মানবিকতার কাছে হেরে গেল বিবেক

কালীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি অজ্ঞাত অসুস্থ প্রতিবন্ধীকে পাওয়া গেল পুকুরের পানিতে

অন্য রোগীরা সেবাবঞ্চিত হচ্ছে ধোঁয়া তুলে হাসপাতালে ভর্তি এক অসুস্থ প্রতিবন্ধীকে অপসারণ করেছে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমন অমানবিক কাজের জন্য এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। গত ১১ এপ্রিল গভীর রাতে কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ ওই অসুস্থ প্রতিবন্ধীকে মোবারকগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে তুলে কালীগঞ্জ হাসাপাতালে ভর্তি করেন। কিন্ত ২ দিন পরে তাকে পাওয়া গেল গ্রামাঞ্চালের এক পুকুরের মধ্যে। স্থানীয়দের ভাষ্য, মেয়র মহোদয় প্রতিবন্ধীর ওপর সদয় হয়েছেন। হাসপাতালে প্রতিবন্ধীর জন্য ঝামেলা খানেকটা হয়েছে ঠিকই। তাকে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেতো। কিন্তু মাঠে নিয়ে ছেড়ে দেয়া ঠিক হয়নি। কারণ অসুস্থ যেকোন মানুষ চিকিৎসাসেবা পাওয়ার অধিকার রাখেন।

জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল গভীর রাতে কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ খবর পান অসুস্থ অজ্ঞাতনামা এক শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী মোবারকগঞ্জ রেল স্টেশনে কষ্ট পাচ্ছেন। তিনি ওই রাতেই ছুটে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মিদের সহযোগিতায় উদ্ধার করে কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তির মাধ্যমে সার্বিক সহায়তা প্রদান করেন। কিন্তু ঠিক ২ দিন পর রাতে ওই প্রতিবন্ধীকে পাওয়া যায় নলডাঙ্গা রাজবাড়ী এলাকার একটি পুকুরের মধ্যে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পুনরায় কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে ভর্তি করেন।

কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. অরুন কুমার বিশ^াস জানান, তিনি জরুরি কাজে ঝিনাইদহে ছিলেন। তখন অন্য ডাক্তাররা তাকে ফোন দিয়ে প্রতিবন্ধী রোগীর দ্বারা অন্য রোগীর অসুবিধা হচ্ছে বলে তাকে অপসারণের ব্যবস্থা করতে বলেন। এরপর তিনি থানা পুলিশকে অবহিত করেন। এরপর কী হয়েছে তিনি জানেন না।

কালীগঞ্জ থানার ওসি আবদুর রহিম মোল্যা জানান, এক প্রতিবন্ধী রোগীর জন্য হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, তাকে অপসারণের জন্য দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডা. অরুন কুমার বিশ^াস থানায় ফোন দিয়ে পুলিশ পাঠাতে বলেন।

এরপর তিনি একজন এস আইয়ের নেতৃত্বে কয়জন পুলিশ পাঠান। এরপর কী হয়েছে তিনিও জানেন না। তবে এখন শুনছেন ওই পাগলকে চরম অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কালীগঞ্জ পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ বলেন, যদি এই পাগলের সঙ্গে এমনটি কেউ করে থাকে সেটি ঠিক হয়নি। অসুস্থ যেকোন মানুষের হাসপাতাল থেকে সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কাজেই চিকিৎসা শেষ না হতেই দায়িত্বশীল কেউ এমন কাজ করতে পারেন না। তিনি বলেন, গভীর রাতে মানুষের মুখে শুনে ওই পাগল তিনি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহযোগিতায় হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছিলাম। এখন শুনছি ওই পাগল ঝামেলা করার কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে পথে ছেড়ে দেয়াটা দায়িত্বহীনতা ও অমানবিক কাজ। মানবিক কারণে তিনি রাতে ছুটে গিয়ে পাগলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। এখন শুনছি অন্যটা। এমনটি হলে মানবিকতার কাছে হেরে গেলাম আমরা।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবন্ধীরা নিরুপায়। ঝামেলা এড়ানোর জন্য পাগলকে কেউ হাসপাতাল থেকে বের করলে কাজটি তিনি ঠিক করেননি। তিনি আরও বলেন, ডাক্তারদের সঙ্গে কথা হয়েছে তার পা অপোরেশন করতে হবে। প্রয়োজনে অন্য হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। আর দায়িত্বে অবহেলাকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২ , ০৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৪ রমাদ্বান ১৪৪৩

মানবিকতার কাছে হেরে গেল বিবেক

কালীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি অজ্ঞাত অসুস্থ প্রতিবন্ধীকে পাওয়া গেল পুকুরের পানিতে

সাবজাল হোসেন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)

image

অন্য রোগীরা সেবাবঞ্চিত হচ্ছে ধোঁয়া তুলে হাসপাতালে ভর্তি এক অসুস্থ প্রতিবন্ধীকে অপসারণ করেছে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমন অমানবিক কাজের জন্য এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। গত ১১ এপ্রিল গভীর রাতে কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ ওই অসুস্থ প্রতিবন্ধীকে মোবারকগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে তুলে কালীগঞ্জ হাসাপাতালে ভর্তি করেন। কিন্ত ২ দিন পরে তাকে পাওয়া গেল গ্রামাঞ্চালের এক পুকুরের মধ্যে। স্থানীয়দের ভাষ্য, মেয়র মহোদয় প্রতিবন্ধীর ওপর সদয় হয়েছেন। হাসপাতালে প্রতিবন্ধীর জন্য ঝামেলা খানেকটা হয়েছে ঠিকই। তাকে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেতো। কিন্তু মাঠে নিয়ে ছেড়ে দেয়া ঠিক হয়নি। কারণ অসুস্থ যেকোন মানুষ চিকিৎসাসেবা পাওয়ার অধিকার রাখেন।

জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল গভীর রাতে কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ খবর পান অসুস্থ অজ্ঞাতনামা এক শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী মোবারকগঞ্জ রেল স্টেশনে কষ্ট পাচ্ছেন। তিনি ওই রাতেই ছুটে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মিদের সহযোগিতায় উদ্ধার করে কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তির মাধ্যমে সার্বিক সহায়তা প্রদান করেন। কিন্তু ঠিক ২ দিন পর রাতে ওই প্রতিবন্ধীকে পাওয়া যায় নলডাঙ্গা রাজবাড়ী এলাকার একটি পুকুরের মধ্যে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পুনরায় কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে ভর্তি করেন।

কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. অরুন কুমার বিশ^াস জানান, তিনি জরুরি কাজে ঝিনাইদহে ছিলেন। তখন অন্য ডাক্তাররা তাকে ফোন দিয়ে প্রতিবন্ধী রোগীর দ্বারা অন্য রোগীর অসুবিধা হচ্ছে বলে তাকে অপসারণের ব্যবস্থা করতে বলেন। এরপর তিনি থানা পুলিশকে অবহিত করেন। এরপর কী হয়েছে তিনি জানেন না।

কালীগঞ্জ থানার ওসি আবদুর রহিম মোল্যা জানান, এক প্রতিবন্ধী রোগীর জন্য হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, তাকে অপসারণের জন্য দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডা. অরুন কুমার বিশ^াস থানায় ফোন দিয়ে পুলিশ পাঠাতে বলেন।

এরপর তিনি একজন এস আইয়ের নেতৃত্বে কয়জন পুলিশ পাঠান। এরপর কী হয়েছে তিনিও জানেন না। তবে এখন শুনছেন ওই পাগলকে চরম অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কালীগঞ্জ পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ বলেন, যদি এই পাগলের সঙ্গে এমনটি কেউ করে থাকে সেটি ঠিক হয়নি। অসুস্থ যেকোন মানুষের হাসপাতাল থেকে সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কাজেই চিকিৎসা শেষ না হতেই দায়িত্বশীল কেউ এমন কাজ করতে পারেন না। তিনি বলেন, গভীর রাতে মানুষের মুখে শুনে ওই পাগল তিনি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহযোগিতায় হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছিলাম। এখন শুনছি ওই পাগল ঝামেলা করার কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে পথে ছেড়ে দেয়াটা দায়িত্বহীনতা ও অমানবিক কাজ। মানবিক কারণে তিনি রাতে ছুটে গিয়ে পাগলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। এখন শুনছি অন্যটা। এমনটি হলে মানবিকতার কাছে হেরে গেলাম আমরা।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবন্ধীরা নিরুপায়। ঝামেলা এড়ানোর জন্য পাগলকে কেউ হাসপাতাল থেকে বের করলে কাজটি তিনি ঠিক করেননি। তিনি আরও বলেন, ডাক্তারদের সঙ্গে কথা হয়েছে তার পা অপোরেশন করতে হবে। প্রয়োজনে অন্য হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। আর দায়িত্বে অবহেলাকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।