নওগাঁয় হিজাব বিতর্ক, শিক্ষিকার মানহানির মামলা

সম্প্রীতি বিনষ্টে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ২ সাংবাদিক গ্রেপ্তার

বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

নওগাঁয় ‘হিজাব বিতর্কে’ মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট ও মানহানির অভিযোগে জেলার মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনি পাল গতকাল সকালে মহাদেবপুর থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় কিউ এম সাঈদ টিটো (৫০) এবং সামসুজ্জামান মিলন (৩৮) নামে দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত টিটো দৈনিক নওরোজ ও দৈনিক ডেল্টা টাইমস পত্রিকার মহাদেবপুর উপজেলা প্রতিনিধি ও মিলন দৈনিক আমাদের অর্থনীতি ও দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার মহাদেবপুর উপজেলা প্রতিনিধি। তারা শিক্ষিকা আমোদিনি পালের করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মহাদেবপুর থানার ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ সংবাদকে বলেন, আজ সকালে উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনি পাল বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় তার বিরুদ্ধে হিজাব নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট, তাকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা ও বেআইনিভাবে

দলবদ্ধ হয়ে বিদ্যালয়ে হামলার অভিযোগে করেছেন। ওই মামলায় ৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিক কিউ এম সাঈদকে মহাদেবপুর উপজেলা সদরের লাইব্রেরিপট্টি এলাকার নিজ বাড়ি ও সাংবাদিক সামসুজ্জামান মিলনকে উপজেলা সদরের কুশারের সেন্টার এলাকার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের আমোদিনি পালের করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, গতকাল দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে নেয়া হয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

আমোদিনি পালের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিচার দাবিতে নওগাঁয় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল সকালে শহরের মুক্তির মোড় এলাকায় নওগাঁর স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শিক্ষক হৃদয় ম-ল ও আমোদিনি পালের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যারা ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করেছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তারা বলেন, ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করে যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি ডিএম আবদুল বারীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, একুশে পরিষদের উপদেষ্টা ও নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান, সংগঠনের উপদেষ্টা ও নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি কায়েস উদ্দিন, সংগঠনের সহ-সভাপতি মোস্তফা আল মেহমুদ, প্রতাপ চন্দ্র সরকার প্রমুখ।

উল্লেখ গত ৮ এপ্রিল নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে হিজাব পরার অভিযোগে ছাত্রদের পেটানোর অভিযোগ তুলে পরদিন বিদ্যালয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরে প্রশাসনের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গত সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তদন্তে হিজাব পরে ছাত্রদের পেটানোর অভিযোগের কোন সত্যতা পায়নি তদন্ত কমিটি। স্কুলড্রেস পরে না আসার কারণে ওই দিন শিক্ষিকা আমোদিনি পাল ও আরেক শিক্ষক বদিউল আলম শিক্ষার্থীদের পেটান।

শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২ , ০৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৪ রমাদ্বান ১৪৪৩

নওগাঁয় হিজাব বিতর্ক, শিক্ষিকার মানহানির মামলা

সম্প্রীতি বিনষ্টে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ২ সাংবাদিক গ্রেপ্তার

বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ

image

নওগাঁয় ‘হিজাব বিতর্কে’ মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট ও মানহানির অভিযোগে জেলার মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনি পাল গতকাল সকালে মহাদেবপুর থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় কিউ এম সাঈদ টিটো (৫০) এবং সামসুজ্জামান মিলন (৩৮) নামে দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত টিটো দৈনিক নওরোজ ও দৈনিক ডেল্টা টাইমস পত্রিকার মহাদেবপুর উপজেলা প্রতিনিধি ও মিলন দৈনিক আমাদের অর্থনীতি ও দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার মহাদেবপুর উপজেলা প্রতিনিধি। তারা শিক্ষিকা আমোদিনি পালের করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মহাদেবপুর থানার ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ সংবাদকে বলেন, আজ সকালে উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনি পাল বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় তার বিরুদ্ধে হিজাব নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট, তাকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা ও বেআইনিভাবে

দলবদ্ধ হয়ে বিদ্যালয়ে হামলার অভিযোগে করেছেন। ওই মামলায় ৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিক কিউ এম সাঈদকে মহাদেবপুর উপজেলা সদরের লাইব্রেরিপট্টি এলাকার নিজ বাড়ি ও সাংবাদিক সামসুজ্জামান মিলনকে উপজেলা সদরের কুশারের সেন্টার এলাকার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের আমোদিনি পালের করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, গতকাল দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে নেয়া হয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

আমোদিনি পালের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিচার দাবিতে নওগাঁয় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল সকালে শহরের মুক্তির মোড় এলাকায় নওগাঁর স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শিক্ষক হৃদয় ম-ল ও আমোদিনি পালের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যারা ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করেছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তারা বলেন, ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করে যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি ডিএম আবদুল বারীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, একুশে পরিষদের উপদেষ্টা ও নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান, সংগঠনের উপদেষ্টা ও নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি কায়েস উদ্দিন, সংগঠনের সহ-সভাপতি মোস্তফা আল মেহমুদ, প্রতাপ চন্দ্র সরকার প্রমুখ।

উল্লেখ গত ৮ এপ্রিল নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে হিজাব পরার অভিযোগে ছাত্রদের পেটানোর অভিযোগ তুলে পরদিন বিদ্যালয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরে প্রশাসনের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গত সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তদন্তে হিজাব পরে ছাত্রদের পেটানোর অভিযোগের কোন সত্যতা পায়নি তদন্ত কমিটি। স্কুলড্রেস পরে না আসার কারণে ওই দিন শিক্ষিকা আমোদিনি পাল ও আরেক শিক্ষক বদিউল আলম শিক্ষার্থীদের পেটান।