সরবরাহ ব্যবস্থায় স্থবিরতা, সারা বিশ্বে বাড়ছে ডিমের দাম

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর সারা বিশ্বে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। যুদ্ধাবস্থায় উৎপাদন ও পরিবহন ব্যবস্থায় স্থবিরতা নেমে আসার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে ধারনা অর্থনীতিবিদদের। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ডিমও। সম্প্রতি রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে ব্লার্ড ফ্লুর মারাত্মক প্রাদুর্ভাবে ডিমের বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় টান পড়েছে। একই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে পণ্যটির চালান ব্যাহত হয়েছে। এতে দাম বেড়ে গেছে পণ্যটির।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ও অঙ্গরাজ্য সরকারগুলোর ডাটা বিশ্লেষণ করে রয়টার্স দেখেছে, দেশটির বাণিজ্যিক খামারগুলোতে বার্ড ফ্লুর বলি হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখের বেশি ডিমপাড়া মুরগি। ভাইরাসের এ প্রাদুর্ভাব ২০১৫ সালের পর সবচেয়ে মারাত্মক। এদিকে সর্বকালের সবচেয়ে মারাত্মক বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব দেখছে ফ্রান্স। ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে দেশটিতে প্রায় ৮ শতাংশ ডিমপাড়া মুরগি নিধন করা হয়েছে। ব্লার্ড ফ্লু প্রায়ই ছড়ায় বন্যপাখির মাধ্যমে। কোন দেশে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সংক্রমণ রোধে একটি খামারের সব মুরগি কিংবা হাঁসের মতো প্রাণী হত্যা করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি ডিম উৎপাদনকারী অঙ্গরাজ্য আইওয়ায় বার্ড ফ্লুর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। অঙ্গরাজ্যটিতে ১ কোটির বেশি ডিমপাড়া মুরগি নিধন করা হয়েছে। অন্যদিকে নেব্রাস্কায় ১৭ লাখের বেশি ডিমপাড়া মুরগি নিধন করা হবে। সংক্রমণ রোধে ডিমপাড়া মুরগি নিধনের প্রভাব পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। দেশটির মধ্যপশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোতে মার্চে এক ডজন বড় ডিমের দাম পাইকারিতে ৩ ডলার ছাড়ায়। ওই অঞ্চলগুলোতে পণ্যটির দাম এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০০ শতাংশ বেড়ে যায়।

ফ্রান্সে পাইকারিতে ডিমের দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৬৯ শতাংশ। এর প্রভাব ডিম দিয়ে বানানো অন্য পণ্যগুলোর ওপরও পড়ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় ডিম উৎপাদনকারী দেশ ফ্রান্সের শিল্প গ্রুপ সিএনপিও জানায়, ডিম উৎপাদনে সেবছর তাদের ছাড়িয়ে গেছে ইউক্রেইন। ফ্রান্সের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৫৫৭০ কোটি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান ডিম সরবরাহকারী দেশ হয়ে ওঠে ইউক্রেইন। যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে তাদের অর্ধেকের বেশি ডিম আমদানি করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

সিএনপিও’র ভাইস প্রেসিডেন্ট লোয়িক কোলোম্বেল জানান, ‘যুদ্ধের আগে ইউক্রেইন থেকে ডিম আমদানি করা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ইউরোপের অন্য দেশ থেকে ডিম কেনার চেষ্টা করছে। ফ্রান্সে বার্ড ফ্লুর সমস্যা রয়েছে কিন্তু সেটা পুরো ইউরোপেও ছড়িয়েছে। ইউরোপের আর কোন দেশের পক্ষে এত বড় ঘাটতি মেটানো সম্ভব নয়।’

ফরাসি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ডিমের উচ্চমূল্যের কারণে প্রক্রিয়াকরণ করা কিছু খাবারের উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে কিংবা তাদের রেসিপি কাটছাঁট করতে পারে বলে জানান সিএনপিও’র ভাইস প্রেসিডেন্ট। ফ্রান্সের ব্রিট্যানি এবং নরম্যান্ডি অঞ্চলে ১০ লাখ ডিম উৎপাদন করে ফরাসি শিল্প গ্রুপ সিএনপিও।

উইসকননসিস এর গ্রিন বে এলাকার কেক ও পেস্ট্রি শপের মালিক লিজ রেহবার্গ জানান, কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ১৫ ডজন ডিমের দাম ২৬ ডলার থেকে বেড়ে ৪৫ ডলার হয়ে উঠেছে। নিজের বেকারির খাবারের দাম বাড়ানো নয়তো আকার ছোট করার কথা ভাবছেন বলেও জানান তিনি।

রেহবার্গ বলেন, ‘আপনাকে এটা করতে হচ্ছে কারণ আপনার ডিম দরকার। এরপর আপনি দামের দিকে তাকিয়ে বলবেন, ওহ মাই গড।’

বাংলাদেশ ২০১৯-২০ অর্থবছরেই ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। সে সময়ে দেশের মানুষের পুষ্টি ও খাদ্য চাহিদা মেটাতে ডিমের প্রয়োজন ছিল ১ হাজার ৭৩২ কোটি ৬৪ লাখ পিস। ওই অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ১ হাজার ৭৩৬ কোটি ৪৩ লাখ পিস।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৬৬ কোটি ৪৪ লাখ পিস। ফেব্রুয়ারিতে ডিমের উৎপাদন হয়েছে ২০৬ কোটি ৯৮ লাখ পিস। দেশে ডিম আমদানিতে কড়াকড়ি রয়েছে। এরপরও মাঝে মাঝে কিছু প্রতিষ্ঠান ডিম আমদানি করে থাকে।

বিশ্ববাজারে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির খবরের মধ্যে রাজধানীতে পণ্যটির দাম কমার খবর পাওয়া গেছে। মগবাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধাণে ডিমের দাম কমেছে। ওই এলাকায় গত সপ্তাহে এক ডজন ডিমের দাম ছিল ১১৫ টাকা। বর্তমানে সেটি ১০০ থেকে ১০৫ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে।

শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২ , ০৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৪ রমাদ্বান ১৪৪৩

সরবরাহ ব্যবস্থায় স্থবিরতা, সারা বিশ্বে বাড়ছে ডিমের দাম

সংবাদ ডেস্ক

image

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর সারা বিশ্বে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। যুদ্ধাবস্থায় উৎপাদন ও পরিবহন ব্যবস্থায় স্থবিরতা নেমে আসার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে ধারনা অর্থনীতিবিদদের। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ডিমও। সম্প্রতি রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে ব্লার্ড ফ্লুর মারাত্মক প্রাদুর্ভাবে ডিমের বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় টান পড়েছে। একই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে পণ্যটির চালান ব্যাহত হয়েছে। এতে দাম বেড়ে গেছে পণ্যটির।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ও অঙ্গরাজ্য সরকারগুলোর ডাটা বিশ্লেষণ করে রয়টার্স দেখেছে, দেশটির বাণিজ্যিক খামারগুলোতে বার্ড ফ্লুর বলি হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখের বেশি ডিমপাড়া মুরগি। ভাইরাসের এ প্রাদুর্ভাব ২০১৫ সালের পর সবচেয়ে মারাত্মক। এদিকে সর্বকালের সবচেয়ে মারাত্মক বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব দেখছে ফ্রান্স। ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে দেশটিতে প্রায় ৮ শতাংশ ডিমপাড়া মুরগি নিধন করা হয়েছে। ব্লার্ড ফ্লু প্রায়ই ছড়ায় বন্যপাখির মাধ্যমে। কোন দেশে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সংক্রমণ রোধে একটি খামারের সব মুরগি কিংবা হাঁসের মতো প্রাণী হত্যা করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি ডিম উৎপাদনকারী অঙ্গরাজ্য আইওয়ায় বার্ড ফ্লুর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। অঙ্গরাজ্যটিতে ১ কোটির বেশি ডিমপাড়া মুরগি নিধন করা হয়েছে। অন্যদিকে নেব্রাস্কায় ১৭ লাখের বেশি ডিমপাড়া মুরগি নিধন করা হবে। সংক্রমণ রোধে ডিমপাড়া মুরগি নিধনের প্রভাব পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। দেশটির মধ্যপশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোতে মার্চে এক ডজন বড় ডিমের দাম পাইকারিতে ৩ ডলার ছাড়ায়। ওই অঞ্চলগুলোতে পণ্যটির দাম এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০০ শতাংশ বেড়ে যায়।

ফ্রান্সে পাইকারিতে ডিমের দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৬৯ শতাংশ। এর প্রভাব ডিম দিয়ে বানানো অন্য পণ্যগুলোর ওপরও পড়ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় ডিম উৎপাদনকারী দেশ ফ্রান্সের শিল্প গ্রুপ সিএনপিও জানায়, ডিম উৎপাদনে সেবছর তাদের ছাড়িয়ে গেছে ইউক্রেইন। ফ্রান্সের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৫৫৭০ কোটি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান ডিম সরবরাহকারী দেশ হয়ে ওঠে ইউক্রেইন। যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে তাদের অর্ধেকের বেশি ডিম আমদানি করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

সিএনপিও’র ভাইস প্রেসিডেন্ট লোয়িক কোলোম্বেল জানান, ‘যুদ্ধের আগে ইউক্রেইন থেকে ডিম আমদানি করা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ইউরোপের অন্য দেশ থেকে ডিম কেনার চেষ্টা করছে। ফ্রান্সে বার্ড ফ্লুর সমস্যা রয়েছে কিন্তু সেটা পুরো ইউরোপেও ছড়িয়েছে। ইউরোপের আর কোন দেশের পক্ষে এত বড় ঘাটতি মেটানো সম্ভব নয়।’

ফরাসি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ডিমের উচ্চমূল্যের কারণে প্রক্রিয়াকরণ করা কিছু খাবারের উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে কিংবা তাদের রেসিপি কাটছাঁট করতে পারে বলে জানান সিএনপিও’র ভাইস প্রেসিডেন্ট। ফ্রান্সের ব্রিট্যানি এবং নরম্যান্ডি অঞ্চলে ১০ লাখ ডিম উৎপাদন করে ফরাসি শিল্প গ্রুপ সিএনপিও।

উইসকননসিস এর গ্রিন বে এলাকার কেক ও পেস্ট্রি শপের মালিক লিজ রেহবার্গ জানান, কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ১৫ ডজন ডিমের দাম ২৬ ডলার থেকে বেড়ে ৪৫ ডলার হয়ে উঠেছে। নিজের বেকারির খাবারের দাম বাড়ানো নয়তো আকার ছোট করার কথা ভাবছেন বলেও জানান তিনি।

রেহবার্গ বলেন, ‘আপনাকে এটা করতে হচ্ছে কারণ আপনার ডিম দরকার। এরপর আপনি দামের দিকে তাকিয়ে বলবেন, ওহ মাই গড।’

বাংলাদেশ ২০১৯-২০ অর্থবছরেই ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। সে সময়ে দেশের মানুষের পুষ্টি ও খাদ্য চাহিদা মেটাতে ডিমের প্রয়োজন ছিল ১ হাজার ৭৩২ কোটি ৬৪ লাখ পিস। ওই অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ১ হাজার ৭৩৬ কোটি ৪৩ লাখ পিস।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৬৬ কোটি ৪৪ লাখ পিস। ফেব্রুয়ারিতে ডিমের উৎপাদন হয়েছে ২০৬ কোটি ৯৮ লাখ পিস। দেশে ডিম আমদানিতে কড়াকড়ি রয়েছে। এরপরও মাঝে মাঝে কিছু প্রতিষ্ঠান ডিম আমদানি করে থাকে।

বিশ্ববাজারে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির খবরের মধ্যে রাজধানীতে পণ্যটির দাম কমার খবর পাওয়া গেছে। মগবাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধাণে ডিমের দাম কমেছে। ওই এলাকায় গত সপ্তাহে এক ডজন ডিমের দাম ছিল ১১৫ টাকা। বর্তমানে সেটি ১০০ থেকে ১০৫ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে।