লক্ষ্য চব্বিশের রোডম্যাপ সোনিয়া-রাহুলের সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের বৈঠক ঘিরে জল্পনা

২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের আগেই ক্রমশ বাড়ছিল ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) কংগ্রেসে যোগদানের সম্ভাবনা। সেই গুঞ্জনের মধ্যেই দলের সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীসহ একাধিক প্রথম সারির কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। গুজরাটসহ আরও দুটি বিধানসভা নির্বাচনের আগে পিকে-সনিয়ার এই বৈঠকে একাধিক সম্ভাবনা উজ্বল হচ্ছে। পিকের সঙ্গে ওই বৈঠকটি হয় গত শনিবার সনিয়া গান্ধীর বাসভবনে।

সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের বৈঠক নিয়ে কয়েকদিন আগে থেকেই তীব্র চাপানউত্তর চলছিল রাজনৈতিক মহলে। এমনকি শীঘ্রই তিনি কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন বলে এমন ইঙ্গিতও মিলতে শুরু করেছিল। সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে কংগ্রেস হাইকমান্ডের তরফে পিকেকে সরাসরি দলে যোগদান করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে প্রশান্ত কিশোরও কংগ্রেসে যোগদান করার সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। রাজনৈতিক ময়দানে কংগ্রেসের দুর্বলতা কাটিয়ে দলের পুনরুত্থানের জন্য যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কী কী করা উচিত তারও একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তথা ‘ব্লু প্রিন্ট’ এদিন কংগ্রেসের নেতৃত্বের কাছে তুলে ধরেন পিকে। শুধু তাই নয় এই নয়া রাস্তায় হাঁটলে ২০২৪ সালের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ৩৭০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কংগ্রেস সহজেই এগিয়ে যেতে পারবে, এমন কৌশল নিয়েও আলোচনা করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত কিশোর।

এদিকে একের পর এক দেশব্যাপী বিভিন্ন নির্বাচনে কংগ্রেসের লাগাতার ভরাডুবির ঘটনায় গোটা দেশের রাজনীতির ময়দানে কংগ্রেস আগের থেকে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। গোটা দলেরই বর্তমানে শোচনীয় অবস্থা, তাই এই দুর্দিনে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়ে গোটা সংগঠনের পুরানো সব পরিকল্পনা বদলে ফেলতে চাইছেন পিকে। কিন্তু একাধিক রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী পরামর্শদাতা প্রশান্তকে শুরু থেকে ‘বিশ্বস্ত সঙ্গী’ হিসেবে মানতে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় দেখা যায় কংগ্রেস হাইকমান্ডকে। তবে পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফলের নিরীখে দলের দুরবস্থা এমন অবস্থায় পৌঁছিয়েছে,

তাতে কংগ্রেসের কাছে শেষ থেকে ফের শুরু করা ব্যতিত আর কোন রাস্তাই খোলা নেই। তাই পিকের হাত ধরে ফের দলের মজবুত অবস্থা ফিরে আসতে পারে বলে কংগ্রেস নেতৃত্বের আনেকেই মনে করছেন। আর সে কারণেই এদিনের বৈঠকে একেবারে কংগ্রেস নেতা হওয়ার প্রস্তাবও দেয়া হয় পিকেকে, এমনই অভিমত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

সূত্রের খবর, চব্বিশের ভোট যুদ্ধই এদিন কংগ্রেস পিকে বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল। এমনকি শক্ত হাতে রাহুল-সোনিয়ারা কীভাবে আসন্ন লোকসভার ভোট বৈতরণী পার করতে পারেন সে সব বিষয়েও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন প্রশান্ত। পিকের সমস্ত পরামর্শই যে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখছে দল তা এদিনের বৈঠকের পর কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি বেনুগোপালের কথাতেই স্পষ্ট। শতাব্দী প্রাচীন দলের এই প্রবীণ নেতা সাফ জানিয়েছেন, পিকের দেয়া সমস্ত পরামর্শ মানতে, পাশাপাশি এই বিষয়ে দলের তরফে কী করণীয় তা খতিয়ে দেখতে একটি ছোট কমিটিও গঠন করা হবে। এদিন রাহুল-সোনিয়ার পাশাপাশি বেনুগোপালের সঙ্গেও একান্তে আলোচনা করতে দেখা গিয়েছে প্রশান্তকে। প্রসঙ্গত, দেশব্যাপী বিভিন্ন নির্বাচনে একের পর এক ভরাডুবির মাঝেও কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়ে দলকে পুনরুত্থানের বিষয়ে সমর্থক চিন্তা করতে দেখা গিয়েছে পিকেকে।

মূলত গত বছর থেকে ভোটকুশনী প্রশান্ত কিশোরকে দল টানতে দফায় দফায় বৈঠক করতে দেখা যায় কংগ্রেস নেতৃত্বদের। তবে বাংলায় বিধানসভা ভোটে তৃণমূল শিবিরে বড় জয় এনে দেয়ার পর কংগ্রেসের সঙ্গে পিকের দূরত্ব বেশ বেড়ে যায়। পিকের কংগ্রেসে যোগদান নিয়ে গত বছর আলোচনা শুরু হলেও তা মাঝপথে থেমে যায়। তবে নতুন বছর পড়তে না পড়তেই ফের প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে সখ্য বাড়তে শুরু করে গান্ধীপরিবারে। এমনকি কংগ্রেসে তার যোগদান নিয়েও বাড়তে থাকে জল্পনা। এমতাবস্থায় এবার ফের সনিয়া গান্ধীসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দেখা বৈঠক করেন ভোটকুশলী। তবে প্রশান্ত কিশোরর পরামর্শকে বর্তমানে কংগ্রেস যেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে তাতে দলে তার যোগদান শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

শনিবারের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সানিয়াগান্ধী, রাহুলগান্ধীসহ কংগ্রেস ঘনিষ্ঠ অম্বিকা সোনি, দিগি¦জয় সিং, মল্লিকার্জুন খাড়গে, অজয় মাকেন, কে সি বেনুগোপালরাও উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। সূত্রের খবর, প্রথম সারির এই নেতাদের সামনে কংগ্রেসকে নিয়ে নিজের ‘ভিশন’ তুলে ধরেছেন পিকে। কংগ্রেস অন্দরের একটি অংশের দাবি ছিল, পিকে আসন্ন গুজরাট এবং হিমাচল প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের হয়ে কাজ করতে আগ্রহী। বিশেষ করে গুজরাট বিধানসভায় কাজ করতে বিশেষভাবে আগ্রহী তিনি। কংগ্রেসের আর একটি অংশের দাবি, শুধু গুজরাট বা হিমাচল নিয়ে আলোচনার জন্য নয়, সরাসরি কংগ্রেসে যোগ দিতে চেয়ে দেখা করেছেন পিকে। তবে সোনিয়া-পিকে বৈঠকের পর নতুন সমীকরণ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেদিকে নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।

সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০২২ , ০৫ বৈশাখ ১৪২৮ ১৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

পশ্চিমবঙ্গ

লক্ষ্য চব্বিশের রোডম্যাপ সোনিয়া-রাহুলের সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের বৈঠক ঘিরে জল্পনা

দীপক মুখার্জী, কলকাতা

২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের আগেই ক্রমশ বাড়ছিল ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) কংগ্রেসে যোগদানের সম্ভাবনা। সেই গুঞ্জনের মধ্যেই দলের সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীসহ একাধিক প্রথম সারির কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। গুজরাটসহ আরও দুটি বিধানসভা নির্বাচনের আগে পিকে-সনিয়ার এই বৈঠকে একাধিক সম্ভাবনা উজ্বল হচ্ছে। পিকের সঙ্গে ওই বৈঠকটি হয় গত শনিবার সনিয়া গান্ধীর বাসভবনে।

সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের বৈঠক নিয়ে কয়েকদিন আগে থেকেই তীব্র চাপানউত্তর চলছিল রাজনৈতিক মহলে। এমনকি শীঘ্রই তিনি কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন বলে এমন ইঙ্গিতও মিলতে শুরু করেছিল। সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে কংগ্রেস হাইকমান্ডের তরফে পিকেকে সরাসরি দলে যোগদান করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে প্রশান্ত কিশোরও কংগ্রেসে যোগদান করার সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। রাজনৈতিক ময়দানে কংগ্রেসের দুর্বলতা কাটিয়ে দলের পুনরুত্থানের জন্য যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কী কী করা উচিত তারও একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তথা ‘ব্লু প্রিন্ট’ এদিন কংগ্রেসের নেতৃত্বের কাছে তুলে ধরেন পিকে। শুধু তাই নয় এই নয়া রাস্তায় হাঁটলে ২০২৪ সালের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ৩৭০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কংগ্রেস সহজেই এগিয়ে যেতে পারবে, এমন কৌশল নিয়েও আলোচনা করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত কিশোর।

এদিকে একের পর এক দেশব্যাপী বিভিন্ন নির্বাচনে কংগ্রেসের লাগাতার ভরাডুবির ঘটনায় গোটা দেশের রাজনীতির ময়দানে কংগ্রেস আগের থেকে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। গোটা দলেরই বর্তমানে শোচনীয় অবস্থা, তাই এই দুর্দিনে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়ে গোটা সংগঠনের পুরানো সব পরিকল্পনা বদলে ফেলতে চাইছেন পিকে। কিন্তু একাধিক রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী পরামর্শদাতা প্রশান্তকে শুরু থেকে ‘বিশ্বস্ত সঙ্গী’ হিসেবে মানতে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় দেখা যায় কংগ্রেস হাইকমান্ডকে। তবে পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফলের নিরীখে দলের দুরবস্থা এমন অবস্থায় পৌঁছিয়েছে,

তাতে কংগ্রেসের কাছে শেষ থেকে ফের শুরু করা ব্যতিত আর কোন রাস্তাই খোলা নেই। তাই পিকের হাত ধরে ফের দলের মজবুত অবস্থা ফিরে আসতে পারে বলে কংগ্রেস নেতৃত্বের আনেকেই মনে করছেন। আর সে কারণেই এদিনের বৈঠকে একেবারে কংগ্রেস নেতা হওয়ার প্রস্তাবও দেয়া হয় পিকেকে, এমনই অভিমত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

সূত্রের খবর, চব্বিশের ভোট যুদ্ধই এদিন কংগ্রেস পিকে বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল। এমনকি শক্ত হাতে রাহুল-সোনিয়ারা কীভাবে আসন্ন লোকসভার ভোট বৈতরণী পার করতে পারেন সে সব বিষয়েও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন প্রশান্ত। পিকের সমস্ত পরামর্শই যে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখছে দল তা এদিনের বৈঠকের পর কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি বেনুগোপালের কথাতেই স্পষ্ট। শতাব্দী প্রাচীন দলের এই প্রবীণ নেতা সাফ জানিয়েছেন, পিকের দেয়া সমস্ত পরামর্শ মানতে, পাশাপাশি এই বিষয়ে দলের তরফে কী করণীয় তা খতিয়ে দেখতে একটি ছোট কমিটিও গঠন করা হবে। এদিন রাহুল-সোনিয়ার পাশাপাশি বেনুগোপালের সঙ্গেও একান্তে আলোচনা করতে দেখা গিয়েছে প্রশান্তকে। প্রসঙ্গত, দেশব্যাপী বিভিন্ন নির্বাচনে একের পর এক ভরাডুবির মাঝেও কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়ে দলকে পুনরুত্থানের বিষয়ে সমর্থক চিন্তা করতে দেখা গিয়েছে পিকেকে।

মূলত গত বছর থেকে ভোটকুশনী প্রশান্ত কিশোরকে দল টানতে দফায় দফায় বৈঠক করতে দেখা যায় কংগ্রেস নেতৃত্বদের। তবে বাংলায় বিধানসভা ভোটে তৃণমূল শিবিরে বড় জয় এনে দেয়ার পর কংগ্রেসের সঙ্গে পিকের দূরত্ব বেশ বেড়ে যায়। পিকের কংগ্রেসে যোগদান নিয়ে গত বছর আলোচনা শুরু হলেও তা মাঝপথে থেমে যায়। তবে নতুন বছর পড়তে না পড়তেই ফের প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে সখ্য বাড়তে শুরু করে গান্ধীপরিবারে। এমনকি কংগ্রেসে তার যোগদান নিয়েও বাড়তে থাকে জল্পনা। এমতাবস্থায় এবার ফের সনিয়া গান্ধীসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দেখা বৈঠক করেন ভোটকুশলী। তবে প্রশান্ত কিশোরর পরামর্শকে বর্তমানে কংগ্রেস যেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে তাতে দলে তার যোগদান শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

শনিবারের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সানিয়াগান্ধী, রাহুলগান্ধীসহ কংগ্রেস ঘনিষ্ঠ অম্বিকা সোনি, দিগি¦জয় সিং, মল্লিকার্জুন খাড়গে, অজয় মাকেন, কে সি বেনুগোপালরাও উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। সূত্রের খবর, প্রথম সারির এই নেতাদের সামনে কংগ্রেসকে নিয়ে নিজের ‘ভিশন’ তুলে ধরেছেন পিকে। কংগ্রেস অন্দরের একটি অংশের দাবি ছিল, পিকে আসন্ন গুজরাট এবং হিমাচল প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের হয়ে কাজ করতে আগ্রহী। বিশেষ করে গুজরাট বিধানসভায় কাজ করতে বিশেষভাবে আগ্রহী তিনি। কংগ্রেসের আর একটি অংশের দাবি, শুধু গুজরাট বা হিমাচল নিয়ে আলোচনার জন্য নয়, সরাসরি কংগ্রেসে যোগ দিতে চেয়ে দেখা করেছেন পিকে। তবে সোনিয়া-পিকে বৈঠকের পর নতুন সমীকরণ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেদিকে নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।