‘নব আনন্দে জাগো’, ফের বটতলায় ছায়ানট

আগামীকাল ১ বৈশাখে ছায়ানটের এতিহ্যবাহী রমনা বটমূলের বর্ষবরু অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারু করা হয়েছে ‘নব আনন্দে জাগো’। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে আগের বৈশাখগুলোতে অনুষ্ঠানে যেসব বিষয় থাকতো তার অনেক কিছুই এবার বাদ দেয়া হচ্ছে। গতকাল রাতে সংবাদকে এসব তথ্য জানিয়েছেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারোয়ার আলী।

তিনি জানান, এবার করোনার প্রকোপ স্বাভাবিক থাকার কারণে ‘নব আনন্দে জাগো’ সেøাগানে আবার বটতলায় এই ঐতিহ্যবাহী সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনেক কিছু বাদ দেয়া হয়েছে। গান, আবৃত্তি, পাঠ নিয়ে অনুষ্ঠানসূচি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগের আয়োজনে শিল্পীর সংখ্যা বেশি থাকলেও এবার ৯০ জন করা হয়েছে। অনুষ্ঠান ২ ঘণ্টা চলবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবে বলে তিনি জানান।

আজ রাত পোহালেই আমাদের দ্বারে আসবে পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন, বাঙালি বর্ষবরণের উৎসবের দিন। বাংলাদেশের ঐহিত্যবাহী সংস্কৃতির আলো ছড়ানো সংগঠন ছায়ানট ১৯৬৭ সাল থেকে রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখের সূর্যোদয়ের সময় সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। দিনে দিনে সে অনুষ্ঠান এখন বাংলাদেশে বর্ষবরণের ঐতিহ্যে পরিুত হয়েছে। শুধু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৈরী পরিবেশের কারণে অনুষ্ঠান হতে পারেনি। এরপর গত দুই বছর করোনা সংক্রমণের তীব্রতায় বটমূলে অনুষ্ঠান হতে পারেনি।

ছায়ানট ইতোমধ্যে রমনার বটমূলের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। গতকাল বটমূলে গিয়ে দেখা যায়, রমনার পশ্চিম পাশের লেকের ধারের বিখ্যাত বটমূল ঘিরে মঞ্চ তৈরির কাজ করছেন কর্মীরা। মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে আরও দুই তিন আগে। হাতে সময় কম, তাই কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। বরাবর পয়লা বৈশাখের আগের দিনেই মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ হয়ে যায়। মঞ্চে বসে শিল্পীরা চূড়ান্ত মহড়ায় অংশ

নেন। এবার মঞ্চে এমন মহড়া হচ্ছে না।

ঢাবির চারুকলা অনুষদে গিয়েও দেখা যায় প্রস্তুতিতে ব্যস্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ২২ ও ২৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা মূলত এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা সাজানোর কাজ করছেন। ১৯৮৯ সাল থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করছে ঢাবি চারুকলা। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারু করা হয়েছে ‘নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’। চারটি বড় মোটিভ তৈরি করা হচ্ছে শোভাযাত্রার জন্য। যার মধ্যে আছে ট্যাপা পুতুল, ঘোড়া, মাছ এবং পাখি।

নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের কারণে চলাচলের পথ সরু থাকায় এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা টিএসসি থেকে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর (ফুলার রোড সড়কদ্বীপ) পর্যন্ত হবে। সব মলিনতা মুছে নবোদ্যমে মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে এমন প্রত্যাশা থেকে এবার আয়োজন সাজানো হচ্ছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরু করা হবে।

ঢাবি চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের চারুকলা অনুষদের ঐহিত্যের অংশ হয়ে উঠেছে। আমাদের অনুষদের ৮টি বিভাগের একাডেমির কারিকুলামের অংশ করারও প্রক্রিয়া চলছে। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ‘নির্মল কর, মঙ্গল কর মলিন মর্ম মুছায়ে’। মহামারী করোনাকালে মলিনতা মুছে জীবনে ছন্দে আসুক নির্মলতা। মঙ্গলময় হয়ে উঠুক স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এমন আশা থেকে উৎসারিত হয়েছে এবারের প্রতিপাদ্য।’

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট থাকবে। যেখানে প্রত্যেকটি মানুষকে চেকের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। এসব এলাকায় সব যানবাহন বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি সোয়াত ও ডিসপোজাল ইউনিট মোতায়েন থাকবে। আজ ও আগামীকাল পুরো এলাকা সার্চ করা হবে। পাশাপাশি পুরো চত্বর সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। বিভিন্ন স্থানে ওয়াচ টাওয়ার থাকবে। পুরো এলাকাটি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’ বোম ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াত, ডগ স্কোয়াডের পাশাপাশি রমনার লেকে নৌ-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল মোতায়েন থাকবে।

image

বাংলা বর্ষবরণে মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য ঢাবির চারুকলায় শিল্পীদের প্রস্তুতি -সংবাদ

আরও খবর
বৈদেশিক ঋণ, বর্তমান অবস্থান ধরে রাখতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর
বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তান বাহিনীর ওপর হামলা-সংঘর্ষ
সার সংকট নেই দেশে : কৃষিমন্ত্রী
বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর তথ্যে এবার বর্ষবরণে বিশেষ নিরাপত্তা
আগামী বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা ও কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেয়ার সুপারিশ সিপিডির
নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা ও বিধানসভা উপনির্বাচন
মৌলভীবাজারের ৩ রাজাকারের রায় যেকোন দিন
করোনা চিকিৎসায় ২২ দশমিক ২ শতাংশ সেবাগ্রহীতা দুর্নীতির শিকার : সিপিডি
পাহাড়ে নদীতে ফুল ভাসিয়ে বৈসাবি উৎসব
শত কোটি টাকা আত্মসাৎ জামান নামে প্রতারক গ্রেপ্তার

বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২ , ৩০ চৈত্র ১৪২৮ ১১ রমাদ্বান ১৪৪৩

‘নব আনন্দে জাগো’, ফের বটতলায় ছায়ানট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

বাংলা বর্ষবরণে মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য ঢাবির চারুকলায় শিল্পীদের প্রস্তুতি -সংবাদ

আগামীকাল ১ বৈশাখে ছায়ানটের এতিহ্যবাহী রমনা বটমূলের বর্ষবরু অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারু করা হয়েছে ‘নব আনন্দে জাগো’। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে আগের বৈশাখগুলোতে অনুষ্ঠানে যেসব বিষয় থাকতো তার অনেক কিছুই এবার বাদ দেয়া হচ্ছে। গতকাল রাতে সংবাদকে এসব তথ্য জানিয়েছেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারোয়ার আলী।

তিনি জানান, এবার করোনার প্রকোপ স্বাভাবিক থাকার কারণে ‘নব আনন্দে জাগো’ সেøাগানে আবার বটতলায় এই ঐতিহ্যবাহী সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনেক কিছু বাদ দেয়া হয়েছে। গান, আবৃত্তি, পাঠ নিয়ে অনুষ্ঠানসূচি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগের আয়োজনে শিল্পীর সংখ্যা বেশি থাকলেও এবার ৯০ জন করা হয়েছে। অনুষ্ঠান ২ ঘণ্টা চলবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবে বলে তিনি জানান।

আজ রাত পোহালেই আমাদের দ্বারে আসবে পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন, বাঙালি বর্ষবরণের উৎসবের দিন। বাংলাদেশের ঐহিত্যবাহী সংস্কৃতির আলো ছড়ানো সংগঠন ছায়ানট ১৯৬৭ সাল থেকে রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখের সূর্যোদয়ের সময় সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। দিনে দিনে সে অনুষ্ঠান এখন বাংলাদেশে বর্ষবরণের ঐতিহ্যে পরিুত হয়েছে। শুধু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৈরী পরিবেশের কারণে অনুষ্ঠান হতে পারেনি। এরপর গত দুই বছর করোনা সংক্রমণের তীব্রতায় বটমূলে অনুষ্ঠান হতে পারেনি।

ছায়ানট ইতোমধ্যে রমনার বটমূলের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। গতকাল বটমূলে গিয়ে দেখা যায়, রমনার পশ্চিম পাশের লেকের ধারের বিখ্যাত বটমূল ঘিরে মঞ্চ তৈরির কাজ করছেন কর্মীরা। মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে আরও দুই তিন আগে। হাতে সময় কম, তাই কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। বরাবর পয়লা বৈশাখের আগের দিনেই মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ হয়ে যায়। মঞ্চে বসে শিল্পীরা চূড়ান্ত মহড়ায় অংশ

নেন। এবার মঞ্চে এমন মহড়া হচ্ছে না।

ঢাবির চারুকলা অনুষদে গিয়েও দেখা যায় প্রস্তুতিতে ব্যস্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ২২ ও ২৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা মূলত এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা সাজানোর কাজ করছেন। ১৯৮৯ সাল থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করছে ঢাবি চারুকলা। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারু করা হয়েছে ‘নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’। চারটি বড় মোটিভ তৈরি করা হচ্ছে শোভাযাত্রার জন্য। যার মধ্যে আছে ট্যাপা পুতুল, ঘোড়া, মাছ এবং পাখি।

নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের কারণে চলাচলের পথ সরু থাকায় এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা টিএসসি থেকে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর (ফুলার রোড সড়কদ্বীপ) পর্যন্ত হবে। সব মলিনতা মুছে নবোদ্যমে মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে এমন প্রত্যাশা থেকে এবার আয়োজন সাজানো হচ্ছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরু করা হবে।

ঢাবি চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের চারুকলা অনুষদের ঐহিত্যের অংশ হয়ে উঠেছে। আমাদের অনুষদের ৮টি বিভাগের একাডেমির কারিকুলামের অংশ করারও প্রক্রিয়া চলছে। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ‘নির্মল কর, মঙ্গল কর মলিন মর্ম মুছায়ে’। মহামারী করোনাকালে মলিনতা মুছে জীবনে ছন্দে আসুক নির্মলতা। মঙ্গলময় হয়ে উঠুক স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এমন আশা থেকে উৎসারিত হয়েছে এবারের প্রতিপাদ্য।’

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট থাকবে। যেখানে প্রত্যেকটি মানুষকে চেকের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। এসব এলাকায় সব যানবাহন বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি সোয়াত ও ডিসপোজাল ইউনিট মোতায়েন থাকবে। আজ ও আগামীকাল পুরো এলাকা সার্চ করা হবে। পাশাপাশি পুরো চত্বর সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। বিভিন্ন স্থানে ওয়াচ টাওয়ার থাকবে। পুরো এলাকাটি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’ বোম ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াত, ডগ স্কোয়াডের পাশাপাশি রমনার লেকে নৌ-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল মোতায়েন থাকবে।