দখলদার উচ্ছেদের আইনি পথ

সিরাজ প্রামাণিক

আপনার সম্পত্তি যদি কেউ জোর করে দখল করে নেয়, জবরদখল করে রাখে, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আপনাকে স্থাবর সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করে, তাহলে আপনি আপনি অবৈধ দখলকারকে আইনিভাবে উচ্ছেদ করতে পারবেন। তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে।

কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইনানুগভাবে সম্পত্তির স্বত্বের অধিকারী কিংবা মালিক না হয়েও ১২ বছরের অধিককাল দখলের থাকার কারণে তার পক্ষে দখলজনিত স্বত্বের উদ্ভব হয়। কাজেই দখলের মেয়াদ ১২ বছরের কম হলে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে মোকদ্দমা করে সহজেই উচ্ছেদ করা যায়। নতুবা ১২ বছরের ঊর্ধ্বকাল দখলে থাকলে ওই সম্পত্তিতে দখলদার ব্যক্তির অ্যাডভারস পজিশনের স্বত্ব সৃষ্টি হয়।

দখল উদ্ধারের মামলা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা গেলেও সরকারের বিরুদ্ধে এ মামলা চলে না। কারণ কোন ব্যক্তিকে আইনানুগভাবে বেদখল করা হলে এ ক্ষেত্রে এ জাতীয় মামলা আনয়নযোগ্য নয়। আপনাকে মনে রাখতে হবে এখানে জমিতে স্বত্ব, স্বার্থ, হক বিষয়টি আদালত প্রধান্য দেবে না, আদালত দখলি স্বত্বকে প্রাধান্য দেবে বেশি।

সংবিধানের ৪২ নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা আছেÑ আইনের দ্বারা আরোপিত বাধানিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর ও অন্যভাবে বিলি ব্যবস্থা করার অধিকার থাকবে এবং আইনের কর্তৃত্ব ব্যতীত কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বা দখল করা যাবে না। এর কোন কিছু ব্যত্যয় ঘটলে আপনি সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনে আশ্রয় লাভ ও প্রতিকার পাবার যোগ্য বিবেচিত হবেন।

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭-এর ধারা ৯-এ বলা আছে-‘স্থাবর সম্পত্তি হতে যদি কেউ অন্যায়ভাবে দখলচ্যুত হন, তাহলে তিনি অথবা তার মাধ্যমে দাবিদার কোন ব্যক্তি মামলার মাধ্যমে তার দখল পুনরুদ্ধার করতে পারে। তবে জবর দখল স্বীকৃত কোন পন্থা হতে পারে না, সেটা ১২ কেন ১০০ বছর হলেও।

আরেকটি বিষয় জেনে রাখা দরকার যে, জমি থেকে বেদখল হলে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য ফৌজদারি ও দেওয়ানি দুই আদালতে মামলা করা যায়। কোনো ব্যক্তি তার সম্পত্তি থেকে বেদখল হওয়ার দুই মাসের মধ্যে তিনি ওই ব্যক্তিকে বেদখল করার চেষ্টা থেকে বিরত করার জন্য বা সম্পত্তিতে ওই দখলকারী ব্যক্তির প্রবেশ বারিত করে আদেশ প্রদানের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ অথবা ১৪৫ ধারার বিধান অনুসারে মামলা করতে পারবেন। এ ধরনের মামলা অল্প সময়ের মধ্যেই নিষ্পত্তি হয়ে থাকে।

মামলা দায়ের হলে ম্যাজিস্ট্রেট অন্যপক্ষের ওপর সমন জারি করবেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে সম্পত্তির দখলদার নির্ণয় করবেন। পুলিশের মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্তের ভিত্তিতে প্রকৃত দখলদার নির্ণয় করা হতে পারে। এরপর আইনানুগভাবে উচ্ছেদের আদেশ দেয়া হয়। আর বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে, আপনি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চেয়ে দেওয়ানি আদালতে মামলা করতে পারেন। আইনটির ৮ ধারা অনুযায়ী, আপনাকে ওই জমিতে স্বত্ব বা মালিকানা আছে বলে প্রমাণ দিতে হবে। এ ধারার স্বত্ব প্রমাণসহ মামলা করার ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার পর থেকে ১২ বছরের মধ্যে মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জমির মূল্যের ওপর ভিত্তি করে সেই অনুপাতে কোর্ট ফি জমা দিতে হয়।

জমির দখল যার কাছে আছে বা যিনি দখলে আছেন তিনি দখলে থাকবেন এটাই সাধারণ নীতি। কিন্তু কেউ অন্যায় ও বেআইনিভাবে সম্পত্তি থেকে বেদখল হলে সেই অন্যায় বেদখলদারকে জমি থেকে সমূলে উচ্ছেদ করতে খাস দখলের মামলা করতে আইনে বাধা নেই। তবে এ মামলাটি করতে হয় জমি থেকে বেদখল হওয়ার তারিখ থেকে বার বছরের মধ্যে। আর ২০ বছরের অর্জিত ব্যবহারসিদ্ধ অধিকারে কেউ যদি বাধা দান করে, সেই ব্যবহারসিদ্ধ অধিকার ফিরে পেতে বাধা দানের দিন থেকে ২ বছরের মধ্যে মামলা করতে হয়।

একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আপনাদের মধ্যে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ধরুন, আপনি ২০ বছর ধরে আসা-যাওয়ার জন্য রহিম মিয়ার বাড়ির একটি অংশ রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। প্রকাশ্যে শান্তিপূর্ণভাবে আপনার এ চলাচলে রহিম মিয়া কোনদিনই বাধা দেয়নি। কিন্তু হঠাৎ রহিম মিয়া চলাচলের এ পথ বন্ধ করে দেন। আপনি এ পথাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার পর দিন থেকে ২ বছরের মধ্যে রহিম মিয়ার এ অন্যায় বাধা দানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারবেন। এ সময়ের মধ্যে যদি মামলা না করা হয়, তবে আপনি পথাধিকার হারাবেন এবং আপনার চলাচলের রাস্তায় রহিম মিয়ার পূর্ণ অধিকার বর্তাবে।

তবে দখলের বিভিন্ন দিক রয়েছে। যেমন ১। বৈধ দখলদার বা মালিক। ২। মধ্যবর্তী দখল, যা অন্য কারও হয়ে দখল করে রাখে, যেমন এজেন্ট, ৩। অমূর্ত দখল, যেমন আইনি অধিকার বা সুনাম, ৪। গঠনমূলক দখল, যা দখলে না থেকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন ধরনের দখল, ৫। প্রতিকূল দখল, যখন কোন ব্যক্তি ১২ বছর ধরে বাস্তবে দখল করে থাকে এবং সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে থাকে।

আমাদের ‘ভূমি-সংক্রান্ত ১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী যদি কেউ বিনা বাধায় কারও জমি একাধারে ১২ বছর দখলে রাখতে পারে বা ভোগদখল করে রাখতে পারে তবে তিনি ভূমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করতে পারেন। দখলদার যদি আদালতে বিষয়টি প্রমাণ করতে পারেন তবে তিনি ওই জমির মালিকানা পেতে পারেন।’ সে কারণ দখলদার ও ভূমির মালিকের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য এ আইনটি নিঃসন্দেহে প্রসংসার দাবিদার। উচ্চ আদালত বলছেন, অবৈধ দখলকার জমিতে মূল মালিকের বিরুদ্ধে কোন নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার অধিকারী নয়। (৬০ ডিএলআর, ৯)।

৯ ধারার ক্ষেত্রে যেসব দিক বিবেচনা করা হয়, সেগুলো হলোÑবাদী জমিটি দখল করে আসছিলেন কি না, বিবাদী তাকে জোরপূর্বক বেদখল করেছেন কি না, বিবাদী বেআইনিভাবে জমিতে প্রবেশ করেছেন কি না। তবে সরকারের বিরুদ্ধে ৯ ধারায় মোকদ্দমা দায়ের করা যায় না। ৮ ধারার স্বত্ব প্রমাণসহ মামলা করার ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার পর থেকে ১২ বছরের মধ্যে মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে।

এসব প্রতিকারের ক্ষেত্রে জমির মূল্যমানের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট এখতিয়ারাধীন আদালতে মামলা করতে হবে এবং মূল্য অনুপাতে কোর্ট ফি জমা দিতে হবে। ৯ ধারায় মোকদ্দমার ক্ষেত্রে মূল্য অনুপাতে কোর্ট ফির (এডভেলোরেম) অর্ধেক জমা দিতে হয়। উচ্চ আদালত বলছেন, বেআইনিভাবে সদ্য দখলচ্যুত ব্যক্তি উক্ত দখল পুনরুদ্ধারের জন্য ৯ ধারায় মোকদ্দমায় ডিক্রিপ্রাপ্ত হয়ে ডিক্রিজারিতে নালিশি জমিতে দখল নিতে পারেন। প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনক্রমেই ডিক্রিজারিতে বাধা দেয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞার দাবি করতে পারে না। (৪০ ডিএলআর (এডি), ২৫১)।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০২২ , ০৫ বৈশাখ ১৪২৮ ১৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

দখলদার উচ্ছেদের আইনি পথ

সিরাজ প্রামাণিক

আপনার সম্পত্তি যদি কেউ জোর করে দখল করে নেয়, জবরদখল করে রাখে, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আপনাকে স্থাবর সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করে, তাহলে আপনি আপনি অবৈধ দখলকারকে আইনিভাবে উচ্ছেদ করতে পারবেন। তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে।

কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইনানুগভাবে সম্পত্তির স্বত্বের অধিকারী কিংবা মালিক না হয়েও ১২ বছরের অধিককাল দখলের থাকার কারণে তার পক্ষে দখলজনিত স্বত্বের উদ্ভব হয়। কাজেই দখলের মেয়াদ ১২ বছরের কম হলে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে মোকদ্দমা করে সহজেই উচ্ছেদ করা যায়। নতুবা ১২ বছরের ঊর্ধ্বকাল দখলে থাকলে ওই সম্পত্তিতে দখলদার ব্যক্তির অ্যাডভারস পজিশনের স্বত্ব সৃষ্টি হয়।

দখল উদ্ধারের মামলা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা গেলেও সরকারের বিরুদ্ধে এ মামলা চলে না। কারণ কোন ব্যক্তিকে আইনানুগভাবে বেদখল করা হলে এ ক্ষেত্রে এ জাতীয় মামলা আনয়নযোগ্য নয়। আপনাকে মনে রাখতে হবে এখানে জমিতে স্বত্ব, স্বার্থ, হক বিষয়টি আদালত প্রধান্য দেবে না, আদালত দখলি স্বত্বকে প্রাধান্য দেবে বেশি।

সংবিধানের ৪২ নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা আছেÑ আইনের দ্বারা আরোপিত বাধানিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর ও অন্যভাবে বিলি ব্যবস্থা করার অধিকার থাকবে এবং আইনের কর্তৃত্ব ব্যতীত কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বা দখল করা যাবে না। এর কোন কিছু ব্যত্যয় ঘটলে আপনি সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনে আশ্রয় লাভ ও প্রতিকার পাবার যোগ্য বিবেচিত হবেন।

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭-এর ধারা ৯-এ বলা আছে-‘স্থাবর সম্পত্তি হতে যদি কেউ অন্যায়ভাবে দখলচ্যুত হন, তাহলে তিনি অথবা তার মাধ্যমে দাবিদার কোন ব্যক্তি মামলার মাধ্যমে তার দখল পুনরুদ্ধার করতে পারে। তবে জবর দখল স্বীকৃত কোন পন্থা হতে পারে না, সেটা ১২ কেন ১০০ বছর হলেও।

আরেকটি বিষয় জেনে রাখা দরকার যে, জমি থেকে বেদখল হলে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য ফৌজদারি ও দেওয়ানি দুই আদালতে মামলা করা যায়। কোনো ব্যক্তি তার সম্পত্তি থেকে বেদখল হওয়ার দুই মাসের মধ্যে তিনি ওই ব্যক্তিকে বেদখল করার চেষ্টা থেকে বিরত করার জন্য বা সম্পত্তিতে ওই দখলকারী ব্যক্তির প্রবেশ বারিত করে আদেশ প্রদানের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ অথবা ১৪৫ ধারার বিধান অনুসারে মামলা করতে পারবেন। এ ধরনের মামলা অল্প সময়ের মধ্যেই নিষ্পত্তি হয়ে থাকে।

মামলা দায়ের হলে ম্যাজিস্ট্রেট অন্যপক্ষের ওপর সমন জারি করবেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে সম্পত্তির দখলদার নির্ণয় করবেন। পুলিশের মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্তের ভিত্তিতে প্রকৃত দখলদার নির্ণয় করা হতে পারে। এরপর আইনানুগভাবে উচ্ছেদের আদেশ দেয়া হয়। আর বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে, আপনি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চেয়ে দেওয়ানি আদালতে মামলা করতে পারেন। আইনটির ৮ ধারা অনুযায়ী, আপনাকে ওই জমিতে স্বত্ব বা মালিকানা আছে বলে প্রমাণ দিতে হবে। এ ধারার স্বত্ব প্রমাণসহ মামলা করার ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার পর থেকে ১২ বছরের মধ্যে মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জমির মূল্যের ওপর ভিত্তি করে সেই অনুপাতে কোর্ট ফি জমা দিতে হয়।

জমির দখল যার কাছে আছে বা যিনি দখলে আছেন তিনি দখলে থাকবেন এটাই সাধারণ নীতি। কিন্তু কেউ অন্যায় ও বেআইনিভাবে সম্পত্তি থেকে বেদখল হলে সেই অন্যায় বেদখলদারকে জমি থেকে সমূলে উচ্ছেদ করতে খাস দখলের মামলা করতে আইনে বাধা নেই। তবে এ মামলাটি করতে হয় জমি থেকে বেদখল হওয়ার তারিখ থেকে বার বছরের মধ্যে। আর ২০ বছরের অর্জিত ব্যবহারসিদ্ধ অধিকারে কেউ যদি বাধা দান করে, সেই ব্যবহারসিদ্ধ অধিকার ফিরে পেতে বাধা দানের দিন থেকে ২ বছরের মধ্যে মামলা করতে হয়।

একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আপনাদের মধ্যে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ধরুন, আপনি ২০ বছর ধরে আসা-যাওয়ার জন্য রহিম মিয়ার বাড়ির একটি অংশ রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। প্রকাশ্যে শান্তিপূর্ণভাবে আপনার এ চলাচলে রহিম মিয়া কোনদিনই বাধা দেয়নি। কিন্তু হঠাৎ রহিম মিয়া চলাচলের এ পথ বন্ধ করে দেন। আপনি এ পথাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার পর দিন থেকে ২ বছরের মধ্যে রহিম মিয়ার এ অন্যায় বাধা দানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারবেন। এ সময়ের মধ্যে যদি মামলা না করা হয়, তবে আপনি পথাধিকার হারাবেন এবং আপনার চলাচলের রাস্তায় রহিম মিয়ার পূর্ণ অধিকার বর্তাবে।

তবে দখলের বিভিন্ন দিক রয়েছে। যেমন ১। বৈধ দখলদার বা মালিক। ২। মধ্যবর্তী দখল, যা অন্য কারও হয়ে দখল করে রাখে, যেমন এজেন্ট, ৩। অমূর্ত দখল, যেমন আইনি অধিকার বা সুনাম, ৪। গঠনমূলক দখল, যা দখলে না থেকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন ধরনের দখল, ৫। প্রতিকূল দখল, যখন কোন ব্যক্তি ১২ বছর ধরে বাস্তবে দখল করে থাকে এবং সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে থাকে।

আমাদের ‘ভূমি-সংক্রান্ত ১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী যদি কেউ বিনা বাধায় কারও জমি একাধারে ১২ বছর দখলে রাখতে পারে বা ভোগদখল করে রাখতে পারে তবে তিনি ভূমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করতে পারেন। দখলদার যদি আদালতে বিষয়টি প্রমাণ করতে পারেন তবে তিনি ওই জমির মালিকানা পেতে পারেন।’ সে কারণ দখলদার ও ভূমির মালিকের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য এ আইনটি নিঃসন্দেহে প্রসংসার দাবিদার। উচ্চ আদালত বলছেন, অবৈধ দখলকার জমিতে মূল মালিকের বিরুদ্ধে কোন নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার অধিকারী নয়। (৬০ ডিএলআর, ৯)।

৯ ধারার ক্ষেত্রে যেসব দিক বিবেচনা করা হয়, সেগুলো হলোÑবাদী জমিটি দখল করে আসছিলেন কি না, বিবাদী তাকে জোরপূর্বক বেদখল করেছেন কি না, বিবাদী বেআইনিভাবে জমিতে প্রবেশ করেছেন কি না। তবে সরকারের বিরুদ্ধে ৯ ধারায় মোকদ্দমা দায়ের করা যায় না। ৮ ধারার স্বত্ব প্রমাণসহ মামলা করার ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার পর থেকে ১২ বছরের মধ্যে মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে।

এসব প্রতিকারের ক্ষেত্রে জমির মূল্যমানের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট এখতিয়ারাধীন আদালতে মামলা করতে হবে এবং মূল্য অনুপাতে কোর্ট ফি জমা দিতে হবে। ৯ ধারায় মোকদ্দমার ক্ষেত্রে মূল্য অনুপাতে কোর্ট ফির (এডভেলোরেম) অর্ধেক জমা দিতে হয়। উচ্চ আদালত বলছেন, বেআইনিভাবে সদ্য দখলচ্যুত ব্যক্তি উক্ত দখল পুনরুদ্ধারের জন্য ৯ ধারায় মোকদ্দমায় ডিক্রিপ্রাপ্ত হয়ে ডিক্রিজারিতে নালিশি জমিতে দখল নিতে পারেন। প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনক্রমেই ডিক্রিজারিতে বাধা দেয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞার দাবি করতে পারে না। (৪০ ডিএলআর (এডি), ২৫১)।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]