হুমায়ুন আজাদ হত্যা : ১৮ বছর পর রায়, ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

লেখক, ভাষাবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। গতকাল দুপুরে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আল-মামুন এ রায় ঘোষণা করেন। আদালত আসামিদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করে।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া চারজন হলেন- মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ, আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে শামীম। এদের মধ্যে সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে শামীম পালাতক রয়েছে।

মামলা ও আদালতের নথিপত্র অনুযায়ী, ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে অমর একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে হুমায়ুন আজাদকে কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় পরদিন তার ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। বিদেশে উন্নত চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর একই বছরের ১২ আগস্ট জার্মানিতে মারা যান হুমায়ুন আজাদ। এরপর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

মামলাটি তিন বছর তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ১৪ জানুয়ারি পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচার শুরু হয়। এই মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে একজন বেঁচে নেই। তার নাম হাফিজ মাহমুদ।

এদিন রায় ঘিরে আদালতপাড়ার সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত এক প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ জানায়, অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যার রায়কে কেন্দ্র করে যেকোন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এর আগে সকাল পৌনে ৮টার দিকে দুই আসামি মিনহাজ ওরফে শফিক ও আনোয়ার আলমকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। হুমায়ুন আজাদ হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১৮ বছর পর গত ২৭ মার্চ বিচারক আল-মামুন রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেন।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো।’

তবে, হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘স্যার (ড. হুমায়ুন আজাদ) ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ আহত হন। উনি ৬ মাস পরে জার্মানির মিউনিখে গিয়ে মারা যান। এ মামলায় প্রথমে হত্যাচেষ্টার চার্জশিট দেয়া হয়েছিল। স্যার মারা যাওয়ার পর হত্যা মামলার চার্জশিট দেয়া হয়। প্রথমে এ মামলার পোস্টমর্টেম দেয়নি। এ মামলায় কোন ডাক্তারকে সাক্ষী করা হয়নি। আমরা আদালতের কাছে বারবার বলেছিলাম, মামলাটা যেহেতু ৩০২ ধারার, সেহেতু ডাক্তারকে আনা হোক।’

তিনি আরও বলেন, ‘উনি (বিচারক) চেষ্টা করেছেন, কিন্তু রাষ্ট্র আনতে ব্যর্থ হয়েছে। যত প্রটোকল ছিল সব ব্যবহার করা হয়েছে। তারপরও সাক্ষীকে আনতে পারেনি। আমরা আদালতে বলেছিলাম, রিপোর্টে বলা আছে, স্যার মারা গেছেন হাইপারটেনশনে। আঘাতের কারণে মারা গেছেন পোস্টমর্টেমে এটা বলেনি।’

ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘বিচারক ভালো করে অবজারভেশন না নিয়ে সাজা দিয়েছে। আমরা মনে করি, এই ধরনের ট্রেন্ড যদি থাকে একটা মামলা হলেই তাকে ফাঁসি দিতে হবে। এরকম হতে থাকলে আমরা আসামিপক্ষে যারা আছি তারা আর মামলা করতে আসব না।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘আদালত আমাদের কোন যুক্তি খণ্ডন না করেই সাজা দিয়েছেন। আমরা খুবই মর্মাহত এমন জাজমেন্টে। আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’

বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২২ , ০১ বৈশাখ ১৪২৮ ১২ রমাদ্বান ১৪৪৩

হুমায়ুন আজাদ হত্যা : ১৮ বছর পর রায়, ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

আদালত বার্তা পরিবেশক

লেখক, ভাষাবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। গতকাল দুপুরে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আল-মামুন এ রায় ঘোষণা করেন। আদালত আসামিদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করে।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া চারজন হলেন- মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ, আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে শামীম। এদের মধ্যে সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে শামীম পালাতক রয়েছে।

মামলা ও আদালতের নথিপত্র অনুযায়ী, ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে অমর একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে হুমায়ুন আজাদকে কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় পরদিন তার ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। বিদেশে উন্নত চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর একই বছরের ১২ আগস্ট জার্মানিতে মারা যান হুমায়ুন আজাদ। এরপর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

মামলাটি তিন বছর তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ১৪ জানুয়ারি পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচার শুরু হয়। এই মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে একজন বেঁচে নেই। তার নাম হাফিজ মাহমুদ।

এদিন রায় ঘিরে আদালতপাড়ার সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত এক প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ জানায়, অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যার রায়কে কেন্দ্র করে যেকোন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এর আগে সকাল পৌনে ৮টার দিকে দুই আসামি মিনহাজ ওরফে শফিক ও আনোয়ার আলমকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। হুমায়ুন আজাদ হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১৮ বছর পর গত ২৭ মার্চ বিচারক আল-মামুন রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেন।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো।’

তবে, হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘স্যার (ড. হুমায়ুন আজাদ) ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ আহত হন। উনি ৬ মাস পরে জার্মানির মিউনিখে গিয়ে মারা যান। এ মামলায় প্রথমে হত্যাচেষ্টার চার্জশিট দেয়া হয়েছিল। স্যার মারা যাওয়ার পর হত্যা মামলার চার্জশিট দেয়া হয়। প্রথমে এ মামলার পোস্টমর্টেম দেয়নি। এ মামলায় কোন ডাক্তারকে সাক্ষী করা হয়নি। আমরা আদালতের কাছে বারবার বলেছিলাম, মামলাটা যেহেতু ৩০২ ধারার, সেহেতু ডাক্তারকে আনা হোক।’

তিনি আরও বলেন, ‘উনি (বিচারক) চেষ্টা করেছেন, কিন্তু রাষ্ট্র আনতে ব্যর্থ হয়েছে। যত প্রটোকল ছিল সব ব্যবহার করা হয়েছে। তারপরও সাক্ষীকে আনতে পারেনি। আমরা আদালতে বলেছিলাম, রিপোর্টে বলা আছে, স্যার মারা গেছেন হাইপারটেনশনে। আঘাতের কারণে মারা গেছেন পোস্টমর্টেমে এটা বলেনি।’

ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘বিচারক ভালো করে অবজারভেশন না নিয়ে সাজা দিয়েছে। আমরা মনে করি, এই ধরনের ট্রেন্ড যদি থাকে একটা মামলা হলেই তাকে ফাঁসি দিতে হবে। এরকম হতে থাকলে আমরা আসামিপক্ষে যারা আছি তারা আর মামলা করতে আসব না।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘আদালত আমাদের কোন যুক্তি খণ্ডন না করেই সাজা দিয়েছেন। আমরা খুবই মর্মাহত এমন জাজমেন্টে। আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’