আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা পুতিনের

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার ‘মহৎ’ লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এবং চলমান যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়েছিল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে একটি মহাকাশ কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় এই মন্তব্য করেন পুতিন।

পুতিন বলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান পরিকল্পনা অনুসারেই চলছে। ইউক্রেনের একজন কর্মকর্তা অবশ্য বলেছেন, (রাশিয়ার সঙ্গে) আলোচনা কঠিন হলেও অব্যাহত রয়েছে।

বিবিসি বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগাসন ষষ্ঠ সপ্তাহে গড়িয়েছে। এছাড়া এক সপ্তাহেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথম সংঘাতের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করলেন পুতিন। বিশ্বের প্রথম মানুষ হিসেবে ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশে ভ্রমণের ৬১তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাশিয়ার একটি মহাকাশ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন পুতিন। সেখানে তার সঙ্গে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোও ছিলেন।

এসময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, ইউক্রেনে হামলা চালানো ছাড়া তার সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না। মূলত পূর্ব ইউক্রেনে রুশ ভাষাভাষীদের রক্ষা করার জন্যই তাকে আক্রমণ করতে হয়েছে।

ক্রেমলিন দাবি করে আসছে যে, পূর্ব ইউক্রেনে রুশ ভাষাভাষীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে ইউক্রেন। যদিও ক্রেমলিনের এই দাবি সমর্থন করার মতো কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। পুতিন বলেন, ‘একদিকে আমরা মানুষকে সাহায্য ও রক্ষা করছি, অন্যদিকে আমরা শুধু রাশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ রুশ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, এটি পরিষ্কার যে আমাদের আর কোনো বিকল্প ছিল না। এটি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। রাশিয়া শান্ত ও ছন্দবদ্ধভাবে আক্রমণ চালিয়ে যাবে। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের চারপাশ থেকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে এবং এখন পূর্বাঞ্চলীয় দোনেতস্ক ও লুহানস্কে রুশ সেনাদের জড়ো করা হচ্ছে। মূলত রাশিয়ার ‘বিশেষ অভিযান’ শুরুর পর ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রচ- প্রতিরোধের মুখে রুশ সৈন্যরা পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির উত্তরাঞ্চল থেকে সরে যায়।

ইউক্রেনে গণহত্যা চালাচ্ছেন

পুতিন : বাইডেন

পুতিনের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগ তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে গণহত্যা চালাচ্ছেন রুশ এই ‘একনায়ক’ প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানির মূল্য নিয়ে আইওয়া অঙ্গরাজ্যে বক্তব্য দেয়ার সময় বাইডেন এই মন্তব্য করেন। আইওয়া অঙ্গরাজ্যে মার্কিন অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানির ব্যয় সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ইউক্রেনে বেসামরিক হত্যাকা-ের বর্ণনা দেয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রশাসনের অন্য যে কোনো সদস্যের চেয়ে এগিয়ে গেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। কারণ মার্কিন কর্মকর্তারা রাশিয়াকে যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করলেও এখন পর্যন্ত এটিকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান গ্যাসের দাম রোধ করার পরিকল্পনা সম্পর্কে আইওয়াতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আপনার পারিবারিক বাজেট বা আপনার (গাড়ির) ট্যাংক পূরণ করার সক্ষমতা এর কোনোটিই অর্ধেক পৃথিবী দূরে একজন স্বৈরশাসকের যুদ্ধ ঘোষণা এবং গণহত্যা করেছে কি না তার ওপর নির্ভর করা উচিত নয়।’ রাশিয়ার সমারিক অভিযান শুরুর পর ইউক্রেনের ঘটনা বর্ণনা করতে এবারই প্রথম ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রেসিডেন্ট। এর আগে পুতিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন বাইডেন। নিজের ওই মন্তব্যের পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে কি না তা নির্ধারণ আইনজীবীদের ওপর নির্ভর করবে। মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট বক্তৃতার পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি অবশ্যই আমার কাছে গণহত্যা বলে মনে হচ্ছে।’

অবশ্য ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছে বুচা শহরে বেসামরিক লোকদের হত্যাকা-কে ‘প্রকৃত গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কিয়েভের কাছে অবস্থিত এই শহরটিতে যুদ্ধাপরাধ হয়েছে বলে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।

ইউক্রেনের যোদ্ধারা যেসব অঞ্চল উদ্ধার করছে, সেখানে রুশ সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মম অত্যাচারের শত শত ঘটনার শিকার হাজার হাজার ভুক্তভোগী পাওয়া যাচ্ছে। লিথুয়ানিয়ান পার্লামেন্টে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেয়া ভাষণে এমন দাবি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন গণকবরের সন্ধান মিলছে। নালার মধ্যে এবং মাটির নিচে মরদেহ পাওয়া যাচ্ছে।

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ান বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত ‘যুদ্ধাপরাধের তদন্ত’ শুরুর বিষয়টি লিথুয়ানিয়ান সংসদ সদস্যদের জানান জেলেনস্কি। ভাষণে তিনি আরও বলেন, শত শত ধর্ষণের ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। জেলেনস্কি জানান, তিনি নিশ্চিত যে রাশিয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করবে।

বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২২ , ০১ বৈশাখ ১৪২৮ ১২ রমাদ্বান ১৪৪৩

আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা পুতিনের

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার ‘মহৎ’ লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এবং চলমান যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়েছিল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে একটি মহাকাশ কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় এই মন্তব্য করেন পুতিন।

পুতিন বলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান পরিকল্পনা অনুসারেই চলছে। ইউক্রেনের একজন কর্মকর্তা অবশ্য বলেছেন, (রাশিয়ার সঙ্গে) আলোচনা কঠিন হলেও অব্যাহত রয়েছে।

বিবিসি বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগাসন ষষ্ঠ সপ্তাহে গড়িয়েছে। এছাড়া এক সপ্তাহেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথম সংঘাতের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করলেন পুতিন। বিশ্বের প্রথম মানুষ হিসেবে ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশে ভ্রমণের ৬১তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাশিয়ার একটি মহাকাশ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন পুতিন। সেখানে তার সঙ্গে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোও ছিলেন।

এসময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, ইউক্রেনে হামলা চালানো ছাড়া তার সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না। মূলত পূর্ব ইউক্রেনে রুশ ভাষাভাষীদের রক্ষা করার জন্যই তাকে আক্রমণ করতে হয়েছে।

ক্রেমলিন দাবি করে আসছে যে, পূর্ব ইউক্রেনে রুশ ভাষাভাষীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে ইউক্রেন। যদিও ক্রেমলিনের এই দাবি সমর্থন করার মতো কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। পুতিন বলেন, ‘একদিকে আমরা মানুষকে সাহায্য ও রক্ষা করছি, অন্যদিকে আমরা শুধু রাশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ রুশ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, এটি পরিষ্কার যে আমাদের আর কোনো বিকল্প ছিল না। এটি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। রাশিয়া শান্ত ও ছন্দবদ্ধভাবে আক্রমণ চালিয়ে যাবে। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের চারপাশ থেকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে এবং এখন পূর্বাঞ্চলীয় দোনেতস্ক ও লুহানস্কে রুশ সেনাদের জড়ো করা হচ্ছে। মূলত রাশিয়ার ‘বিশেষ অভিযান’ শুরুর পর ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রচ- প্রতিরোধের মুখে রুশ সৈন্যরা পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির উত্তরাঞ্চল থেকে সরে যায়।

ইউক্রেনে গণহত্যা চালাচ্ছেন

পুতিন : বাইডেন

পুতিনের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগ তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে গণহত্যা চালাচ্ছেন রুশ এই ‘একনায়ক’ প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানির মূল্য নিয়ে আইওয়া অঙ্গরাজ্যে বক্তব্য দেয়ার সময় বাইডেন এই মন্তব্য করেন। আইওয়া অঙ্গরাজ্যে মার্কিন অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানির ব্যয় সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ইউক্রেনে বেসামরিক হত্যাকা-ের বর্ণনা দেয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রশাসনের অন্য যে কোনো সদস্যের চেয়ে এগিয়ে গেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। কারণ মার্কিন কর্মকর্তারা রাশিয়াকে যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করলেও এখন পর্যন্ত এটিকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান গ্যাসের দাম রোধ করার পরিকল্পনা সম্পর্কে আইওয়াতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আপনার পারিবারিক বাজেট বা আপনার (গাড়ির) ট্যাংক পূরণ করার সক্ষমতা এর কোনোটিই অর্ধেক পৃথিবী দূরে একজন স্বৈরশাসকের যুদ্ধ ঘোষণা এবং গণহত্যা করেছে কি না তার ওপর নির্ভর করা উচিত নয়।’ রাশিয়ার সমারিক অভিযান শুরুর পর ইউক্রেনের ঘটনা বর্ণনা করতে এবারই প্রথম ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রেসিডেন্ট। এর আগে পুতিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন বাইডেন। নিজের ওই মন্তব্যের পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে কি না তা নির্ধারণ আইনজীবীদের ওপর নির্ভর করবে। মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট বক্তৃতার পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি অবশ্যই আমার কাছে গণহত্যা বলে মনে হচ্ছে।’

অবশ্য ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছে বুচা শহরে বেসামরিক লোকদের হত্যাকা-কে ‘প্রকৃত গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কিয়েভের কাছে অবস্থিত এই শহরটিতে যুদ্ধাপরাধ হয়েছে বলে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।

ইউক্রেনের যোদ্ধারা যেসব অঞ্চল উদ্ধার করছে, সেখানে রুশ সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মম অত্যাচারের শত শত ঘটনার শিকার হাজার হাজার ভুক্তভোগী পাওয়া যাচ্ছে। লিথুয়ানিয়ান পার্লামেন্টে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেয়া ভাষণে এমন দাবি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন গণকবরের সন্ধান মিলছে। নালার মধ্যে এবং মাটির নিচে মরদেহ পাওয়া যাচ্ছে।

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ান বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত ‘যুদ্ধাপরাধের তদন্ত’ শুরুর বিষয়টি লিথুয়ানিয়ান সংসদ সদস্যদের জানান জেলেনস্কি। ভাষণে তিনি আরও বলেন, শত শত ধর্ষণের ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। জেলেনস্কি জানান, তিনি নিশ্চিত যে রাশিয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করবে।