কম্প্রেসর-রেফ্রিজারেটরে ভ্যাট অব্যাহতি চায় খাত সংশ্লিষ্টরা

দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্পের স্বার্থে কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি বজায় রাখা উচিত বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠে এ খাতে উৎপাদন ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে আরও সহায়তা বাড়ানোর পক্ষে তারা। তাদের মতে, ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি শিল্প-সমৃদ্ধ উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন খাতে দীর্ঘমেয়াদে সুবিধা দেয়া জরুরি।

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছিল যা শেষ হচ্ছে চলতি জুনেই। দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও হাই-টেক শিল্পের বিকাশ ও সুরক্ষার স্বার্থে ভ্যাট অব্যাহতি বজায় রাখার পাশাপাশি এ খাতে সব রকম সহায়তা দেয়ার অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির ফলে স্থানীয় পর্যায়ে এ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ হয়েছে। এর ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি আমদানি ব্যয় সাশ্রয় এবং দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রয়োজনীয় পণ্য রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থেকেছে। দেশে উৎপাদিত পণ্য দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এ খাত থেকে রপ্তানি আয়ও বাড়ছে।

কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রাংশের অপ্রতুলতা দেখা দিয়েছে। বিপরীতে বেড়েছে দাম। ফলে ইতোমধ্যেই ভোক্তা পর্যায়ে রেফ্রিজারেটরের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় করোনার ক্ষতি কাটিয়ে এ খাত যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখন উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতিসহ অন্য সুবিধা না পেলে দেশীয় হাই-টেক শিল্প অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যাবে। তাই সবদিক বিবেচনায় কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে সহায়ক নীতিসহ বিভিন্ন সুবিধা বাড়ানোর পক্ষে মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা এবং অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘দেশীয় শিল্প খাতের বিকাশ ও সুরক্ষায় বর্তমান সরকার ধারাবাহিকভাবেই বহুমুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। যাতে দেশীয় শিল্প পণ্যের প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন সহজ হয়। দেশীয় কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদন শিল্পেও সরকার সুবিধা দিয়ে আসছে। এ শিল্পে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধার বিষয়টিও বিবেচনাযোগ্য একটি বিষয়।’

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘আমাদের মতো দেশের জন্য শিল্পবান্ধব বাজেট খুব বেশি দরকার। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে এ খাতে আরও বিনিয়োগ করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা শিল্পবান্ধব বাজেটেরই অংশ। কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এ খাতে খুবই ভালো করছে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন। সেই সঙ্গে বিশ্বের অন্য দেশের মতো আমাদের দেশে করপোরেট ট্যাক্স কমানো উচিত। এটা অন্তত ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা দরকার।’

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত এক যুগে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন শিল্প সহায়ক নীতির পাশাপাশি শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে দেশের কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদন খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের ১৪তম কম্প্রেসর উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ খাতে বিপুল পরিমাণ আমদানি ব্যয় সাশ্রয় এবং স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানির সম্ভাবনাময় উৎস হয়ে উঠেছে। দেশীয় হাই-টেক শিল্পে টেকসই প্রবৃদ্ধির এই ধারা বজায় রাখতে এ খাতের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিকল্প নেই।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদন শিল্পে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেশীয় শিল্প বিকাশে সহায়ক। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।’

এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দেশের শিল্প সহায়ক যেকোন বিষয়েই সরকারের আগ্রহ রয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করে আগামীতে এই ভ্যাট অব্যাহতির বিষয়ে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৭.৫ শতাংশ জিডিপির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার, তা অর্জনে দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি খাত বিশেষ করে কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদন শিল্প গুরুত্বপূর্ণ। এ খাতে সহায়তা বাড়ানো হলে তা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনবে। ২০৪১ সালের মধ্যে শিল্পসমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণ সহজ হবে।

রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২২ , ০৪ বৈশাখ ১৪২৮ ১৫ রমাদ্বান ১৪৪৩

কম্প্রেসর-রেফ্রিজারেটরে ভ্যাট অব্যাহতি চায় খাত সংশ্লিষ্টরা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্পের স্বার্থে কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি বজায় রাখা উচিত বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠে এ খাতে উৎপাদন ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে আরও সহায়তা বাড়ানোর পক্ষে তারা। তাদের মতে, ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি শিল্প-সমৃদ্ধ উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন খাতে দীর্ঘমেয়াদে সুবিধা দেয়া জরুরি।

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছিল যা শেষ হচ্ছে চলতি জুনেই। দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও হাই-টেক শিল্পের বিকাশ ও সুরক্ষার স্বার্থে ভ্যাট অব্যাহতি বজায় রাখার পাশাপাশি এ খাতে সব রকম সহায়তা দেয়ার অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির ফলে স্থানীয় পর্যায়ে এ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ হয়েছে। এর ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি আমদানি ব্যয় সাশ্রয় এবং দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রয়োজনীয় পণ্য রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থেকেছে। দেশে উৎপাদিত পণ্য দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এ খাত থেকে রপ্তানি আয়ও বাড়ছে।

কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রাংশের অপ্রতুলতা দেখা দিয়েছে। বিপরীতে বেড়েছে দাম। ফলে ইতোমধ্যেই ভোক্তা পর্যায়ে রেফ্রিজারেটরের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় করোনার ক্ষতি কাটিয়ে এ খাত যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখন উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতিসহ অন্য সুবিধা না পেলে দেশীয় হাই-টেক শিল্প অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যাবে। তাই সবদিক বিবেচনায় কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে সহায়ক নীতিসহ বিভিন্ন সুবিধা বাড়ানোর পক্ষে মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা এবং অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘দেশীয় শিল্প খাতের বিকাশ ও সুরক্ষায় বর্তমান সরকার ধারাবাহিকভাবেই বহুমুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। যাতে দেশীয় শিল্প পণ্যের প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন সহজ হয়। দেশীয় কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদন শিল্পেও সরকার সুবিধা দিয়ে আসছে। এ শিল্পে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধার বিষয়টিও বিবেচনাযোগ্য একটি বিষয়।’

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘আমাদের মতো দেশের জন্য শিল্পবান্ধব বাজেট খুব বেশি দরকার। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে এ খাতে আরও বিনিয়োগ করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা শিল্পবান্ধব বাজেটেরই অংশ। কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এ খাতে খুবই ভালো করছে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন। সেই সঙ্গে বিশ্বের অন্য দেশের মতো আমাদের দেশে করপোরেট ট্যাক্স কমানো উচিত। এটা অন্তত ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা দরকার।’

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত এক যুগে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন শিল্প সহায়ক নীতির পাশাপাশি শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে দেশের কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদন খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের ১৪তম কম্প্রেসর উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ খাতে বিপুল পরিমাণ আমদানি ব্যয় সাশ্রয় এবং স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানির সম্ভাবনাময় উৎস হয়ে উঠেছে। দেশীয় হাই-টেক শিল্পে টেকসই প্রবৃদ্ধির এই ধারা বজায় রাখতে এ খাতের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিকল্প নেই।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদন শিল্পে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেশীয় শিল্প বিকাশে সহায়ক। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।’

এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দেশের শিল্প সহায়ক যেকোন বিষয়েই সরকারের আগ্রহ রয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করে আগামীতে এই ভ্যাট অব্যাহতির বিষয়ে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৭.৫ শতাংশ জিডিপির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার, তা অর্জনে দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি খাত বিশেষ করে কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদন শিল্প গুরুত্বপূর্ণ। এ খাতে সহায়তা বাড়ানো হলে তা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনবে। ২০৪১ সালের মধ্যে শিল্পসমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণ সহজ হবে।