পানি বাড়ছে, শতাধিক বাঁধ হুমকির মুখে

গত দুই দিন ধরে সুনামগঞ্জ জেলার সুরমা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেইসঙ্গে সীমান্তের নদ-নদীর পানিও বৃদ্ধি পাওয়ায় হাওরের ফসল আবারও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এছাড়া গতকাল দুপুরে পাঠলাই নদীর পানির প্রবল চাপে তাহিরপুরের গুরমা হাওরের ২৭নং পিআইসির ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্রবল স্রোতে পানি ঢুকছে।

এলাকাবাসী জানায়, গতকাল ভোরে টাঙ্গুয়ার হাওরে পূর্ব পাশের গুরমার হাওরের পুরনো বাঁধ উপচে প্রথম হাওরে পানি ঢুকে। সকল ৮টার দিকে বাঁধের উপর দিয়ে হাওরে প্রচ- বেগে পানি প্রবেশ করে। তবে এলাকাবাসীর চেষ্টায় সেটা বন্ধ করা সম্ভব হয়। তবে দুপুরে পাঠলাই নদীর পানির প্রবল চাপে বর্ধিত গুরমা হাওরের ২৭নং পিআইসির ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে প্রবল স্রোতে পানি ঢুকছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিসহ অন্যান্য স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আর সেই ঢলের পানি প্রবেশ করায় সীমান্তের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। যা হাওরের ফসল রক্ষাবাঁধে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খসরুল আলম বলেন, বিভিন্ন বাঁধ উপচে ও কান্দার উপর দিয়ে পানি ঢুকছে। এভাবে পানি বাড়লে খাওয়াজুরি, নোয়াল, আইননাকলমা, গলগলিয়া, শনি, মাটিয়ান ও টাঙ্গুয়ার হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

তাহিরপুর উপজেলার চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রায়হান কবির জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোর উপর ও পাশে বাঁশ, বস্তা, চাটাই, জিওব্যাগ দিয়ে আরও মজবুত করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলার দরগাপাশা

ইউনিয়নের কাছিরগাতি হাওরের বাঁধ রক্ষা পেয়েছে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও কৃষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। খাই হাওর পাড়ের জালোবাড়ি বাঁধ হুমকির সম্মুখীন।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিউর রহিম জাদীদ জানান, অন্তত ৪০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। নতুন করে আর কোন বাঁধ ভাঙেনি। তবে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধগুলো ঝুঁকির মধ্যেই আছে।

ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির হাসান জানান, উপজেলা প্রশাসন, পাউবো ও কৃষকদের নিয়ে দিনরাত বাঁধ রক্ষার কাজ করছি। গত কদিন ভালোই ছিল। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাওরে পড়েছে তাই বাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে।

জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিৎ দেব জানান, সুরমা নদীসহ অন্যান্য পাহাড়ি নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে উপজেলার পাগনার হাওর, হালির হাওর, মিনি পাগনার হাওরের ক্লোজারের নিরাপত্তাঝুঁকি যাচাই করা হচ্ছে। বোগলা খালি ক্লোজার হাওরের সাইডে বালু ভরাট ও জিও ব্যাগ ফেলে অধিকতর মজবুত করার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দিনরাত পরিশ্রম করছি। নান্টুখালী ক্লোজার দিয়ে পানি চুইয়ে প্রবেশ করছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, সুরমা নদীর পানি ৫.৮৭ মিটারে দাঁড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সীমান্ত নদী জাদুকাটার ৭১ সেন্টিমিটার, পাঠলাই নদীর পানি ৪৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে এভাবে যদি ঢল নেমে পানি বৃদ্ধি পায় তাহলে বাঁধের ক্ষতি হবে। তিনি আরও বলেন, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিসহ অন্যান্য স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে, আর সেই ঢলের পানি প্রবেশ করে ফসলরক্ষা বাঁধের সর্বনাশ করছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর, ছাতক, শান্তিগঞ্জ, ও ধর্মপাশা উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। তবে এখন পর্যন্ত ফসল তলিয়ে যায়নি। প্রতিটি হাওরেই এডিসি ও ইউএনও, পাউবোর কর্মকর্তা ও হাওর পাড়ের কৃষকরা বাঁধ রক্ষার জন্য প্রাণপণ লড়াই করছেন। এমনকি নৌকার মধ্যেই রাত কাটাচ্ছেন। আমরা নিদের্শনা দিয়েছি ৮০ ভাগ ধান পাকা হলেই যেন কর্তন করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সাহায্য সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে, আরও করা হবে।

এদিকে হাওর পাড়ের কৃষকদের চলমান হাওররক্ষা বাঁধের কাজ নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। তাদের মতে, সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় পিআইসিদের। কিন্তু পিআইসি নামধারী প্রভাবশালীরা বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষার দায়িত্ব নিয়েই ভক্ষক হয়ে যায়। দায়সারা কাজ করায় এবং পাহাড়ি ঢলে বাঁধে ফাটল ও ধসে পড়ায় সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা বোরো ফসলের ১৫ হাওর ডুবে ২০ হাজার হেক্টর বোরো জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। একমাত্র বোরো ফসল হারিয়ে কৃষক ও তাদের পরিবারে হাহাকার বিরাজ করছে।

শনির হাওরপাড়ের কৃষক আরিফ মিয়া জানান, ফসলডুবির পর যে বাঁধগুলো আশা জাগিয়ে রেখেছে সেগুলোতেও ফাটল ও ধসে পড়ায় হাওরপাড়ের কৃষক পরিবারগুলোর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক, বৃহত্তর শনির হাওরপাড়ের কৃষক হাবিবুর রহমান খেলু বলেন, হাওরে উৎপাদিত একমাত্র বোরো ধান এখনও ঝুঁকির মুখে। কিছু কিছু হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হলেও তা একেবারেই সামান্য। সময় মতো ও সঠিকভাবে বাঁধে কাজ না করায় দুর্বল বাঁধের কারণে বাঁধ ভাঙার শঙ্কা যেন কাটছেই না।

উলেল্লখ্য, বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। এই কমিটির আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার কথা। এদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকেও ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলার ৪২টি হাওরের ৭২৭টি পিআইসি, ১৩৫টি ক্লোজারসহ মোট ৫৩২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য সরকার ১২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়।

সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০২২ , ০৫ বৈশাখ ১৪২৮ ১৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

পানি বাড়ছে, শতাধিক বাঁধ হুমকির মুখে

লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ/ কামাল হোসেন, তাহিরপুর

image

তাহিরপুরে সীমান্ত থেকে নেমে আসা পানি বাঁধ ভেঙে উপচে পড়ছে ফসলের মাঠে -সংবাদ

গত দুই দিন ধরে সুনামগঞ্জ জেলার সুরমা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেইসঙ্গে সীমান্তের নদ-নদীর পানিও বৃদ্ধি পাওয়ায় হাওরের ফসল আবারও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এছাড়া গতকাল দুপুরে পাঠলাই নদীর পানির প্রবল চাপে তাহিরপুরের গুরমা হাওরের ২৭নং পিআইসির ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্রবল স্রোতে পানি ঢুকছে।

এলাকাবাসী জানায়, গতকাল ভোরে টাঙ্গুয়ার হাওরে পূর্ব পাশের গুরমার হাওরের পুরনো বাঁধ উপচে প্রথম হাওরে পানি ঢুকে। সকল ৮টার দিকে বাঁধের উপর দিয়ে হাওরে প্রচ- বেগে পানি প্রবেশ করে। তবে এলাকাবাসীর চেষ্টায় সেটা বন্ধ করা সম্ভব হয়। তবে দুপুরে পাঠলাই নদীর পানির প্রবল চাপে বর্ধিত গুরমা হাওরের ২৭নং পিআইসির ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে প্রবল স্রোতে পানি ঢুকছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিসহ অন্যান্য স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আর সেই ঢলের পানি প্রবেশ করায় সীমান্তের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। যা হাওরের ফসল রক্ষাবাঁধে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খসরুল আলম বলেন, বিভিন্ন বাঁধ উপচে ও কান্দার উপর দিয়ে পানি ঢুকছে। এভাবে পানি বাড়লে খাওয়াজুরি, নোয়াল, আইননাকলমা, গলগলিয়া, শনি, মাটিয়ান ও টাঙ্গুয়ার হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

তাহিরপুর উপজেলার চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রায়হান কবির জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোর উপর ও পাশে বাঁশ, বস্তা, চাটাই, জিওব্যাগ দিয়ে আরও মজবুত করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলার দরগাপাশা

ইউনিয়নের কাছিরগাতি হাওরের বাঁধ রক্ষা পেয়েছে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও কৃষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। খাই হাওর পাড়ের জালোবাড়ি বাঁধ হুমকির সম্মুখীন।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিউর রহিম জাদীদ জানান, অন্তত ৪০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। নতুন করে আর কোন বাঁধ ভাঙেনি। তবে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধগুলো ঝুঁকির মধ্যেই আছে।

ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির হাসান জানান, উপজেলা প্রশাসন, পাউবো ও কৃষকদের নিয়ে দিনরাত বাঁধ রক্ষার কাজ করছি। গত কদিন ভালোই ছিল। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাওরে পড়েছে তাই বাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে।

জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিৎ দেব জানান, সুরমা নদীসহ অন্যান্য পাহাড়ি নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে উপজেলার পাগনার হাওর, হালির হাওর, মিনি পাগনার হাওরের ক্লোজারের নিরাপত্তাঝুঁকি যাচাই করা হচ্ছে। বোগলা খালি ক্লোজার হাওরের সাইডে বালু ভরাট ও জিও ব্যাগ ফেলে অধিকতর মজবুত করার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দিনরাত পরিশ্রম করছি। নান্টুখালী ক্লোজার দিয়ে পানি চুইয়ে প্রবেশ করছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, সুরমা নদীর পানি ৫.৮৭ মিটারে দাঁড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সীমান্ত নদী জাদুকাটার ৭১ সেন্টিমিটার, পাঠলাই নদীর পানি ৪৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে এভাবে যদি ঢল নেমে পানি বৃদ্ধি পায় তাহলে বাঁধের ক্ষতি হবে। তিনি আরও বলেন, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিসহ অন্যান্য স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে, আর সেই ঢলের পানি প্রবেশ করে ফসলরক্ষা বাঁধের সর্বনাশ করছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর, ছাতক, শান্তিগঞ্জ, ও ধর্মপাশা উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। তবে এখন পর্যন্ত ফসল তলিয়ে যায়নি। প্রতিটি হাওরেই এডিসি ও ইউএনও, পাউবোর কর্মকর্তা ও হাওর পাড়ের কৃষকরা বাঁধ রক্ষার জন্য প্রাণপণ লড়াই করছেন। এমনকি নৌকার মধ্যেই রাত কাটাচ্ছেন। আমরা নিদের্শনা দিয়েছি ৮০ ভাগ ধান পাকা হলেই যেন কর্তন করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সাহায্য সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে, আরও করা হবে।

এদিকে হাওর পাড়ের কৃষকদের চলমান হাওররক্ষা বাঁধের কাজ নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। তাদের মতে, সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় পিআইসিদের। কিন্তু পিআইসি নামধারী প্রভাবশালীরা বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষার দায়িত্ব নিয়েই ভক্ষক হয়ে যায়। দায়সারা কাজ করায় এবং পাহাড়ি ঢলে বাঁধে ফাটল ও ধসে পড়ায় সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা বোরো ফসলের ১৫ হাওর ডুবে ২০ হাজার হেক্টর বোরো জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। একমাত্র বোরো ফসল হারিয়ে কৃষক ও তাদের পরিবারে হাহাকার বিরাজ করছে।

শনির হাওরপাড়ের কৃষক আরিফ মিয়া জানান, ফসলডুবির পর যে বাঁধগুলো আশা জাগিয়ে রেখেছে সেগুলোতেও ফাটল ও ধসে পড়ায় হাওরপাড়ের কৃষক পরিবারগুলোর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক, বৃহত্তর শনির হাওরপাড়ের কৃষক হাবিবুর রহমান খেলু বলেন, হাওরে উৎপাদিত একমাত্র বোরো ধান এখনও ঝুঁকির মুখে। কিছু কিছু হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হলেও তা একেবারেই সামান্য। সময় মতো ও সঠিকভাবে বাঁধে কাজ না করায় দুর্বল বাঁধের কারণে বাঁধ ভাঙার শঙ্কা যেন কাটছেই না।

উলেল্লখ্য, বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। এই কমিটির আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার কথা। এদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকেও ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলার ৪২টি হাওরের ৭২৭টি পিআইসি, ১৩৫টি ক্লোজারসহ মোট ৫৩২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য সরকার ১২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়।