প্রবাসী মন্ত্রিসভার শপথের অপেক্ষা

একাত্তরের ১৬ এপ্রিল একদিকে পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রবাসী মুজিব নগর সরকারে শপথ গ্রহণের গোপন প্রস্তুতি চলতে তাকে।

এদিন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। চুয়াডাঙ্গায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিমান হামলায় মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর সরিয়ে ভৈরব নদের অন্য পাড়ে ইছাখালী বিওপিতে স্থানান্তর করা হয়। ঈশ্বরদী থেকে ভেড়ামারার দিকে আসার সময় পাকিস্তানি হানাদাররা মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ ভেঙে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পশ্চিম মাথার ইপিআর ক্যাম্প দখল করে নেয়। ১৬ এপ্রিল ভোরে অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা চিরুনী অভিযান চালায় ভেড়ামারা ও কুষ্টিয়ায়। এ সময় ভেড়ামারার চণ্ডীপুরের পণ্ডিত পরিবারের ২০ জনের বেশি লোক পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে বাঁচতে চন্দনা নদী পার হয়ে পালাতে চেষ্টা করে। এ সময় পণ্ডিত পরিবারের ১৪ জন সদস্য ঘটনাস্থলেই পাকিস্তানি হানাদারদের ব্রাশফায়ারে শহীদ হন। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা চালিয়ে পাকিস্তানি হানাদাররা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার কর্তৃত্ব নিয়ে নেয়।

১৬ এপ্রিল সকালে চট্টগ্রামের কুমিরায় যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে সীতাকুণ্ড ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে এসে অবস্থান

করার সময় পাকিস্তানিরা গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা চালায়। একই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী সমুদ্র উপকূল থেকে নৌবাহিনীর কামান থেকে গোলাবর্ষণ করে। জবাবে মুক্তিবাহিনীও পাল্টা আঘাত হানে। এখানে বেশ কিছু সময় গোলাগুলি চলে।

এদিন পাকিস্তানি হানাদারদের একটি দল দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ট্যাংক ও ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পঞ্চগড়ের ভবানীপুরের হাওয়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। যুদ্ধে আটজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও বেশ কয়েকজন আহত হন। পঞ্চগড় দখলের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর দিনাজপুরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এইদিন পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে চলে যায়। এদিন বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার দখলও তারা নিয়ে নেয় পাকিস্তান বাহিনী।

এইদিন ময়মনসিংহের দখল নিয়েও হানাদাররা নির্বিচার গণহত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করেছিল।

১৬ এপ্রিল কুমিল্লার গঙ্গাসাগর সেতুতে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে প্রবল যুদ্ধ হয়। কুমিল্লার ত্রিপুরা সীমান্তে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদারদের হামলা প্রতিহত করে। এদিকে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও হানাদার ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একই সঙ্গে কসবা সীমান্তেও পুরো দিন থেমে থেমে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি হানাদারদের মধ্যে যুদ্ধ চলে।

এদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটির রেস্ট হাউজে পাকিস্তানি হানাদারদের ওপর মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত আক্রমণ চালালে হানাদারদের বেশ কয়েকজন সৈন্য নিহত হয়। একই সঙ্গে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র পুনর্দখল নিতে মুক্তিবাহিনী ও হানাদার বাহিনীর মধ্যে দিনভর সংঘর্ষ চলে।

একাত্তরের ১৭ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ১৬ এপ্রিল নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি নেয় প্রবাসী সরকারের কর্মকর্তারা। তবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের খবর অত্যন্ত গোপন রাখা হয় যাতে পাকিস্তানিরা হামলা চালাতে না পারে।

১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম কলকাতা প্রেসক্লাবে গিয়ে সাংবাদিকদের জানান, পরদিন বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটা অনুষ্ঠান আছে। যারা অনুষ্ঠানে যেতে চান, তাদের অবশ্যই আগামীকাল ভোরের মধ্যে প্রেসক্লাবে উপস্থিত থাকতে হবে। সেখান থেকে বাংলাদেশ সরকার সবাইকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে।

এদিন কলকাতায় প্রখ্যাত সাহিত্যিক তারা শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি শঙ্কর প্রসাদ মিত্র ও বিচারপতি এসএ মাসুদসহ বিশিষ্টজনরা এক আবেদনে বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর নির্যাতনের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি অবিলম্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানান।

এছাড়া অবিলম্বে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গণস্বাক্ষর গ্রহণ শুরু করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে পেশ করার জন্য প্রস্তাবিত দাবিনামায় স্বাক্ষর অভিযানের উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী যামিনী রায়।

এদিন কলকাতায় সংগ্রামী স্বাধীন বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির স্টিয়ারিং কমিটির এক সভায় পাকিস্তানকে জাতিসংঘ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এসএন সেন। সভায় প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।

কলকাতায় অল ইন্ডিয়া মাওলানা আজাদ সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার মিশনের মুসলিম নেতারা ১৬ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গ মোতাওয়াল্লি সম্মেলনে বাংলাদেশে ধর্মস্থান ও মসজিদের ওপর বোমাবর্ষণের প্রতিবাদ জানান। সেই সঙ্গে ভারতের ক্ষুদ্রশিল্প ফেডারেশন বাংলাদেশ তহবিলে সাহায্য দিতে পশ্চিমবঙ্গের সব ক্ষুদ্র শিল্পপতিদের আহ্বান জানায়। এদিন একই সঙ্গে কলকাতার শিখ ধর্মাবলম্বীরাও পাকিস্তানি নৃশংসতার প্রতিবাদ জানান।

এত ঘটনার পাশাপাশি এদিন বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তু ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে প্রবেশ করে।

ঢাকায় এদিন খাজা খয়ের উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে পাকিস্তানের পক্ষে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যায় পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান নুরুল আমিনের নেতৃত্বে শান্তি কমিটির নেতারা গভর্নর টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করে জানান, শত্রু নিধনে তারা সেনাবাহিনীকে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন। কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা হলেন খাজা খয়েরুদ্দিন আহ্বায়ক, সদস্য নরুুল আমিন, এ. কিউ. এম শফিকুল ইসলাম, গোলাম আজম, মাহমুদ আলী, আবদুল জব্বার খদ্দর, মাওলানা সিদ্দিক আহমদ, আবুল কাশেম, ইউসুফ আলী চৌধুরী, মওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মাসুম, আবদুল মতিন, অধ্যাপক গোলাম সরোয়ার, ব্যারিস্টার আফতাব উদ্দিন আহম্মেদ, পীর মোহসেন উদ্দিন, এ এস এম সোলায়মান, এ কে রফিকুল হোসেন, মওলানা নুরুজ্জামান, আতাউল হক খান, তোয়াহা বিন হাবিব, মেজর (অব.) আফসার উদ্দিন, দেওয়ান ওয়ারেসাত আলী ও হাকিম ইরতাজুর রহমান খান।

সামরিক কর্তৃপক্ষ ঢাকায় কারফিউয়ের মেয়াদ ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শিথিল করে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবিলম্বে কাজে যোগ দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।

শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২ , ০৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৪ রমাদ্বান ১৪৪৩

১৬ এপ্রিল ১৯৭১

প্রবাসী মন্ত্রিসভার শপথের অপেক্ষা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

একাত্তরের ১৬ এপ্রিল একদিকে পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রবাসী মুজিব নগর সরকারে শপথ গ্রহণের গোপন প্রস্তুতি চলতে তাকে।

এদিন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। চুয়াডাঙ্গায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিমান হামলায় মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর সরিয়ে ভৈরব নদের অন্য পাড়ে ইছাখালী বিওপিতে স্থানান্তর করা হয়। ঈশ্বরদী থেকে ভেড়ামারার দিকে আসার সময় পাকিস্তানি হানাদাররা মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ ভেঙে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পশ্চিম মাথার ইপিআর ক্যাম্প দখল করে নেয়। ১৬ এপ্রিল ভোরে অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা চিরুনী অভিযান চালায় ভেড়ামারা ও কুষ্টিয়ায়। এ সময় ভেড়ামারার চণ্ডীপুরের পণ্ডিত পরিবারের ২০ জনের বেশি লোক পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে বাঁচতে চন্দনা নদী পার হয়ে পালাতে চেষ্টা করে। এ সময় পণ্ডিত পরিবারের ১৪ জন সদস্য ঘটনাস্থলেই পাকিস্তানি হানাদারদের ব্রাশফায়ারে শহীদ হন। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা চালিয়ে পাকিস্তানি হানাদাররা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার কর্তৃত্ব নিয়ে নেয়।

১৬ এপ্রিল সকালে চট্টগ্রামের কুমিরায় যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে সীতাকুণ্ড ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে এসে অবস্থান

করার সময় পাকিস্তানিরা গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা চালায়। একই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী সমুদ্র উপকূল থেকে নৌবাহিনীর কামান থেকে গোলাবর্ষণ করে। জবাবে মুক্তিবাহিনীও পাল্টা আঘাত হানে। এখানে বেশ কিছু সময় গোলাগুলি চলে।

এদিন পাকিস্তানি হানাদারদের একটি দল দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ট্যাংক ও ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পঞ্চগড়ের ভবানীপুরের হাওয়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। যুদ্ধে আটজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও বেশ কয়েকজন আহত হন। পঞ্চগড় দখলের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর দিনাজপুরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এইদিন পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে চলে যায়। এদিন বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার দখলও তারা নিয়ে নেয় পাকিস্তান বাহিনী।

এইদিন ময়মনসিংহের দখল নিয়েও হানাদাররা নির্বিচার গণহত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করেছিল।

১৬ এপ্রিল কুমিল্লার গঙ্গাসাগর সেতুতে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে প্রবল যুদ্ধ হয়। কুমিল্লার ত্রিপুরা সীমান্তে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদারদের হামলা প্রতিহত করে। এদিকে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও হানাদার ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একই সঙ্গে কসবা সীমান্তেও পুরো দিন থেমে থেমে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি হানাদারদের মধ্যে যুদ্ধ চলে।

এদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটির রেস্ট হাউজে পাকিস্তানি হানাদারদের ওপর মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত আক্রমণ চালালে হানাদারদের বেশ কয়েকজন সৈন্য নিহত হয়। একই সঙ্গে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র পুনর্দখল নিতে মুক্তিবাহিনী ও হানাদার বাহিনীর মধ্যে দিনভর সংঘর্ষ চলে।

একাত্তরের ১৭ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ১৬ এপ্রিল নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি নেয় প্রবাসী সরকারের কর্মকর্তারা। তবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের খবর অত্যন্ত গোপন রাখা হয় যাতে পাকিস্তানিরা হামলা চালাতে না পারে।

১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম কলকাতা প্রেসক্লাবে গিয়ে সাংবাদিকদের জানান, পরদিন বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটা অনুষ্ঠান আছে। যারা অনুষ্ঠানে যেতে চান, তাদের অবশ্যই আগামীকাল ভোরের মধ্যে প্রেসক্লাবে উপস্থিত থাকতে হবে। সেখান থেকে বাংলাদেশ সরকার সবাইকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে।

এদিন কলকাতায় প্রখ্যাত সাহিত্যিক তারা শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি শঙ্কর প্রসাদ মিত্র ও বিচারপতি এসএ মাসুদসহ বিশিষ্টজনরা এক আবেদনে বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর নির্যাতনের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি অবিলম্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানান।

এছাড়া অবিলম্বে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গণস্বাক্ষর গ্রহণ শুরু করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে পেশ করার জন্য প্রস্তাবিত দাবিনামায় স্বাক্ষর অভিযানের উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী যামিনী রায়।

এদিন কলকাতায় সংগ্রামী স্বাধীন বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির স্টিয়ারিং কমিটির এক সভায় পাকিস্তানকে জাতিসংঘ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এসএন সেন। সভায় প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।

কলকাতায় অল ইন্ডিয়া মাওলানা আজাদ সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার মিশনের মুসলিম নেতারা ১৬ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গ মোতাওয়াল্লি সম্মেলনে বাংলাদেশে ধর্মস্থান ও মসজিদের ওপর বোমাবর্ষণের প্রতিবাদ জানান। সেই সঙ্গে ভারতের ক্ষুদ্রশিল্প ফেডারেশন বাংলাদেশ তহবিলে সাহায্য দিতে পশ্চিমবঙ্গের সব ক্ষুদ্র শিল্পপতিদের আহ্বান জানায়। এদিন একই সঙ্গে কলকাতার শিখ ধর্মাবলম্বীরাও পাকিস্তানি নৃশংসতার প্রতিবাদ জানান।

এত ঘটনার পাশাপাশি এদিন বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তু ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে প্রবেশ করে।

ঢাকায় এদিন খাজা খয়ের উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে পাকিস্তানের পক্ষে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যায় পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান নুরুল আমিনের নেতৃত্বে শান্তি কমিটির নেতারা গভর্নর টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করে জানান, শত্রু নিধনে তারা সেনাবাহিনীকে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন। কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা হলেন খাজা খয়েরুদ্দিন আহ্বায়ক, সদস্য নরুুল আমিন, এ. কিউ. এম শফিকুল ইসলাম, গোলাম আজম, মাহমুদ আলী, আবদুল জব্বার খদ্দর, মাওলানা সিদ্দিক আহমদ, আবুল কাশেম, ইউসুফ আলী চৌধুরী, মওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মাসুম, আবদুল মতিন, অধ্যাপক গোলাম সরোয়ার, ব্যারিস্টার আফতাব উদ্দিন আহম্মেদ, পীর মোহসেন উদ্দিন, এ এস এম সোলায়মান, এ কে রফিকুল হোসেন, মওলানা নুরুজ্জামান, আতাউল হক খান, তোয়াহা বিন হাবিব, মেজর (অব.) আফসার উদ্দিন, দেওয়ান ওয়ারেসাত আলী ও হাকিম ইরতাজুর রহমান খান।

সামরিক কর্তৃপক্ষ ঢাকায় কারফিউয়ের মেয়াদ ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শিথিল করে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবিলম্বে কাজে যোগ দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।