ধর্ম অবমাননার মামলায় জামিনে মুক্তি পাওয়ার ২৩ দিন পর কর্মস্থলে ফিরলেন মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। এদিকে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল কর্মস্থলে ফিরে আসায় শিক্ষার্থী ও তার সহকর্মীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। গতকাল বেলা ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হাই তালুকদারের সঙ্গে নিজ কর্মস্থলে যান তিনি।
অন্যদিকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ঘটে যাওয়া ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের গঠিত ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি তদন্ত শুরু করেছে। কমিটির প্রধান মুন্সীগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হাই তালুকদারের নেতৃত্বে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। ৫ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ আবদুল হাই তালুকদার গতকাল মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। কথা বলেন ওই স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের সঙ্গে।
অধ্যক্ষ আবদুল হাই বলেন, ‘আমি মামলার বাদী আসাদ, স্কুল শিক্ষক, সাধারণ ছাত্র, যে চারজন শিক্ষার্থী তার বক্তব্য রেকর্ড করেছে তাদের বক্তব্য, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, সভাপতি এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন মৌখিক এবং লিখিত আকারে সবার বক্তব্য নিয়েছেন তদন্তকারী এই কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, আইনজীবী যারা এ ঘটনা দেখেছেন ও জানেন তাদের থেকে সব কথাও শুনব, লিপিবদ্ধ করব। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে আমাকে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার কথা রয়েছে। গতকাল তদন্ত কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিবসে আমি সারাদিন স্কুলে অবস্থান করে যে শ্রেণীকক্ষে ঘটনার সূত্রপাত সেই শ্রেণীকক্ষে বসে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত চার শিক্ষার্থীর বক্তব্য শুনেছি এবং লিখিত নিয়েছে। তদন্তের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আশা করছি ১৭, ১৮ ও ১৯ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করতে পারবো এবং চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট দিতে সক্ষম হবো।
হৃদয় মণ্ডল স্কুলে যোগদানের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ১৮ এপ্রিল সোমবার স্কুলে যোগদান করার সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু স্কুল ম্যানেজিং কমিটি সাময়িক বরখাস্ত করে কারণ দর্শানোর শোকজ করেছেন সেই শোকজের জবাব তিনি দিতে পারেননি জেলখানায় থাকার কারণে। শোকজের জবাব দিলেই ম্যানেজিং কমিটি তাকে স্কুলে বহাল করবেন বলে আশাবাদী এই তদন্ত কর্মকর্তা।
ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তদন্তকারী এই কর্মকর্তা জানান, চারজন শিক্ষার্থী, সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও সভাপতির লিখিত বক্তব্য নিয়ে আসছি। লিখিত বক্তব্যগুলো পড়ে আসল বা ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আমার দেয়া তদন্ত রিপোর্টেই বিস্তারিত জানা যাবে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ মার্চ মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে আটক করে পুলিশ। পরে মামলা হলে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এর আগে ২০ মার্চ পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। ১৯ দিন কারাভোগের পর ১০ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোতাহারাত আখতার ভূঁইয়া তার জামিন মঞ্জুর করেন। শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নেন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সে সময় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ অস্বীকার করেন বিজ্ঞানের এই শিক্ষক। কী কারণে এই অভিযোগ তোলা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারছি না কী ঘটছে, স্কুলে অভ্যন্তরীণ রেষারেষি থেকেও হতে পারে, প্রাইভেট পড়ানো নিয়েও হতে পারে।’
ম্যানেজিং কমিটির একজন সদস্য মনিরুজ্জামান শরিফ জানান, এখানে ষড়যন্ত্র হতে পারে। তবে শিক্ষার্থীরা বলেছে স্যারকে নিয়ে টিকটক করার জন্যই এই ভিডিও করা হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটির সদস্য আজকে তদন্ত করেছে চারজন শিক্ষার্থীর লিখিত বক্তব্য নিয়েছেন। হৃদয় মণ্ডল ও অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
এ বিষয়ে হৃদয় মণ্ডল বলেন, তদন্ত কমিটির তদন্তের সময় আমি ছিলাম। সবাই বক্তব্য দিয়েছে আমাকে যে সব প্রশ্ন করা হয়েছে তার জবাব আমি দিয়েছি। স্কুলের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছে।
বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২২ , ০১ বৈশাখ ১৪২৮ ১২ রমাদ্বান ১৪৪৩
প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জ
ধর্ম অবমাননার মামলায় জামিনে মুক্তি পাওয়ার ২৩ দিন পর কর্মস্থলে ফিরলেন মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। এদিকে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল কর্মস্থলে ফিরে আসায় শিক্ষার্থী ও তার সহকর্মীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। গতকাল বেলা ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হাই তালুকদারের সঙ্গে নিজ কর্মস্থলে যান তিনি।
অন্যদিকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ঘটে যাওয়া ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের গঠিত ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি তদন্ত শুরু করেছে। কমিটির প্রধান মুন্সীগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হাই তালুকদারের নেতৃত্বে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। ৫ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ আবদুল হাই তালুকদার গতকাল মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। কথা বলেন ওই স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের সঙ্গে।
অধ্যক্ষ আবদুল হাই বলেন, ‘আমি মামলার বাদী আসাদ, স্কুল শিক্ষক, সাধারণ ছাত্র, যে চারজন শিক্ষার্থী তার বক্তব্য রেকর্ড করেছে তাদের বক্তব্য, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, সভাপতি এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন মৌখিক এবং লিখিত আকারে সবার বক্তব্য নিয়েছেন তদন্তকারী এই কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, আইনজীবী যারা এ ঘটনা দেখেছেন ও জানেন তাদের থেকে সব কথাও শুনব, লিপিবদ্ধ করব। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে আমাকে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার কথা রয়েছে। গতকাল তদন্ত কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিবসে আমি সারাদিন স্কুলে অবস্থান করে যে শ্রেণীকক্ষে ঘটনার সূত্রপাত সেই শ্রেণীকক্ষে বসে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত চার শিক্ষার্থীর বক্তব্য শুনেছি এবং লিখিত নিয়েছে। তদন্তের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আশা করছি ১৭, ১৮ ও ১৯ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করতে পারবো এবং চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট দিতে সক্ষম হবো।
হৃদয় মণ্ডল স্কুলে যোগদানের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ১৮ এপ্রিল সোমবার স্কুলে যোগদান করার সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু স্কুল ম্যানেজিং কমিটি সাময়িক বরখাস্ত করে কারণ দর্শানোর শোকজ করেছেন সেই শোকজের জবাব তিনি দিতে পারেননি জেলখানায় থাকার কারণে। শোকজের জবাব দিলেই ম্যানেজিং কমিটি তাকে স্কুলে বহাল করবেন বলে আশাবাদী এই তদন্ত কর্মকর্তা।
ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তদন্তকারী এই কর্মকর্তা জানান, চারজন শিক্ষার্থী, সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও সভাপতির লিখিত বক্তব্য নিয়ে আসছি। লিখিত বক্তব্যগুলো পড়ে আসল বা ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আমার দেয়া তদন্ত রিপোর্টেই বিস্তারিত জানা যাবে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ মার্চ মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে আটক করে পুলিশ। পরে মামলা হলে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এর আগে ২০ মার্চ পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। ১৯ দিন কারাভোগের পর ১০ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোতাহারাত আখতার ভূঁইয়া তার জামিন মঞ্জুর করেন। শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নেন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সে সময় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ অস্বীকার করেন বিজ্ঞানের এই শিক্ষক। কী কারণে এই অভিযোগ তোলা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারছি না কী ঘটছে, স্কুলে অভ্যন্তরীণ রেষারেষি থেকেও হতে পারে, প্রাইভেট পড়ানো নিয়েও হতে পারে।’
ম্যানেজিং কমিটির একজন সদস্য মনিরুজ্জামান শরিফ জানান, এখানে ষড়যন্ত্র হতে পারে। তবে শিক্ষার্থীরা বলেছে স্যারকে নিয়ে টিকটক করার জন্যই এই ভিডিও করা হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটির সদস্য আজকে তদন্ত করেছে চারজন শিক্ষার্থীর লিখিত বক্তব্য নিয়েছেন। হৃদয় মণ্ডল ও অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
এ বিষয়ে হৃদয় মণ্ডল বলেন, তদন্ত কমিটির তদন্তের সময় আমি ছিলাম। সবাই বক্তব্য দিয়েছে আমাকে যে সব প্রশ্ন করা হয়েছে তার জবাব আমি দিয়েছি। স্কুলের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছে।