বাবার নাম পাল্টে মুক্তিযোদ্ধা, বগুড়া জেলা আ’লীগ সভাপতির সনদ বাতিল

ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা ফেরত নেয়া হবে

অমুক্তিযোদ্ধা প্রমাণিত হওয়ায় বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমানের (মজনু) সনদ বাতিল করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। গত ১০ মার্চ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৭৮তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তার (মজনু) বেসামরিক গেজেট (নং-১৮৬৩) বাতিল করা হয়। অর্থাৎ মজিবর রহমান আর মুক্তিযোদ্ধা নন। তবে মুক্তিযোদ্ধা সেজে তিনি ভাতাসহ অন্যান্য যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন, প্রত্যেক সুবিধা ফেরত নেবে মন্ত্রণালয়। এর সঙ্গে মজনুর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মোফাজ্জল হোসেন সংবাদকে বলেন, সে (মজনু) মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন, তার প্রত্যেকটা ফেরত নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে এই সচিব (গেজেট, সনদ প্রত্যায়ন ও অনুবিভাগ) বলেন, তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থায় যা-যা দরকার, করা হবে।

জানা গেছে, আদমদিঘী উপজেলার নশরতপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান (আসল মুক্তিযোদ্ধা) মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রীর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। গত বছরের ২৪ জানুয়ারি দায়েরকৃত ওই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, তার নামের সঙ্গে মিল থাকায় বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু নাম ও লালবার্তার নম্বর নকল করে প্রতারণতার আশ্রয় নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। অভিযোগটিতে বলা হয়, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমানের পিতার নাম মৃত মশরতুল্লাহ এবং লালমুক্তিবার্তা নম্বর-৩০৬০৯০১২১। আর নেতা মজিবর রহমানের পিতার নাম জসমতুল্লাহ। বাড় শেরপুর উপজেলার উলিপুর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল বিষয়টি তার ব্যক্তিগত পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা সাজতে গিয়ে দলকে বিতর্কের মুখে ফেলতে যাচ্ছেন। জেলা পর্যায়ে দলের একজন নীতি-নির্ধারক হয়ে দলেরই ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ করছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি দলীয়ভাবে কেউ দলের পার্টি অফিসে (কেন্দ্রীয়) তার বিরুদ্ধে (মজনু) অভিযোগ দেন, তাহলে সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে নেয়া হবে। মজিবর রহমান মজনু দল থেকে বহিষ্কারও হতে পারেন বলে জানান তিনি।

মন্ত্রণালয় ও জামুকায় দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, ২০১০ সালের ৯ মার্চ প্রকাশিত লাল মুক্তিবার্তা তালিকায় শেরপুর উপজেলা বগুড়ায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মজিবুর রহমান ও তার পিতার নাম মশরতুল্লাহ ছিল না, গত বছরের ৯ জানুয়ারি যে যাচাই-বাছাই তালিকা প্রকাশ হয় সেখানে নেতা মজিবুর রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত করান। ওই বছরের ৩০ জানুয়ারি পুনরায় যাচাই-বাছাইকালে আসল মজিবর রহমানকে বাদ দিয়ে লাল মুক্তিবার্তা নম্বর (৩০৬০৯০১২১) ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবর রহমান মুক্তিযোদ্ধা সাজার অপচেষ্টা করেন। তবে ২০১৭ সালের

২৭ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাইকালে নামঞ্জুর হয়ে ৮৫ নম্বর সিরিয়ালে বাদ পড়েন।

গত ১০ মার্চ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৭৮তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সারাদেশে মোট ৮১ জন মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রমের আওতায় ৫টি ক্যাটাগরিতে (শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, সামরিক ও বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা, বীরঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা, শব্দ সৈনিক, মুজিব নগর কর্মচারীসহ ৩২ শ্রেণীর স্বীকৃতপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা) তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই তালিকা যাচাই-বাছাই করে গত এক যুগে ১৫ সহস্রাধিক অমুক্তিযোদ্ধাকে চিহ্নিত করে সনদ বাতিল করা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু সংবাদকে বলেন, তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ ঠিক আছে। স্থানীয় এমপি হাবিবুর রহমান ষড়যন্ত্র করে সনদ বাতিল করিয়েছেন।

সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০২২ , ০৫ বৈশাখ ১৪২৮ ১৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

বাবার নাম পাল্টে মুক্তিযোদ্ধা, বগুড়া জেলা আ’লীগ সভাপতির সনদ বাতিল

ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা ফেরত নেয়া হবে

ইসহাক আসিফ

অমুক্তিযোদ্ধা প্রমাণিত হওয়ায় বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমানের (মজনু) সনদ বাতিল করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। গত ১০ মার্চ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৭৮তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তার (মজনু) বেসামরিক গেজেট (নং-১৮৬৩) বাতিল করা হয়। অর্থাৎ মজিবর রহমান আর মুক্তিযোদ্ধা নন। তবে মুক্তিযোদ্ধা সেজে তিনি ভাতাসহ অন্যান্য যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন, প্রত্যেক সুবিধা ফেরত নেবে মন্ত্রণালয়। এর সঙ্গে মজনুর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মোফাজ্জল হোসেন সংবাদকে বলেন, সে (মজনু) মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন, তার প্রত্যেকটা ফেরত নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে এই সচিব (গেজেট, সনদ প্রত্যায়ন ও অনুবিভাগ) বলেন, তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থায় যা-যা দরকার, করা হবে।

জানা গেছে, আদমদিঘী উপজেলার নশরতপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান (আসল মুক্তিযোদ্ধা) মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রীর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। গত বছরের ২৪ জানুয়ারি দায়েরকৃত ওই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, তার নামের সঙ্গে মিল থাকায় বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু নাম ও লালবার্তার নম্বর নকল করে প্রতারণতার আশ্রয় নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। অভিযোগটিতে বলা হয়, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমানের পিতার নাম মৃত মশরতুল্লাহ এবং লালমুক্তিবার্তা নম্বর-৩০৬০৯০১২১। আর নেতা মজিবর রহমানের পিতার নাম জসমতুল্লাহ। বাড় শেরপুর উপজেলার উলিপুর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল বিষয়টি তার ব্যক্তিগত পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা সাজতে গিয়ে দলকে বিতর্কের মুখে ফেলতে যাচ্ছেন। জেলা পর্যায়ে দলের একজন নীতি-নির্ধারক হয়ে দলেরই ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ করছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি দলীয়ভাবে কেউ দলের পার্টি অফিসে (কেন্দ্রীয়) তার বিরুদ্ধে (মজনু) অভিযোগ দেন, তাহলে সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে নেয়া হবে। মজিবর রহমান মজনু দল থেকে বহিষ্কারও হতে পারেন বলে জানান তিনি।

মন্ত্রণালয় ও জামুকায় দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, ২০১০ সালের ৯ মার্চ প্রকাশিত লাল মুক্তিবার্তা তালিকায় শেরপুর উপজেলা বগুড়ায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মজিবুর রহমান ও তার পিতার নাম মশরতুল্লাহ ছিল না, গত বছরের ৯ জানুয়ারি যে যাচাই-বাছাই তালিকা প্রকাশ হয় সেখানে নেতা মজিবুর রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত করান। ওই বছরের ৩০ জানুয়ারি পুনরায় যাচাই-বাছাইকালে আসল মজিবর রহমানকে বাদ দিয়ে লাল মুক্তিবার্তা নম্বর (৩০৬০৯০১২১) ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবর রহমান মুক্তিযোদ্ধা সাজার অপচেষ্টা করেন। তবে ২০১৭ সালের

২৭ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাইকালে নামঞ্জুর হয়ে ৮৫ নম্বর সিরিয়ালে বাদ পড়েন।

গত ১০ মার্চ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৭৮তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সারাদেশে মোট ৮১ জন মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রমের আওতায় ৫টি ক্যাটাগরিতে (শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, সামরিক ও বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা, বীরঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা, শব্দ সৈনিক, মুজিব নগর কর্মচারীসহ ৩২ শ্রেণীর স্বীকৃতপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা) তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই তালিকা যাচাই-বাছাই করে গত এক যুগে ১৫ সহস্রাধিক অমুক্তিযোদ্ধাকে চিহ্নিত করে সনদ বাতিল করা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু সংবাদকে বলেন, তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ ঠিক আছে। স্থানীয় এমপি হাবিবুর রহমান ষড়যন্ত্র করে সনদ বাতিল করিয়েছেন।