ডলারের দাম বাড়িয়েই চলেছে ব্যাংকগুলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দরের সঙ্গে বড় ফারাক

করোনার শুরু থেকেই টাকার বিপরিতে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে। মাঝে মাঝে সামান্য কমলে বাড়ে তার চেয়ে বেশি। দীর্ঘদিন ধরে ৮০ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল ডলার। এরপর ধারাবাহিকভাবে দাম বাড়তে শুরু করে। তবে অবাক করার বিষয় হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে রেটে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে, তার চেয়ে অনেক বেশি দামে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে। এর পার্থক্য প্রায় ছয় টাকার কাছাকাছি। কিন্তু নিয়ম অনুসারে এই পার্থক্য এক থেকে দেড় টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো গ্রাহককে ঠকিয়ে বেশি মুনাফা করছে। গতকাল বিভিন্ন ব্যাংকের রেট বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

গতকাল রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে ১ ডলার বিক্রি হয়েছে ৯২ টাকায়। জনতা ব্যাংক ডলার বিক্রি করেছে ৯১ টাকা ৫০ পয়সায়, অগ্রণী ব্যাংকে কিনতে দিতে হয়েছে ৯১ টাকা ৬০ পয়সা। বেসরকারি ইষ্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯১ টাকায়। সোনালী ব্যাংক এক দিনের ব্যবধানেই ডলারের দর ৫০ পয়সা বাড়িয়ে দিয়েছে। গত সোমবার বিক্রি করেছিল ৯১ টাকা ৫০ পয়সায়, গত মঙ্গলবার বিক্রি করেছে ৯২ টাকায়। আর খোলাবাজারে ৯২ থেকে ৯৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে মাস খানেক ধরে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে ডলার। ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে দামে ডলার কেনে বা বিক্রি করে, তাকে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার বলে। এ হিসাবে আন্তব্যাংক রেটের চেয়ে ৫ টাকা ৮০ পয়সা বেশি দামে নগদ ডলার বিক্রি করছে সোনালী ব্যাংক। অন্য ব্যাংকগুলো করছে ৫ থেকে সাড়ে ৫ টাকা বেশি দরে। অথচ এই ব্যবধান বা পার্থক্য এক-দেড় টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।

খোলাবাজারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন হাত নেই। তবে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার বিক্রি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে থাকে। এর আগে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোর বিক্রি করা ডলারের দর আর আন্তব্যাংক রেটের মধ্যে বেশি ব্যবধান হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই পার্থক্যের একটা সীমা নির্ধারণ করে দিত। সেটা এক থেকে দুই টাকার মধ্যে থাকত। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক রেটের চেয়ে অনেক বেশি দামে ডলার বিক্রি করলেও এখন পর্যন্ত কোন হস্তক্ষেপ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

সে কারণে দিন যতো যাচ্ছে, ইচ্ছে মতো যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দাম বাড়িয়ে চলেছে ব্যাংকগুলো। কমছে টাকার মান। এ পরিস্থিতিতে আমদানি খরচ বেড়েই যাচ্ছে। বাড়ছে পণ্যের দাম। তবে, রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হচ্ছেন।

ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার আসার বড় মাধ্যম রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স এবং বিদেশি অনুদান ও ঋণ। আর ডলার ব্যয় হয় আমদানি এবং বিদেশি সেবা, শিক্ষা, চিকিৎসা, যাতায়াত ও বেতন-ভাতার খরচ মেটাতে। এ ছাড়া আমদানি খরচও (জাহাজ ভাড়া) বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে ডলার খরচ বেড়ে যাওয়ায় মুদ্রাটির দাম বাড়ছে। যে কারণে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম। এর প্রভাব পড়েছে দেশের পুরো অর্থনীতিতে, যা অস্বস্তিতে ফেলেছে জনগণকে।

গত আগস্ট থেকে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ছে। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারেই এই আট মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকা ১ টাকা ৪০ পয়সা দর হারিয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর।

বাজারের চাহিদা বিবেচনায় প্রচুর ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৯ আগস্ট থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি (৩.৫০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে। অথচ বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়।

বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২২ , ০১ বৈশাখ ১৪২৮ ১২ রমাদ্বান ১৪৪৩

ডলারের দাম বাড়িয়েই চলেছে ব্যাংকগুলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দরের সঙ্গে বড় ফারাক

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

করোনার শুরু থেকেই টাকার বিপরিতে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে। মাঝে মাঝে সামান্য কমলে বাড়ে তার চেয়ে বেশি। দীর্ঘদিন ধরে ৮০ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল ডলার। এরপর ধারাবাহিকভাবে দাম বাড়তে শুরু করে। তবে অবাক করার বিষয় হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে রেটে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে, তার চেয়ে অনেক বেশি দামে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে। এর পার্থক্য প্রায় ছয় টাকার কাছাকাছি। কিন্তু নিয়ম অনুসারে এই পার্থক্য এক থেকে দেড় টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো গ্রাহককে ঠকিয়ে বেশি মুনাফা করছে। গতকাল বিভিন্ন ব্যাংকের রেট বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

গতকাল রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে ১ ডলার বিক্রি হয়েছে ৯২ টাকায়। জনতা ব্যাংক ডলার বিক্রি করেছে ৯১ টাকা ৫০ পয়সায়, অগ্রণী ব্যাংকে কিনতে দিতে হয়েছে ৯১ টাকা ৬০ পয়সা। বেসরকারি ইষ্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯১ টাকায়। সোনালী ব্যাংক এক দিনের ব্যবধানেই ডলারের দর ৫০ পয়সা বাড়িয়ে দিয়েছে। গত সোমবার বিক্রি করেছিল ৯১ টাকা ৫০ পয়সায়, গত মঙ্গলবার বিক্রি করেছে ৯২ টাকায়। আর খোলাবাজারে ৯২ থেকে ৯৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে মাস খানেক ধরে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে ডলার। ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে দামে ডলার কেনে বা বিক্রি করে, তাকে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার বলে। এ হিসাবে আন্তব্যাংক রেটের চেয়ে ৫ টাকা ৮০ পয়সা বেশি দামে নগদ ডলার বিক্রি করছে সোনালী ব্যাংক। অন্য ব্যাংকগুলো করছে ৫ থেকে সাড়ে ৫ টাকা বেশি দরে। অথচ এই ব্যবধান বা পার্থক্য এক-দেড় টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।

খোলাবাজারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন হাত নেই। তবে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার বিক্রি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে থাকে। এর আগে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোর বিক্রি করা ডলারের দর আর আন্তব্যাংক রেটের মধ্যে বেশি ব্যবধান হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই পার্থক্যের একটা সীমা নির্ধারণ করে দিত। সেটা এক থেকে দুই টাকার মধ্যে থাকত। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক রেটের চেয়ে অনেক বেশি দামে ডলার বিক্রি করলেও এখন পর্যন্ত কোন হস্তক্ষেপ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

সে কারণে দিন যতো যাচ্ছে, ইচ্ছে মতো যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দাম বাড়িয়ে চলেছে ব্যাংকগুলো। কমছে টাকার মান। এ পরিস্থিতিতে আমদানি খরচ বেড়েই যাচ্ছে। বাড়ছে পণ্যের দাম। তবে, রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হচ্ছেন।

ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার আসার বড় মাধ্যম রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স এবং বিদেশি অনুদান ও ঋণ। আর ডলার ব্যয় হয় আমদানি এবং বিদেশি সেবা, শিক্ষা, চিকিৎসা, যাতায়াত ও বেতন-ভাতার খরচ মেটাতে। এ ছাড়া আমদানি খরচও (জাহাজ ভাড়া) বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে ডলার খরচ বেড়ে যাওয়ায় মুদ্রাটির দাম বাড়ছে। যে কারণে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম। এর প্রভাব পড়েছে দেশের পুরো অর্থনীতিতে, যা অস্বস্তিতে ফেলেছে জনগণকে।

গত আগস্ট থেকে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ছে। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারেই এই আট মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকা ১ টাকা ৪০ পয়সা দর হারিয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর।

বাজারের চাহিদা বিবেচনায় প্রচুর ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৯ আগস্ট থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি (৩.৫০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে। অথচ বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়।