রংপুর নগরীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেহাল দশা

বিভাগীয় নগরী রংপুরের ধাপ মোহাম্মদপুর এলাকায় অবস্থিত ধাপ আটিয়াটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৩ শতক জায়গার ১৬ শতক জায়গাই অবৈধভাবে দখল করে আছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মানু বেগম চাঁদনী। শুধু তাই নয় অবৈধ দখল করা জায়গাটি নিজের নামে রেকর্ডও করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা থেকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানার পরেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এদিকে জায়গার অভাবে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে।

অন্যদিকে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার বেহাল দশা। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী জানে না আমাদের জাতির পিতা কে? প্রধানমন্ত্রী কে? এমনকি অনেকে জাতীয় সংগীতও জানে না।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে দেয়া এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ এবং সরেজমিন বিদ্যালয়টিতে গিয়ে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন মোহাম্মদপুর

এলাকায় অবস্থিত প্রায় ২৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় ধাপ আটিয়াটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের নামে ৩৩ শতক জায়গা কাগজ কলমে থাকলেও অর্ধেক ১৬ শতক জায়গাই দখল করে আছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মানু বেগম চাঁদনী। বিদ্যালয়ের অর্ধেক জায়গাই প্রধান শিক্ষিকা দখল করে রাখায় জায়গার অভাবে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জমি প্রধান শিক্ষিকা মানু বেগম চাঁদনীর পরিবার দান করায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২৫ বছর ধরে তিনিই প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্কুলের কাছেই বাড়ি হওয়ায় তিনি বেশির ভাগ সময় স্কুলে আসে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের। লেখাপড়ার নামে সেখানে শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতার কারণে শিক্ষার্থীরাও স্কুলে আসে না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে কাগজেকলমে সাড়ে ৩শ’ শিক্ষার্থী বাস্তবে অর্ধেক শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই জানে না আমাদের জাতির পিতা কে? প্রধানমন্ত্রী কে? শিক্ষার্থীরা বলেছে তারা জানে না কারণ তাদের শেখানো হয়নি। অনেকে জাতীয় সংগীতও জানে না। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে শিক্ষকরা ঠিক মতো ক্লাশ নেন না। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে এ প্রতিনিধি জানতে চেয়েছিলেন জাতির পিতা কে, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বলেছেন শেখ হাসিনা অনেককে আবার বলেছে তারা জানে না। একই ভাবে দেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বলেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অনেকে তাও বলতে পারেনি। (শিক্ষার্থীদের বক্তব্য ভিডিও করা আছে)।

তবে বিদ্যালয়ে গিয়ে দু’জন নারী শিক্ষিকাকে পাওয়া গেল তারা নিজেদের নাম বলতেও নারাজ। প্রধান শিক্ষিকা কোথায় জানতে চাইলে তারা বলেন, বাসায় আছে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জাতির পিতা আর প্রধানমন্ত্রীর নাম বলতে না পারার কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। বরং স্কুলে ভালোভাবে ক্লাশ নেয়া হয় বলে দাবি তাদের।

এদিকে বিদ্যালয়ে আসা দুই অভিভাবক সালেমা বেগম ও সাহেরা বেগম জানালেন নামই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখানে লেখাপড়ার মান খুবই খারাপ শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাশ নেন না। প্রধান শিক্ষক নিজেও স্কুলে সময় মতো আসেন না। অভিভাবকদের অভিযোগ স্কুলের সীমানা প্রাচীর না থাকায় দুর্ঘটনায় আশঙ্কায় আতঙ্কিত থাকেন তারা। স্কুলের মাঠ নেই অর্ধেক জায়গা দখল করে আছেন প্রধান শিক্ষক, ফলে খেলাধুলা করতে পারে না শিক্ষার্থীরা।

এ ব্যাপারে কয়েকদফা যোগাযোগ করলেও প্রধান শিক্ষিকার সাক্ষাৎ মেলেনি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এএম শাহাজাহান সিদ্দিকের সঙ্গে কথা বলতে তার কার্যালয়ে গেলে তিনি স্কুলের জায়গা দখল করে রাখার অভিযোগ স্বীকার করে বলেন বিষয়টি সমাধান করার জন্য প্রধান শিক্ষককে নিয়ে বৈঠক করে দখল করা জায়গা উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া হবে। স্কুলে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ পাবার কথা জানিয়ে বলেন এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

image
আরও খবর
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত
বিদেশের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন
৭ হাজার শিক্ষকের এমপিওভুক্তির জটিলতার অবসান
রাজধানীতে তারের জঞ্জাল দূর করতে সমন্বয়ের তাগিদ
র‌্যাগ ডের নামে বুলিং-অশ্লীলতা বন্ধে আদালতের নির্দেশ
ধুনটে অবৈধ পুকুর খননে ফসলি জমিতে ভূমি ধস
মুগদার সেই তরুণীকে কানাডা সরকারের হাতে তুলে দিল হাইকোর্ট
প্রত্নতাত্ত্বিক খনন, আবিষ্কৃত প্রাচীন অষ্টকোণাকৃতির স্তূপ, ইটের দেয়াল
লক্ষ্য চব্বিশের রোডম্যাপ সোনিয়া-রাহুলের সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের বৈঠক ঘিরে জল্পনা
জেএমবির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তারজেএমবির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার

সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০২২ , ০৫ বৈশাখ ১৪২৮ ১৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

রংপুর নগরীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেহাল দশা

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

image

বিভাগীয় নগরী রংপুরের ধাপ মোহাম্মদপুর এলাকায় অবস্থিত ধাপ আটিয়াটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৩ শতক জায়গার ১৬ শতক জায়গাই অবৈধভাবে দখল করে আছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মানু বেগম চাঁদনী। শুধু তাই নয় অবৈধ দখল করা জায়গাটি নিজের নামে রেকর্ডও করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা থেকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানার পরেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এদিকে জায়গার অভাবে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে।

অন্যদিকে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার বেহাল দশা। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী জানে না আমাদের জাতির পিতা কে? প্রধানমন্ত্রী কে? এমনকি অনেকে জাতীয় সংগীতও জানে না।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে দেয়া এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ এবং সরেজমিন বিদ্যালয়টিতে গিয়ে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন মোহাম্মদপুর

এলাকায় অবস্থিত প্রায় ২৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় ধাপ আটিয়াটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের নামে ৩৩ শতক জায়গা কাগজ কলমে থাকলেও অর্ধেক ১৬ শতক জায়গাই দখল করে আছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মানু বেগম চাঁদনী। বিদ্যালয়ের অর্ধেক জায়গাই প্রধান শিক্ষিকা দখল করে রাখায় জায়গার অভাবে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জমি প্রধান শিক্ষিকা মানু বেগম চাঁদনীর পরিবার দান করায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২৫ বছর ধরে তিনিই প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্কুলের কাছেই বাড়ি হওয়ায় তিনি বেশির ভাগ সময় স্কুলে আসে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের। লেখাপড়ার নামে সেখানে শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতার কারণে শিক্ষার্থীরাও স্কুলে আসে না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে কাগজেকলমে সাড়ে ৩শ’ শিক্ষার্থী বাস্তবে অর্ধেক শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই জানে না আমাদের জাতির পিতা কে? প্রধানমন্ত্রী কে? শিক্ষার্থীরা বলেছে তারা জানে না কারণ তাদের শেখানো হয়নি। অনেকে জাতীয় সংগীতও জানে না। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে শিক্ষকরা ঠিক মতো ক্লাশ নেন না। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে এ প্রতিনিধি জানতে চেয়েছিলেন জাতির পিতা কে, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বলেছেন শেখ হাসিনা অনেককে আবার বলেছে তারা জানে না। একই ভাবে দেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বলেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অনেকে তাও বলতে পারেনি। (শিক্ষার্থীদের বক্তব্য ভিডিও করা আছে)।

তবে বিদ্যালয়ে গিয়ে দু’জন নারী শিক্ষিকাকে পাওয়া গেল তারা নিজেদের নাম বলতেও নারাজ। প্রধান শিক্ষিকা কোথায় জানতে চাইলে তারা বলেন, বাসায় আছে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জাতির পিতা আর প্রধানমন্ত্রীর নাম বলতে না পারার কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। বরং স্কুলে ভালোভাবে ক্লাশ নেয়া হয় বলে দাবি তাদের।

এদিকে বিদ্যালয়ে আসা দুই অভিভাবক সালেমা বেগম ও সাহেরা বেগম জানালেন নামই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখানে লেখাপড়ার মান খুবই খারাপ শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাশ নেন না। প্রধান শিক্ষক নিজেও স্কুলে সময় মতো আসেন না। অভিভাবকদের অভিযোগ স্কুলের সীমানা প্রাচীর না থাকায় দুর্ঘটনায় আশঙ্কায় আতঙ্কিত থাকেন তারা। স্কুলের মাঠ নেই অর্ধেক জায়গা দখল করে আছেন প্রধান শিক্ষক, ফলে খেলাধুলা করতে পারে না শিক্ষার্থীরা।

এ ব্যাপারে কয়েকদফা যোগাযোগ করলেও প্রধান শিক্ষিকার সাক্ষাৎ মেলেনি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এএম শাহাজাহান সিদ্দিকের সঙ্গে কথা বলতে তার কার্যালয়ে গেলে তিনি স্কুলের জায়গা দখল করে রাখার অভিযোগ স্বীকার করে বলেন বিষয়টি সমাধান করার জন্য প্রধান শিক্ষককে নিয়ে বৈঠক করে দখল করা জায়গা উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া হবে। স্কুলে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ পাবার কথা জানিয়ে বলেন এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।