সীমান্তে নদ-নদীর পানি বাড়ছে, ঝুঁকিতে বাঁধ

সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেশ কিছুদিন ধরেই স্বাভাবিক থাকায় কৃষকরা অনেকটা নিশ্চিন্তে ছিলেন। জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্দেশে হাওরের ফসল ৮০ ভাগ পাকা হলেই ধান কাটতে শুরু করেন। এখন বিভিন্ন হাওরে ধান কাটার ধুম লেগেছে। তবে ভারতের মেঘালয়ের বিভিন্ন জায়গাতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্ত এলাকার নদ-নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের মেঘালয়ের চেলাপূঞ্জিতে বৃষ্টিপাত হলে পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। সেই আশঙ্কায় হাওরের কৃষকদের মাঝে আবারও উদ্বেগ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং হাওরের কৃষক মিলে বাঁধগুলোকে আরও শক্ত করার কার্যক্রম চালাচ্ছেন। যাতে হাওরের পানি বৃদ্ধি পেলেও বাঁধের কোন ক্ষতি না হয়। জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিৎ দেব জানান, আগেই আমরা ঝুকিপূর্ণ বাঁধের কাজ করে ঝুঁকিমুক্ত করেছিলাম, এখন পাহাড়ের ঢলে বাঁধের যাতে ক্ষতি না হয় তার জন্য আরও সতর্কতামূলক কাজ করছি। এখন সব জায়গাতেই ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে।

আবহাওয়া ও বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয় গতকাল জানায়, মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমার পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৬২ সেন্টিমিটার বেড়েছে, তবে এখনও তা বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সীমান্ত নদী যাদুকাটার পানি বেড়েছে ছয় সেন্টিমিটার এবং পুরাতন সুরমা নদীর পানি বেড়েছে পাঁচ সেন্টিমিটার। পাউবো সুনামগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে প্রায় ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই পানি এখন সুরমা নদীসহ বিভিন্ন সীমান্ত নদ-নদীতে বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফলে হাওরের সবগুলো বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে আছে।

তিনি আরও জানান, ভারতের মেঘালয়ের বিভিন্ন জায়গাতেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে আগামী ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পানি বৃিদ্ধ পেয়ে নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার সম্ভবাবনা রয়েছে। আমাদের লোকজন দিন-রাত হাওরের বেড়িবাঁধ রক্ষায় কাজ করছে।’

এদিকে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, জেলায় আবাদ করা দুই লাখ ২২ হাজার ৫০৮ হেক্টর জমির মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার ২৩০ হেক্টর জমির বোরো ধান কাটা হয়েছে। গড় কর্তন প্রায় ১০ ভাগ। তবে এখনও দুই লাখ হেক্টরের চেয়ে বেশি জমির ধান কাটা বাকি রয়েছে। দ্রুত ধান কেটে নিতে আমরা প্রচার চালাচ্ছি। আমাদের কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও রিপার মিলিয়ে প্রায় ৩৯২টি যন্ত্র হাওরে ধান কাটছে। বাইরে থেকেও কৃষকরা নিয়ে এসেছেন।’

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘পাহাড়ি ঢলে পানি দ্রুত বাড়ছে। তবে সবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধেই প্রশাসন স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে কাজ করছে।’ বেশ কয়েক দিন আবহাওয়া ভালো থকায় কৃষকরা বাঁধের কাজ ও ধান কর্তনে ব্যস্ত ছিলেন। এখন ধান পাকা ধরেছে। তাই দ্রুত কেটে নিতে হবে। আমরা বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক পাঠানোর জন্য লিখেছি। এরই মধ্যে কিছু শ্রমিকও এসেছে। আমরা ও কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর নির্দেশনা দিয়েছি ৮০ ভাগ ধান পাকা হলেই যেন দেরি না করে কাটা হয়।’

শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২ , ০৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৪ রমাদ্বান ১৪৪৩

সীমান্তে নদ-নদীর পানি বাড়ছে, ঝুঁকিতে বাঁধ

লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ

image

সুনামগঞ্জ : হাওরে ফসল কাটছে কৃষকরা -সংবাদ

সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেশ কিছুদিন ধরেই স্বাভাবিক থাকায় কৃষকরা অনেকটা নিশ্চিন্তে ছিলেন। জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্দেশে হাওরের ফসল ৮০ ভাগ পাকা হলেই ধান কাটতে শুরু করেন। এখন বিভিন্ন হাওরে ধান কাটার ধুম লেগেছে। তবে ভারতের মেঘালয়ের বিভিন্ন জায়গাতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্ত এলাকার নদ-নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের মেঘালয়ের চেলাপূঞ্জিতে বৃষ্টিপাত হলে পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। সেই আশঙ্কায় হাওরের কৃষকদের মাঝে আবারও উদ্বেগ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং হাওরের কৃষক মিলে বাঁধগুলোকে আরও শক্ত করার কার্যক্রম চালাচ্ছেন। যাতে হাওরের পানি বৃদ্ধি পেলেও বাঁধের কোন ক্ষতি না হয়। জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিৎ দেব জানান, আগেই আমরা ঝুকিপূর্ণ বাঁধের কাজ করে ঝুঁকিমুক্ত করেছিলাম, এখন পাহাড়ের ঢলে বাঁধের যাতে ক্ষতি না হয় তার জন্য আরও সতর্কতামূলক কাজ করছি। এখন সব জায়গাতেই ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে।

আবহাওয়া ও বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয় গতকাল জানায়, মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমার পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৬২ সেন্টিমিটার বেড়েছে, তবে এখনও তা বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সীমান্ত নদী যাদুকাটার পানি বেড়েছে ছয় সেন্টিমিটার এবং পুরাতন সুরমা নদীর পানি বেড়েছে পাঁচ সেন্টিমিটার। পাউবো সুনামগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে প্রায় ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই পানি এখন সুরমা নদীসহ বিভিন্ন সীমান্ত নদ-নদীতে বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফলে হাওরের সবগুলো বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে আছে।

তিনি আরও জানান, ভারতের মেঘালয়ের বিভিন্ন জায়গাতেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে আগামী ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পানি বৃিদ্ধ পেয়ে নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার সম্ভবাবনা রয়েছে। আমাদের লোকজন দিন-রাত হাওরের বেড়িবাঁধ রক্ষায় কাজ করছে।’

এদিকে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, জেলায় আবাদ করা দুই লাখ ২২ হাজার ৫০৮ হেক্টর জমির মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার ২৩০ হেক্টর জমির বোরো ধান কাটা হয়েছে। গড় কর্তন প্রায় ১০ ভাগ। তবে এখনও দুই লাখ হেক্টরের চেয়ে বেশি জমির ধান কাটা বাকি রয়েছে। দ্রুত ধান কেটে নিতে আমরা প্রচার চালাচ্ছি। আমাদের কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও রিপার মিলিয়ে প্রায় ৩৯২টি যন্ত্র হাওরে ধান কাটছে। বাইরে থেকেও কৃষকরা নিয়ে এসেছেন।’

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘পাহাড়ি ঢলে পানি দ্রুত বাড়ছে। তবে সবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধেই প্রশাসন স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে কাজ করছে।’ বেশ কয়েক দিন আবহাওয়া ভালো থকায় কৃষকরা বাঁধের কাজ ও ধান কর্তনে ব্যস্ত ছিলেন। এখন ধান পাকা ধরেছে। তাই দ্রুত কেটে নিতে হবে। আমরা বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক পাঠানোর জন্য লিখেছি। এরই মধ্যে কিছু শ্রমিকও এসেছে। আমরা ও কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর নির্দেশনা দিয়েছি ৮০ ভাগ ধান পাকা হলেই যেন দেরি না করে কাটা হয়।’