খননের অভাবে বড়ালের বুকে চর

নদীর উপরে চলছে সাইকেল, আর সাইকেল চালাচ্ছে দুজন ছেলে। কথাটি শুনতে গিয়ে অবাক হলেও ঘটনাটি সত্যি। সাইকেল চলছে শুকনো নদীর বিস্তীর্ণ চরের উপরে। সম্প্রতি নাটোরের বাগাতিপাড়ার তমালতলা বাজারস্থ বড়াল নদীর শুকনো চরের উপরে সাইকেল চালাতে দেখা গেছে দুজন বাচ্চা ছেলেকে। এদৃশ্য দেখে তাদের সাইকেল চালানোর বিষয়ে জানতে চান এ প্রতিবেদক। তখন তারা বলে, ‘নদীতে পানি নেই, তাই সাইকেল চালানো শিখতে নদীতেই এসেছি।’ শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই বাগাতিপাড়ার বুক চিরে বয়ে যাওয়া বড়াল ও মুসাখা নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। জেগে উঠছে বিস্তীর্ণ চর। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। দখল-দূষণ আর ভরাটের কবলে পড়া এসব নদী রক্ষার দাবীও জানিয়েছে সমাজকর্মীরা। নদনদী রক্ষায় পৃথক বরাদ্দেরও দাবি করেছে তারা।

জানা যায়, বাগাতিপাড়া উপজেলাটি বড়াল নদীর মাধ্যমে দ্বিখন্ডিত হয়েছে। বড়াল নদীর উৎপত্তি পদ্মা নদীর রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলা থেকে। বড়াল নদীর দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার। এটি রাজশাহীর চারঘাট, নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া, লালপুর, বড়াইগ্রাম, নাটোর সদর, গুরুদাসপুর হয়ে পাবনা জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যমুনায় মিশে গেছে। এক সময় এ নদীই ছিল যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। বর্ষা মৌসুমে সীমিত আকারে নদীর মাধ্যমে একস্থান থেকে অন্যস্থানে মালামাল আনা নেয়া করা হলেও শুকনা মৌসুমে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় যোগাযোগের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বর্তমানে এই বড়াল নদীর পানি দ্বারা কৃষিকাজ করা হয়। এক সময় নদীতে অনেক মাছ পাওয়া যেত। এখন নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে মাছ পাওয়া যায় না।

অন্যদিকে উপজেলার হাঁপানিয়া গ্রাম থেকে উৎপত্তি হয়ে মুসাখা নদীটি ত্রিমহনী, পকেটখালি, চারঘাটের ওমর গাড়ি দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। উৎস থেকে নদীটি চারঘাট-বাগাতিপাড়ার সীমানা বরাবর প্রবাহিত হচ্ছে। পূর্বে এটি নারদ আর বড়ালের সংযোগ রক্ষাকারী একটি খাল ছিল। পরে ১৮৩৮ সালে পদ্মার বন্যায় এর বিস্তৃতি ঘটতে থাকে। আর এভাবেই নদীর মর্যাদা পায় মুসাখা খাল। কিন্তু মর্যাদা পেলেও এ নদীটির একই অবস্থা। এটা দেখে বলা যেতেই পারে ইতিহাসের পাতায় আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে এ নদ-নদী।

বাঘা এলাকার আনোয়ার নামে এক কৃষক জানান, তার পৈত্রিক জমির সঙ্গে সংযুক্ত বড়ালের চরে দুই একর জমিতে কৃষি আবাদ ধান, পেঁয়াজ, ভুট্টার মতো ফসল চাষ করেছেন। নাব্যতাহীনতা ও নদীর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন নদীগুলোর জেলেরা। উপজেলার ঘোরলাজ গ্রামের আনিছুর বলেন, কয়েক বছর আগেও নদীতে প্রচুর মাছ শিকার করেছি, সারা বছর সংসার ভালোই চলতো কিন্তু এখন নদীতে আর পানিই থাকে না। তাই মাছও আর আগের মত নেই, আবাদি জমি হয়ে যাচ্ছে নদী। ঠিক একই কথা বলেন পার্শ্ববর্তী লালপুর উপজেলার ধুপইল গ্রামের পরিতস হালদার। তিনি বর্তমানে মাছ শিকার ছেড়ে ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালান।

এদিকে উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ইউএনও প্রিয়াংকা দেবী পাল বলেন, আমরা নদীর সীমানা নির্ধারণের কাজটি শেষ করেছি। নদী ড্রেজিংয়ের কাজটি করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু সেই কাজটি এখনও দৃশ্যমান হয়নি। ইউএনও বলেন, চরের জমি কৃষি কাজের জন্য উপযোগী হওয়াতে কৃষকদের কৃষিকাজে উৎসাহিত করছি।

এ বিষয়ে নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোকলেসুর রহমানা বলেন, নদনদী থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান চলমান আছে। তাছাড়া বড়াল, নারদ, নন্দকুঁজা ও মুসাখা নদনদী খননের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২ , ০৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৪ রমাদ্বান ১৪৪৩

খননের অভাবে বড়ালের বুকে চর

প্রতিনিধি, বাগাতিপাড়া (নাটোর)

image

নদীর উপরে চলছে সাইকেল, আর সাইকেল চালাচ্ছে দুজন ছেলে। কথাটি শুনতে গিয়ে অবাক হলেও ঘটনাটি সত্যি। সাইকেল চলছে শুকনো নদীর বিস্তীর্ণ চরের উপরে। সম্প্রতি নাটোরের বাগাতিপাড়ার তমালতলা বাজারস্থ বড়াল নদীর শুকনো চরের উপরে সাইকেল চালাতে দেখা গেছে দুজন বাচ্চা ছেলেকে। এদৃশ্য দেখে তাদের সাইকেল চালানোর বিষয়ে জানতে চান এ প্রতিবেদক। তখন তারা বলে, ‘নদীতে পানি নেই, তাই সাইকেল চালানো শিখতে নদীতেই এসেছি।’ শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই বাগাতিপাড়ার বুক চিরে বয়ে যাওয়া বড়াল ও মুসাখা নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। জেগে উঠছে বিস্তীর্ণ চর। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। দখল-দূষণ আর ভরাটের কবলে পড়া এসব নদী রক্ষার দাবীও জানিয়েছে সমাজকর্মীরা। নদনদী রক্ষায় পৃথক বরাদ্দেরও দাবি করেছে তারা।

জানা যায়, বাগাতিপাড়া উপজেলাটি বড়াল নদীর মাধ্যমে দ্বিখন্ডিত হয়েছে। বড়াল নদীর উৎপত্তি পদ্মা নদীর রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলা থেকে। বড়াল নদীর দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার। এটি রাজশাহীর চারঘাট, নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া, লালপুর, বড়াইগ্রাম, নাটোর সদর, গুরুদাসপুর হয়ে পাবনা জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যমুনায় মিশে গেছে। এক সময় এ নদীই ছিল যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। বর্ষা মৌসুমে সীমিত আকারে নদীর মাধ্যমে একস্থান থেকে অন্যস্থানে মালামাল আনা নেয়া করা হলেও শুকনা মৌসুমে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় যোগাযোগের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বর্তমানে এই বড়াল নদীর পানি দ্বারা কৃষিকাজ করা হয়। এক সময় নদীতে অনেক মাছ পাওয়া যেত। এখন নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে মাছ পাওয়া যায় না।

অন্যদিকে উপজেলার হাঁপানিয়া গ্রাম থেকে উৎপত্তি হয়ে মুসাখা নদীটি ত্রিমহনী, পকেটখালি, চারঘাটের ওমর গাড়ি দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। উৎস থেকে নদীটি চারঘাট-বাগাতিপাড়ার সীমানা বরাবর প্রবাহিত হচ্ছে। পূর্বে এটি নারদ আর বড়ালের সংযোগ রক্ষাকারী একটি খাল ছিল। পরে ১৮৩৮ সালে পদ্মার বন্যায় এর বিস্তৃতি ঘটতে থাকে। আর এভাবেই নদীর মর্যাদা পায় মুসাখা খাল। কিন্তু মর্যাদা পেলেও এ নদীটির একই অবস্থা। এটা দেখে বলা যেতেই পারে ইতিহাসের পাতায় আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে এ নদ-নদী।

বাঘা এলাকার আনোয়ার নামে এক কৃষক জানান, তার পৈত্রিক জমির সঙ্গে সংযুক্ত বড়ালের চরে দুই একর জমিতে কৃষি আবাদ ধান, পেঁয়াজ, ভুট্টার মতো ফসল চাষ করেছেন। নাব্যতাহীনতা ও নদীর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন নদীগুলোর জেলেরা। উপজেলার ঘোরলাজ গ্রামের আনিছুর বলেন, কয়েক বছর আগেও নদীতে প্রচুর মাছ শিকার করেছি, সারা বছর সংসার ভালোই চলতো কিন্তু এখন নদীতে আর পানিই থাকে না। তাই মাছও আর আগের মত নেই, আবাদি জমি হয়ে যাচ্ছে নদী। ঠিক একই কথা বলেন পার্শ্ববর্তী লালপুর উপজেলার ধুপইল গ্রামের পরিতস হালদার। তিনি বর্তমানে মাছ শিকার ছেড়ে ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালান।

এদিকে উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ইউএনও প্রিয়াংকা দেবী পাল বলেন, আমরা নদীর সীমানা নির্ধারণের কাজটি শেষ করেছি। নদী ড্রেজিংয়ের কাজটি করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু সেই কাজটি এখনও দৃশ্যমান হয়নি। ইউএনও বলেন, চরের জমি কৃষি কাজের জন্য উপযোগী হওয়াতে কৃষকদের কৃষিকাজে উৎসাহিত করছি।

এ বিষয়ে নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোকলেসুর রহমানা বলেন, নদনদী থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান চলমান আছে। তাছাড়া বড়াল, নারদ, নন্দকুঁজা ও মুসাখা নদনদী খননের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।