শত কোটি টাকা আত্মসাৎ জামান নামে প্রতারক গ্রেপ্তার

সিরামিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা

সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া উদ্দিন ওরফে জামান নামে এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে র‌্যাব হেডকোয়াটার্সের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ টিম রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জে তার গ্রামের বাড়ি। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তার কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৭টি চেক বই, ৯৯ হাজার টাকার জাল নোট, ৬ হাজার জাল ইউএস ডলার, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য ফোসান সিরামিক প্ল্যান্ট এবং জিয়া টাওয়ারের কাঠামোগত ভবিষ্যত পরিকল্পনা, ওমানে অর্থপাচারের তথ্য, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য জাপানে তৈরি স্টিকার, ৫ ধরনের আইডি, বিজনেস কার্ড, নগদ ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ২শ’ কোটি টাকা নেয়ার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সংক্রান্ত নথিপত্র পাওয়া গেছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে বিভিন্ন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানকে প্রতারিত করার বিভিন্ন বিষয়াদি ও কৌশল সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত জিয়াউদ্দিন ১২টি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার অর্থাৎ চেয়ারম্যান বা এমডি হিসেবে দাবি করে থাকেন। সে নিজেকে জাহির করার লক্ষ্যে এ ধরনের তথ্য সম্বলিত ভিজিটিং কার্ড তৈরি করছে বলে জানিয়েছে।

এছাড়া তার অস্ট্রেলিয়া, চায়না, হংকং, ওমান ও দুবাইয়ে নানান ব্যবসা রয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে ভুয়া প্রচারণা চালায়। সে বিভিন্ন ব্যক্তিকে কৌশলে প্রলুদ্ধ করে ব্যবসায়িক পার্টনার বানানোর নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এছাড়া শতাধিক ব্যক্তিকে নানাভাবে প্রতারিত করার বিষয় জানা যায়।

২০১৪ সালে ফোসান সিরামিক লিমিটেড স্যানিটারি প্যাড, হাইলেডি স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ নানাবিধ পণ্যের আকর্ষণীয় টিভিসির মাধ্যমে

ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে।

সে লোকজনকে নানাভাবে লোভ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে কয়েকশ’ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। এভাবে ব্যবসায়িক অংশীদারের প্রস্তাব দিয়ে সে আনুমানিক শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ১৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে।

ভুয়া আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপণ, ভুয়া কোম্পানির ওয়েবসাইট, বিদেশে ভুয়া সাজানো ফ্যাক্টরি এবং অফিস পরিদর্শন, সাজানো বিপণনকেন্দ্র এবং ভুয়া কৃষি খামার ইত্যাদি আকৃষ্ট হয়ে লোকজন প্রতারক জিয়া উদ্দিনকে সরলভাবে বিশ্বাস করে। ব্যবসায়ীরা তার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছে।

সে কয়েকটি ব্যাংক থেকে তার নামে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা ঋণগ্রহণ করে তার উল্লেখযোগ্য অংশ মানিলন্ডারিং করে বিদেশে পাচার করছে বলে জানিয়েছে।

এ প্রতারক ২০০৯ সালে প্রবাসে থাকা অবস্থায় টাইলস ব্যবসার খুঁটিনাটি সম্পর্কে ধারণা অর্জন করে। আর বিদেশি মাফিয়াদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তর করে। এভাবে অর্থপাচার চক্রের সঙ্গে তার সখ্যতা তৈরি হয়। ২০১৪ সালে ফোসান সিরামিক লিমিটেড, হাইটেক সিরামিক লিমিটেড ইত্যাদি আমদানির ক্ষেত্রে অধিক মূল্য দেখিয়ে সে বিদেশে অর্থপাচার করেছে। ২০১৬ সাল থেকে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা পাচার করেছে বলে র‌্যাবকে জানিয়েছে। সে প্রতারণার টাকা দিয়ে ১৩০ বিঘা জমিসহ বহু সম্পদ গড়ে তুলেছে।

বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২ , ৩০ চৈত্র ১৪২৮ ১১ রমাদ্বান ১৪৪৩

শত কোটি টাকা আত্মসাৎ জামান নামে প্রতারক গ্রেপ্তার

সিরামিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া উদ্দিন ওরফে জামান নামে এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে র‌্যাব হেডকোয়াটার্সের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ টিম রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জে তার গ্রামের বাড়ি। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তার কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৭টি চেক বই, ৯৯ হাজার টাকার জাল নোট, ৬ হাজার জাল ইউএস ডলার, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য ফোসান সিরামিক প্ল্যান্ট এবং জিয়া টাওয়ারের কাঠামোগত ভবিষ্যত পরিকল্পনা, ওমানে অর্থপাচারের তথ্য, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য জাপানে তৈরি স্টিকার, ৫ ধরনের আইডি, বিজনেস কার্ড, নগদ ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ২শ’ কোটি টাকা নেয়ার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সংক্রান্ত নথিপত্র পাওয়া গেছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে বিভিন্ন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানকে প্রতারিত করার বিভিন্ন বিষয়াদি ও কৌশল সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত জিয়াউদ্দিন ১২টি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার অর্থাৎ চেয়ারম্যান বা এমডি হিসেবে দাবি করে থাকেন। সে নিজেকে জাহির করার লক্ষ্যে এ ধরনের তথ্য সম্বলিত ভিজিটিং কার্ড তৈরি করছে বলে জানিয়েছে।

এছাড়া তার অস্ট্রেলিয়া, চায়না, হংকং, ওমান ও দুবাইয়ে নানান ব্যবসা রয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে ভুয়া প্রচারণা চালায়। সে বিভিন্ন ব্যক্তিকে কৌশলে প্রলুদ্ধ করে ব্যবসায়িক পার্টনার বানানোর নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এছাড়া শতাধিক ব্যক্তিকে নানাভাবে প্রতারিত করার বিষয় জানা যায়।

২০১৪ সালে ফোসান সিরামিক লিমিটেড স্যানিটারি প্যাড, হাইলেডি স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ নানাবিধ পণ্যের আকর্ষণীয় টিভিসির মাধ্যমে

ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে।

সে লোকজনকে নানাভাবে লোভ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে কয়েকশ’ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। এভাবে ব্যবসায়িক অংশীদারের প্রস্তাব দিয়ে সে আনুমানিক শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ১৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে।

ভুয়া আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপণ, ভুয়া কোম্পানির ওয়েবসাইট, বিদেশে ভুয়া সাজানো ফ্যাক্টরি এবং অফিস পরিদর্শন, সাজানো বিপণনকেন্দ্র এবং ভুয়া কৃষি খামার ইত্যাদি আকৃষ্ট হয়ে লোকজন প্রতারক জিয়া উদ্দিনকে সরলভাবে বিশ্বাস করে। ব্যবসায়ীরা তার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছে।

সে কয়েকটি ব্যাংক থেকে তার নামে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা ঋণগ্রহণ করে তার উল্লেখযোগ্য অংশ মানিলন্ডারিং করে বিদেশে পাচার করছে বলে জানিয়েছে।

এ প্রতারক ২০০৯ সালে প্রবাসে থাকা অবস্থায় টাইলস ব্যবসার খুঁটিনাটি সম্পর্কে ধারণা অর্জন করে। আর বিদেশি মাফিয়াদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তর করে। এভাবে অর্থপাচার চক্রের সঙ্গে তার সখ্যতা তৈরি হয়। ২০১৪ সালে ফোসান সিরামিক লিমিটেড, হাইটেক সিরামিক লিমিটেড ইত্যাদি আমদানির ক্ষেত্রে অধিক মূল্য দেখিয়ে সে বিদেশে অর্থপাচার করেছে। ২০১৬ সাল থেকে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা পাচার করেছে বলে র‌্যাবকে জানিয়েছে। সে প্রতারণার টাকা দিয়ে ১৩০ বিঘা জমিসহ বহু সম্পদ গড়ে তুলেছে।