ডায়রিয়া মোকাবিলায় রাজধানীর ২৩ লাখ লোক টিকা পাবেন

৪ জনের মৃত্যু

রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে ডায়রিয়ায় চার জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ডায়রিয়ার প্রকোপ মোকাবিলায় রাজধানীর ২৩ লাখ মানুষকে মুখে খাওয়ার কলেরার টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১ বছর বয়স থেকে বড় সব বয়সের মানুষকে এ টিকা দেয়া হবে। তবে গর্ভবতী নারীকে এ টিকার আওতার বাইরে রাখা হবে।

গতকাল দেশের চলমান ডায়রিয়া সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষ ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডায়রিয়ায় ৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করলেও আইসিডিডিআর’বি বলছে, মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। এ প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক নাজমুল বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত চার জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছি। আইসিডিডিআর’বি একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। তারা আমাদের কাছে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য হস্তান্তর করেনি। করলে আমরা সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখবো।’

ডায়রিয়ার টিকা প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. নাজমুল জানান, দুই ডোজের এই টিকা কর্মসূচির প্রথম ডোজ দেয়া হবে মে মাসে। সবমিলিয়ে ২৩ লাখ ডোজ টিকা দেয়া হবে। দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে জুনে।

তিনি বলেন, প্রথম ধাপে যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, সবুজবাগ রাজধানীর এই পাঁচটি এলাকায় এই টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

সারাদেশে কেন দেয়া হবে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ?‘টিকার এখন খুব সংকট। নাইজেরিয়া থেকে টিকা আমাদের দেয়া হয়েছে।’

টিকা গ্রহণের প্রক্রিয়া কেমন হবে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, টিকা কার্যক্রমটি নিয়ে আমরা এখনও কাজ করছি। এই টিকা গ্রহণ করতে হলে আলাদা কোন নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই। নির্দিষ্ট তারিখ ও কেন্দ্র বাছাই হলে সবাইকে জানিয়ে

দেয়া হবে। যেসব কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে সেখানে গেলেই টিকা নেয়া যাবে।

রাজধানী ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী যাত্রাবাড়ী এলাকায় জানিয়ে নাজমুল ইসলাম বলেন, সেখানে নিরাপদ পানির অভাব আছে কিংবা সাপ্লাই লাইনে সমস্যা আছে। পানির সমস্যা সমাধান না হলে, এটা থেকেই যাবে। যে পানি আমি ব্যবহার করবো, তা নিজ দায়িত্বে নিরাপদ করে নিতে হবে।’

ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ডায়রিয়া রোগীদের সুস্থ ব্যবস্থাপনায় এবং ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ডায়রিয়া রোগীদের সুস্থ ব্যবস্থাপনার জন্য হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত বিছানার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ডায়রিয়া ওয়ার্ড চালু করা হচ্ছে। ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসায় চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে ৬০ জনের বেশি চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

হাসপাতালের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ডায়রিয়া রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ, আইভি স্যালাইন, মুখে খাওয়ার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ইত্যাদি চাহিদা অনুয়ায়ী পাঠানো হচ্ছে। সব বিভাগীর ভা-ারে পর্যাপ্ত আইভি স্যালাইন মজুদ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে সব উপদ্রুত এলাকায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

সারাদেশে মোট ৪ হাজার ৫২৮টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। হাসপাতালগুলোতে ৫০০ মিলি ব্যাগ আইভি স্যালাইন মজুদ আছে ৩ লাখ ৩০ হাজারটি, ১০০০ মিলি ব্যাগ আছে ৪ লাখ। এছাড়া ১০০০ মিলি ব্যাগের আরও ১ লাখ ৬০ হাজার আইভি স্যালাইন শীঘ্রই ক্রয় করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ডায়রিয়া প্রকোপ রোধে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। কেউ ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে খাবার স্যালাইন গ্রহণের পাশাপাশি নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। জেলা-উপজেলাসহ আমাদের প্রতিটি হাসপাতালই প্রস্তুত রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডায়রিয়া হলেই আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালটির নাম মাথায় চলে আসে। কারণ এই হাসপাতালটির আগে নাম ছিল কলেরা হাসপাতাল। এ কারণেই মানুষ হাসপাতালটিতে এসে ভিড় জমাচ্ছে। কিন্তু আমাদের প্রতিটি হাসপাতালই ডায়রিয়া চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত।

বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২২ , ০১ বৈশাখ ১৪২৮ ১২ রমাদ্বান ১৪৪৩

ডায়রিয়া মোকাবিলায় রাজধানীর ২৩ লাখ লোক টিকা পাবেন

৪ জনের মৃত্যু

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে ডায়রিয়ায় চার জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ডায়রিয়ার প্রকোপ মোকাবিলায় রাজধানীর ২৩ লাখ মানুষকে মুখে খাওয়ার কলেরার টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১ বছর বয়স থেকে বড় সব বয়সের মানুষকে এ টিকা দেয়া হবে। তবে গর্ভবতী নারীকে এ টিকার আওতার বাইরে রাখা হবে।

গতকাল দেশের চলমান ডায়রিয়া সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষ ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডায়রিয়ায় ৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করলেও আইসিডিডিআর’বি বলছে, মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। এ প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক নাজমুল বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত চার জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছি। আইসিডিডিআর’বি একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। তারা আমাদের কাছে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য হস্তান্তর করেনি। করলে আমরা সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখবো।’

ডায়রিয়ার টিকা প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. নাজমুল জানান, দুই ডোজের এই টিকা কর্মসূচির প্রথম ডোজ দেয়া হবে মে মাসে। সবমিলিয়ে ২৩ লাখ ডোজ টিকা দেয়া হবে। দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে জুনে।

তিনি বলেন, প্রথম ধাপে যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, সবুজবাগ রাজধানীর এই পাঁচটি এলাকায় এই টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

সারাদেশে কেন দেয়া হবে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ?‘টিকার এখন খুব সংকট। নাইজেরিয়া থেকে টিকা আমাদের দেয়া হয়েছে।’

টিকা গ্রহণের প্রক্রিয়া কেমন হবে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, টিকা কার্যক্রমটি নিয়ে আমরা এখনও কাজ করছি। এই টিকা গ্রহণ করতে হলে আলাদা কোন নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই। নির্দিষ্ট তারিখ ও কেন্দ্র বাছাই হলে সবাইকে জানিয়ে

দেয়া হবে। যেসব কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে সেখানে গেলেই টিকা নেয়া যাবে।

রাজধানী ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী যাত্রাবাড়ী এলাকায় জানিয়ে নাজমুল ইসলাম বলেন, সেখানে নিরাপদ পানির অভাব আছে কিংবা সাপ্লাই লাইনে সমস্যা আছে। পানির সমস্যা সমাধান না হলে, এটা থেকেই যাবে। যে পানি আমি ব্যবহার করবো, তা নিজ দায়িত্বে নিরাপদ করে নিতে হবে।’

ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ডায়রিয়া রোগীদের সুস্থ ব্যবস্থাপনায় এবং ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ডায়রিয়া রোগীদের সুস্থ ব্যবস্থাপনার জন্য হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত বিছানার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ডায়রিয়া ওয়ার্ড চালু করা হচ্ছে। ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসায় চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে ৬০ জনের বেশি চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

হাসপাতালের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ডায়রিয়া রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ, আইভি স্যালাইন, মুখে খাওয়ার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ইত্যাদি চাহিদা অনুয়ায়ী পাঠানো হচ্ছে। সব বিভাগীর ভা-ারে পর্যাপ্ত আইভি স্যালাইন মজুদ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে সব উপদ্রুত এলাকায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

সারাদেশে মোট ৪ হাজার ৫২৮টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। হাসপাতালগুলোতে ৫০০ মিলি ব্যাগ আইভি স্যালাইন মজুদ আছে ৩ লাখ ৩০ হাজারটি, ১০০০ মিলি ব্যাগ আছে ৪ লাখ। এছাড়া ১০০০ মিলি ব্যাগের আরও ১ লাখ ৬০ হাজার আইভি স্যালাইন শীঘ্রই ক্রয় করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ডায়রিয়া প্রকোপ রোধে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। কেউ ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে খাবার স্যালাইন গ্রহণের পাশাপাশি নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। জেলা-উপজেলাসহ আমাদের প্রতিটি হাসপাতালই প্রস্তুত রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডায়রিয়া হলেই আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালটির নাম মাথায় চলে আসে। কারণ এই হাসপাতালটির আগে নাম ছিল কলেরা হাসপাতাল। এ কারণেই মানুষ হাসপাতালটিতে এসে ভিড় জমাচ্ছে। কিন্তু আমাদের প্রতিটি হাসপাতালই ডায়রিয়া চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত।