করা হয়। গ্রীষ্ম মৌসুমে উৎপাদন ৮১ কোটি লিটার হ্রাস পাওয়ায় ঢাকা ওয়াসার বর্তমান দৈনিক পানির উৎপাদন ১৮৯ কোটি লিটার। ঢাকা ওয়াসার হিসাব মতে, বর্তমানে নগরবাসীর পানির চাহিদা ২৪০ কোটি লিটার। এ হিসাবে দৈনিক প্রায় ৫১ কোটি লিটার পানির ঘাটতি হচ্ছে।

শীত মৌসুমে নগরবাসীর পানির চাহিদা থাকে ২১০ কোটি লিটার, গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির চাহিদা ২৪০ কোটি লিটার। বছরের অন্যান্য সময় এ অবস্থার মাঝামাঝি থাকে।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন সংবাদকে বলেন, ‘আজকে (গতকাল) বোর্ড সভায় ঢাকার পানি সংকট ও দুর্গন্ধ নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। অন্য এজেন্ডা বাদ দিয়ে ঢাকা ওয়াসার পানি বিষয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করা হয়েছে। সভায় জানানো হয়েছে, ওয়াসার লাইনে কোথায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া পানি পরীক্ষা করে দুর্গন্ধমুক্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২ , ৩০ চৈত্র ১৪২৮ ১১ রমাদ্বান ১৪৪৩

বিশুদ্ধ পানির সংকট, দুর্ভোগে মানুষ

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

পানির সংকট, তার ওপর বিশুদ্ধ পানির সংকট। পানি সংগ্রহে ছুটছে মানুষ সড়কে, কলোনিতে, মসজিদের কলে। শিশু দুটি পানি সংগ্রহের পর গায়ের গেঞ্জিতে ময়লা ছেঁকে ভরছে বোতলে -সোহরাব আলম

রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ীর বিবিরবাগিচা। গত সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় পানির দুটি খালি পাত্র নিয়ে গলিপথে হাঁটছিলেন এক যুবক। প্রায় আধ ঘণ্টা হাঁটাহাটি করে একটি মসজিদের সামনে গিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।

কাছে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুই দিন ধরে বাসায় পানি নেই। তাই মসজিদে আসছি পানির জন্য। মসজিদের গেট বন্ধ। তাই অপেক্ষা করছি। বাসায় ছোট বাচ্চা আছে। পানি না থাকার কারণে অনেক সমস্যা হচ্ছে। বাড়িওয়ালা বলে লাইনে পানি নেই। আমরা কি করবো।’

মিজানুর রহমান নামের উত্তর যাত্রাবাড়ী এক বাড়িওয়ালা বলেন, ‘যাত্রাবাড়ী এলাকায় পানির সংকট অনেক আগে থেকেই। তবে এখন তো মহাসংকট। ওয়াসার লাইনে কোন পানি থাকে না। রাত ২-৩টার দিকে লাইনে কিছু পানি আসে। কিন্তু তা এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। আর যাত্রাবাড়ী এলাকায় পানিতে মারাত্মক দুর্গন্ধ। পানির লাইন পুরাতন হয়ে গেছে।’

পানির জন্য হাহাকার শুধু যাত্রাবাড়ী নয়, পুরো ঢাকা নগরেই পানি সংকট দেখা দিয়েছে। চৈত্রের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুতে পানির চরম সংকটে পড়েছে রাজধানীবাসী। ঢাকা ওয়াসা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

রাজধানীতে ১০টি ও নারায়ণগঞ্জে একটিসহ মোট ১১টি জোনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করে ঢাকা ওয়াসা। গরমের সময়ে রাজধানীবাসীর পানির চাহিদা বাড়লেও ঢাকা ওয়াসার উৎপাদন কমেছে। পানির গাড়ির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ চাহিদামাফিক সেটাও সরবরাহ করতে পারছে না। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার ১, ৩, ৮, ৯ ও ১০ নম্বর জোনে পানির সংকট বেশি।

এর মধ্যে মোহাম্মদপুর-লালমাটিয়া, উত্তরা, নতুন বাজার-ভাটারা-বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, পুরানা পল্টন, মিরপুরের সেনপাড়া, পর্বতা, কাফরুল, মানিকনগর, ফকিরাপুল এলাকার পানি সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকায় চাহিদা মাফিক পানি গাড়ি পাওয়া যায় না

বলে স্থানীয়রা জানান।

রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় বাসিন্দা মো. তারিক সংবাদকে বলেন, ‘গত দুই-তিন দিন ধরে পুরো পল্টন এলাকায় পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এ বিষয়টি ওয়াসার হট লাইনে (১৬১৬২) অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু উপকার পাইনি। পানি না থাকার কারণে রোজার মাসে ঠিক মতো অজু-গোসল করতে পারছি না। ওয়াসার লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’ পানির গাড়ি চাওয়া হলেও তা ঠিকমত পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ তার।

পানি সংকটের অজুহাতে ঢাকা ওয়াসার পানির গাড়ির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন লোকজন। আশরাফুল নামের বাড্ডার এক বাড়িওয়ালা সংবাদকে বলেন, ‘গত তিন সপ্তাহ ধরে লাইনে পানি নাই। পানি সংকটের কারণে গাড়ির জন্য টাকা জমা দিয়ে পানির গাড়ি পাচ্ছি না। পানি সংকটের কারণে রমজান মাসে অজু, গোসল করতে পারছি না। আর ৩০০ টাকার পানির গাড়ি এখন ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে।’

কামাল নামের বাড্ডার অন্য এক বাসিন্দা বলেন, তিন সপ্তাহ ধরে পানির সংকটে রয়েছেন। ‘গভীর রাত পর্যন্ত পানির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। রাত-দুপুরে পাইপলাইনে কিছু পানি এলেও ১ থেকে দেড় ঘণ্টা পর আর পানি থাকে না।’

পুরানা পল্টন এলাকার বাসিন্দা বাকিবিল্লাহ বলেন, ‘হঠাৎ করে গত কয়েকদিন ধরে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। সারাদিন থাকে না। রাতে একটু আসে। তাও বেশি সময় থাকে না।’

পানি সমস্যার কারণে ঢাকা ওয়াসার ফকিরাপুল অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু গত তিন দিন ধরে পানি সংকটের সমস্যার সমাধান হয়নি বলে জানান তিনি।

দৈনিক পানি উৎপাদন কমেছে

ঢাকা ওয়াসা দৈনিক ২৭০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করার সক্ষমতা দাবি করলেও বর্তমান গ্রীষ্ম মৌসুমে সেটা হচ্ছে না বলে সূত্র জানায়। সায়েদাবাদ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট-১ ও ২ থেকে স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক পানি উৎপাদন হতো ৪৮ কোটি লিটার।

বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৪২ কোটি লিটার। চাঁদনীঘাট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে স্বাভাবিক সময়ে ২ কোটি লিটার পানির উৎপাদন হতো, এখন ১ কোটি লিটার উৎপাদন হচ্ছে। ভাকুর্তা প্রকল্প থেকে স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক ১৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হতো। এখন দৈনিক ৪ কোটি লিটার কম উৎপাদন হচ্ছে।

পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে স্বাভাবিক সময়ের মতো ২৭ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে। আর ঢাকা ওয়াসার প্রায় ৯০০ গভীর নকলকূপ রয়েছে। সেগুলো থেকে যে পরিমাণ পানি উৎপাদন হতো, এখন এর চেয়ে অন্তত ১০ ভাগ কম উৎপাদন হচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন ঘাটতি হচ্ছে। অর্থাৎ, গভীর নলকূপ থেকেও দৈনিক প্রায় ১৬ থেকে ১৭ কোটি লিটার পানি উৎপাদন কম হচ্ছে। এছাড়া ২০ ভাগ সিস্টেম লস হচ্ছে।

সে হিসাবে ২৭০ কোটি লিটার পানির মধ্যে দৈনিক ৫৪ কোটি লিটার পানি অপচয় হচ্ছে। এ হিসাব অনুযায়ী, গ্রীষ্ম মৌসুমে ঢাকা ওয়াসায় দৈনিক অন্তত ৮১ কোটি লিটার পানির উৎপাদন কম হচ্ছে।

এছাড়া ঢাকা ওয়াসার হিসাব অনুযায়ী, দৈনিক ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে পানি উৎপাদন করা হয় ৯১ কোটি লিটার। আর বাকি ১৭৯ কোটি লিটার গভীর নলকূপ থেকে উৎপাদন করা হয়। গ্রীষ্ম মৌসুমে উৎপাদন ৮১ কোটি লিটার হ্রাস পাওয়ায় ঢাকা ওয়াসার বর্তমান দৈনিক পানির উৎপাদন ১৮৯ কোটি লিটার। ঢাকা ওয়াসার হিসাব মতে, বর্তমানে নগরবাসীর পানির চাহিদা ২৪০ কোটি লিটার। এ হিসাবে দৈনিক প্রায় ৫১ কোটি লিটার পানির ঘাটতি হচ্ছে।

শীত মৌসুমে নগরবাসীর পানির চাহিদা থাকে ২১০ কোটি লিটার, গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির চাহিদা ২৪০ কোটি লিটার। বছরের অন্যান্য সময় এ অবস্থার মাঝামাঝি থাকে।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন সংবাদকে বলেন, ‘আজকে (গতকাল) বোর্ড সভায় ঢাকার পানি সংকট ও দুর্গন্ধ নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। অন্য এজেন্ডা বাদ দিয়ে ঢাকা ওয়াসার পানি বিষয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করা হয়েছে। সভায় জানানো হয়েছে, ওয়াসার লাইনে কোথায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া পানি পরীক্ষা করে দুর্গন্ধমুক্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’