কিয়েভে ফের দফায় দফায় বিস্ফোরণ

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভজুড়ে ফের দফায় দফায় শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। গতকাল স্থানীয় সময় ভোরে একের পর এক এসব বিস্ফোরণ হতে থাকে। একইসঙ্গে নতুন করে রুশ আক্রমণের আশঙ্কায় সমগ্র ইউক্রেনে বাজানো হচ্ছে বিমান হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন।

মূলত গত বুধবার একটি বিস্ফোরণের কারণে কৃষ্ণসাগরে রাশিয়া তাদের একটি শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ হারিয়েছে এবং এরপরই কিয়েভে দফায় দফায় শক্তিশালী বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকা থেকে রুশ সেনাদের প্রত্যাহার করা হয়। তবে একটি বিস্ফোরণের পর কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার ওই যুদ্ধজাহাজ ডুবে যাওয়ার পর ইউক্রেনীয় রাজধানী কিয়েভ ও আশপাশের অঞ্চলে ফের বিস্ফোরণের ঘটনাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ, দক্ষিণের শহর খেরসন, পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভ এবং পশ্চিমে ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক শহরে বিস্ফোরণের খবর শোনা গেলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে কিয়েভের বেশ কিছু অংশে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর দিয়েছে ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যম।

ইউক্রেনের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গতকাল মধ্যরাতের ঠিক পরেই ইউক্রেনের সকল অঞ্চলে বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে। এমনকি লুহানস্ক ও জাপোরিঝিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলো শান্ত হওয়ার পরেও সেখানে ক্রমাগত সাইরেন বাজতে থাকে। রয়টার্স অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে এসব রিপোর্ট যাচাই করতে পারেনি।

কৃষ্ণসাগরে ডুবে যাওয়া রাশিয়ার এই যুদ্ধজাহাজের নাম মস্কভা। জাহাজটি ডুবে যাওয়ার পেছনে দায় স্বীকার করেছে ইউক্রেন। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির দাবি, তাদের সামরিক বাহিনী কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার নৌবহরের এই ফ্ল্যাগশিপে মিসাইল হামলা চালিয়েছে।

তবে রাশিয়া জানিয়েছিল, অগ্নিকা-ের কারণে যুদ্ধজাহাজের গোলাবারুদের বিস্ফোরণ ঘটেছে। পরে জাহাজের সকল ক্রুকে কৃষ্ণসাগরের নিকটবর্তী রাশিয়ার পৃথক একটি জাহাজে সরিয়ে নেওয়া হয়ে। মস্কো এর বেশি আর কোনো তথ্য সামনে আনেনি।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ব্ল্যাক সি ফ্লিটের ফ্ল্যাগশিপ মস্কভাকে বন্দরে নিয়ে যাওয়ার সময় ‘উত্তাল সমুদ্রে’ এটি ডুবে যায়। ৫১০ জন ক্রু মাধ্যমে পরিচালিত এই ক্ষেপণাস্ত্র ক্রুজারটি ছিল রাশিয়ার সামরিক শক্তির প্রতীক। মূলত ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার নৌ আক্রমণের নেতৃত্বে ছিল মস্কভা নামের এই যুদ্ধজাহাজটি।

মস্কভা যুদ্ধজাহাজটি রাশিয়ার ব্ল্যাক সি ফ্লিটের ফ্ল্যাগশিপ। ফ্ল্যাগশিপ জাহাজ হচ্ছে কোনো নৌবহরের নেতৃত্বদানকারী জাহাজ যেটি অধিনায়ক ব্যবহার করেন। নৌবহরের অন্যান্য জাহাজের তুলনায় ফ্ল্যাগশিপ জাহাজ সাধারণত খুবই দ্রুতগামী এবং শক্তিশালী হয়।

ক্রুজার মস্কভা ২০০০ সাল থেকে কৃষ্ণসাগরে রুশ নৌবহরের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল। রাশিয়া মেরিটাইম স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মাইকেল পিটারসন বিবিসিকে জানান, ১২ হাজার ৫০০ টন ওজনের মস্কভা জাহাজটি রুশ নৌ-শক্তির অন্যতম প্রতীক। সিরিয়াসহ রাশিয়ার বহু সামরিক অভিযানে এই জাহাজটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

লক্ষণীয় ব্যাপার হলো ইউক্রেনের ওপর হামলার কাজে এখন এই জাহাজটি ব্যবহার করা হলেও ১৯৮০ দশকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ইউক্রেনের একটি ডকইয়ার্ডেই জাহাজটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২ , ০৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৪ রমাদ্বান ১৪৪৩

কিয়েভে ফের দফায় দফায় বিস্ফোরণ

image

রুশ হামলায় মারিউপোল শহরে বিধ্বস্ত একটি আবাসিক ভবন -এপি

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভজুড়ে ফের দফায় দফায় শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। গতকাল স্থানীয় সময় ভোরে একের পর এক এসব বিস্ফোরণ হতে থাকে। একইসঙ্গে নতুন করে রুশ আক্রমণের আশঙ্কায় সমগ্র ইউক্রেনে বাজানো হচ্ছে বিমান হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন।

মূলত গত বুধবার একটি বিস্ফোরণের কারণে কৃষ্ণসাগরে রাশিয়া তাদের একটি শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ হারিয়েছে এবং এরপরই কিয়েভে দফায় দফায় শক্তিশালী বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকা থেকে রুশ সেনাদের প্রত্যাহার করা হয়। তবে একটি বিস্ফোরণের পর কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার ওই যুদ্ধজাহাজ ডুবে যাওয়ার পর ইউক্রেনীয় রাজধানী কিয়েভ ও আশপাশের অঞ্চলে ফের বিস্ফোরণের ঘটনাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ, দক্ষিণের শহর খেরসন, পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভ এবং পশ্চিমে ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক শহরে বিস্ফোরণের খবর শোনা গেলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে কিয়েভের বেশ কিছু অংশে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর দিয়েছে ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যম।

ইউক্রেনের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গতকাল মধ্যরাতের ঠিক পরেই ইউক্রেনের সকল অঞ্চলে বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে। এমনকি লুহানস্ক ও জাপোরিঝিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলো শান্ত হওয়ার পরেও সেখানে ক্রমাগত সাইরেন বাজতে থাকে। রয়টার্স অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে এসব রিপোর্ট যাচাই করতে পারেনি।

কৃষ্ণসাগরে ডুবে যাওয়া রাশিয়ার এই যুদ্ধজাহাজের নাম মস্কভা। জাহাজটি ডুবে যাওয়ার পেছনে দায় স্বীকার করেছে ইউক্রেন। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির দাবি, তাদের সামরিক বাহিনী কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার নৌবহরের এই ফ্ল্যাগশিপে মিসাইল হামলা চালিয়েছে।

তবে রাশিয়া জানিয়েছিল, অগ্নিকা-ের কারণে যুদ্ধজাহাজের গোলাবারুদের বিস্ফোরণ ঘটেছে। পরে জাহাজের সকল ক্রুকে কৃষ্ণসাগরের নিকটবর্তী রাশিয়ার পৃথক একটি জাহাজে সরিয়ে নেওয়া হয়ে। মস্কো এর বেশি আর কোনো তথ্য সামনে আনেনি।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ব্ল্যাক সি ফ্লিটের ফ্ল্যাগশিপ মস্কভাকে বন্দরে নিয়ে যাওয়ার সময় ‘উত্তাল সমুদ্রে’ এটি ডুবে যায়। ৫১০ জন ক্রু মাধ্যমে পরিচালিত এই ক্ষেপণাস্ত্র ক্রুজারটি ছিল রাশিয়ার সামরিক শক্তির প্রতীক। মূলত ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার নৌ আক্রমণের নেতৃত্বে ছিল মস্কভা নামের এই যুদ্ধজাহাজটি।

মস্কভা যুদ্ধজাহাজটি রাশিয়ার ব্ল্যাক সি ফ্লিটের ফ্ল্যাগশিপ। ফ্ল্যাগশিপ জাহাজ হচ্ছে কোনো নৌবহরের নেতৃত্বদানকারী জাহাজ যেটি অধিনায়ক ব্যবহার করেন। নৌবহরের অন্যান্য জাহাজের তুলনায় ফ্ল্যাগশিপ জাহাজ সাধারণত খুবই দ্রুতগামী এবং শক্তিশালী হয়।

ক্রুজার মস্কভা ২০০০ সাল থেকে কৃষ্ণসাগরে রুশ নৌবহরের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল। রাশিয়া মেরিটাইম স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মাইকেল পিটারসন বিবিসিকে জানান, ১২ হাজার ৫০০ টন ওজনের মস্কভা জাহাজটি রুশ নৌ-শক্তির অন্যতম প্রতীক। সিরিয়াসহ রাশিয়ার বহু সামরিক অভিযানে এই জাহাজটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

লক্ষণীয় ব্যাপার হলো ইউক্রেনের ওপর হামলার কাজে এখন এই জাহাজটি ব্যবহার করা হলেও ১৯৮০ দশকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ইউক্রেনের একটি ডকইয়ার্ডেই জাহাজটি নির্মাণ করা হয়েছিল।