করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ডায়রিয়া পরিস্থিতির ক্রমাবনতি হচ্ছে

করোনার মহামারী থেকে কিছুটা স্বস্তি লাভের মধ্যেই সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে ডায়রিয়া পরিস্থিতির ক্রমাবনতি জনজীবনে নতুন সংকট তৈরী করেছে। চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনেই সরকারি হিসেবে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ হিসেব শুধুমাত্র সরকারি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা ডায়রিয়া রোগীদের। এর অন্তত দ্বিগুন ডায়রিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকসহ চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হয়ে ঘরে চিকিৎসা নিয়েছেন।

গত তিন মাসে এই অঞ্চলে প্রায় ২৩ হাজার মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হলেও গত ১৫ দিনেই আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। গতবছরও মার্চ থেকে জুলাই মাসের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭০ হাজার ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করেন। এরমধ্যে মৃত্যু হয় প্রায় ২৫ জনের।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হুমায়ুন শাহিন খানের মতে, এবারও দুষিত পানি পানসহ দুঃসহ গরমের সঙ্গে অনাবৃষ্টি দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া বিস্তৃতির অন্যতম কারণ। তার মতে এ অঞ্চলে ৪১৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। পাশাপাশি প্রায় ২ লাখ ব্যাগ আইভি স্যালাইন ছাড়াও খাবার স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের মজুত রয়েছে। কেউ সরকারি হাসপাতালসহ চিকিৎসা কেন্দ্রে এলে বিনা চিকিৎসায় ফিরে যাবেনা বলেও জানান তিনি।

তবে এবার এখনও ঢাকার আইসিডিডিআরবির কোন কারিগরি অনুসন্ধানী দল দক্ষিণাঞ্চলে আসেনি। বিভাগীয় পরিচালকের মতে, গত বছরের সব লক্ষণসমুহ নিয়েই মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে সেভাবেই চিকিৎসায় সাড়া মিলছে।

অসমর্থিত সূত্রে এবার পটুয়াখালীতে দুজন ডায়রিয়া আক্রান্তের মুত্যুর কথা বলা হলেও স্বাস্থ্য বিভাগ তা স্বীকার করেনি। তবে মৃত্যুর সংখ্যা না বড়লেও আক্রান্তের সংখ্যা গত ১৫দিনে আগের তুলনায় দ্রুত বাড়ছে। চলতি মাসের শুরু থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা দ্রত বেড়ে চলেছে। এখন ২৪ ঘন্টায় আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৩শ থেকে ৪শর কোটায়। ১ এপ্রিলের পূর্বে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হলেও ১ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে আরও ১০ হাজার বেড়ে মোট ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা এখন ২২ হাজার ৫শর ওপরে। এখনও বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালীর পরিস্থিতি নাজুক। গত ৩

মাসে সর্বমোট আক্রান্ত সাড়ে ২২ হাজারের মধ্যে বরিশালেই সংখ্যাটা প্রায় ৮ হাজারের কাছে। ভোলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার এবং পাটুযাখালীতেও ৪ হাজারের কাছে। এছাড়া পিরোজপুরে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার, বরগুনাতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার হলেও গত ৪৮ ঘণ্টায়ই আরও শতাধিক আক্রান্ত হয়েছেন। ঝালকাঠিতেও এ পর্যন্ত প্রায় ১৮শ আক্রান্ত হলেও গত ৪৮ ঘণ্টায় নতুন করে পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত এক সপ্তাহে ভোলা, পিরোজপুর ও বরগুনায় পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলায়ই এখন ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ৩০টি উপজেলায় রোগীর সংখ্যা বেশী। গত ৩ মাসে ডায়রিয়া আক্রান্ত সাড়ে ২২ হাজারের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রায় ২২ হাজার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ অবিলম্বে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্র ডায়রিয়া সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারনার পাশাপাশি সর্বত্র বিশুদ্ধ পানি সরবারহের বিষয়টি নিবিঢ় তদারকিতে রাখার তাগিদ দিয়েছেন। একই সঙ্গে রোজাদারসহ সকলকেই বাসি এবং সব ধারনের ভাজা-পোড়া খাবার এড়িয়ে চলার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি পান ও শরীরের জন্য সহনীয় খাবার গ্রহনের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকগণ।

রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২২ , ০৪ বৈশাখ ১৪২৮ ১৫ রমাদ্বান ১৪৪৩

করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ডায়রিয়া পরিস্থিতির ক্রমাবনতি হচ্ছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

করোনার মহামারী থেকে কিছুটা স্বস্তি লাভের মধ্যেই সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে ডায়রিয়া পরিস্থিতির ক্রমাবনতি জনজীবনে নতুন সংকট তৈরী করেছে। চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনেই সরকারি হিসেবে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ হিসেব শুধুমাত্র সরকারি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা ডায়রিয়া রোগীদের। এর অন্তত দ্বিগুন ডায়রিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকসহ চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হয়ে ঘরে চিকিৎসা নিয়েছেন।

গত তিন মাসে এই অঞ্চলে প্রায় ২৩ হাজার মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হলেও গত ১৫ দিনেই আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। গতবছরও মার্চ থেকে জুলাই মাসের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭০ হাজার ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করেন। এরমধ্যে মৃত্যু হয় প্রায় ২৫ জনের।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হুমায়ুন শাহিন খানের মতে, এবারও দুষিত পানি পানসহ দুঃসহ গরমের সঙ্গে অনাবৃষ্টি দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া বিস্তৃতির অন্যতম কারণ। তার মতে এ অঞ্চলে ৪১৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। পাশাপাশি প্রায় ২ লাখ ব্যাগ আইভি স্যালাইন ছাড়াও খাবার স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের মজুত রয়েছে। কেউ সরকারি হাসপাতালসহ চিকিৎসা কেন্দ্রে এলে বিনা চিকিৎসায় ফিরে যাবেনা বলেও জানান তিনি।

তবে এবার এখনও ঢাকার আইসিডিডিআরবির কোন কারিগরি অনুসন্ধানী দল দক্ষিণাঞ্চলে আসেনি। বিভাগীয় পরিচালকের মতে, গত বছরের সব লক্ষণসমুহ নিয়েই মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে সেভাবেই চিকিৎসায় সাড়া মিলছে।

অসমর্থিত সূত্রে এবার পটুয়াখালীতে দুজন ডায়রিয়া আক্রান্তের মুত্যুর কথা বলা হলেও স্বাস্থ্য বিভাগ তা স্বীকার করেনি। তবে মৃত্যুর সংখ্যা না বড়লেও আক্রান্তের সংখ্যা গত ১৫দিনে আগের তুলনায় দ্রুত বাড়ছে। চলতি মাসের শুরু থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা দ্রত বেড়ে চলেছে। এখন ২৪ ঘন্টায় আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৩শ থেকে ৪শর কোটায়। ১ এপ্রিলের পূর্বে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হলেও ১ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে আরও ১০ হাজার বেড়ে মোট ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা এখন ২২ হাজার ৫শর ওপরে। এখনও বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালীর পরিস্থিতি নাজুক। গত ৩

মাসে সর্বমোট আক্রান্ত সাড়ে ২২ হাজারের মধ্যে বরিশালেই সংখ্যাটা প্রায় ৮ হাজারের কাছে। ভোলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার এবং পাটুযাখালীতেও ৪ হাজারের কাছে। এছাড়া পিরোজপুরে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার, বরগুনাতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার হলেও গত ৪৮ ঘণ্টায়ই আরও শতাধিক আক্রান্ত হয়েছেন। ঝালকাঠিতেও এ পর্যন্ত প্রায় ১৮শ আক্রান্ত হলেও গত ৪৮ ঘণ্টায় নতুন করে পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত এক সপ্তাহে ভোলা, পিরোজপুর ও বরগুনায় পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলায়ই এখন ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ৩০টি উপজেলায় রোগীর সংখ্যা বেশী। গত ৩ মাসে ডায়রিয়া আক্রান্ত সাড়ে ২২ হাজারের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রায় ২২ হাজার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ অবিলম্বে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্র ডায়রিয়া সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারনার পাশাপাশি সর্বত্র বিশুদ্ধ পানি সরবারহের বিষয়টি নিবিঢ় তদারকিতে রাখার তাগিদ দিয়েছেন। একই সঙ্গে রোজাদারসহ সকলকেই বাসি এবং সব ধারনের ভাজা-পোড়া খাবার এড়িয়ে চলার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি পান ও শরীরের জন্য সহনীয় খাবার গ্রহনের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকগণ।