হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায় আজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক, লেখক, ভাষাবিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ। দেড় যুগ পর চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকা-ের রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছে আদালত। ঢাকার ৪র্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুনের আদালত আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।

এরআগে গত ২৭ মার্চ রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এই দিন ধার্য করা হয়। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে বাংলা একাডেমির উল্টো দিকের ফুটপাতে সন্ত্রাসী হামলায় আহত হন হুমায়ুন আজাদ। এরপর ২২ দিন সিএমএইচ এবং ৪৮ দিন ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এরপর ওই বছরের ১২ আগস্ট জার্মানির মিউনিখে মারা যান তিনি।

হামলার পরদিন তার ছোট ভাই মঞ্জুর কবির বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। পরে তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। এছাড়া একই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে আরেকটি মামলায় করা হয়। ২০০৭ সালের ১১ নভেম্বর হত্যা মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সূরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শাওন,

হাফিজ মাহমুদ, আনোয়ার আলম, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু। আসামিদের মধ্যে সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু পলাতক এবং হাফিজ মাহমুদ মারা গেছেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আবুল আব্বাস ভূঁইয়া ও গোলাম মোস্তফা নামে দুইজনকে চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আশা, তারা আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন। কাজেই তাদের সর্বোচ্চ সাজা হবে। তবে আসামিপক্ষ বলছে, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। কাজেই তারা খালাস পাবেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সচেষ্ট হয়েছি। আশা করছি, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ- হবে।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘ন্যায় বিচার পাওয়া সকলের অধিকার। আশা করছি, আসামিরা ন্যায়বিচার পাবেন। আসামিরা যে হত্যার সঙ্গে জড়িত, রাষ্ট্রপক্ষ এমন কিছু প্রমাণ করতে পারেনি। কাজেই আশা করছি, বিজ্ঞ আদালত ন্যায়বিচার করবেন এবং আসামিরা খালাস পাবেন।’

হুয়ায়ুন আজাদের ওপর হামলার মামলাটি তদন্ত করে ২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর সিআইডির পুলিশ কাজী আবদুল মালেক পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত। এ মামলায় মোট ৪১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। গত ২৭ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ১৩ এপ্রিল ধার্য করেন। অন্যদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত। মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।

২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল সিআইডি পরিদর্শক লুৎফর রহমান পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার পরিবর্তে হত্যার অভিযোগে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এরা হলেনÑ জেএমবির সূরা সদস্য আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ, সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন, মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শাওন, রাকিবুল হাসান ওরফে হাফিজ মাহামুদ ও নুর মোহাম্মদ ওরফে সাবু।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রিজনভ্যান থেকে তিন আসামি ছিনিয়ে নেয় জঙ্গীরা। ওই তিন জনের মধ্যে সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন এবং রাকিবুল হাসান ওরফে হাফিজ মাহামুদ এ মামলার আসামি। এদের মধ্যে রাকিব ওইদিন রাতে ধরা পড়ে এবং পরে ক্রসফায়ারে নিহত হয়। মিজানুর রহমান এবং আনোয়ারুল আলম কারাগারে আছেন। নুর মোহাম্মদ এবং সালেহীন পলাতক রয়েছেন।

বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২ , ৩০ চৈত্র ১৪২৮ ১১ রমাদ্বান ১৪৪৩

হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায় আজ

আদালত বার্তা পরিবেশক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক, লেখক, ভাষাবিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ। দেড় যুগ পর চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকা-ের রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছে আদালত। ঢাকার ৪র্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুনের আদালত আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।

এরআগে গত ২৭ মার্চ রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এই দিন ধার্য করা হয়। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে বাংলা একাডেমির উল্টো দিকের ফুটপাতে সন্ত্রাসী হামলায় আহত হন হুমায়ুন আজাদ। এরপর ২২ দিন সিএমএইচ এবং ৪৮ দিন ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এরপর ওই বছরের ১২ আগস্ট জার্মানির মিউনিখে মারা যান তিনি।

হামলার পরদিন তার ছোট ভাই মঞ্জুর কবির বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। পরে তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। এছাড়া একই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে আরেকটি মামলায় করা হয়। ২০০৭ সালের ১১ নভেম্বর হত্যা মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সূরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শাওন,

হাফিজ মাহমুদ, আনোয়ার আলম, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু। আসামিদের মধ্যে সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু পলাতক এবং হাফিজ মাহমুদ মারা গেছেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আবুল আব্বাস ভূঁইয়া ও গোলাম মোস্তফা নামে দুইজনকে চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আশা, তারা আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন। কাজেই তাদের সর্বোচ্চ সাজা হবে। তবে আসামিপক্ষ বলছে, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। কাজেই তারা খালাস পাবেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সচেষ্ট হয়েছি। আশা করছি, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ- হবে।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘ন্যায় বিচার পাওয়া সকলের অধিকার। আশা করছি, আসামিরা ন্যায়বিচার পাবেন। আসামিরা যে হত্যার সঙ্গে জড়িত, রাষ্ট্রপক্ষ এমন কিছু প্রমাণ করতে পারেনি। কাজেই আশা করছি, বিজ্ঞ আদালত ন্যায়বিচার করবেন এবং আসামিরা খালাস পাবেন।’

হুয়ায়ুন আজাদের ওপর হামলার মামলাটি তদন্ত করে ২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর সিআইডির পুলিশ কাজী আবদুল মালেক পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত। এ মামলায় মোট ৪১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। গত ২৭ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ১৩ এপ্রিল ধার্য করেন। অন্যদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত। মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।

২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল সিআইডি পরিদর্শক লুৎফর রহমান পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার পরিবর্তে হত্যার অভিযোগে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এরা হলেনÑ জেএমবির সূরা সদস্য আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ, সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন, মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শাওন, রাকিবুল হাসান ওরফে হাফিজ মাহামুদ ও নুর মোহাম্মদ ওরফে সাবু।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রিজনভ্যান থেকে তিন আসামি ছিনিয়ে নেয় জঙ্গীরা। ওই তিন জনের মধ্যে সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন এবং রাকিবুল হাসান ওরফে হাফিজ মাহামুদ এ মামলার আসামি। এদের মধ্যে রাকিব ওইদিন রাতে ধরা পড়ে এবং পরে ক্রসফায়ারে নিহত হয়। মিজানুর রহমান এবং আনোয়ারুল আলম কারাগারে আছেন। নুর মোহাম্মদ এবং সালেহীন পলাতক রয়েছেন।