গৌরীপুরে কালবৈশাখী-শিলাবৃষ্টিতে

৩ হাজার পরিবারের বাড়ি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় গত রোববার (১০ এপ্রিল) গভীররাতে কালবৈশাখী ঝড়ে ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উড়িয়ে নিয়ে গেছে আধাকাচা ও কাচা ঘরবাড়ি। বোকাইনগর ইউনিয়নে প্রায় ৫ হাজার পরিবার ক্ষতির শিকার হয়েছেন। শিলাবৃষ্টিতে প্রায় ৩ হাজার পরিবারের টিনের চাল ছিদ্র হয়ে ঝাঝড়া হয়ে গেছে। আধাপাকা ও কাচা ধান ক্ষেতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সবজি ক্ষেতগুলো ধানের চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বিদ্যুত লাইন ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গৌরীপুর আবাসিক প্রকৌশলী (বিদ্যুত) আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, বিদ্যুত লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে লাইন সচল করার চেষ্টা করছি। আগামীকালের (মঙ্গলবার) মধ্যে সবলাইন স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে।

উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফুন্নাহার জানান, ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার সবস্থানে শিলাবৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি হয়েছে। ধানের ক্ষতি এই মুহূর্তে বলা সম্ভব না। তবে ৬৮৭ জন সবজি চাষির সাড়ে ২৭ হেক্টর জমির মৌসুমি শাক-সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন বোকাইনগর। এ ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামের অসংখ্য পরিবার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল মোক্তাদির শাহীন জানান, দুই-তিনশত বাড়ির ঘর দেখেছি যেগুরোতে রাত্রিযাপনের কোন সুযোগ নেই। সবগুলো ঘরের টিন ঝাঝড়া হয়ে গেছে। অর্ধশত বাড়ির ঘর উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ৭টি ঘর ধসে পড়েছে। এ ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫ হাজার পরিবার। ধানের খেত, কচুখেতের পাতা নেই। তাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত টাঙ্গাটিপাড়ার রাকিশ, দুলাল মিয়া, আসমা আক্তার, নাহড়া গ্রামের লতিফ, রহিম উদ্দিন, ফারুক মিয়া, বেতান্দর গ্রামের রাসেল মিয়া, নজরুল ইসলাম, খোকন মিয়া, মাহবুব মিয়া, কাওলাটিয়া গ্রামের জুয়েল মিয়া, নাজিম উদ্দিন, কালাম মিয়া, দিউপাড়া গ্রামের মোস্তফা, কিরন মিয়া, আবুল কাসেম, বৃবড়ভাগ আব্দুল গফুর, দুলাল মিয়া, বারেক হোসেন, স্বল্প বড়ভাগের সিরাজ মিয়া, আব্দুর রশিদ, নিজাম উদ্দিন, ভেঙ্গুরিপাড়ার হিমেল মিয়া, সোলেমান হোসেন, আব্দুল কাইয়ুম, তেলিহাটি গ্রামের নয়ন, বীরেন, হাদিউল ইসলাম। বেতান্দর গ্রামের মৃত রবিকুল ইসলাম স্ত্রী আছমা আক্তার জানান, ৪টি সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে আছি। শোন শোন শব্দ করে টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেল। দেখি খোদায় আকাশের নিচে রাখছে আমাদের। বড়ভাগের রবিকুল ইসলাম জানান, প্রত্যেকটা শিলাবৃষ্টির ওজন আধাকেজির ওপরে। এটা শিলাবৃষ্টি নয়, আমাদের জন্য গজব।

এদিকে ২নং গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হযরত আলী জানান, এ ইউনিয়নের বায়ড়াউড়া, কোনাপাড়া, হিম্মতনগর ও শালীহর ঘুরে দেখেছেন ১৮টি পরিবারের কাচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিদ্যুত লাইনেরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অচিন্তপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জায়েদুর রহমান জানান, শতাধিক বাড়িঘরের টিন শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। মাওহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আল ফারুক জানান, ১২টি পরিবার ঝড়ে নিঃস্ব হয়ে। ১৯টি ঘরের টিন উড়িয়ে নিয়ে গেছে। সহনাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন কাদের রুবেল জানান, ঝড়ে বিদ্যুত লাইন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত সোমবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিদ্যুত সরবরাহ হয়নি।

রামগোপালপুরের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন জনি জানান, ৬টি গ্রামের অর্ধশত বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ১৮টি বাড়ির টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ডৌহাখলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.এ কাইয়ুম জানান, তার ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি নষ্ট হয়েছে গাছপালার। ১০-১২টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত। সিধরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন জানান, ৫টি ইউনিয়নের অর্ধশত বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২২ , ০১ বৈশাখ ১৪২৮ ১২ রমাদ্বান ১৪৪৩

গৌরীপুরে কালবৈশাখী-শিলাবৃষ্টিতে

৩ হাজার পরিবারের বাড়ি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

প্রতিনিধি, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)

image

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) : উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নে গাছ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত টিনের ঘর (ডানে) শিলাবৃষ্টিতে ফুটো হয়ে যাওয়া ঘরের চাল -সংবাদ

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় গত রোববার (১০ এপ্রিল) গভীররাতে কালবৈশাখী ঝড়ে ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উড়িয়ে নিয়ে গেছে আধাকাচা ও কাচা ঘরবাড়ি। বোকাইনগর ইউনিয়নে প্রায় ৫ হাজার পরিবার ক্ষতির শিকার হয়েছেন। শিলাবৃষ্টিতে প্রায় ৩ হাজার পরিবারের টিনের চাল ছিদ্র হয়ে ঝাঝড়া হয়ে গেছে। আধাপাকা ও কাচা ধান ক্ষেতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সবজি ক্ষেতগুলো ধানের চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বিদ্যুত লাইন ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গৌরীপুর আবাসিক প্রকৌশলী (বিদ্যুত) আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, বিদ্যুত লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে লাইন সচল করার চেষ্টা করছি। আগামীকালের (মঙ্গলবার) মধ্যে সবলাইন স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে।

উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফুন্নাহার জানান, ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার সবস্থানে শিলাবৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি হয়েছে। ধানের ক্ষতি এই মুহূর্তে বলা সম্ভব না। তবে ৬৮৭ জন সবজি চাষির সাড়ে ২৭ হেক্টর জমির মৌসুমি শাক-সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন বোকাইনগর। এ ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামের অসংখ্য পরিবার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল মোক্তাদির শাহীন জানান, দুই-তিনশত বাড়ির ঘর দেখেছি যেগুরোতে রাত্রিযাপনের কোন সুযোগ নেই। সবগুলো ঘরের টিন ঝাঝড়া হয়ে গেছে। অর্ধশত বাড়ির ঘর উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ৭টি ঘর ধসে পড়েছে। এ ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫ হাজার পরিবার। ধানের খেত, কচুখেতের পাতা নেই। তাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত টাঙ্গাটিপাড়ার রাকিশ, দুলাল মিয়া, আসমা আক্তার, নাহড়া গ্রামের লতিফ, রহিম উদ্দিন, ফারুক মিয়া, বেতান্দর গ্রামের রাসেল মিয়া, নজরুল ইসলাম, খোকন মিয়া, মাহবুব মিয়া, কাওলাটিয়া গ্রামের জুয়েল মিয়া, নাজিম উদ্দিন, কালাম মিয়া, দিউপাড়া গ্রামের মোস্তফা, কিরন মিয়া, আবুল কাসেম, বৃবড়ভাগ আব্দুল গফুর, দুলাল মিয়া, বারেক হোসেন, স্বল্প বড়ভাগের সিরাজ মিয়া, আব্দুর রশিদ, নিজাম উদ্দিন, ভেঙ্গুরিপাড়ার হিমেল মিয়া, সোলেমান হোসেন, আব্দুল কাইয়ুম, তেলিহাটি গ্রামের নয়ন, বীরেন, হাদিউল ইসলাম। বেতান্দর গ্রামের মৃত রবিকুল ইসলাম স্ত্রী আছমা আক্তার জানান, ৪টি সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে আছি। শোন শোন শব্দ করে টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেল। দেখি খোদায় আকাশের নিচে রাখছে আমাদের। বড়ভাগের রবিকুল ইসলাম জানান, প্রত্যেকটা শিলাবৃষ্টির ওজন আধাকেজির ওপরে। এটা শিলাবৃষ্টি নয়, আমাদের জন্য গজব।

এদিকে ২নং গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হযরত আলী জানান, এ ইউনিয়নের বায়ড়াউড়া, কোনাপাড়া, হিম্মতনগর ও শালীহর ঘুরে দেখেছেন ১৮টি পরিবারের কাচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিদ্যুত লাইনেরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অচিন্তপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জায়েদুর রহমান জানান, শতাধিক বাড়িঘরের টিন শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। মাওহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আল ফারুক জানান, ১২টি পরিবার ঝড়ে নিঃস্ব হয়ে। ১৯টি ঘরের টিন উড়িয়ে নিয়ে গেছে। সহনাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন কাদের রুবেল জানান, ঝড়ে বিদ্যুত লাইন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত সোমবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিদ্যুত সরবরাহ হয়নি।

রামগোপালপুরের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন জনি জানান, ৬টি গ্রামের অর্ধশত বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ১৮টি বাড়ির টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ডৌহাখলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.এ কাইয়ুম জানান, তার ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি নষ্ট হয়েছে গাছপালার। ১০-১২টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত। সিধরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন জানান, ৫টি ইউনিয়নের অর্ধশত বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।