ধনু নদের পানি বিপদসীমার ওপরে বাঁধে ফাটল আতঙ্কে হাওরের কৃষক

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে দ্রুতগতিতে বাড়ছে ধনু নদের পানি। গত রবিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল পর্যন্ত বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে খালিয়াজুরী উপজেলার ফাটলকৃত কীর্তনখোলাসহ বিভিন্ন হাওড়ের ফসল রক্ষা বেরিবাঁধ। ছুঁই ছুঁই করছে বাঁধের শেষাংশ। যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে অথবা পানি উপচে হাওড়ের ফসল তলিয়ে যাওয়ার অশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। খালিয়াজুরীর ৭ কিলোমিটার কীর্তনখোলা বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে শুধু নেত্রকোনাই নয় সুনামগঞ্জের শাল্লার হাওড়ের ফসলও তলিয়ে যাবে বলে জানান কৃষকরা। যে কারণে ৫ কিলোমিাটর হেঁটে এসে প্রতিদিন বাঁধে মেরামত কাজ করছেন বলে জানান শাল্লা থেকে আসা কৃষকরা। তারা বলেন ৩০ থেকে ৪০ জন প্রতিদিন আসছেন বাঁধে কাজ করতে। এতে কিছু পারিশ্রমিকও পাচ্ছেন। অন্যদিকে নিজেদের কষ্টের ফসল রক্ষার চেষ্টাও করছেন। এমন অবস্থায় গত কয়েকদিন ধরেই তারা এই বাঁধটি রক্ষায় প্রাণপ্রণ চেষ্টা চালিয়েছেন। যদিও বাঁধগুলো এখানো অক্ষত রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা। তবে নতুন করে পহাড়ি ঢলে শনিবার বিকাল থেকে দ্রুতগতিতে হাওড়াঞ্চল খালিয়াজুরীর বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। রবিবার বিকেলে বিপদ সীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার আতঙ্কে দিন কাটছে হাওড়বাসীর। তাই স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় বস্তায় ভরে মাটি দিচ্ছেন বাঁধের বিভিন্ন অংশে। কারণ এই বাঁধ শুধুমাত্র নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চল-মদন-মোহনগঞ্জ খালিয়াজুরী ছাড়াও সুনামগঞ্জের দিরাই, শাল্লার বেশকিছু হাওড়ের জমি রক্ষা করে। কৃষকরা জানান, আগাম জাতের ব্রি ২৮ ধান পাকলেও হাইব্রিড ২৯ সহ অন্যান্য ধান পরিপক্ক হতে এখনো সময় লাগবে আরো ৮ থেকে ১০ দিন। তারপরও গুখাদ্যের কথা চিন্তা করে ইতোমধ্যে কাঁচা ধানই কেটে ফেলছেন তারা।

খালিয়াজুরী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম আরিফুল ইসলাম জানান, তারা বাঁধের উপরই রয়েছেন। পানি ছুঁই ছুঁই করছে। বাঁধ এখনো টিকিয়ে রেখেছেন। বাকি চেষ্টাও করে যাচ্ছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, সর্বোচ্চ চেষ্টা তারা করছেন। কিন্তু যেভাবে ধনুতে পানি বেড়েই যাচ্ছে বাঁধ উপচে পানি ঢুকতে পারে যে কোন সময়। তারপরও ফসল রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করেই যাচ্ছেন তারা। জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮শ ২৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এরমাঝে শুধুমাত্র হাওড়েই আবাদ হয়েছে ৪১ হাজার হেক্টর। ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত কাঁচা পাঁকা প্রায় ৫৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে দাবি কৃষি বিভাগের। তবে মাঠের বাস্তবতায় এখনো ধান পরিপূর্ণ হতে এক সপ্তাহের ওপরে লাগবে বলছেন কৃষকরা। পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে কাঁচা ধানই কাটছেন তারা। যে কারণে ধানের দাম একেবারেই নিম্নমুখী। সব মিলিয়ে কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে রয়েছে বলে জানান মল্লিকপুর গ্রামের জলি তালুকদার, নিবারুণ তালুকদার, মেন্দীপুর ও চাকুয়া, খালিয়াজুরী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অসংখ্য কৃষক কৃষাণি। এমতাবস্থায় রবিবার বিকেলে হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন বাঁধগুলো পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক কাজি মো. আব্দুর রহমান, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী, কৃষি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।

মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২ , ০৬ বৈশাখ ১৪২৮ ১৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

ধনু নদের পানি বিপদসীমার ওপরে বাঁধে ফাটল আতঙ্কে হাওরের কৃষক

সোহান আহম্মেদ কাকন, নেত্রকোনা

image

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে দ্রুতগতিতে বাড়ছে ধনু নদের পানি। গত রবিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল পর্যন্ত বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে খালিয়াজুরী উপজেলার ফাটলকৃত কীর্তনখোলাসহ বিভিন্ন হাওড়ের ফসল রক্ষা বেরিবাঁধ। ছুঁই ছুঁই করছে বাঁধের শেষাংশ। যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে অথবা পানি উপচে হাওড়ের ফসল তলিয়ে যাওয়ার অশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। খালিয়াজুরীর ৭ কিলোমিটার কীর্তনখোলা বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে শুধু নেত্রকোনাই নয় সুনামগঞ্জের শাল্লার হাওড়ের ফসলও তলিয়ে যাবে বলে জানান কৃষকরা। যে কারণে ৫ কিলোমিাটর হেঁটে এসে প্রতিদিন বাঁধে মেরামত কাজ করছেন বলে জানান শাল্লা থেকে আসা কৃষকরা। তারা বলেন ৩০ থেকে ৪০ জন প্রতিদিন আসছেন বাঁধে কাজ করতে। এতে কিছু পারিশ্রমিকও পাচ্ছেন। অন্যদিকে নিজেদের কষ্টের ফসল রক্ষার চেষ্টাও করছেন। এমন অবস্থায় গত কয়েকদিন ধরেই তারা এই বাঁধটি রক্ষায় প্রাণপ্রণ চেষ্টা চালিয়েছেন। যদিও বাঁধগুলো এখানো অক্ষত রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা। তবে নতুন করে পহাড়ি ঢলে শনিবার বিকাল থেকে দ্রুতগতিতে হাওড়াঞ্চল খালিয়াজুরীর বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। রবিবার বিকেলে বিপদ সীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার আতঙ্কে দিন কাটছে হাওড়বাসীর। তাই স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় বস্তায় ভরে মাটি দিচ্ছেন বাঁধের বিভিন্ন অংশে। কারণ এই বাঁধ শুধুমাত্র নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চল-মদন-মোহনগঞ্জ খালিয়াজুরী ছাড়াও সুনামগঞ্জের দিরাই, শাল্লার বেশকিছু হাওড়ের জমি রক্ষা করে। কৃষকরা জানান, আগাম জাতের ব্রি ২৮ ধান পাকলেও হাইব্রিড ২৯ সহ অন্যান্য ধান পরিপক্ক হতে এখনো সময় লাগবে আরো ৮ থেকে ১০ দিন। তারপরও গুখাদ্যের কথা চিন্তা করে ইতোমধ্যে কাঁচা ধানই কেটে ফেলছেন তারা।

খালিয়াজুরী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম আরিফুল ইসলাম জানান, তারা বাঁধের উপরই রয়েছেন। পানি ছুঁই ছুঁই করছে। বাঁধ এখনো টিকিয়ে রেখেছেন। বাকি চেষ্টাও করে যাচ্ছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, সর্বোচ্চ চেষ্টা তারা করছেন। কিন্তু যেভাবে ধনুতে পানি বেড়েই যাচ্ছে বাঁধ উপচে পানি ঢুকতে পারে যে কোন সময়। তারপরও ফসল রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করেই যাচ্ছেন তারা। জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮শ ২৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এরমাঝে শুধুমাত্র হাওড়েই আবাদ হয়েছে ৪১ হাজার হেক্টর। ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত কাঁচা পাঁকা প্রায় ৫৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে দাবি কৃষি বিভাগের। তবে মাঠের বাস্তবতায় এখনো ধান পরিপূর্ণ হতে এক সপ্তাহের ওপরে লাগবে বলছেন কৃষকরা। পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে কাঁচা ধানই কাটছেন তারা। যে কারণে ধানের দাম একেবারেই নিম্নমুখী। সব মিলিয়ে কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে রয়েছে বলে জানান মল্লিকপুর গ্রামের জলি তালুকদার, নিবারুণ তালুকদার, মেন্দীপুর ও চাকুয়া, খালিয়াজুরী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অসংখ্য কৃষক কৃষাণি। এমতাবস্থায় রবিবার বিকেলে হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন বাঁধগুলো পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক কাজি মো. আব্দুর রহমান, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী, কৃষি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।