যুক্তরাষ্ট্রে গুম নিয়ে ঢাকায় প্রশ্নের মুখে দূতাবাসের কর্মকর্তারা

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনে এসে যুক্তরাষ্ট্রে এত গুম কেন? সে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৮টি দেশ এবং অঞ্চলের ২০২১ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন, সরকার কিংবা সরকারের এজেন্টদের মাধ্যমে নাগরিকদের অমানবিক শাস্তি, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, কারাগারে জীবন-সংকটাপন্ন পরিস্থিতি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিশোধ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বাধা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ, সাংবাদিক নির্যাতন, ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র তুলে ধরা হয়। এছাড়া নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার ও তাদের জবাবদিহিতার বাইরে থাকার কথা বলা হয়।

মঙ্গলবারের প্রকাশিত প্রতিবেদন ইস্যুতে গতকাল দুপুরে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন মার্কিন দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা। এ সময় একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘পাবলিকলি’ বলে থাকেন যে, বাংলাদেশে ৬০০-৭০০টি গুমের ঘটনা ঘটেছে। আর আমেরিকায় প্রতি বছর এক লাখের মতো মানুষ গুম হয়। এ বিষয়ে দূতাবাসের মত কী?

জবাবে দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমস্যাকে অস্বীকার করছে না। কিন্তু সমস্যাগুলোকে যদি আমরা ইগনোর করি, তাহলে সেগুলোর সমাধান হবে না। আমরা আমাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করি এবং সেগুলো সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের থাকে।’

এ সময় বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ১৯৮টি দেশের প্রতিবেদন থাকলেও যুক্তরাষ্টের কোন প্রতিবেদন কিংবা তথ্য না থাকার

বিষয়ে জানতে চান একজন সাংবাদিক। জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টিং সিস্টেম অত্যন্ত কঠিন এবং এটা এমন নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র সবসময় অন্য দেশগুলোর রিপোর্টই করছে। নিজেদের কনস্টিটিউশন, ইনস্টিটিউশনগুলোও কড়া নজরদারির মধ্যে আছে।’

প্রতিবেদনটির তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে সংবাদ সম্মেলনে। বিতর্কিত এনজিওর তথ্য দিয়ে একটি দেশের মানবাধিকার প্রতিবেদন দেয়া যায় কি-না, এমন প্রশ্নে দূতাবাসের কর্মকর্তা তাদের প্রতিবেদনকে ‘বস্তুনিষ্ঠ’ দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সামগ্রিকভাবে যা দেখতে পাই, সেটাই প্রকাশ করি। একটা সোর্স থেকে নয়, অনেক সোর্স থেকে তথ্য নিয়ে আমরা রিপোর্ট করছি। যাদের থেকে নিচ্ছি, তাদের নাম আমরা প্রকাশ করছি।’

ইনডেক্সগুলো সবদেশের ক্ষেত্রে এক নাকি একেক দেশের ক্ষেত্রে একেকরকম হচ্ছে এমন প্রশ্নের এর জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘একেক দেশের একেক প্যারামিটারের ওপর নির্ভর করে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু থিমগুলো যেগুলো থাকে, মানবাধিকার, নারী অধিকার- এগুলো সব দেশের জন্য একই থাকে।’

প্রতিবেদনটি নিয়ে ইতোমধ্যে সরকারের বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র এসব বিষয় নিয়ে কাজ করে কি-না কিংবা ভুল সংশোধনে পদক্ষেপ নেয় কি-না এ সময় জানতে চাওয়া হয়। দূতাবাস কর্মকর্তারা বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে আমাদের যখন আলোচনা হয়, তখন এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলি। বারবার বিভিন্ন আলোচনার মধ্য দিয়েই এগুলোর সমাধান আসবে।’

বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২২ , ০১ বৈশাখ ১৪২৮ ১২ রমাদ্বান ১৪৪৩

যুক্তরাষ্ট্রে গুম নিয়ে ঢাকায় প্রশ্নের মুখে দূতাবাসের কর্মকর্তারা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনে এসে যুক্তরাষ্ট্রে এত গুম কেন? সে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৮টি দেশ এবং অঞ্চলের ২০২১ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন, সরকার কিংবা সরকারের এজেন্টদের মাধ্যমে নাগরিকদের অমানবিক শাস্তি, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, কারাগারে জীবন-সংকটাপন্ন পরিস্থিতি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিশোধ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বাধা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ, সাংবাদিক নির্যাতন, ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র তুলে ধরা হয়। এছাড়া নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার ও তাদের জবাবদিহিতার বাইরে থাকার কথা বলা হয়।

মঙ্গলবারের প্রকাশিত প্রতিবেদন ইস্যুতে গতকাল দুপুরে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন মার্কিন দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা। এ সময় একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘পাবলিকলি’ বলে থাকেন যে, বাংলাদেশে ৬০০-৭০০টি গুমের ঘটনা ঘটেছে। আর আমেরিকায় প্রতি বছর এক লাখের মতো মানুষ গুম হয়। এ বিষয়ে দূতাবাসের মত কী?

জবাবে দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমস্যাকে অস্বীকার করছে না। কিন্তু সমস্যাগুলোকে যদি আমরা ইগনোর করি, তাহলে সেগুলোর সমাধান হবে না। আমরা আমাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করি এবং সেগুলো সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের থাকে।’

এ সময় বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ১৯৮টি দেশের প্রতিবেদন থাকলেও যুক্তরাষ্টের কোন প্রতিবেদন কিংবা তথ্য না থাকার

বিষয়ে জানতে চান একজন সাংবাদিক। জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টিং সিস্টেম অত্যন্ত কঠিন এবং এটা এমন নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র সবসময় অন্য দেশগুলোর রিপোর্টই করছে। নিজেদের কনস্টিটিউশন, ইনস্টিটিউশনগুলোও কড়া নজরদারির মধ্যে আছে।’

প্রতিবেদনটির তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে সংবাদ সম্মেলনে। বিতর্কিত এনজিওর তথ্য দিয়ে একটি দেশের মানবাধিকার প্রতিবেদন দেয়া যায় কি-না, এমন প্রশ্নে দূতাবাসের কর্মকর্তা তাদের প্রতিবেদনকে ‘বস্তুনিষ্ঠ’ দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সামগ্রিকভাবে যা দেখতে পাই, সেটাই প্রকাশ করি। একটা সোর্স থেকে নয়, অনেক সোর্স থেকে তথ্য নিয়ে আমরা রিপোর্ট করছি। যাদের থেকে নিচ্ছি, তাদের নাম আমরা প্রকাশ করছি।’

ইনডেক্সগুলো সবদেশের ক্ষেত্রে এক নাকি একেক দেশের ক্ষেত্রে একেকরকম হচ্ছে এমন প্রশ্নের এর জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘একেক দেশের একেক প্যারামিটারের ওপর নির্ভর করে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু থিমগুলো যেগুলো থাকে, মানবাধিকার, নারী অধিকার- এগুলো সব দেশের জন্য একই থাকে।’

প্রতিবেদনটি নিয়ে ইতোমধ্যে সরকারের বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র এসব বিষয় নিয়ে কাজ করে কি-না কিংবা ভুল সংশোধনে পদক্ষেপ নেয় কি-না এ সময় জানতে চাওয়া হয়। দূতাবাস কর্মকর্তারা বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে আমাদের যখন আলোচনা হয়, তখন এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলি। বারবার বিভিন্ন আলোচনার মধ্য দিয়েই এগুলোর সমাধান আসবে।’