টাঙ্গাইল শহরে পানির তীব্র সংকট : ভোগান্তিতে পৌরবাসী

টাঙ্গাইল পৌরসভার সরবরাহকৃত পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের গ্রাহকরা। বিল বকেয়া না থাকা সত্ত্বেও সরবরাহের পানি না পাওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। চলমান পরিস্থিতির ফলে ইতোমধ্যেই দুই হাজার ৬০ জন গ্রাহক পানির সংযোগ কর্তন করেছেন।

টাঙ্গাইল পৌরসভার পানি সরবরাহ কেন্দ্রের তথ্যে জানা যায়, মোট গ্রাহক সংখ্যা ৭ হাজার ৭০৩ জন। প্রতিটি সংযোগের ব্যাস অনুযায়ী বিল রয়েছে। এর মধ্যে হাফ ইঞ্চি ব্যাসের সংযোগ ফি ২৫০ টাকা, পৌনে এক ইঞ্চি ব্যাসের বিল ৬০০ টাকা আর এক ইঞ্চি ব্যাসের সংযোগ ফি এক হাজার ৬০০ টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যাসের কর্তনকৃত সংযোগের সংখ্যা ২ হাজার ৬০টি। শোধনাগার সংখ্যা ৩টি। প্রতিটির মজুদ পানির পরিমাণ ৩০ লাখ লিটার। মোট মজুদ পানির পরিমাণ ৯০ লাখ লিটার। প্রতিদিনের পানির চাহিদা ২ কোটি ৫০ লাখ লিটার। সরবরাহ হচ্ছে গড়ে ৮০ লাখ লিটার। ঘাটতি পানির পরিমাণ এক কোটি ৭০ লাখ লিটার। কেন্দ্রের তথ্যে আরও জানা যায়, হাল সালের বেসরকারি পাওনা এক কোটি ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৭৬০ টাকা। আর সরকারি পাওনা এক কোটি ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪৪ টাকা।

সরেজমিন শহরের দেওলা, কোদালিয়া, কলেজপাড়া, বটতলা, তালতলা, আকুরটাকুর পাড়া, আদালতপাড়া, থানাপাড়া ও বাজিতপুর সাহাপাড়ার বাসিন্দাদের বক্তব্যে পানি সংকটের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের অভিযোগ, ওই এলাকার গ্রাহকরা প্রায় সপ্তাহখানেক যাবত চরম পানি সংকটে রয়েছেন। কিছু বাড়ি পানি পেলেও সারাদিনে ভর্তি হচ্ছে না এক বালতি পানি। স্থানীয় কাউন্সিলরদের অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। দেখা গেছে, বাজিতপুর সাহাপাড়ার বাসিন্দা গৌতম সাহা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত এক হাজার ৮০০ টাকা পরিশোধ করেছেন। এরপরও সরবরাহের পানি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন তিনি।

বাজিতপুর সাহাপাড়ার গৃহপরিচারিকা মায়া সাহা অভিযোগ করে বলেন, গত চার-পাঁচদিন যাবত একবারের জন্যও জল পাচ্ছেন না তারা। যার ফলে হাউজে এক ফোটা জলও নেই। প্রতিবেশীদের বাসা-বাড়ি থেকে টিউবওয়েলের জল এনে কাজ করতে হচ্ছে। জল না থাকার কারণে তাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। বাড়ির মালিক দাদাকে সমস্যার কথা জানিয়েছি। একই এলাকার জয়া সাহা বলেন, পৌরসভার সরবরাহের পানি বাবদ প্রতি মাসে ২৫০ টাকা বিল দিচ্ছি। এরপরও অনেকদিন যাবত স্বাভাবিকভাবে জল পাচ্ছি না আমরা।

এর মধ্যে মাঝে মাঝে কিছু জল পাওয়া গেলেও এখন প্রায় সপ্তাহখানেক যাবত একবারেই জল পাচ্ছি না। এ কারণে কষ্ট হলেও অন্যের বাড়ি থেকে জল এনে বাড়ি ঘরের কাজ করতে হচ্ছে। লক্ষ্মী দত্ত বলেন, ২৪ ঘণ্টায় এক বালতি পানিও পাচ্ছেন না তারা।

এরপরও প্রতিমাসে ২৫০ টাকা বিল দিতে হচ্ছে আমাদের। সাহাপাড়া এলাকার বাসিন্দা গৌতম সাহার ছেলে দেবাশীষ সাহা অপু বলেন, এলাকায় পৌরসভার পানি সরবরাহের প্রায় শতাধিক সংযোগ রয়েছে। গত পাঁচ-ছয়দিন যাবত সরবরাহের একটু পানিও পাচ্ছি না আমরা। টিউবওয়েলের পানি দিয়ে চলছে বাসা-বাড়ির কাজ। আমরা লিখিতভাবে কাউকে কোন অভিযোগ না করলেও ভীষণ সমস্যা ভোগ করছি। সরবরাহের পানি বাবদ প্রতিমাসে ৬০০ টাকা বিল দিচ্ছি আমি।

পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মামুন বাদশা বলেন, আমি ভীষণ অসুস্থ, ঢাকায় চিকিৎসারত থাকায় বিষয়টি আমার জানা নেই।

পানি সরবরাহ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী এ.এইচ.এম জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, গ্রাহক চাহিদার তুলনায় আমাদের ঘাটতি পানির পরিমাণ এক কোটি ৭০ লাখ লিটার। এরই মধ্যে শুষ্ক মৌসুমে পানির লেয়ার আরও নিচে নেমে যাওয়ায় পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

টাঙ্গাইল জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলী ইবনে মায়াজ প্রামানিক জানান, টাঙ্গাইল পৌরসভার পানি সরবরাহের জন্য দুটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (শোধনাগার) নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সিরাজুল হক আলমগীর জানান, পানি সরবরাহের পাম্প মেশিনের চার ইউনিটের ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ইঞ্জিনগুলো সার্ভিসিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। ইঞ্জিনগুলোর সার্ভিসিং শেষে স্থাপন করা হলে পানি সরবরাহ অনেকটাই স্বাভাবিক হবে। এছাড়া ঘাটতি পানির সমস্যা নিরসনে দুটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (শোধনাগার) ওভার হেড ট্যাংক নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২২ , ০৪ বৈশাখ ১৪২৮ ১৫ রমাদ্বান ১৪৪৩

টাঙ্গাইল শহরে পানির তীব্র সংকট : ভোগান্তিতে পৌরবাসী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইল পৌরসভার সরবরাহকৃত পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের গ্রাহকরা। বিল বকেয়া না থাকা সত্ত্বেও সরবরাহের পানি না পাওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। চলমান পরিস্থিতির ফলে ইতোমধ্যেই দুই হাজার ৬০ জন গ্রাহক পানির সংযোগ কর্তন করেছেন।

টাঙ্গাইল পৌরসভার পানি সরবরাহ কেন্দ্রের তথ্যে জানা যায়, মোট গ্রাহক সংখ্যা ৭ হাজার ৭০৩ জন। প্রতিটি সংযোগের ব্যাস অনুযায়ী বিল রয়েছে। এর মধ্যে হাফ ইঞ্চি ব্যাসের সংযোগ ফি ২৫০ টাকা, পৌনে এক ইঞ্চি ব্যাসের বিল ৬০০ টাকা আর এক ইঞ্চি ব্যাসের সংযোগ ফি এক হাজার ৬০০ টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যাসের কর্তনকৃত সংযোগের সংখ্যা ২ হাজার ৬০টি। শোধনাগার সংখ্যা ৩টি। প্রতিটির মজুদ পানির পরিমাণ ৩০ লাখ লিটার। মোট মজুদ পানির পরিমাণ ৯০ লাখ লিটার। প্রতিদিনের পানির চাহিদা ২ কোটি ৫০ লাখ লিটার। সরবরাহ হচ্ছে গড়ে ৮০ লাখ লিটার। ঘাটতি পানির পরিমাণ এক কোটি ৭০ লাখ লিটার। কেন্দ্রের তথ্যে আরও জানা যায়, হাল সালের বেসরকারি পাওনা এক কোটি ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৭৬০ টাকা। আর সরকারি পাওনা এক কোটি ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪৪ টাকা।

সরেজমিন শহরের দেওলা, কোদালিয়া, কলেজপাড়া, বটতলা, তালতলা, আকুরটাকুর পাড়া, আদালতপাড়া, থানাপাড়া ও বাজিতপুর সাহাপাড়ার বাসিন্দাদের বক্তব্যে পানি সংকটের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের অভিযোগ, ওই এলাকার গ্রাহকরা প্রায় সপ্তাহখানেক যাবত চরম পানি সংকটে রয়েছেন। কিছু বাড়ি পানি পেলেও সারাদিনে ভর্তি হচ্ছে না এক বালতি পানি। স্থানীয় কাউন্সিলরদের অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। দেখা গেছে, বাজিতপুর সাহাপাড়ার বাসিন্দা গৌতম সাহা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত এক হাজার ৮০০ টাকা পরিশোধ করেছেন। এরপরও সরবরাহের পানি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন তিনি।

বাজিতপুর সাহাপাড়ার গৃহপরিচারিকা মায়া সাহা অভিযোগ করে বলেন, গত চার-পাঁচদিন যাবত একবারের জন্যও জল পাচ্ছেন না তারা। যার ফলে হাউজে এক ফোটা জলও নেই। প্রতিবেশীদের বাসা-বাড়ি থেকে টিউবওয়েলের জল এনে কাজ করতে হচ্ছে। জল না থাকার কারণে তাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। বাড়ির মালিক দাদাকে সমস্যার কথা জানিয়েছি। একই এলাকার জয়া সাহা বলেন, পৌরসভার সরবরাহের পানি বাবদ প্রতি মাসে ২৫০ টাকা বিল দিচ্ছি। এরপরও অনেকদিন যাবত স্বাভাবিকভাবে জল পাচ্ছি না আমরা।

এর মধ্যে মাঝে মাঝে কিছু জল পাওয়া গেলেও এখন প্রায় সপ্তাহখানেক যাবত একবারেই জল পাচ্ছি না। এ কারণে কষ্ট হলেও অন্যের বাড়ি থেকে জল এনে বাড়ি ঘরের কাজ করতে হচ্ছে। লক্ষ্মী দত্ত বলেন, ২৪ ঘণ্টায় এক বালতি পানিও পাচ্ছেন না তারা।

এরপরও প্রতিমাসে ২৫০ টাকা বিল দিতে হচ্ছে আমাদের। সাহাপাড়া এলাকার বাসিন্দা গৌতম সাহার ছেলে দেবাশীষ সাহা অপু বলেন, এলাকায় পৌরসভার পানি সরবরাহের প্রায় শতাধিক সংযোগ রয়েছে। গত পাঁচ-ছয়দিন যাবত সরবরাহের একটু পানিও পাচ্ছি না আমরা। টিউবওয়েলের পানি দিয়ে চলছে বাসা-বাড়ির কাজ। আমরা লিখিতভাবে কাউকে কোন অভিযোগ না করলেও ভীষণ সমস্যা ভোগ করছি। সরবরাহের পানি বাবদ প্রতিমাসে ৬০০ টাকা বিল দিচ্ছি আমি।

পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মামুন বাদশা বলেন, আমি ভীষণ অসুস্থ, ঢাকায় চিকিৎসারত থাকায় বিষয়টি আমার জানা নেই।

পানি সরবরাহ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী এ.এইচ.এম জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, গ্রাহক চাহিদার তুলনায় আমাদের ঘাটতি পানির পরিমাণ এক কোটি ৭০ লাখ লিটার। এরই মধ্যে শুষ্ক মৌসুমে পানির লেয়ার আরও নিচে নেমে যাওয়ায় পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

টাঙ্গাইল জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলী ইবনে মায়াজ প্রামানিক জানান, টাঙ্গাইল পৌরসভার পানি সরবরাহের জন্য দুটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (শোধনাগার) নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সিরাজুল হক আলমগীর জানান, পানি সরবরাহের পাম্প মেশিনের চার ইউনিটের ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ইঞ্জিনগুলো সার্ভিসিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। ইঞ্জিনগুলোর সার্ভিসিং শেষে স্থাপন করা হলে পানি সরবরাহ অনেকটাই স্বাভাবিক হবে। এছাড়া ঘাটতি পানির সমস্যা নিরসনে দুটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (শোধনাগার) ওভার হেড ট্যাংক নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।