চল্লিশ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পে শ্রমিক নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ফরিদপুর ও সালুয়া ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচি গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (ইজিপিপি) প্রকল্পে বরাদ্দ অনুযায়ী শ্রমিক নিয়োগ না দেওয়াসহ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

ফরিদপুর ও সালুয়া ইউপি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর ইউপিতে ইজিপিপির ৪টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ আসে ২১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা এবং সালুয়া ইউপিতে ইজিপিপির ৬টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ আসে ৪৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এ দুুটি ইউনিয়নে প্রকল্পের আওতায় ৪২৭ জন অতিদরিদ্র শ্রমিকের সুবিধা পাওয়ার কথা। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান।

কিন্তু উপজেলার ফরিদপুর ও সালুয়া ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রকল্পের তালিকায় সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা করে একাধিক দফাদার, চৌকিদার, প্রভাবশালী, ব্যবসায়ীসহ ইউপি সদস্যের ছেলে ও তাদের নিকটাত্মীয়দের নাম রয়েছে। তালিকাভুক্ত অধিকাংশ শ্রমিক কাজে অংশগ্রহণ না করলেও তাদের নামে ৪০ দিনের কাজ দেখিয়ে নির্ধারিত টাকা উত্তোলন করে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও লেবার সর্দারসহ প্রভাবশালীদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে একজনের নাম ব্যবহার করে অন্যজনের মোবাইল নাম্বারে একাউন্ট খুলে টাকা উত্তোলন করেছে। অভিযোগ রয়েছে শ্রমিকদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে তাদের নামে সিমকার্ড তুলে ও একাউন্ট খোলে অনেকের হাতে সিমকার্ড ও পাসওয়ার্ড না দিয়ে কাজ শেষ হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য, লেবার সর্দার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অফিসের প্রতিনিধি যৌথ যোগসাজশে টাকা তুলে শ্রমিকদের ন্যায্য টাকা না দিয়ে তারা আত্মসাত করেছে।

সরেজমিনে গিয়ে এমনও প্রমাণ পাওয়া গেছে সালুয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের তালিকায় থাকা লেবার সর্দার মো. খাইরুল ইসলাম স্থানীয় কোটিপতি ঠুলি মৌলভীর ছেলে। তার বিরুদ্ধে কাজ না করে টাকা উত্তোলনসহ নানান অভিযোগ রয়েছে। সে শ্রমিকদের সিমকার্ড নিজ হেফাজতে রেখে নিজে টাকা তুলে কিছু টাকা কর্তন করে রেখে দিয়েছে। বাকি টাকা শ্রমিকদের দিয়েছে। এ ব্যাপারে লেবার সর্দার মো. খাইরুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজে টাকা উত্তোলন করে শ্রমিকদের মাঝে বিতরণের কথা স্বীকার করলেও শ্রমিকদের মাঝে টাকা কম দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি নিয়মিত কাজে যাইনি তাই আমার কাছে কোন হাজিরা খাতা কিংবা লেবারদের তালিকা নেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি চেয়ারম্যানের লোক তাই কাজে না গিয়েও পুরো ৪০ দিনের টাকাই উত্তোলন করতে পেরেছি।

৩নং ওয়ার্ড প্রকল্পের সভাপতি সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মো. আলী আকবর বলেন, আমার প্রকল্পে মোট ৬৪ জন শ্রমিকের মধ্যে আমি ১৪ জনের নাম দিয়েছি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৫ জনের নাম দিয়েছে। ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ৩ জনের নাম দিয়েছে। তাদের সিম আমি শ্রমিকদের নিকট বুঝিয়ে দিয়েছি। কিন্তু স্থানীয় চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে দেওয়া ৪২ জন শ্রমিকের সিম আমার হাতে ছিল না। তাই ওসব সিম না পেয়ে শ্রমিকরা আমার নিকট অভিযোগ করার পর আমি এ বিষয়ে চেয়ারম্যান সাহেবকে অবগত করেছি।

অপরদিকে সালুয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের দড়িগাঁও দক্ষিণ পাড়া গ্রামের মো. আলম মিয়ার স্ত্রী মোছা. রেহেনা বেগম (৪০) বলেন, ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মোছা. জামেনার ছেলে দড়িগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি মো. এমাদ মিয়া ৫ বছরের জন্য ৪০ দিনের মাটি কাটার নাম দেওয়ার কথা বলে আমার নিকট ১০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি বহুকষ্ট করে তাকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। তাহার চাহিদা অনুযায়ী আরও ৫ হাজার টাকা দিতে না পারায় ১৫ দিন কাজ করানোর পর এমাদ মিয়া বলে চেয়ারম্যান সাহেব আপনার নাম কেটে দিয়েছে। কাজের ফাঁকে সে আমাকে কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে ছবি তুলেছে, ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে ডাচ্ বাংলা অ্যাকাউন্ট খুলে সিমকার্ড তার জিম্মায় রেখে দিয়েছে। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. কামরুল ইসলাম আমাকে ৩ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা তারা আত্মসাত করেছে।

এছাড়া একই গ্রামের শহিদ মিয়ার স্ত্রী পারভীন বেগম (৩৫) বলেন, এমাদ মিয়া ৪০ দিনের মাটিকাটার তালিকায় আমার নাম দিয়ে কাজের ফাঁকে সে আমাকে কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে ছবি তুলেছে, ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে ডাচ্ বাংলা অ্যাকাউন্ট খুলে সিমকার্ড তার হাতে রেখে দিয়েছে। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. কামরুল ইসলাম আমাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছে। বাকি টাকা তারা আত্মসাত করেছে।

এ ব্যাপারে ২নং ওয়ার্ড সদস্য মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ৯ দিন কাজ করানোর পর দেখা যায়, প্রকল্পের নামের তালিকায় রেহেনা ও ডলিসহ কয়েকজনের নাম নেই। তারপরও তাদের কিছু টাকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাকে কত টাকা দেয়া হয়েছে তা সঠিক করে বলতে পারেননি সে।

অভিযোগ রয়েছে ২নং ওয়ার্ডের কাজের তালিকায় ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মোছা. জামেনার ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম (৩৫) এর নাম থাকলেও সে কোন কাজ না করেই ৪০ দিনের টাকা উত্তোলন করেছে এবং ওই প্রজেক্টের লেবার সর্দার আ. সাত্তার ও মুক্তার উদ্দিন মুক্তু স্বচ্ছল থাকা স্বত্ত্বেও তাদের নাম দিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সরেজমিনে, দড়িগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একাধিকবার গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের দপ্তরী মো. এমাদ মিয়া বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন না করে মা মোছা. জামেনার কাজকর্ম করতে বিভিন্ন সময় ইউনিয়ন পরিষদে কিংবা উপজেলায় দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে। এসব বিষয়ে এমাদ মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি মোছা. রেহেনা বেগমের নিকট থেকে টাকা নেওয়া কিংবা টাকা দাবি করার কথা অস্বীকার করে বলেন আমি বিদ্যালয়ের কাজে বাহিরে ছিলাম। এ ব্যাপারে ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মো. সোহেল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি শুক্কুর আলীকে মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, তার টাকা তাকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘শুনেছি এলাকার অতিদরিদ্র এবং মৌসুমি বেকার শ্রমিক পরিবারের জন্য সরকার ইজিপিপি প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ আমাদের মতো অতিদরিদ্র শ্রমিকদের প্রকল্পের কাজে নিয়োগ দেননি।’ অধিকাংশ স্বচ্ছল ব্যক্তি, দফাদার, চৌকিদার, ব্যবসায়ী এবং চেয়ারম্যান মেম্বারদের হিতাকাক্সক্ষীরা এ কাজের তালিকাভুক্ত হয়েছে। সঠিকভাবে তদন্ত করা হলে আসল সত্যতা বেরিয়ে আসবে। তারা তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

এসব বিষয়ে সালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কাইয়ুম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাজের তালিকা তৈরি করার সময় আমি গুরুতর অসুস্থ ছিলাম। প্রজেক্টের সভাপতিরা কিভাবে তালিকা করেছে কিংবা কাজ করিয়েছে তা আমি অবগত নই। এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আমি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

অপরদিকে ফরিদপুর ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম. আজিজুল্ল্যাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব ইনশাআল্লাহ।

এ ব্যাপারে কুলিয়ারচর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমি অবগত নই। কেউ যদি আমাদের নিকট লিখিত অভিযোগ করে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২২ , ০৪ বৈশাখ ১৪২৮ ১৫ রমাদ্বান ১৪৪৩

চল্লিশ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পে শ্রমিক নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ

প্রতিনিধি, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ফরিদপুর ও সালুয়া ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচি গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (ইজিপিপি) প্রকল্পে বরাদ্দ অনুযায়ী শ্রমিক নিয়োগ না দেওয়াসহ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

ফরিদপুর ও সালুয়া ইউপি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর ইউপিতে ইজিপিপির ৪টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ আসে ২১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা এবং সালুয়া ইউপিতে ইজিপিপির ৬টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ আসে ৪৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এ দুুটি ইউনিয়নে প্রকল্পের আওতায় ৪২৭ জন অতিদরিদ্র শ্রমিকের সুবিধা পাওয়ার কথা। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান।

কিন্তু উপজেলার ফরিদপুর ও সালুয়া ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রকল্পের তালিকায় সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা করে একাধিক দফাদার, চৌকিদার, প্রভাবশালী, ব্যবসায়ীসহ ইউপি সদস্যের ছেলে ও তাদের নিকটাত্মীয়দের নাম রয়েছে। তালিকাভুক্ত অধিকাংশ শ্রমিক কাজে অংশগ্রহণ না করলেও তাদের নামে ৪০ দিনের কাজ দেখিয়ে নির্ধারিত টাকা উত্তোলন করে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও লেবার সর্দারসহ প্রভাবশালীদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে একজনের নাম ব্যবহার করে অন্যজনের মোবাইল নাম্বারে একাউন্ট খুলে টাকা উত্তোলন করেছে। অভিযোগ রয়েছে শ্রমিকদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে তাদের নামে সিমকার্ড তুলে ও একাউন্ট খোলে অনেকের হাতে সিমকার্ড ও পাসওয়ার্ড না দিয়ে কাজ শেষ হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য, লেবার সর্দার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অফিসের প্রতিনিধি যৌথ যোগসাজশে টাকা তুলে শ্রমিকদের ন্যায্য টাকা না দিয়ে তারা আত্মসাত করেছে।

সরেজমিনে গিয়ে এমনও প্রমাণ পাওয়া গেছে সালুয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের তালিকায় থাকা লেবার সর্দার মো. খাইরুল ইসলাম স্থানীয় কোটিপতি ঠুলি মৌলভীর ছেলে। তার বিরুদ্ধে কাজ না করে টাকা উত্তোলনসহ নানান অভিযোগ রয়েছে। সে শ্রমিকদের সিমকার্ড নিজ হেফাজতে রেখে নিজে টাকা তুলে কিছু টাকা কর্তন করে রেখে দিয়েছে। বাকি টাকা শ্রমিকদের দিয়েছে। এ ব্যাপারে লেবার সর্দার মো. খাইরুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজে টাকা উত্তোলন করে শ্রমিকদের মাঝে বিতরণের কথা স্বীকার করলেও শ্রমিকদের মাঝে টাকা কম দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি নিয়মিত কাজে যাইনি তাই আমার কাছে কোন হাজিরা খাতা কিংবা লেবারদের তালিকা নেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি চেয়ারম্যানের লোক তাই কাজে না গিয়েও পুরো ৪০ দিনের টাকাই উত্তোলন করতে পেরেছি।

৩নং ওয়ার্ড প্রকল্পের সভাপতি সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মো. আলী আকবর বলেন, আমার প্রকল্পে মোট ৬৪ জন শ্রমিকের মধ্যে আমি ১৪ জনের নাম দিয়েছি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৫ জনের নাম দিয়েছে। ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ৩ জনের নাম দিয়েছে। তাদের সিম আমি শ্রমিকদের নিকট বুঝিয়ে দিয়েছি। কিন্তু স্থানীয় চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে দেওয়া ৪২ জন শ্রমিকের সিম আমার হাতে ছিল না। তাই ওসব সিম না পেয়ে শ্রমিকরা আমার নিকট অভিযোগ করার পর আমি এ বিষয়ে চেয়ারম্যান সাহেবকে অবগত করেছি।

অপরদিকে সালুয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের দড়িগাঁও দক্ষিণ পাড়া গ্রামের মো. আলম মিয়ার স্ত্রী মোছা. রেহেনা বেগম (৪০) বলেন, ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মোছা. জামেনার ছেলে দড়িগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি মো. এমাদ মিয়া ৫ বছরের জন্য ৪০ দিনের মাটি কাটার নাম দেওয়ার কথা বলে আমার নিকট ১০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি বহুকষ্ট করে তাকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। তাহার চাহিদা অনুযায়ী আরও ৫ হাজার টাকা দিতে না পারায় ১৫ দিন কাজ করানোর পর এমাদ মিয়া বলে চেয়ারম্যান সাহেব আপনার নাম কেটে দিয়েছে। কাজের ফাঁকে সে আমাকে কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে ছবি তুলেছে, ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে ডাচ্ বাংলা অ্যাকাউন্ট খুলে সিমকার্ড তার জিম্মায় রেখে দিয়েছে। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. কামরুল ইসলাম আমাকে ৩ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা তারা আত্মসাত করেছে।

এছাড়া একই গ্রামের শহিদ মিয়ার স্ত্রী পারভীন বেগম (৩৫) বলেন, এমাদ মিয়া ৪০ দিনের মাটিকাটার তালিকায় আমার নাম দিয়ে কাজের ফাঁকে সে আমাকে কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে ছবি তুলেছে, ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে ডাচ্ বাংলা অ্যাকাউন্ট খুলে সিমকার্ড তার হাতে রেখে দিয়েছে। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. কামরুল ইসলাম আমাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছে। বাকি টাকা তারা আত্মসাত করেছে।

এ ব্যাপারে ২নং ওয়ার্ড সদস্য মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ৯ দিন কাজ করানোর পর দেখা যায়, প্রকল্পের নামের তালিকায় রেহেনা ও ডলিসহ কয়েকজনের নাম নেই। তারপরও তাদের কিছু টাকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাকে কত টাকা দেয়া হয়েছে তা সঠিক করে বলতে পারেননি সে।

অভিযোগ রয়েছে ২নং ওয়ার্ডের কাজের তালিকায় ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মোছা. জামেনার ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম (৩৫) এর নাম থাকলেও সে কোন কাজ না করেই ৪০ দিনের টাকা উত্তোলন করেছে এবং ওই প্রজেক্টের লেবার সর্দার আ. সাত্তার ও মুক্তার উদ্দিন মুক্তু স্বচ্ছল থাকা স্বত্ত্বেও তাদের নাম দিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সরেজমিনে, দড়িগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একাধিকবার গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের দপ্তরী মো. এমাদ মিয়া বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন না করে মা মোছা. জামেনার কাজকর্ম করতে বিভিন্ন সময় ইউনিয়ন পরিষদে কিংবা উপজেলায় দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে। এসব বিষয়ে এমাদ মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি মোছা. রেহেনা বেগমের নিকট থেকে টাকা নেওয়া কিংবা টাকা দাবি করার কথা অস্বীকার করে বলেন আমি বিদ্যালয়ের কাজে বাহিরে ছিলাম। এ ব্যাপারে ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মো. সোহেল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি শুক্কুর আলীকে মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, তার টাকা তাকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘শুনেছি এলাকার অতিদরিদ্র এবং মৌসুমি বেকার শ্রমিক পরিবারের জন্য সরকার ইজিপিপি প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ আমাদের মতো অতিদরিদ্র শ্রমিকদের প্রকল্পের কাজে নিয়োগ দেননি।’ অধিকাংশ স্বচ্ছল ব্যক্তি, দফাদার, চৌকিদার, ব্যবসায়ী এবং চেয়ারম্যান মেম্বারদের হিতাকাক্সক্ষীরা এ কাজের তালিকাভুক্ত হয়েছে। সঠিকভাবে তদন্ত করা হলে আসল সত্যতা বেরিয়ে আসবে। তারা তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

এসব বিষয়ে সালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কাইয়ুম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাজের তালিকা তৈরি করার সময় আমি গুরুতর অসুস্থ ছিলাম। প্রজেক্টের সভাপতিরা কিভাবে তালিকা করেছে কিংবা কাজ করিয়েছে তা আমি অবগত নই। এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আমি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

অপরদিকে ফরিদপুর ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম. আজিজুল্ল্যাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব ইনশাআল্লাহ।

এ ব্যাপারে কুলিয়ারচর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমি অবগত নই। কেউ যদি আমাদের নিকট লিখিত অভিযোগ করে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।