বান্দরবানে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে শুরু হয়েছে নানা কর্মসূচি। সবার মঙ্গল কামনায় সাঙ্গু নদীতে ফুল ভাসিয়ে ফুল বিজু পালন করলো চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যারা। গতকাল সকালে বান্দরবানের সাঙ্গু নদীর তীরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের তরুণ তরুণীরা পানিতে ফুল ভাসিয়ে শুরু করে ফুল বিঝু উৎসব।
চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে বান্দরবানে শুরু করে বর্ষবরণের আয়োজন।এই ‘ফুল বিজু’র মাধ্যমে গঙ্গাদেবীর মঙ্গল কামনায় ও পুরানো বছরের সব দুঃখ, গ্লানি ধুয়ে মুছে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের তরুণীরা বলেন, সবাই যেন সুখে শান্তিতে থাকে এজন্য আমরা নদীতে ফুল ভাসাই। এদিনটা আমাদের জন্য খুবই খুশির দিন। গত দু’বছর আমরা করোনার জন্য ফুল ভাসাতে পারিনি এবারে আমরা এ ফুল বিজু পালন করতে পেরে আরও বেশি খুশি লাগছে। আয়োজক কমিটির সুবল চাকমা বলেন, আমরা
তিন দিনব্যাপী বিজু উৎসব পালন করবো আজ হচ্ছে প্রথমদিন। আজ থেকে প্রতিদিন নানা উৎসব পালন করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রতি বছরই পার্বত্য এলাকা বান্দরবানে মারমা সম্প্রদায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে উদযাপন করে মাহা সাংগ্রাইং উৎসব। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাহাড়ি জাতিসত্ত্বার মধ্যে মারমা জনগোষ্ঠী সাংগ্রাইং নামে এ উৎসব পালন করে। করোনার কারণে গত দুই বছর উৎসব পালন করতে না পারলেও এই বছর পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরের আগমনের আগেই তাই বান্দরবানের মারমা সম্প্রদায় নতুন বর্ষকে বরণ করে নিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতি বছর নানা আয়োজনে মারমা সম্প্রদায় এই বাংলা নর্ববষ পালন করে থাকে আর মারমা ভাষায় এই উৎসবকে বলা হয় সাংগ্রাইং উৎসব। মূলত তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানেই মারমা সম্প্রদায়ের জনসংখ্য বেশি, তাই বান্দরবানে মূলত এই সাংগ্রাইকে ঘিরে কয়েকদিন চলে বর্ণিল আয়োজন। সাংগ্রাইং উৎসব উপলক্ষে বাজার করতে আসা মংশৈ হ্লা মার্মা জানান, প্রতি বছরের মতো এবারেও আমাদের সামনে নতুন বছর আসছে, তাই বাজার করতে এসেছি। পরিবার পরিজনের জন্য নতুন পোশাক কিনবো আর আনন্দের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে উদযাপন করবো। মাহা সাংগ্রাইং উৎসব উপলক্ষে বাজারে আসা মং থোয়াই সিং মারমা জানান, বাজারে এসেছি মা বাবার জন্য নতুন পোশাক কিনবো আর নতুন বছরের নতুন নতুন জিনিসপত্র দিয়ে বাড়ি-ঘর সাজাবো। বাংলা নববর্ষ আর আমাদের সাংগ্রাই, তাই চারদিন আমরা বর্ণিল আয়োজনের মধ্যদিয়ে এই নতুন বছরকে স্বাগত জানাবো।
অন্যদিকে সাংগ্রাইং উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি থেওয়াং (হ্লাএমং) জানান, নানা আয়োজনে ১৩ই এপ্রিল সকালে বান্দরবান রাজার মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হবে সাংগ্রাই উৎসবের আর শোভাযাত্রা শেষে বয়ঃজ্যেষ্ঠ পূজা। ১৪ই এপ্রিল সকালে মিনি ম্যারাথন দৌঁড়, বিকেলে পবিত্র বুদ্ধমূর্তি স্নান, রাতব্যাপী পিঠা তৈরি উৎসব, ১৫ই এপ্রিল বিকেলে বান্দরবানের উজানীপাড়া সাঙ্গু নদীর চরে মৈত্রী পানিবর্ষণ, ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, তৈলাক্ত বাঁশ আরোহন ও সবশেষে ১৬ই এপ্রিল সন্ধ্যায় বিহারে হাজার প্রদীপ প্রজ্জলন ও সমবেত প্রার্থনার মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটবে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এই সাংগ্রাই উৎসবের। বান্দরবানের পুলিশ সুপার জেরিন আখতার জানান, বান্দরবান একটি শান্তপ্রিয় শহর। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চাইতে এই এলাকার পরিবেশ সবসময় শান্ত থাকে। আমরা নববর্ষকে কেন্দ্র করে পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি এবং অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বান্দরবান : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নদীতে ফুল ভাসিয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানায় -সংবাদ
আরও খবরবুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২ , ৩০ চৈত্র ১৪২৮ ১১ রমাদ্বান ১৪৪৩
মো. শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান
বান্দরবান : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নদীতে ফুল ভাসিয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানায় -সংবাদ
বান্দরবানে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে শুরু হয়েছে নানা কর্মসূচি। সবার মঙ্গল কামনায় সাঙ্গু নদীতে ফুল ভাসিয়ে ফুল বিজু পালন করলো চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যারা। গতকাল সকালে বান্দরবানের সাঙ্গু নদীর তীরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের তরুণ তরুণীরা পানিতে ফুল ভাসিয়ে শুরু করে ফুল বিঝু উৎসব।
চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে বান্দরবানে শুরু করে বর্ষবরণের আয়োজন।এই ‘ফুল বিজু’র মাধ্যমে গঙ্গাদেবীর মঙ্গল কামনায় ও পুরানো বছরের সব দুঃখ, গ্লানি ধুয়ে মুছে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের তরুণীরা বলেন, সবাই যেন সুখে শান্তিতে থাকে এজন্য আমরা নদীতে ফুল ভাসাই। এদিনটা আমাদের জন্য খুবই খুশির দিন। গত দু’বছর আমরা করোনার জন্য ফুল ভাসাতে পারিনি এবারে আমরা এ ফুল বিজু পালন করতে পেরে আরও বেশি খুশি লাগছে। আয়োজক কমিটির সুবল চাকমা বলেন, আমরা
তিন দিনব্যাপী বিজু উৎসব পালন করবো আজ হচ্ছে প্রথমদিন। আজ থেকে প্রতিদিন নানা উৎসব পালন করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রতি বছরই পার্বত্য এলাকা বান্দরবানে মারমা সম্প্রদায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে উদযাপন করে মাহা সাংগ্রাইং উৎসব। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাহাড়ি জাতিসত্ত্বার মধ্যে মারমা জনগোষ্ঠী সাংগ্রাইং নামে এ উৎসব পালন করে। করোনার কারণে গত দুই বছর উৎসব পালন করতে না পারলেও এই বছর পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরের আগমনের আগেই তাই বান্দরবানের মারমা সম্প্রদায় নতুন বর্ষকে বরণ করে নিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতি বছর নানা আয়োজনে মারমা সম্প্রদায় এই বাংলা নর্ববষ পালন করে থাকে আর মারমা ভাষায় এই উৎসবকে বলা হয় সাংগ্রাইং উৎসব। মূলত তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানেই মারমা সম্প্রদায়ের জনসংখ্য বেশি, তাই বান্দরবানে মূলত এই সাংগ্রাইকে ঘিরে কয়েকদিন চলে বর্ণিল আয়োজন। সাংগ্রাইং উৎসব উপলক্ষে বাজার করতে আসা মংশৈ হ্লা মার্মা জানান, প্রতি বছরের মতো এবারেও আমাদের সামনে নতুন বছর আসছে, তাই বাজার করতে এসেছি। পরিবার পরিজনের জন্য নতুন পোশাক কিনবো আর আনন্দের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে উদযাপন করবো। মাহা সাংগ্রাইং উৎসব উপলক্ষে বাজারে আসা মং থোয়াই সিং মারমা জানান, বাজারে এসেছি মা বাবার জন্য নতুন পোশাক কিনবো আর নতুন বছরের নতুন নতুন জিনিসপত্র দিয়ে বাড়ি-ঘর সাজাবো। বাংলা নববর্ষ আর আমাদের সাংগ্রাই, তাই চারদিন আমরা বর্ণিল আয়োজনের মধ্যদিয়ে এই নতুন বছরকে স্বাগত জানাবো।
অন্যদিকে সাংগ্রাইং উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি থেওয়াং (হ্লাএমং) জানান, নানা আয়োজনে ১৩ই এপ্রিল সকালে বান্দরবান রাজার মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হবে সাংগ্রাই উৎসবের আর শোভাযাত্রা শেষে বয়ঃজ্যেষ্ঠ পূজা। ১৪ই এপ্রিল সকালে মিনি ম্যারাথন দৌঁড়, বিকেলে পবিত্র বুদ্ধমূর্তি স্নান, রাতব্যাপী পিঠা তৈরি উৎসব, ১৫ই এপ্রিল বিকেলে বান্দরবানের উজানীপাড়া সাঙ্গু নদীর চরে মৈত্রী পানিবর্ষণ, ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, তৈলাক্ত বাঁশ আরোহন ও সবশেষে ১৬ই এপ্রিল সন্ধ্যায় বিহারে হাজার প্রদীপ প্রজ্জলন ও সমবেত প্রার্থনার মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটবে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এই সাংগ্রাই উৎসবের। বান্দরবানের পুলিশ সুপার জেরিন আখতার জানান, বান্দরবান একটি শান্তপ্রিয় শহর। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চাইতে এই এলাকার পরিবেশ সবসময় শান্ত থাকে। আমরা নববর্ষকে কেন্দ্র করে পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি এবং অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।