পশ্চিমবঙ্গ উপনির্বাচনে ধরাশায়ী বিজেপি, তৃণমূলের জয়

পশ্চিমবঙ্গে উপনির্বাচনেও ফের বিজেপির শোচনীয় পরাজয় দেখলো রাজ্যবাসী। এমনকি বালিগঞ্জে বিধানসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থীর জামানাত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

আসানসোলে প্রায় দুই লাখ ভোটে জেতা আসন এবার বিজেপি হেরেছে প্রায় তিন লাখ ভোটে। এছাড়া বালিগঞ্জে বিজেপি দ্বিতীয় স্থান থেকে চলে গিয়েছে তৃতীয় স্থানে। আর দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসলো সিপিএম তথা বামদল। মূলত একুশের নির্বাচনের পর থেকেই সিপিএম তথা বামদল ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা খুঁজছিল। এর জন্য তারা অনেকগুলো পদক্ষেপ হাতে নিয়েছিল। তাদের ওই নির্ধারিত কৌশল কাজে লাগিয়েই অনেকটা সফলতা পায় তারা। বালিগঞ্জ বিধান সভা ও আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচন ও এরআগে পুরসভা নির্বাচনেও বিজেপিকে টপকে সেই রাস্তায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে সিপিএম। সিপিএম হারানো ভোটব্যাংক ফেরাতে সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি তাদের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত কলকাতার বুকে সিপিএমকে ফেরার রাস্তা দেখিয়েছে। সেই রাস্তা ধরেই বিজেপিকে টপকে সিপিএম হয়ে উঠেছে তৃণমূলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকে থাবা বসিয়েই সিপিএম আবার বাংলায় প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে চলেছে।

কলকাতায় যে বিজেপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সুকান্ত মজুমদারের কথায় বালিগঞ্জ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বিধানসভা কেন্দ্র। এখানে প্রায় ৪৫ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। এই ভোট পুরোটাই তৃণমূলের দখলে ছিল। এখন যদি তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকে

ফাটল ধরে, সেটা যে সিপিএম তথা বাম বা কংগ্রেসের দিকেই যাবে বলাই যায়। সেই ভোট কখনই বিজেপির দিক আসবে না। তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকে ধস নামতে শুরু করেছে, তাই সিপিএম সেই ভোট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বলে সুকান্ত মজুমদারের ব্যাখ্যা।

তবে সিপিএমের ইতিহাসে সম্প্রতি এই প্রথম কোন সংখ্যালঘু মুখ মুহাম্মদ সেলিমকে রাজ্য সিপিএমের সম্পাদক করা হয়েছে। তারপর থেকে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বিশেষভাবে নজর দিয়েছে সিপিএম। রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্পৃক্ত যেকোন ইস্যু হলেই, তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। যেমন আনিস খানের মৃত্যুরহস্য বা রামপুরহাটের বগটুইকা-, সিপিএম ছুটে গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে সিপিএম।

আর বালিগঞ্জে সংখ্যালঘু ৪৫ শতাংশ ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি প্রচারে গিয়ে মানুষকে তারা বুঝিয়েছেন। বাবুল সুপ্রিয়ের বিজেপি-যোগ টেনে আনা হয়েছে যেমন, তেমনই সিপিএম সায়রা হালিমের মুখকে ব্যবহার করে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছে বালিগঞ্জে। ফলে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটে ভাগ বসাতে সফল হয়েছে বামেরা। যে ভোটটা বাম থেকে তৃণমূলে গিয়েছিল, সেটা আবার বামে ফিরে এসেছে, তাও বলা যায়।

বালিগঞ্জে বাবুলের লড়াই সহজ হলেও আসানসোলে শত্রুঘœ সিনহার লড়াই সহজ ছিল না। কারণ ২০১৪ ও ২০১৯ লোকসভা ভোটে এখানে জিতেছিল বিজেপি। বাবুল সুপ্রিয়ই টানা দু’বার জয় পান। এই প্রথম আসানসোলে জয় তুলে নিল তৃণমূল। জয়ের পর শত্রুঘœ সিনহা বলেছেন, ‘আসানসোলবাসীকে ধন্যবাদ। তৃণমূল নেতৃত্বকে ধন্যবাদ। এই জয়ের মূল কারিগর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।’

রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২২ , ০৪ বৈশাখ ১৪২৮ ১৫ রমাদ্বান ১৪৪৩

পশ্চিমবঙ্গ উপনির্বাচনে ধরাশায়ী বিজেপি, তৃণমূলের জয়

দীপক মুখার্জী, কলকাতা

পশ্চিমবঙ্গে উপনির্বাচনেও ফের বিজেপির শোচনীয় পরাজয় দেখলো রাজ্যবাসী। এমনকি বালিগঞ্জে বিধানসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থীর জামানাত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

আসানসোলে প্রায় দুই লাখ ভোটে জেতা আসন এবার বিজেপি হেরেছে প্রায় তিন লাখ ভোটে। এছাড়া বালিগঞ্জে বিজেপি দ্বিতীয় স্থান থেকে চলে গিয়েছে তৃতীয় স্থানে। আর দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসলো সিপিএম তথা বামদল। মূলত একুশের নির্বাচনের পর থেকেই সিপিএম তথা বামদল ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা খুঁজছিল। এর জন্য তারা অনেকগুলো পদক্ষেপ হাতে নিয়েছিল। তাদের ওই নির্ধারিত কৌশল কাজে লাগিয়েই অনেকটা সফলতা পায় তারা। বালিগঞ্জ বিধান সভা ও আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচন ও এরআগে পুরসভা নির্বাচনেও বিজেপিকে টপকে সেই রাস্তায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে সিপিএম। সিপিএম হারানো ভোটব্যাংক ফেরাতে সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি তাদের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত কলকাতার বুকে সিপিএমকে ফেরার রাস্তা দেখিয়েছে। সেই রাস্তা ধরেই বিজেপিকে টপকে সিপিএম হয়ে উঠেছে তৃণমূলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকে থাবা বসিয়েই সিপিএম আবার বাংলায় প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে চলেছে।

কলকাতায় যে বিজেপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সুকান্ত মজুমদারের কথায় বালিগঞ্জ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বিধানসভা কেন্দ্র। এখানে প্রায় ৪৫ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। এই ভোট পুরোটাই তৃণমূলের দখলে ছিল। এখন যদি তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকে

ফাটল ধরে, সেটা যে সিপিএম তথা বাম বা কংগ্রেসের দিকেই যাবে বলাই যায়। সেই ভোট কখনই বিজেপির দিক আসবে না। তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকে ধস নামতে শুরু করেছে, তাই সিপিএম সেই ভোট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বলে সুকান্ত মজুমদারের ব্যাখ্যা।

তবে সিপিএমের ইতিহাসে সম্প্রতি এই প্রথম কোন সংখ্যালঘু মুখ মুহাম্মদ সেলিমকে রাজ্য সিপিএমের সম্পাদক করা হয়েছে। তারপর থেকে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বিশেষভাবে নজর দিয়েছে সিপিএম। রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্পৃক্ত যেকোন ইস্যু হলেই, তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। যেমন আনিস খানের মৃত্যুরহস্য বা রামপুরহাটের বগটুইকা-, সিপিএম ছুটে গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে সিপিএম।

আর বালিগঞ্জে সংখ্যালঘু ৪৫ শতাংশ ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি প্রচারে গিয়ে মানুষকে তারা বুঝিয়েছেন। বাবুল সুপ্রিয়ের বিজেপি-যোগ টেনে আনা হয়েছে যেমন, তেমনই সিপিএম সায়রা হালিমের মুখকে ব্যবহার করে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছে বালিগঞ্জে। ফলে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটে ভাগ বসাতে সফল হয়েছে বামেরা। যে ভোটটা বাম থেকে তৃণমূলে গিয়েছিল, সেটা আবার বামে ফিরে এসেছে, তাও বলা যায়।

বালিগঞ্জে বাবুলের লড়াই সহজ হলেও আসানসোলে শত্রুঘœ সিনহার লড়াই সহজ ছিল না। কারণ ২০১৪ ও ২০১৯ লোকসভা ভোটে এখানে জিতেছিল বিজেপি। বাবুল সুপ্রিয়ই টানা দু’বার জয় পান। এই প্রথম আসানসোলে জয় তুলে নিল তৃণমূল। জয়ের পর শত্রুঘœ সিনহা বলেছেন, ‘আসানসোলবাসীকে ধন্যবাদ। তৃণমূল নেতৃত্বকে ধন্যবাদ। এই জয়ের মূল কারিগর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।’