ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা

২১ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক মামলা

রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ২১ বছর পূর্তি আগামীকাল বৃহস্পতিবার। ২০০১ সালে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ভয়াবহ বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও ২০ জন গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলা নিষ্পত্তি হলেও বিস্ফোরক আইনের মামলাটি ২১ বছরেও শেষ হয়নি। বিস্ফোরক মামলাটি ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।

এই মামলায় মোট আসামি ১৪ জন। এর মধ্যে কারাগারে রয়েছে ৭ জন, মৃত্যু হয়েছে তিনজনের ও ৪ জন পলাতক। এছাড়া মামলায় ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পযর্ন্ত ৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। গত বছর করোনা ও লকডাউনের কারণে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে তা নিয়ে এখনো

অনিশ্চিত।

অন্যদিকে, হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল করার পর হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এ মামলার আসামিদের একজনের অন্য মামলায় মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া সংবাদকে জানান, মামলাটি এখন যুক্তিতর্ক চলছে। আগামী ২০ এপ্রিল এই মামলার যুক্তিতর্কের পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে। মামলায় মোট ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জনের সাক্ষ্য ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সাক্ষ্য শেষে আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক শেষে মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। মামলাটির রায় শীঘ্রই দেয়া হবে বলে তিনি আশাবাদী।

এ মামলার অনেক আসামি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, রমনা বটমূলে হত্যা মামলা, কোটালীপাড়ায় বোমা মামলাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। অনেকের অন্য মামলায় ইতোমধ্যে সাজা হয়ে গেছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, মামলাটি সাক্ষীর পর্যায়ে আছে। কিন্তু সাক্ষী তো আদালতে হাজির হচ্ছে না। আদালতে সাক্ষী হাজির না হওয়ায় মামলাটি নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হচ্ছে।

এদিকে রমনা বটমূলে বোমা হামলায় দায়ের করা দুটি পৃথক মামলার মধ্যে হত্যা মামলার রায় হয় প্রায় ১৩ বছর পর ২০১৪ সালের ২৩ জুন। রায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ৮ জনের মৃত্যুদ- ও ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেন আদালত। মামলায় সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ চার আসামি এখনও পলাতক। তবে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের আপিল হাইকোর্টে শুনানির জন্য কার্য তালিকায় রয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের বিচারিক আদালতের রায় ঘোষণার পর হত্যা মামলাটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে আসে। একই সঙ্গে আসামিদের পক্ষ থেকেও জেল আপিল হয়। পরে পেপারবুক প্রস্তুত করে মামলাটি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে ছিল। ওই বেঞ্চের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ায় বর্তমান কোর্টের কার্যতালিকায় আসে মামলাটি।

বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলাটিতে ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত মোট ৫৪ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল।

২০১৪ সালের ২৩ জুন হত্যা মামলাটির রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন। রায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ৮ জনের মৃত্যুদ- ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়।

মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলো মুফতি আবদুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসেন, মুফতি আবদুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা আরিফ হাসান সুমন ও মওলানা মো. তাজউদ্দিন।

যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্তরা হলো হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আবদুর রউফ ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল। তবে এ মামলায় দ-প্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ চার আসামি এখনও পলাতক।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার পর নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন।

২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর দুই মামলায় ১৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১৪ সালের ২৩ জুন বিচারিক আদালত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। এরপর ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের জেল আপিল ও ফৌজদারি আপিলের শুনানির জন্য মামলাটি হাইকোর্টে আসে। হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হলেও বিস্ফোরক মামলাটি ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।

বিস্ফোরক দ্রব্য মামলা চলমান থাকায় মুফতি হান্নানসহ তিনজনের জঙ্গি মামলায় ফাঁসি কার্যকর করা হলেও এখনো আনেকেই ফাঁসির রায় কার্যকর হয়নি। এছাড়া হত্যা মামলায় ৮ আসামির মৃত্যুদ- অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) এবং আপিলের শুনানি হাইকোর্টে থমকে থাকায় বিচার প্রার্থীদের অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। হত্যা মামলায় রায়ের পর ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি মামলাটি আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টে ওঠে। এছাড়া বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২০০৯ সালে অভিযোগ গঠনের পর প্রথম ৭ জনের সাক্ষ্য নেয়া হলেও এরপর বিচার কার্যক্রম গতি হারায় সাক্ষী না আসায়। ২০১৫ সালের ২২ মার্চ থেকে সাক্ষীদের প্রতি সমনের পাশাপাশি গ্রেপ্তারি পরোয়না জারি করা হয়। গত দুই বছরে মাত্র দুইজনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে এ মামলায়। এ মামলার ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালে পহেলা বৈশাখ সকালে রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে অভিযুক্তরা পরিকল্পিতভাবে বোমা হামলা চালায়। হামলার পর রমনা বটমূল ও আশপাশ এলাকাজুড়ে লোকজন ছুটাছুটি করে চারদিকে দৌড়াতে থাকে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ছায়ানটের সদস্যরা আহতদের রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। হামলায় অনেকে হতাহত হয়েছে। লোকজন খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে গিয়ে আহতদের রক্ত দিয়েছে। অনেকেই খবর শুনে স্বজনদের খুঁজতে হাসপাতালে ভিড় জমায়। অনেক চিকিৎসক অন্য হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেলে ক্যাজুয়ালটি বিভাগে গিয়ে আহতদের রক্ত ও ওষুধ কেনাসহ নানা ধরনের সহায়তা করে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বোমা হামলার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের সকল অনুষ্ঠানে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে। পুলিশ ও র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার কঠোর নজরদারিতে পহেলা বৈশাখের আগে রমনা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নেয়।

বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২ , ৩০ চৈত্র ১৪২৮ ১১ রমাদ্বান ১৪৪৩

ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা

২১ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক মামলা

বাকী বিল্লাহ ও মাসুদ রানা

image

রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ২১ বছর পূর্তি আগামীকাল বৃহস্পতিবার। ২০০১ সালে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ভয়াবহ বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও ২০ জন গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলা নিষ্পত্তি হলেও বিস্ফোরক আইনের মামলাটি ২১ বছরেও শেষ হয়নি। বিস্ফোরক মামলাটি ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।

এই মামলায় মোট আসামি ১৪ জন। এর মধ্যে কারাগারে রয়েছে ৭ জন, মৃত্যু হয়েছে তিনজনের ও ৪ জন পলাতক। এছাড়া মামলায় ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পযর্ন্ত ৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। গত বছর করোনা ও লকডাউনের কারণে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে তা নিয়ে এখনো

অনিশ্চিত।

অন্যদিকে, হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল করার পর হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এ মামলার আসামিদের একজনের অন্য মামলায় মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া সংবাদকে জানান, মামলাটি এখন যুক্তিতর্ক চলছে। আগামী ২০ এপ্রিল এই মামলার যুক্তিতর্কের পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে। মামলায় মোট ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জনের সাক্ষ্য ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সাক্ষ্য শেষে আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক শেষে মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। মামলাটির রায় শীঘ্রই দেয়া হবে বলে তিনি আশাবাদী।

এ মামলার অনেক আসামি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, রমনা বটমূলে হত্যা মামলা, কোটালীপাড়ায় বোমা মামলাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। অনেকের অন্য মামলায় ইতোমধ্যে সাজা হয়ে গেছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, মামলাটি সাক্ষীর পর্যায়ে আছে। কিন্তু সাক্ষী তো আদালতে হাজির হচ্ছে না। আদালতে সাক্ষী হাজির না হওয়ায় মামলাটি নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হচ্ছে।

এদিকে রমনা বটমূলে বোমা হামলায় দায়ের করা দুটি পৃথক মামলার মধ্যে হত্যা মামলার রায় হয় প্রায় ১৩ বছর পর ২০১৪ সালের ২৩ জুন। রায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ৮ জনের মৃত্যুদ- ও ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেন আদালত। মামলায় সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ চার আসামি এখনও পলাতক। তবে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের আপিল হাইকোর্টে শুনানির জন্য কার্য তালিকায় রয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের বিচারিক আদালতের রায় ঘোষণার পর হত্যা মামলাটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে আসে। একই সঙ্গে আসামিদের পক্ষ থেকেও জেল আপিল হয়। পরে পেপারবুক প্রস্তুত করে মামলাটি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে ছিল। ওই বেঞ্চের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ায় বর্তমান কোর্টের কার্যতালিকায় আসে মামলাটি।

বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলাটিতে ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত মোট ৫৪ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল।

২০১৪ সালের ২৩ জুন হত্যা মামলাটির রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন। রায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ৮ জনের মৃত্যুদ- ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়।

মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলো মুফতি আবদুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসেন, মুফতি আবদুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা আরিফ হাসান সুমন ও মওলানা মো. তাজউদ্দিন।

যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্তরা হলো হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আবদুর রউফ ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল। তবে এ মামলায় দ-প্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ চার আসামি এখনও পলাতক।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার পর নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন।

২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর দুই মামলায় ১৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১৪ সালের ২৩ জুন বিচারিক আদালত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। এরপর ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের জেল আপিল ও ফৌজদারি আপিলের শুনানির জন্য মামলাটি হাইকোর্টে আসে। হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হলেও বিস্ফোরক মামলাটি ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।

বিস্ফোরক দ্রব্য মামলা চলমান থাকায় মুফতি হান্নানসহ তিনজনের জঙ্গি মামলায় ফাঁসি কার্যকর করা হলেও এখনো আনেকেই ফাঁসির রায় কার্যকর হয়নি। এছাড়া হত্যা মামলায় ৮ আসামির মৃত্যুদ- অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) এবং আপিলের শুনানি হাইকোর্টে থমকে থাকায় বিচার প্রার্থীদের অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। হত্যা মামলায় রায়ের পর ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি মামলাটি আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টে ওঠে। এছাড়া বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২০০৯ সালে অভিযোগ গঠনের পর প্রথম ৭ জনের সাক্ষ্য নেয়া হলেও এরপর বিচার কার্যক্রম গতি হারায় সাক্ষী না আসায়। ২০১৫ সালের ২২ মার্চ থেকে সাক্ষীদের প্রতি সমনের পাশাপাশি গ্রেপ্তারি পরোয়না জারি করা হয়। গত দুই বছরে মাত্র দুইজনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে এ মামলায়। এ মামলার ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালে পহেলা বৈশাখ সকালে রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে অভিযুক্তরা পরিকল্পিতভাবে বোমা হামলা চালায়। হামলার পর রমনা বটমূল ও আশপাশ এলাকাজুড়ে লোকজন ছুটাছুটি করে চারদিকে দৌড়াতে থাকে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ছায়ানটের সদস্যরা আহতদের রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। হামলায় অনেকে হতাহত হয়েছে। লোকজন খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে গিয়ে আহতদের রক্ত দিয়েছে। অনেকেই খবর শুনে স্বজনদের খুঁজতে হাসপাতালে ভিড় জমায়। অনেক চিকিৎসক অন্য হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেলে ক্যাজুয়ালটি বিভাগে গিয়ে আহতদের রক্ত ও ওষুধ কেনাসহ নানা ধরনের সহায়তা করে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বোমা হামলার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের সকল অনুষ্ঠানে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে। পুলিশ ও র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার কঠোর নজরদারিতে পহেলা বৈশাখের আগে রমনা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নেয়।