মুন্সীগঞ্জের নাটেশ্বর দেউরে

প্রত্নতাত্ত্বিক খনন, আবিষ্কৃত প্রাচীন অষ্টকোণাকৃতির স্তূপ, ইটের দেয়াল

হাজার বছরের প্রাচীন অষ্টকোণাকৃতির স্তূপ, সীমানা প্রাচীর, স্তূপ হলঘর বা ম-প ও স্তূপের ইটের দেয়াল মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বর দেউলে প্রতœতাত্ত্বিক খননে এবার আবিষ্কৃত হয়েছে। সদ্য আবিষ্কৃত পঞ্চম অষ্টকোণাকৃতির স্তূপে রয়েছে ধর্মচক্র। আর সেই ধর্ম চক্রটিতে ৮টি স্পোক রয়েছে। প্রতিটি স্পোকের সংখ্যা বৌদ্ধধর্মের প্রতীকী অর্থে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। পঞ্চম স্তূপের আদি পর্যায়ের অষ্টকোণাকৃতি স্তূপের দেয়ালের গাঁথুনি এখনও অপূর্ব মসৃন। মনে হয় যেন আধুনিক সিরামিকের ইটের গাঁথুনি। অষ্টকোণাকৃতির এ স্তূপটি নাটেশ^র দেউলের পঞ্চম স্তূপ। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ও প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহযোগিতায় নাটেশ^র দেউলে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন প্রতœউৎখননের কাজ শুরু করে ২০১৩ সালে। এরআগে খননের মধ্য দিয়ে অষ্টকোণাকৃতির ৪টি স্তূপ আবিষ্কৃত হয়।

গত শনিবার বেলা ১২টার দিকে নাটেশ^র দেউলে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২০২১-২২ সালের প্রতœখননের এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ ও সভাপতির বক্তৃতা করেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি নূহ-উল-আলম লেনিন। এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতœ-অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রতন চন্দ্র প-িত। জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও ঐতিহ্য অন্বেষণের নির্বাহী পরিচালক ড. সুফি মুস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন প্রতœতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক রাখী রায়, টঙ্গীবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জগলুল হালদার ভুতু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা তানজিন অন্তরা, সদরের বজ্রযোগিনীর অতীশ দীপংকর কমপ্লেক্সের অধ্যক্ষ করুনা নন্দ থেরো, টঙ্গীবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কবীর হালদার, টঙ্গীবাড়ী থানার ওসি মোল্লা সোহেব আলী।

লিখিত বক্তব্যে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি নূহ-উল-আলম লেনিন জানান, বিক্রমপুরের নাটেশ্বর দেউলে এবারের আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পঞ্চম স্তূপের আদি পর্যায়ের অষ্টকোণাকৃতি স্তূপের দেয়ালের গাঁথুনি এখনও অপূর্ব মসৃণ, মনে হয় যেন আধুনিক সিরামিক ইটের গাঁথুনি। সত্যিই দেয়ালের ইট, পরিমাপ, গাঁথুনি সেও আবার কাদামাটির মর্টার তবুও অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় বহন করে। ৭.৪ গুণ ৭.৪ পরিমাপের একটা বর্গাকার ভিত্তির ওপর উলম্বভাবে ইট স্থাপন করে অনেকটা গরুর গাড়ির চাকার ন্যায় ধর্মচক্র নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে আবিষ্কৃত প্রথম ও চতুর্থ অষ্টকোণাকৃতির স্তূপে আদি পর্যায়ে ধর্মচক্রের আভাস দেখা দিয়েছিল কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ের অষ্টকোণাকৃতির স্তূপ দ্বারা আবৃত থাকায় সে রহস্য উন্মোচিত হয়নি। সদ্য আবিষ্কৃত পঞ্চম অষ্টকোণাকৃতি স্তূপের ধর্মচক্রটিতে ৮টি স্পোক রয়েছে। প্রতিটি স্পোকের সংখ্যা বৌদ্ধধর্মে প্রতীকী অর্থে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে।

নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, নাটেশ্বরে আবিষ্কৃত অষ্টকোণাকৃতির পঞ্চম স্তূপে ৮টি স্পোকযুক্ত ধর্মচক্র বৌদ্ধধর্মের মূল অষ্টাঙ্গিক মার্গ

দর্শনকে দ্বিগুণ করে প্রতিফলিত করেছে। বৌদ্ধধর্মে কোন একক পূজনীয় হিসেবে ধর্মচক্র প্রাচীনকাল থেকেই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়। বৌদ্ধধর্মের মূল দর্শন হলো চার আর্যসত্য যথাক্রমে জীবনে দুঃখ আছে, দুঃখের কারণ আছে, দুঃখের বিনাশ আছে এবং দুঃখ বিনাশের উপায়ও আছে।

দুঃখ বিনাশের উপায়গুলো হচ্ছে সৎদৃষ্টি, সৎসংকল্প, সৎবাক্য, সৎকর্ম, সৎজীবিকা, সৎচিন্তা, সঠিক চৈতন্য এবং সৎধ্যান অনুশীলন করা। বৌদ্ধধর্মে অষ্টমঙ্গল হিসেবেও ৮টি প্রতীক কল্পনা করা হয় যার মধ্যে ধর্মচক্র অন্যতম। ধর্মচক্রকে সূর্য রশ্মির সঙ্গেও তুলনা করা হয়। সাধারণত ধর্মচক্র স্তূপের তোরণ বা অশোক স্তূম্ভের শীর্ষে শোভাবর্ধণ করে থাকে। কিন্তু অন্ধপ্রদেশের অমরাবর্তি এবং নাগার্জুনকোল্ডা স্তূপের বেদিতে আমাদের আবিষ্কৃত ধর্মচক্রের অনেকটা অনুরূপ ধর্মচক্র আবিষ্কৃত হয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, নিরেট ভিত্তিভূমিতে আট স্পোক বিশিষ্ট ধর্মচক্রের ওপর হাজার বছরের প্রাচীন হলঘর বা ম-পসহ অষ্টকোণাকৃতির স্তূপের উপস্থিতি এর আগে বাংলাদেশ কেন ভারতবর্ষের অন্য কোথাও পাওয়া যায়নি। নাটেশ্বর দেউলে আবিষ্কৃত কেন্দ্রীয় অষ্টকোণাকৃতি মন্দির, বর্গাকৃতির স্তূপ, একাধিক অষ্টকোণাকৃতি স্তূপ, স্তূপের স্মারক কক্ষে বর্গাকার, অষ্টকোণা ও গোলাকার প্রতীকী স্থাপত্য, আট স্পোকযুক্ত ধর্মচক্র সবই বৌদ্ধ ধর্মের মূল মন্ত্রের প্রতীকী রূপ। নাটেশ্বর দেউলে প্রায় সব স্থাপত্যে প্রতীকীরূপে বৌদ্ধ ধর্মের মূল দর্শন ফুটিয়ে তোলার এমন নজির আর কোথাও নেই। প-িত অতীশ দীপংকরের জন্মভূমি বিক্রমপুরের নাটেশ্বর দেউলে সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত প্রতীকী স্থাপত্য সমূহ থেকে মনে হয় যে, প্রায় ১১০০ বছর আগে বিক্রমপুরে বৌদ্ধ ধর্ম এবং দর্শনের একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী স্কুল বিকাশ লাভ করেছিল। সে কারনে হয়ত তৎকালীন তিব্বতী রাজা অনেক অনুনয়-বিনয় করে বৌদ্ধধর্ম রক্ষায় প-িত অতীশ দীপংকরকে তিব্বতে নিয়ে যান।

সংবাদ সম্মেলন শেষে জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও ঐতিহ্য অন্বেষণের নির্বাহী পরিচালক ড. সুফি মুস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বিক্রমপুরে অতীশ দীপংকরের জন্মভূমি। রঘুরামপুর থেকে নাটেশ^রে প্রতœতত্ত্ব ভূমি। ২০১০ সালে রঘুরামপুরে খনন করেছি। ২০১৩ সালে নাটেশ্বরে খনন শুরু করি। এবার ২০২১-২২ সালে সর্বশেষ খননে অষ্টকোণাকৃতির পঞ্চম স্তূপ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছি। আগামী ২ বছর এখানে খনন চলবে। এরপর আবিষ্কৃত নির্দশন সংরক্ষণ করা হবে।

অষ্টকোণাকৃতির এই প্রাচীন দেয়াল ও খনন কাজ দেখতে প্রতিদিন অত্র এলাকায় শত শত নারী পুরুষ দেখতে এসে ভিড় জমে । এ ছাড়া ও বিভিন্ন এলাকার ছাত্র-ছাত্রীরা এক নজর দেখার জন্য এখানে ঘুরতে আসে।

image

মুন্সীগঞ্জের নটেশ্বর দেউয়ে প্রতœতাত্ত্বিক খনন শেষে আবিষ্কৃত অষ্টকোণাকৃতির ইটের দেয়াল -সংবাদ

আরও খবর
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত
বিদেশের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন
৭ হাজার শিক্ষকের এমপিওভুক্তির জটিলতার অবসান
রাজধানীতে তারের জঞ্জাল দূর করতে সমন্বয়ের তাগিদ
র‌্যাগ ডের নামে বুলিং-অশ্লীলতা বন্ধে আদালতের নির্দেশ
ধুনটে অবৈধ পুকুর খননে ফসলি জমিতে ভূমি ধস
মুগদার সেই তরুণীকে কানাডা সরকারের হাতে তুলে দিল হাইকোর্ট
লক্ষ্য চব্বিশের রোডম্যাপ সোনিয়া-রাহুলের সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের বৈঠক ঘিরে জল্পনা
জেএমবির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তারজেএমবির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার
রংপুর নগরীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেহাল দশা

সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০২২ , ০৫ বৈশাখ ১৪২৮ ১৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

মুন্সীগঞ্জের নাটেশ্বর দেউরে

প্রত্নতাত্ত্বিক খনন, আবিষ্কৃত প্রাচীন অষ্টকোণাকৃতির স্তূপ, ইটের দেয়াল

মাহাবুব আলম লিটন, মুন্সীগঞ্জ

image

মুন্সীগঞ্জের নটেশ্বর দেউয়ে প্রতœতাত্ত্বিক খনন শেষে আবিষ্কৃত অষ্টকোণাকৃতির ইটের দেয়াল -সংবাদ

হাজার বছরের প্রাচীন অষ্টকোণাকৃতির স্তূপ, সীমানা প্রাচীর, স্তূপ হলঘর বা ম-প ও স্তূপের ইটের দেয়াল মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বর দেউলে প্রতœতাত্ত্বিক খননে এবার আবিষ্কৃত হয়েছে। সদ্য আবিষ্কৃত পঞ্চম অষ্টকোণাকৃতির স্তূপে রয়েছে ধর্মচক্র। আর সেই ধর্ম চক্রটিতে ৮টি স্পোক রয়েছে। প্রতিটি স্পোকের সংখ্যা বৌদ্ধধর্মের প্রতীকী অর্থে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। পঞ্চম স্তূপের আদি পর্যায়ের অষ্টকোণাকৃতি স্তূপের দেয়ালের গাঁথুনি এখনও অপূর্ব মসৃন। মনে হয় যেন আধুনিক সিরামিকের ইটের গাঁথুনি। অষ্টকোণাকৃতির এ স্তূপটি নাটেশ^র দেউলের পঞ্চম স্তূপ। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ও প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহযোগিতায় নাটেশ^র দেউলে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন প্রতœউৎখননের কাজ শুরু করে ২০১৩ সালে। এরআগে খননের মধ্য দিয়ে অষ্টকোণাকৃতির ৪টি স্তূপ আবিষ্কৃত হয়।

গত শনিবার বেলা ১২টার দিকে নাটেশ^র দেউলে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২০২১-২২ সালের প্রতœখননের এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ ও সভাপতির বক্তৃতা করেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি নূহ-উল-আলম লেনিন। এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতœ-অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রতন চন্দ্র প-িত। জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও ঐতিহ্য অন্বেষণের নির্বাহী পরিচালক ড. সুফি মুস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন প্রতœতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক রাখী রায়, টঙ্গীবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জগলুল হালদার ভুতু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা তানজিন অন্তরা, সদরের বজ্রযোগিনীর অতীশ দীপংকর কমপ্লেক্সের অধ্যক্ষ করুনা নন্দ থেরো, টঙ্গীবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কবীর হালদার, টঙ্গীবাড়ী থানার ওসি মোল্লা সোহেব আলী।

লিখিত বক্তব্যে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি নূহ-উল-আলম লেনিন জানান, বিক্রমপুরের নাটেশ্বর দেউলে এবারের আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পঞ্চম স্তূপের আদি পর্যায়ের অষ্টকোণাকৃতি স্তূপের দেয়ালের গাঁথুনি এখনও অপূর্ব মসৃণ, মনে হয় যেন আধুনিক সিরামিক ইটের গাঁথুনি। সত্যিই দেয়ালের ইট, পরিমাপ, গাঁথুনি সেও আবার কাদামাটির মর্টার তবুও অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় বহন করে। ৭.৪ গুণ ৭.৪ পরিমাপের একটা বর্গাকার ভিত্তির ওপর উলম্বভাবে ইট স্থাপন করে অনেকটা গরুর গাড়ির চাকার ন্যায় ধর্মচক্র নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে আবিষ্কৃত প্রথম ও চতুর্থ অষ্টকোণাকৃতির স্তূপে আদি পর্যায়ে ধর্মচক্রের আভাস দেখা দিয়েছিল কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ের অষ্টকোণাকৃতির স্তূপ দ্বারা আবৃত থাকায় সে রহস্য উন্মোচিত হয়নি। সদ্য আবিষ্কৃত পঞ্চম অষ্টকোণাকৃতি স্তূপের ধর্মচক্রটিতে ৮টি স্পোক রয়েছে। প্রতিটি স্পোকের সংখ্যা বৌদ্ধধর্মে প্রতীকী অর্থে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে।

নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, নাটেশ্বরে আবিষ্কৃত অষ্টকোণাকৃতির পঞ্চম স্তূপে ৮টি স্পোকযুক্ত ধর্মচক্র বৌদ্ধধর্মের মূল অষ্টাঙ্গিক মার্গ

দর্শনকে দ্বিগুণ করে প্রতিফলিত করেছে। বৌদ্ধধর্মে কোন একক পূজনীয় হিসেবে ধর্মচক্র প্রাচীনকাল থেকেই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়। বৌদ্ধধর্মের মূল দর্শন হলো চার আর্যসত্য যথাক্রমে জীবনে দুঃখ আছে, দুঃখের কারণ আছে, দুঃখের বিনাশ আছে এবং দুঃখ বিনাশের উপায়ও আছে।

দুঃখ বিনাশের উপায়গুলো হচ্ছে সৎদৃষ্টি, সৎসংকল্প, সৎবাক্য, সৎকর্ম, সৎজীবিকা, সৎচিন্তা, সঠিক চৈতন্য এবং সৎধ্যান অনুশীলন করা। বৌদ্ধধর্মে অষ্টমঙ্গল হিসেবেও ৮টি প্রতীক কল্পনা করা হয় যার মধ্যে ধর্মচক্র অন্যতম। ধর্মচক্রকে সূর্য রশ্মির সঙ্গেও তুলনা করা হয়। সাধারণত ধর্মচক্র স্তূপের তোরণ বা অশোক স্তূম্ভের শীর্ষে শোভাবর্ধণ করে থাকে। কিন্তু অন্ধপ্রদেশের অমরাবর্তি এবং নাগার্জুনকোল্ডা স্তূপের বেদিতে আমাদের আবিষ্কৃত ধর্মচক্রের অনেকটা অনুরূপ ধর্মচক্র আবিষ্কৃত হয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, নিরেট ভিত্তিভূমিতে আট স্পোক বিশিষ্ট ধর্মচক্রের ওপর হাজার বছরের প্রাচীন হলঘর বা ম-পসহ অষ্টকোণাকৃতির স্তূপের উপস্থিতি এর আগে বাংলাদেশ কেন ভারতবর্ষের অন্য কোথাও পাওয়া যায়নি। নাটেশ্বর দেউলে আবিষ্কৃত কেন্দ্রীয় অষ্টকোণাকৃতি মন্দির, বর্গাকৃতির স্তূপ, একাধিক অষ্টকোণাকৃতি স্তূপ, স্তূপের স্মারক কক্ষে বর্গাকার, অষ্টকোণা ও গোলাকার প্রতীকী স্থাপত্য, আট স্পোকযুক্ত ধর্মচক্র সবই বৌদ্ধ ধর্মের মূল মন্ত্রের প্রতীকী রূপ। নাটেশ্বর দেউলে প্রায় সব স্থাপত্যে প্রতীকীরূপে বৌদ্ধ ধর্মের মূল দর্শন ফুটিয়ে তোলার এমন নজির আর কোথাও নেই। প-িত অতীশ দীপংকরের জন্মভূমি বিক্রমপুরের নাটেশ্বর দেউলে সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত প্রতীকী স্থাপত্য সমূহ থেকে মনে হয় যে, প্রায় ১১০০ বছর আগে বিক্রমপুরে বৌদ্ধ ধর্ম এবং দর্শনের একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী স্কুল বিকাশ লাভ করেছিল। সে কারনে হয়ত তৎকালীন তিব্বতী রাজা অনেক অনুনয়-বিনয় করে বৌদ্ধধর্ম রক্ষায় প-িত অতীশ দীপংকরকে তিব্বতে নিয়ে যান।

সংবাদ সম্মেলন শেষে জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও ঐতিহ্য অন্বেষণের নির্বাহী পরিচালক ড. সুফি মুস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বিক্রমপুরে অতীশ দীপংকরের জন্মভূমি। রঘুরামপুর থেকে নাটেশ^রে প্রতœতত্ত্ব ভূমি। ২০১০ সালে রঘুরামপুরে খনন করেছি। ২০১৩ সালে নাটেশ্বরে খনন শুরু করি। এবার ২০২১-২২ সালে সর্বশেষ খননে অষ্টকোণাকৃতির পঞ্চম স্তূপ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছি। আগামী ২ বছর এখানে খনন চলবে। এরপর আবিষ্কৃত নির্দশন সংরক্ষণ করা হবে।

অষ্টকোণাকৃতির এই প্রাচীন দেয়াল ও খনন কাজ দেখতে প্রতিদিন অত্র এলাকায় শত শত নারী পুরুষ দেখতে এসে ভিড় জমে । এ ছাড়া ও বিভিন্ন এলাকার ছাত্র-ছাত্রীরা এক নজর দেখার জন্য এখানে ঘুরতে আসে।