অযৌক্তিক দাম নিলে ব্যবস্থা: ভোক্তা অধিকার

পাইকারি বাজার পেরুলেই সবজির দাম বেড়ে তিনগুণ

পাইকারি বাজার থেকে বড়জোড় ১৫-২০ কিলোমিটার দূরুত্বে খুচরা বাজারগুলো কিন্তু সেই কাঁচাপণ্যগুলোই খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ দামে। এমন চিত্র শরীয়তপুরের প্রতিটি খুচরা বাজারের। পণ্যের এমন দামে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক আর অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে ভোক্তাকে। বাজার মনিটরিং বাড়ানোর দাবি ভোক্তা ও কৃষকদের। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে অযৌক্তিক দাম নেওয়ার সুযোগ নেই, এক্ষেত্রে নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সমবায় ভিত্তিক মিরাশার চাষি বাজার। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত কাঁচাপণ্যের পাইকারি কেনাবেচা হয়। কৃষক জমি থেকে পণ্য নিয়ে বাজার আসনে। নিজের সেই উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বিক্রি করছেন পাইকারের কাছে। পাইকারি বাজারের সেই পণ্যই বিক্রি হচ্ছে শরীয়তপুর শহরের বিভিন্ন খুচরা বাজারে। একই পণ্য কোন বিক্রেতা নিজেই খুচরা বাজারে বিক্রি করছেন আবার আড়তদারের কাছ থেকে কিনে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করছেন অনেক বিক্রেতা কিন্তু হাত ঘুরে পণ্যের দামের তফাৎ দ্বিগুণ থেকে হয়ে যাচ্ছে তিনগুণ পর্যন্ত। গত বৃহস্পতিবার জাজিরার মিরাশার পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৩০ টাকা হতে ৩৫ টাকা দামে বিক্রি করছেন কৃষক। ওই সবজি ২০ কিলোমিটার দূরত্বের জেলা শহরের বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ৯০ হতে ১০০ টাকা কেজি দরে। শুধু কাঁচা মরিচই নয় সকল প্রকার সবজিই এমন দুই-তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। শুক্রবার শরীয়তপুর জেলা শহরসহ অন্তত ১০টি বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। কৃষক কম দামে বিক্রি করলেও ক্রেতা পর্যায়ে কয়েকগুণ বেশি দামে ক্রয় করতে হচ্ছে। কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করে ভোক্তা পর্যায়ে আসতে তিন-চার দফা হাত বদলের কারণে এভাবে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বলছেন ব্যবসায়ীরা। গত বৃহস্পতিবার বিকালে মিরাশার চাষিবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষক প্রতিকেজি বেগুন ৩০ হতে ৩৫ টাকা বিক্রি করছেন আর তা খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ টাকা হতে ৭০ টাকা কেজি। প্রতিকেজি ঢেঁড়স ১০ হতে ১১ টাকা দামে বিক্রি করছেন কৃষক তা শরীয়তপুরের বিভিন্ন হাট বাজারে খুচরা পর্যায়ে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে। আকারভেদে প্রতিটি লাউ কৃষক বিক্রি করছেন ১৫ হতে ২০ টাকা দরে, খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ হতে ৬০ টাকায়। প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ৬ টাকা হতে ৮ টাকা যা খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে ২০ হতে ২৫ টাকা দরে। করলা প্রতি কেজি ১৮ টাকা হতে ২০ টাকা যা খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে ৪০ টাকা হতে ৪৫ টাকা দরে। টমেটো ১০টাকা হতে ১২ টাকা যা খুচরা বাজারে তা ২৫ টাকা হতে ৩০ টাকা। শশা ১৫ হতে ১৮ টাকা যা খুচরা বাজারে ২৫ হতে ৩০ টাকা। সজনেডাটা কেজি প্রতি ৩৫ হতে ৪০ টাকা যা খুচরা বাজারে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ধুন্দল বা ঝিঙে ৩০ টাকা যা খুচরা বাজারে তা ৬৫ হতে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলা প্রতি হালি ১০টাকা হতে ১২ টাকা যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা হতে ৩০ টাকায়। ডাটা প্রতি আটি ৫ টাকা যা খুচরা বাজারে তা ২৫ টাকা। ধনিয়াপাতা প্রতি কেজি দর ৭০ হতে ৮০ টাকা যা খুচরা বাজারে তা বিক্রি করা হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে ।

মিরাশার চাষি বাজারে কাঁচামাল কিনতে আসা মকবুল হোসেন বলেন, এই পাইকারি বাজার থেকেই আমি সবজি কিনে খুচরা বাজারে নিয়ে বিক্রি করি। আজ(বৃহস্পতিবার) কাঁচামরিচ ৩০ টাকা দরে, টমেটো ১০টাকা দরে, করলা ১৮ টাকা দরে, শশা ১৮টাকা দরে এবং ঢেঁড়স ১২ দরে কিনেছি। এরপর আড়তদারি ও পরিবহন খরচ যোগ হবে তারপর লাভের অংশ। জাজিরার পূর্ব নাওডোবা সাকিম আলী চৌকিদার কান্দি গ্রামের কৃষক নুরুল হক চৌকিদার (৪৫), দুই বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন। তিনি বৃহস্পতিবার মিরাশার চাষিবাজারে ১২০ কেজি কুমড়া বিক্রি করেছেন প্রতি কেজি ৬ টাকা দামে। নুরুল হক বলেন, জমি থেকে বাজার পর্যন্ত আনার শ্রমিক ও ভাড়া যে খরচ তাও বিক্রি করে পেলাম না। এভাবে যদি আমরা ঠকতে থাকি তা হলে তো এক সময় সবজি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। গত শুক্রবার সকালে শরীয়তপুর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, মিরাশার চাষি বাজারে যে সব পণ্য বিক্রি হয়েছে তা এসব বাজারে খুচরা পর্যায়ে দ্বিগুণ তিনগুণ দামে বিক্রি করা হচ্ছে। শহরের পালং বাজারে সবজি বিক্রেতা মো. জলিল ভোক্তা পর্যায়ে কাঁচাপণ্য বিক্রি করছেন। তার দোকানে সব ধরনের পণ্যই থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ক্রেতা আসছেন আর দর দাম করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কথা হয় জলিলের সাথে তিনি জানান, আজকের বাজার দর কাঁচামরিচ ৯০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এছাড়া করলা ৪৫টাকা, শশা ৩০ টাকা, টমেটো ২৫ টাকা, সজনেডাটা ৭০টাকা, ধনিয়াপাতা ২০০টাকা এবং ঢেঁড়স ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। পাইকারি ও খুচরা বাজারের দরের বিষয়ে জলিলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ভাই আমরা কিনে আনি আড়তদারের কাছ থেকে তারপর লাভ যোগ করে বিক্রি করি। বেশি তো বিক্রি করছি না। পালং বাজারের আড়তদার দেলোয়ার হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারের পণ্যটা আনতে পরিবহন খরচ তারপর মাল ঘাটতি যায় এরপর আমরা বিক্রি করি।

মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২ , ০৬ বৈশাখ ১৪২৮ ১৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

অযৌক্তিক দাম নিলে ব্যবস্থা: ভোক্তা অধিকার

পাইকারি বাজার পেরুলেই সবজির দাম বেড়ে তিনগুণ

কাজী মনীরুজ্জামান, শরীয়তপুর

image

পাইকারি বাজার থেকে বড়জোড় ১৫-২০ কিলোমিটার দূরুত্বে খুচরা বাজারগুলো কিন্তু সেই কাঁচাপণ্যগুলোই খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ দামে। এমন চিত্র শরীয়তপুরের প্রতিটি খুচরা বাজারের। পণ্যের এমন দামে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক আর অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে ভোক্তাকে। বাজার মনিটরিং বাড়ানোর দাবি ভোক্তা ও কৃষকদের। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে অযৌক্তিক দাম নেওয়ার সুযোগ নেই, এক্ষেত্রে নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সমবায় ভিত্তিক মিরাশার চাষি বাজার। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত কাঁচাপণ্যের পাইকারি কেনাবেচা হয়। কৃষক জমি থেকে পণ্য নিয়ে বাজার আসনে। নিজের সেই উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বিক্রি করছেন পাইকারের কাছে। পাইকারি বাজারের সেই পণ্যই বিক্রি হচ্ছে শরীয়তপুর শহরের বিভিন্ন খুচরা বাজারে। একই পণ্য কোন বিক্রেতা নিজেই খুচরা বাজারে বিক্রি করছেন আবার আড়তদারের কাছ থেকে কিনে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করছেন অনেক বিক্রেতা কিন্তু হাত ঘুরে পণ্যের দামের তফাৎ দ্বিগুণ থেকে হয়ে যাচ্ছে তিনগুণ পর্যন্ত। গত বৃহস্পতিবার জাজিরার মিরাশার পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৩০ টাকা হতে ৩৫ টাকা দামে বিক্রি করছেন কৃষক। ওই সবজি ২০ কিলোমিটার দূরত্বের জেলা শহরের বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ৯০ হতে ১০০ টাকা কেজি দরে। শুধু কাঁচা মরিচই নয় সকল প্রকার সবজিই এমন দুই-তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। শুক্রবার শরীয়তপুর জেলা শহরসহ অন্তত ১০টি বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। কৃষক কম দামে বিক্রি করলেও ক্রেতা পর্যায়ে কয়েকগুণ বেশি দামে ক্রয় করতে হচ্ছে। কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করে ভোক্তা পর্যায়ে আসতে তিন-চার দফা হাত বদলের কারণে এভাবে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বলছেন ব্যবসায়ীরা। গত বৃহস্পতিবার বিকালে মিরাশার চাষিবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষক প্রতিকেজি বেগুন ৩০ হতে ৩৫ টাকা বিক্রি করছেন আর তা খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ টাকা হতে ৭০ টাকা কেজি। প্রতিকেজি ঢেঁড়স ১০ হতে ১১ টাকা দামে বিক্রি করছেন কৃষক তা শরীয়তপুরের বিভিন্ন হাট বাজারে খুচরা পর্যায়ে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে। আকারভেদে প্রতিটি লাউ কৃষক বিক্রি করছেন ১৫ হতে ২০ টাকা দরে, খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ হতে ৬০ টাকায়। প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ৬ টাকা হতে ৮ টাকা যা খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে ২০ হতে ২৫ টাকা দরে। করলা প্রতি কেজি ১৮ টাকা হতে ২০ টাকা যা খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে ৪০ টাকা হতে ৪৫ টাকা দরে। টমেটো ১০টাকা হতে ১২ টাকা যা খুচরা বাজারে তা ২৫ টাকা হতে ৩০ টাকা। শশা ১৫ হতে ১৮ টাকা যা খুচরা বাজারে ২৫ হতে ৩০ টাকা। সজনেডাটা কেজি প্রতি ৩৫ হতে ৪০ টাকা যা খুচরা বাজারে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ধুন্দল বা ঝিঙে ৩০ টাকা যা খুচরা বাজারে তা ৬৫ হতে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলা প্রতি হালি ১০টাকা হতে ১২ টাকা যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা হতে ৩০ টাকায়। ডাটা প্রতি আটি ৫ টাকা যা খুচরা বাজারে তা ২৫ টাকা। ধনিয়াপাতা প্রতি কেজি দর ৭০ হতে ৮০ টাকা যা খুচরা বাজারে তা বিক্রি করা হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে ।

মিরাশার চাষি বাজারে কাঁচামাল কিনতে আসা মকবুল হোসেন বলেন, এই পাইকারি বাজার থেকেই আমি সবজি কিনে খুচরা বাজারে নিয়ে বিক্রি করি। আজ(বৃহস্পতিবার) কাঁচামরিচ ৩০ টাকা দরে, টমেটো ১০টাকা দরে, করলা ১৮ টাকা দরে, শশা ১৮টাকা দরে এবং ঢেঁড়স ১২ দরে কিনেছি। এরপর আড়তদারি ও পরিবহন খরচ যোগ হবে তারপর লাভের অংশ। জাজিরার পূর্ব নাওডোবা সাকিম আলী চৌকিদার কান্দি গ্রামের কৃষক নুরুল হক চৌকিদার (৪৫), দুই বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন। তিনি বৃহস্পতিবার মিরাশার চাষিবাজারে ১২০ কেজি কুমড়া বিক্রি করেছেন প্রতি কেজি ৬ টাকা দামে। নুরুল হক বলেন, জমি থেকে বাজার পর্যন্ত আনার শ্রমিক ও ভাড়া যে খরচ তাও বিক্রি করে পেলাম না। এভাবে যদি আমরা ঠকতে থাকি তা হলে তো এক সময় সবজি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। গত শুক্রবার সকালে শরীয়তপুর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, মিরাশার চাষি বাজারে যে সব পণ্য বিক্রি হয়েছে তা এসব বাজারে খুচরা পর্যায়ে দ্বিগুণ তিনগুণ দামে বিক্রি করা হচ্ছে। শহরের পালং বাজারে সবজি বিক্রেতা মো. জলিল ভোক্তা পর্যায়ে কাঁচাপণ্য বিক্রি করছেন। তার দোকানে সব ধরনের পণ্যই থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ক্রেতা আসছেন আর দর দাম করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কথা হয় জলিলের সাথে তিনি জানান, আজকের বাজার দর কাঁচামরিচ ৯০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এছাড়া করলা ৪৫টাকা, শশা ৩০ টাকা, টমেটো ২৫ টাকা, সজনেডাটা ৭০টাকা, ধনিয়াপাতা ২০০টাকা এবং ঢেঁড়স ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। পাইকারি ও খুচরা বাজারের দরের বিষয়ে জলিলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ভাই আমরা কিনে আনি আড়তদারের কাছ থেকে তারপর লাভ যোগ করে বিক্রি করি। বেশি তো বিক্রি করছি না। পালং বাজারের আড়তদার দেলোয়ার হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারের পণ্যটা আনতে পরিবহন খরচ তারপর মাল ঘাটতি যায় এরপর আমরা বিক্রি করি।