খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা

দুর্নীতি ও অনিয়ম করে দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার এম খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক আনায়ারুল হক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে গত ৫ এপ্রিল কমিশন থেকে মামলা করার অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, এম খায়রুজ্জামান ২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে হাইকমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে সময় ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১ কোটি ৫৮ লাখ ২৭ হাজার ৯১৩ টাকা আত্মসাৎ

করেন। আত্মসাতের বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসার মো. মনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটির বিভাগীয় তদন্তেও প্রমাণিত হয়েছে।

তাদেরকে শিক্ষা ভাতা বাবদ ৮ লাখ ৯৭ হাজার ৪০৮ টাকা, ভ্রমণ না করে ৪টি ভাউচারের মাধ্যমে অগ্রিম হিসাবে ১০ লাখ ৯৩ হাজার ১৩৫ টাকা, চিলড্রেন এয়ার প্যাসেজ বাবদ ২ লাখ ৮৪ হাজার ১৪৫ টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া এসি মেরামত, স্ত্রীর ভ্রমণ ব্যয়, ড্রাইভারকে অধিকাল ভাতা বাবদ, মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহার, এন্টারটেইনমেন্ট, টেলিফোন ও ফ্যাক্স, বৈদেশিক ভাতা, গিফট ও এন্টারটেইনমেন্ট, জমি ক্রয়সহ সর্বমোট ১ কোটি ৫৮ লাখ ২৭ হাজার ৯১৩ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি।

ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এম খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় সরাসরি মামলা অনুমোদন দেয় কমিশন। এরপরই গতকাল মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

বাংলাদেশের অনুরোধে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাবেক হাইকমিশনার এম খায়রুজ্জামানকে মালয়েশিয়া পুলিশ গ্রেপ্তার করে। একযুগের বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছেন তিনি।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকারকে নেতৃত্ব দেয়া জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে। অবসরপ্রাপ্ত মেজর খায়রুজ্জামান সেই জেলহত্যা মামলার আসামি ছিলেন। তবে পরে তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর সামরিক কর্মকর্তা এম খায়রুজ্জামান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি সরকার তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জেলহত্যা মামলার অভিযোগপত্রে নাম এলে সে সময় ফিলিপিন্সের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে থাকা খায়রুজ্জামানকে দেশে ডেকে পাঠানো হয়। ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়।

পরে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে জামিনে মুক্ত হন খায়রুজ্জামান। ২০০৩ সালের ৪ মে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পরের বছর একটি আদালত জেলহত্যা মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে তাকে হাইকমিশনার করে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর খায়রুজ্জামানকে ঢাকায় ফিরে আসতে বলা হয়। কিন্তু বিপদ বুঝে তিনি কুয়ালালামপুর থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নেন এবং সেখানেই থেকে যান।

বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২২ , ০১ বৈশাখ ১৪২৮ ১২ রমাদ্বান ১৪৪৩

জেলহত্যার আসামি

খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দুর্নীতি ও অনিয়ম করে দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার এম খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক আনায়ারুল হক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে গত ৫ এপ্রিল কমিশন থেকে মামলা করার অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, এম খায়রুজ্জামান ২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে হাইকমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে সময় ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১ কোটি ৫৮ লাখ ২৭ হাজার ৯১৩ টাকা আত্মসাৎ

করেন। আত্মসাতের বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসার মো. মনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটির বিভাগীয় তদন্তেও প্রমাণিত হয়েছে।

তাদেরকে শিক্ষা ভাতা বাবদ ৮ লাখ ৯৭ হাজার ৪০৮ টাকা, ভ্রমণ না করে ৪টি ভাউচারের মাধ্যমে অগ্রিম হিসাবে ১০ লাখ ৯৩ হাজার ১৩৫ টাকা, চিলড্রেন এয়ার প্যাসেজ বাবদ ২ লাখ ৮৪ হাজার ১৪৫ টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া এসি মেরামত, স্ত্রীর ভ্রমণ ব্যয়, ড্রাইভারকে অধিকাল ভাতা বাবদ, মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহার, এন্টারটেইনমেন্ট, টেলিফোন ও ফ্যাক্স, বৈদেশিক ভাতা, গিফট ও এন্টারটেইনমেন্ট, জমি ক্রয়সহ সর্বমোট ১ কোটি ৫৮ লাখ ২৭ হাজার ৯১৩ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি।

ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এম খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় সরাসরি মামলা অনুমোদন দেয় কমিশন। এরপরই গতকাল মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

বাংলাদেশের অনুরোধে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাবেক হাইকমিশনার এম খায়রুজ্জামানকে মালয়েশিয়া পুলিশ গ্রেপ্তার করে। একযুগের বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছেন তিনি।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকারকে নেতৃত্ব দেয়া জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে। অবসরপ্রাপ্ত মেজর খায়রুজ্জামান সেই জেলহত্যা মামলার আসামি ছিলেন। তবে পরে তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর সামরিক কর্মকর্তা এম খায়রুজ্জামান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি সরকার তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জেলহত্যা মামলার অভিযোগপত্রে নাম এলে সে সময় ফিলিপিন্সের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে থাকা খায়রুজ্জামানকে দেশে ডেকে পাঠানো হয়। ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়।

পরে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে জামিনে মুক্ত হন খায়রুজ্জামান। ২০০৩ সালের ৪ মে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পরের বছর একটি আদালত জেলহত্যা মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে তাকে হাইকমিশনার করে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর খায়রুজ্জামানকে ঢাকায় ফিরে আসতে বলা হয়। কিন্তু বিপদ বুঝে তিনি কুয়ালালামপুর থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নেন এবং সেখানেই থেকে যান।