বোরোর পাকা ধানে মই ব্লাস্ট : সর্বস্বান্ত কৃষক

চলতি বোরো মৌসুমে তালা উপজেলায় ১৯ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে বোরা ধান চাষাবাদ হয়েছে। এবারের বোরো মৌসুমে অন্যবারের ন্যায় ব্রি-২৮, ব্রি-৬৩, ব্রি-৮১ ও হাইব্রিড সহ বিভিন্ন প্রজাতীর ধান চাষ করেছে কৃষকরা। এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ধানের বাম্পার ফলন আশা করেছিল চাষীরা। কিন্তু বিগত কয়েক বছরের ন্যায় এবছরও ছত্রাক জনিত ব্লাস্ট ভাইরাসের আক্রমনে মাঠের পর মাঠ ধান ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বহু টাকা ব্যয় করে কাংখিত ফলন পাবার পরও ব্লাস্ট’র আক্রমনে হাজার হাজার ছোট বড় কৃষক সর্বশান্ত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, তালা উপজেলায় বোরো মৌসুমে লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছিল ১৯ হাজার ৫ শত ৪৫হেক্টর জমি। কিন্তু তা অতিক্রম করে এবার ১৯ হাজার ৫ শত ৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়।

ধানের চারা রোপনের শুরুতে ধানের ক্ষেত বাদামী গাছ ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমন হয়। কৃষকরা সেটার রোধ করতে সক্ষম হলেও এখন ধান ওঠার মুখে ব্লাস্ট ভাইরাসের আক্রমনে ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

তালা উপজেলা খলিষখালী, সোনাবাঁধাল, দলুয়া, আগোলঝাড়া, জাতপুর, আটরই, খলিনগর, তেঁতুলিয়া, খেশরা, ধানদিয়া সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিলে যেয়ে দেখা যায়, ধান ক্ষেতগুলোতে বাম্পার ফলন এসেছে। কিন্তু এই ধান ক্ষেতের মধ্যে শত শত হেক্টর ক্ষেত ব্লাস্ট এর আক্রমনের শিকার হয়েছে।

কৃষক পবিত্র কুমার, গোলাম রাব্বানী, আব্দুল আওয়াল, আবুল কালাম সহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা জানান, ধান গাছে শীষ আসার সময়ে অনেক ক্ষেতের ধান গাছ বৃদ্ধি না হয়ে ছোট হয়ে আসছে। ব্লাস্টের আক্রমনে কোথাও কোথাও ধান গাছের পাতা পুড়ে আবার কোথাও গাছ পচে-গলে নষ্ট হয়ে গেছে। আবার কোথাও ধানের শীষ কালচে রং ধারন করে ধান ঝরে গেছে। ধানের শীষে শুধু চিটা পড়ে রয়েছে।

তেঁতুলিয়ার কৃষক আবু জাফর জানান, এবারের মৌসুমে প্রথমে কারেন্ট পোকা আক্রমন করলেও সেটি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু এখন ধানের ফলনের সময় ব্লাস্ট এর আক্রমনে যে ক্ষতি হলো তা পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না।

এব্যপারে তালা উপজলো কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ হাজিরা খাতুন বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে তালা উপজেলায় ১৯ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদ হয়েছে। এরমধ্যে উপজেলার ৭৮ হেক্টর জমির ধান ব্লাস্ট আক্রমনের শিকার হয়। কিন্তু কৃষি অফিসের সার্বিক তদারকি এবং সচেতনতা মূলক প্রচার-প্রচারনার ফলে ব্লাস্ট দমন করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু উপজেলার ৫ হেক্টর জমির ব্রি-২৮ জাতের ধান ব্লাস্ট হতে রক্ষা করা যায়নি।

তিনি বলেন, মাঠের বোরো ধান কাটা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। যা’ মে মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ শেষ হবে। এরমধ্যে আরও কিছু ক্ষেতের ধান ব্লাস্ট এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। তবে, তা রুখতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বিক তদারকি করা হচ্ছে।

কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে অত্র উপজেলার বিশেষ করে ব্রি-২৮ জাতের ধান ব্লাস্ট আক্রান্ত হচ্ছে। ব্লাস্ট হলো ধানের একটি ছত্রাকজনিত রোগ। চারা অবস্থা থেকে ধান পাকার আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় এ রোগের আক্রমন দেখা যায়। বর্তমানে এই জাতের ধানের অধিকাংশ বীজ ব্লাস্ট আক্রান্ত। ফলে বীজ থেকে ব্লাস্ট ভাইরাসের আক্রমন শুরু হয়ে পরবর্তীতে ধান গাছ, পাতা, কান্ড ও শীষ আক্রান্ত হয়। এজন্য কৃষকদের ব্রি-২৮ ধান রোপনে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২ , ০৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৪ রমাদ্বান ১৪৪৩

বোরোর পাকা ধানে মই ব্লাস্ট : সর্বস্বান্ত কৃষক

জুলফিকার রায়হান, তালা (সাতক্ষীরা)

image

তালা (সাতক্ষীরা) : ব্লাস্ট ভাইরাসে আক্রান্ত ধান ক্ষেত -সংবাদ

চলতি বোরো মৌসুমে তালা উপজেলায় ১৯ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে বোরা ধান চাষাবাদ হয়েছে। এবারের বোরো মৌসুমে অন্যবারের ন্যায় ব্রি-২৮, ব্রি-৬৩, ব্রি-৮১ ও হাইব্রিড সহ বিভিন্ন প্রজাতীর ধান চাষ করেছে কৃষকরা। এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ধানের বাম্পার ফলন আশা করেছিল চাষীরা। কিন্তু বিগত কয়েক বছরের ন্যায় এবছরও ছত্রাক জনিত ব্লাস্ট ভাইরাসের আক্রমনে মাঠের পর মাঠ ধান ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বহু টাকা ব্যয় করে কাংখিত ফলন পাবার পরও ব্লাস্ট’র আক্রমনে হাজার হাজার ছোট বড় কৃষক সর্বশান্ত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, তালা উপজেলায় বোরো মৌসুমে লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছিল ১৯ হাজার ৫ শত ৪৫হেক্টর জমি। কিন্তু তা অতিক্রম করে এবার ১৯ হাজার ৫ শত ৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়।

ধানের চারা রোপনের শুরুতে ধানের ক্ষেত বাদামী গাছ ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমন হয়। কৃষকরা সেটার রোধ করতে সক্ষম হলেও এখন ধান ওঠার মুখে ব্লাস্ট ভাইরাসের আক্রমনে ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

তালা উপজেলা খলিষখালী, সোনাবাঁধাল, দলুয়া, আগোলঝাড়া, জাতপুর, আটরই, খলিনগর, তেঁতুলিয়া, খেশরা, ধানদিয়া সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিলে যেয়ে দেখা যায়, ধান ক্ষেতগুলোতে বাম্পার ফলন এসেছে। কিন্তু এই ধান ক্ষেতের মধ্যে শত শত হেক্টর ক্ষেত ব্লাস্ট এর আক্রমনের শিকার হয়েছে।

কৃষক পবিত্র কুমার, গোলাম রাব্বানী, আব্দুল আওয়াল, আবুল কালাম সহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা জানান, ধান গাছে শীষ আসার সময়ে অনেক ক্ষেতের ধান গাছ বৃদ্ধি না হয়ে ছোট হয়ে আসছে। ব্লাস্টের আক্রমনে কোথাও কোথাও ধান গাছের পাতা পুড়ে আবার কোথাও গাছ পচে-গলে নষ্ট হয়ে গেছে। আবার কোথাও ধানের শীষ কালচে রং ধারন করে ধান ঝরে গেছে। ধানের শীষে শুধু চিটা পড়ে রয়েছে।

তেঁতুলিয়ার কৃষক আবু জাফর জানান, এবারের মৌসুমে প্রথমে কারেন্ট পোকা আক্রমন করলেও সেটি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু এখন ধানের ফলনের সময় ব্লাস্ট এর আক্রমনে যে ক্ষতি হলো তা পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না।

এব্যপারে তালা উপজলো কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ হাজিরা খাতুন বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে তালা উপজেলায় ১৯ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদ হয়েছে। এরমধ্যে উপজেলার ৭৮ হেক্টর জমির ধান ব্লাস্ট আক্রমনের শিকার হয়। কিন্তু কৃষি অফিসের সার্বিক তদারকি এবং সচেতনতা মূলক প্রচার-প্রচারনার ফলে ব্লাস্ট দমন করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু উপজেলার ৫ হেক্টর জমির ব্রি-২৮ জাতের ধান ব্লাস্ট হতে রক্ষা করা যায়নি।

তিনি বলেন, মাঠের বোরো ধান কাটা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। যা’ মে মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ শেষ হবে। এরমধ্যে আরও কিছু ক্ষেতের ধান ব্লাস্ট এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। তবে, তা রুখতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বিক তদারকি করা হচ্ছে।

কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে অত্র উপজেলার বিশেষ করে ব্রি-২৮ জাতের ধান ব্লাস্ট আক্রান্ত হচ্ছে। ব্লাস্ট হলো ধানের একটি ছত্রাকজনিত রোগ। চারা অবস্থা থেকে ধান পাকার আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় এ রোগের আক্রমন দেখা যায়। বর্তমানে এই জাতের ধানের অধিকাংশ বীজ ব্লাস্ট আক্রান্ত। ফলে বীজ থেকে ব্লাস্ট ভাইরাসের আক্রমন শুরু হয়ে পরবর্তীতে ধান গাছ, পাতা, কান্ড ও শীষ আক্রান্ত হয়। এজন্য কৃষকদের ব্রি-২৮ ধান রোপনে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।