৯৯৯-এ ফোন, মার খেল অভিযোগকারী, তিন পুলিশ বরখাস্ত

রাস্তার জায়গা নিয়ে বিরোধের জেরে দুই বাড়ির মালিকের মারামারিতে পঞ্চায়েত কমিটির প্রধানের মাথা ফাটিয়ে দেন এক বাড়ির মালিক। ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় মামলাও হয়। বিকেলে একই ইস্যুতে মারামারি শুরু হলে একপক্ষ জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে যখন জানতে পারে ফোনকারীরা মারামারি মামলার আসামি তখন উল্টো তাদেরই গ্রেপ্তার করতে যায়। আর এ সময় আসামিকে মারধর করার ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ঘটনায় অপেশাদার আচরণ করার অভিযোগে যাত্রাবাড়ী থানার ৩ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, সালিশ বৈঠকে মারামারির জেরে এবং বাড়ির রাস্তা নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রথম পক্ষ খায়ের আলমের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায় প্রতিবেশী নুরুল ইসলাম নামের আরেক বাড়ির মালিক। খায়ের আলমের বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তাকে নিজের জায়গা দাবি করে তা দখল করে মরিয়া হয়ে উঠে নুরুল ইসলাম। পরে ভুক্তভোগী খায়ের আলম জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে আইনি সহায়তা চান। জাতীয় জরুরি সেবা থেকে বিষয়টি যাত্রাবাড়ী থানায় জানানো হয়। যাত্রাবাড়ী থানার এসআই বিশ্বজিৎ সরকারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। নুরুল ইসলাম ও তার ভাড়া করা লোকজনকে খায়ের আলমের বাড়িতে ভাঙচুর করতে দেখেও কোন পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো হামলাকারী নুরুল

ইসলামের পক্ষ নেয় পুলিশ। খায়ের আলমের বাড়িতে ঢুকে বাড়ির মালিক খায়ের আলম ও তার ছেলে ও মেয়েকে মারধর শুরু করে পুলিশ। যা সিসি ক্যামেরা ফুটেজে রেকর্ড হয়। তাদের ধরে নিয়ে দেয়া হয় মামলা। পুলিশের সাজানো মামলায় খায়ের আলম ও তার দুই সন্তানকে যেতে হয় জেলে। সেখান থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করা হয়।

ভুক্তভোগী খায়ের আলমের অভিযোগ নুরুল ইসলাম ও তার চাচাতো ভাইদের ৪টি বাড়ি রয়েছে। সেই বাড়ির সামনে নিয়ে একটি রাস্তা যেটি সরকারি জায়গা। সেই রাস্তা ব্যবহার করেই তিনি তার বাড়িতে যাতায়াত করেন। নুরুল ইসলাম তার বাড়ির রাস্তার সরকারি জায়গা নিজের দাবি করে আসছিলেন। এ নিয়ে বিরোধে নুরুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা তার বাড়ির পানির লাইন কেটে দেন এবং তার বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা দেয়াল দিয়ে আটকে দেন পুলিশের সহযোগিতায়। ঘটনার দিন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে সহযোগিতা চাইলে উল্টো নির্যাতন ও মামলা মিলে। তাকে ও তার দুই ছেলে-মেয়েকে মারধর করে মামলা দিয়ে জেলে পাঠায় পুলিশ।

তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে তিনি ও তার বাড়ির ১৬টি পরিবার পানি পাচ্ছেন না। রাস্তা ব্যবহার করতে পারছেন না। তাদের চলাচলের রাস্তায় পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে দেয়াল তুলে দিয়েছে নুরুল ইসলাম।

সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ী থানার এসআই বিশ্বজিৎ দাসের নেতৃত্বে কনস্টেবল শওকত, নারী কনস্টেবল নবনিত এবং এক আনসার সদস্য মিলে টেনে হেঁচরে মারধর করতে করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে খায়ের আলম, তার মেয়ে ও ছেলেকে। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ সংবাদকে জানান, দুই পক্ষের মধ্যে রাস্তার জায়গা নিয়ে বিরোধে সকালে স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটি সালিশ ডাকে। সেই সালিশে মারামারি হলে ৯৯৯ ফোনকারী খায়ের আলমের পক্ষের সঙ্গে মারামারি হয়। সেই মারামারিতে পঞ্চায়েত কমিটির প্রধানের মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়। বিকেলে আবার একই ইস্যুতে মারামারি শুরু হলে পঞ্চায়েত কমিটির প্রধানের মাথা ফাটানোর ঘটনায় এলাকার লোকজন একত্রিত হয়। তখন পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে খায়ের আলমসহ মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে যায়। ওই সময় খায়ের আলমসহ আসামিরা পুলিশের কলার টেনে বোতাম ছিড়ে ফেলে এবং গালাগাল করে। মেজাজ ধরে না রাখতে পেরে পুলিশ তখন অপেশাদার আচরণ করে।

ডিসি শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় এক এসআই ও দুই কনস্টেবলকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে এক আনসার সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তাকে আনসার বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ওয়ারি বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) কামরুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২২ , ০৪ বৈশাখ ১৪২৮ ১৫ রমাদ্বান ১৪৪৩

৯৯৯-এ ফোন, মার খেল অভিযোগকারী, তিন পুলিশ বরখাস্ত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাস্তার জায়গা নিয়ে বিরোধের জেরে দুই বাড়ির মালিকের মারামারিতে পঞ্চায়েত কমিটির প্রধানের মাথা ফাটিয়ে দেন এক বাড়ির মালিক। ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় মামলাও হয়। বিকেলে একই ইস্যুতে মারামারি শুরু হলে একপক্ষ জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে যখন জানতে পারে ফোনকারীরা মারামারি মামলার আসামি তখন উল্টো তাদেরই গ্রেপ্তার করতে যায়। আর এ সময় আসামিকে মারধর করার ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ঘটনায় অপেশাদার আচরণ করার অভিযোগে যাত্রাবাড়ী থানার ৩ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, সালিশ বৈঠকে মারামারির জেরে এবং বাড়ির রাস্তা নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রথম পক্ষ খায়ের আলমের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায় প্রতিবেশী নুরুল ইসলাম নামের আরেক বাড়ির মালিক। খায়ের আলমের বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তাকে নিজের জায়গা দাবি করে তা দখল করে মরিয়া হয়ে উঠে নুরুল ইসলাম। পরে ভুক্তভোগী খায়ের আলম জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে আইনি সহায়তা চান। জাতীয় জরুরি সেবা থেকে বিষয়টি যাত্রাবাড়ী থানায় জানানো হয়। যাত্রাবাড়ী থানার এসআই বিশ্বজিৎ সরকারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। নুরুল ইসলাম ও তার ভাড়া করা লোকজনকে খায়ের আলমের বাড়িতে ভাঙচুর করতে দেখেও কোন পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো হামলাকারী নুরুল

ইসলামের পক্ষ নেয় পুলিশ। খায়ের আলমের বাড়িতে ঢুকে বাড়ির মালিক খায়ের আলম ও তার ছেলে ও মেয়েকে মারধর শুরু করে পুলিশ। যা সিসি ক্যামেরা ফুটেজে রেকর্ড হয়। তাদের ধরে নিয়ে দেয়া হয় মামলা। পুলিশের সাজানো মামলায় খায়ের আলম ও তার দুই সন্তানকে যেতে হয় জেলে। সেখান থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করা হয়।

ভুক্তভোগী খায়ের আলমের অভিযোগ নুরুল ইসলাম ও তার চাচাতো ভাইদের ৪টি বাড়ি রয়েছে। সেই বাড়ির সামনে নিয়ে একটি রাস্তা যেটি সরকারি জায়গা। সেই রাস্তা ব্যবহার করেই তিনি তার বাড়িতে যাতায়াত করেন। নুরুল ইসলাম তার বাড়ির রাস্তার সরকারি জায়গা নিজের দাবি করে আসছিলেন। এ নিয়ে বিরোধে নুরুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা তার বাড়ির পানির লাইন কেটে দেন এবং তার বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা দেয়াল দিয়ে আটকে দেন পুলিশের সহযোগিতায়। ঘটনার দিন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে সহযোগিতা চাইলে উল্টো নির্যাতন ও মামলা মিলে। তাকে ও তার দুই ছেলে-মেয়েকে মারধর করে মামলা দিয়ে জেলে পাঠায় পুলিশ।

তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে তিনি ও তার বাড়ির ১৬টি পরিবার পানি পাচ্ছেন না। রাস্তা ব্যবহার করতে পারছেন না। তাদের চলাচলের রাস্তায় পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে দেয়াল তুলে দিয়েছে নুরুল ইসলাম।

সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ী থানার এসআই বিশ্বজিৎ দাসের নেতৃত্বে কনস্টেবল শওকত, নারী কনস্টেবল নবনিত এবং এক আনসার সদস্য মিলে টেনে হেঁচরে মারধর করতে করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে খায়ের আলম, তার মেয়ে ও ছেলেকে। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ সংবাদকে জানান, দুই পক্ষের মধ্যে রাস্তার জায়গা নিয়ে বিরোধে সকালে স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটি সালিশ ডাকে। সেই সালিশে মারামারি হলে ৯৯৯ ফোনকারী খায়ের আলমের পক্ষের সঙ্গে মারামারি হয়। সেই মারামারিতে পঞ্চায়েত কমিটির প্রধানের মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়। বিকেলে আবার একই ইস্যুতে মারামারি শুরু হলে পঞ্চায়েত কমিটির প্রধানের মাথা ফাটানোর ঘটনায় এলাকার লোকজন একত্রিত হয়। তখন পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে খায়ের আলমসহ মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে যায়। ওই সময় খায়ের আলমসহ আসামিরা পুলিশের কলার টেনে বোতাম ছিড়ে ফেলে এবং গালাগাল করে। মেজাজ ধরে না রাখতে পেরে পুলিশ তখন অপেশাদার আচরণ করে।

ডিসি শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় এক এসআই ও দুই কনস্টেবলকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে এক আনসার সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তাকে আনসার বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ওয়ারি বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) কামরুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।