সাংগ্রাই জল উৎসবের মধ্য দিয়ে শেষ হলো পাহাড়ি সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ

মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই জল উৎসবের আয়োজনের মধ্য দিয়ে গতকাল পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি সম্প্রদায়ের প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু শেষ হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার থেকে নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে পার্বত্য রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় বসবাসরত ১১ ভাষাভাষী ১৫টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু শুরু হয়।

মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থার (মাসস) কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে রাঙামাটির বেতবুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সাংগ্রাই জল উৎসবের উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি ছিলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি। মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থার (মাসস) সভাপতি অংসু প্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটি বিজিবির সদর সেক্টর কমান্ডার উপমহাপরিচালক কর্নেল মো. তরিকুল ইসলাম, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার মীর

মোদদাছছের হোসেন, রাঙামাটি সদর জোন কমান্ডার লে. কর্নেল বিএম আশিকুর রহমান, আর্মি সিকিউরিটি ইউনিট রাঙামাটি শাখার ডেট কমান্ডার লে. কর্নেল মেছবাহুল আলম সেলিম (পিএসসি), রাঙামাটি জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মউসিং মারমা। স্বাগত বক্তব্যে দেন মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থার নেতা এসএম চৌধুরী।

আলোচনা সভা শেষে ঐতিহ্যবাহী মং (ঘণ্টা) বাজিয়ে ও ফিতা কেটে জল উৎসবের উদ্বোধন করেন দীপংকর তালুকদার। এরপর মারমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে একে অন্যকে জল ছিটিয়ে জল উৎসবে মেতে ওঠেন। পাশাপাশি চলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংগ্রাই উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পানি খেলা দেখার জন্য হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর উৎসবস্থলে সমবেত হয়। এ উৎসব দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন। সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে এ উৎসব পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ও বাঙালির মিলনমেলায় পরিণত হয়। আলোচনা সভা শেষে মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে মারমা সম্প্রদায়ের বিশ^বিদ্যালয়পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীদের মেধাবৃত্তি প্রদান করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে দীপংকর তালুকদার এমপি বলেন, পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মারমা জনগোষ্ঠী সাংগ্রাই জল উৎসব উদযাপন করে থাকেন। এ উৎসবটি সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেই সঙ্গে কিছুটা ধর্মীয় অনুভূতিও এর সঙ্গে মিশে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিসত্তাদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই ধারা অব্যাহত রেখে মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা সম্প্রদায়েরর পঞ্চম শ্রেণী পর্ষন্ত মাতৃভাষা চালুসহ নিজেদের সংস্কৃতি বিকশিত হওয়ার জন্য কার্যক্রমের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

জনশ্রুতি রয়েছে, এ জল উৎসবের মাধ্যমে মারমা তরুণ-তরুণীদের একে অন্যের সাহচর্যে আসার সুযোগ হয়। এ সময় তারা তাদের প্রিয় মানুষটিকে বেছে নেয়ার কাজটিও সফলভাবে করে নেন।

আলোচনা সভা শেষে মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে মারমা সম্প্রদায়ের বিশ^বিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের মেধাবৃত্তি প্রদান করা হয়।

রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২২ , ০৪ বৈশাখ ১৪২৮ ১৫ রমাদ্বান ১৪৪৩

সাংগ্রাই জল উৎসবের মধ্য দিয়ে শেষ হলো পাহাড়ি সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পার্বত্যাঞ্চল

image

পাহাড়ি সম্প্রদায়ের জল উৎসব

মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই জল উৎসবের আয়োজনের মধ্য দিয়ে গতকাল পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি সম্প্রদায়ের প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু শেষ হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার থেকে নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে পার্বত্য রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় বসবাসরত ১১ ভাষাভাষী ১৫টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু শুরু হয়।

মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থার (মাসস) কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে রাঙামাটির বেতবুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সাংগ্রাই জল উৎসবের উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি ছিলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি। মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থার (মাসস) সভাপতি অংসু প্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটি বিজিবির সদর সেক্টর কমান্ডার উপমহাপরিচালক কর্নেল মো. তরিকুল ইসলাম, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার মীর

মোদদাছছের হোসেন, রাঙামাটি সদর জোন কমান্ডার লে. কর্নেল বিএম আশিকুর রহমান, আর্মি সিকিউরিটি ইউনিট রাঙামাটি শাখার ডেট কমান্ডার লে. কর্নেল মেছবাহুল আলম সেলিম (পিএসসি), রাঙামাটি জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মউসিং মারমা। স্বাগত বক্তব্যে দেন মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থার নেতা এসএম চৌধুরী।

আলোচনা সভা শেষে ঐতিহ্যবাহী মং (ঘণ্টা) বাজিয়ে ও ফিতা কেটে জল উৎসবের উদ্বোধন করেন দীপংকর তালুকদার। এরপর মারমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে একে অন্যকে জল ছিটিয়ে জল উৎসবে মেতে ওঠেন। পাশাপাশি চলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংগ্রাই উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পানি খেলা দেখার জন্য হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর উৎসবস্থলে সমবেত হয়। এ উৎসব দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন। সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে এ উৎসব পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ও বাঙালির মিলনমেলায় পরিণত হয়। আলোচনা সভা শেষে মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে মারমা সম্প্রদায়ের বিশ^বিদ্যালয়পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীদের মেধাবৃত্তি প্রদান করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে দীপংকর তালুকদার এমপি বলেন, পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মারমা জনগোষ্ঠী সাংগ্রাই জল উৎসব উদযাপন করে থাকেন। এ উৎসবটি সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেই সঙ্গে কিছুটা ধর্মীয় অনুভূতিও এর সঙ্গে মিশে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিসত্তাদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই ধারা অব্যাহত রেখে মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা সম্প্রদায়েরর পঞ্চম শ্রেণী পর্ষন্ত মাতৃভাষা চালুসহ নিজেদের সংস্কৃতি বিকশিত হওয়ার জন্য কার্যক্রমের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

জনশ্রুতি রয়েছে, এ জল উৎসবের মাধ্যমে মারমা তরুণ-তরুণীদের একে অন্যের সাহচর্যে আসার সুযোগ হয়। এ সময় তারা তাদের প্রিয় মানুষটিকে বেছে নেয়ার কাজটিও সফলভাবে করে নেন।

আলোচনা সভা শেষে মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে মারমা সম্প্রদায়ের বিশ^বিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের মেধাবৃত্তি প্রদান করা হয়।