৩৬ বছর পত্রিকা বিক্রি করে সংসারে সচ্ছলতা আসেনি

৬৬ বছরেও বয়স্ক ভাতা মেলেনি শেখর চন্দ্রের

পত্রিকার পাঠক মহলে এক পরিচিত নাম শেখর চন্দ্র বর্মন। যাকে পত্রিকার হকার বলে চেনেন এমনকি তাকে অনেক সময় ডাকা হয় ‘এই পেপার’, ‘ওই পত্রিকা’ ইত্যাদি নামে। উলিপুর পৌরসভার পূর্ব নাওডাঙ্গা মহেশের বাজার এলাকার সুরেন্দ্র নাথের পুত্র শেখর চন্দ্র বর্মণ। তিনি দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে হকারী করে আসছেন।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে প্রেসক্লাবের সামনে কথা হয় শেখর চন্দ্র বর্মনের (৬৬) সঙ্গে। তিনি জানান, আমার ছোট ভাই লক্ষিকান্ত বর্মণ বগুড়াতে পত্রিকার হকারী করছিলেন। বাড়িতে এসে আমার অভাব অনটনের কথা জানতে পারে। এরপর সে আমাকে পত্রিকা বিক্রি করার পরামর্শ দেন। তারপর থেকেই পত্রিকা বিক্রির কাজ শুরু করি। তিনি বলেন, প্রথমের দিকে হেঁটে হেঁটে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে মানুষের বাড়ি, দোকান ও অফিসে গিয়ে পত্রিকা বিলি করেছি। দীর্ঘ সময় পর সাইকেলের মাধ্যমে পত্রিকা বিক্রি করি। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় বা কনকনে শীত, যাই থাকুক না কেনো, সেই কাক ডাকা ভোরে বেড়িয়ে পড়ি। এরপর পাঠকের দ্বারে দ্বারে পত্রিকা পৌঁছে দিতে হয়। উলিপুর উপজেলা ও চিলমারী উপজেলায় পত্রিকা বিক্রি করেন তিনি। তার জীবিকার একমাত্র উৎস পত্রিকা বিক্রয় থেকে উপার্জিত অর্থ। তিনি আরও বলেন, ১৯৫৬ সালে জন্ম তার, বর্তমানে ৫ জনের সংসার, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসার তার। পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চলে, বড় ছেলে লক্ষন চন্দ্র তার মতো পত্রিকা বিক্রি করেন, ছোট ছেলে কাজ করেন ফার্মেসিতে। তারা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পৃথকভাবে বাস করেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মানুষের অধিকার আদায়ের খবর বিলি করলেও আমার অভাব অনটনের কথা কাউকে বলতে পারি না। বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য কয়েকবার স্থানীয় কাউন্সিলের কাছে গিয়েও কাজ হয়নি। বর্তমানে বয়স বেড়েছে, আগের মতো আর ছুটতে পারি না । তবুও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দোকানপাটসহ বিভিন্নস্থানে পত্রিকা বিলি ও বিক্রি করে কেটে যায় দিনের পাঁচ-ছয় ঘণ্টা। পত্রিকা বিক্রি করে মাস শেষে যা আয় করি, তা দিয়েই কোন রকম সংসার চালাই। পত্রিকা হকার শেখর চন্দ্র বর্মন বলেন, আগের মতো আর পত্রিকা এখন চলে না, গত দুই বৎসর করোনাভাইরাসের কারণে পত্রিকা বিক্রি করতে হিমশিত খেতে হয় হয়েছে। সবার হাতে হাতে মোবাইল ও ইন্টারনেট থাকায় সকলে সেখানেই খবর পড়ে। আগের চেয়ে এখন পত্রিকা কম চলে। তবুও পত্রিকা বিক্রি করছি, নিজেদের খরচ বাড়লেও পত্রিকার দামও আমাদের পাওনা তো বাড়ে না। বছরে দুইটি ঈদ ও একটি পূজোয় পত্রিকার হকাররা পান না কোন অতিরিক্ত মূল্য বা বাড়তি সুযোগ সুবিধা।

মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২ , ০৬ বৈশাখ ১৪২৮ ১৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

৩৬ বছর পত্রিকা বিক্রি করে সংসারে সচ্ছলতা আসেনি

৬৬ বছরেও বয়স্ক ভাতা মেলেনি শেখর চন্দ্রের

সংবাদদাতা, উলিপুর (কুড়িগ্রাম)

image

পত্রিকার পাঠক মহলে এক পরিচিত নাম শেখর চন্দ্র বর্মন। যাকে পত্রিকার হকার বলে চেনেন এমনকি তাকে অনেক সময় ডাকা হয় ‘এই পেপার’, ‘ওই পত্রিকা’ ইত্যাদি নামে। উলিপুর পৌরসভার পূর্ব নাওডাঙ্গা মহেশের বাজার এলাকার সুরেন্দ্র নাথের পুত্র শেখর চন্দ্র বর্মণ। তিনি দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে হকারী করে আসছেন।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে প্রেসক্লাবের সামনে কথা হয় শেখর চন্দ্র বর্মনের (৬৬) সঙ্গে। তিনি জানান, আমার ছোট ভাই লক্ষিকান্ত বর্মণ বগুড়াতে পত্রিকার হকারী করছিলেন। বাড়িতে এসে আমার অভাব অনটনের কথা জানতে পারে। এরপর সে আমাকে পত্রিকা বিক্রি করার পরামর্শ দেন। তারপর থেকেই পত্রিকা বিক্রির কাজ শুরু করি। তিনি বলেন, প্রথমের দিকে হেঁটে হেঁটে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে মানুষের বাড়ি, দোকান ও অফিসে গিয়ে পত্রিকা বিলি করেছি। দীর্ঘ সময় পর সাইকেলের মাধ্যমে পত্রিকা বিক্রি করি। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় বা কনকনে শীত, যাই থাকুক না কেনো, সেই কাক ডাকা ভোরে বেড়িয়ে পড়ি। এরপর পাঠকের দ্বারে দ্বারে পত্রিকা পৌঁছে দিতে হয়। উলিপুর উপজেলা ও চিলমারী উপজেলায় পত্রিকা বিক্রি করেন তিনি। তার জীবিকার একমাত্র উৎস পত্রিকা বিক্রয় থেকে উপার্জিত অর্থ। তিনি আরও বলেন, ১৯৫৬ সালে জন্ম তার, বর্তমানে ৫ জনের সংসার, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসার তার। পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চলে, বড় ছেলে লক্ষন চন্দ্র তার মতো পত্রিকা বিক্রি করেন, ছোট ছেলে কাজ করেন ফার্মেসিতে। তারা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পৃথকভাবে বাস করেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মানুষের অধিকার আদায়ের খবর বিলি করলেও আমার অভাব অনটনের কথা কাউকে বলতে পারি না। বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য কয়েকবার স্থানীয় কাউন্সিলের কাছে গিয়েও কাজ হয়নি। বর্তমানে বয়স বেড়েছে, আগের মতো আর ছুটতে পারি না । তবুও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দোকানপাটসহ বিভিন্নস্থানে পত্রিকা বিলি ও বিক্রি করে কেটে যায় দিনের পাঁচ-ছয় ঘণ্টা। পত্রিকা বিক্রি করে মাস শেষে যা আয় করি, তা দিয়েই কোন রকম সংসার চালাই। পত্রিকা হকার শেখর চন্দ্র বর্মন বলেন, আগের মতো আর পত্রিকা এখন চলে না, গত দুই বৎসর করোনাভাইরাসের কারণে পত্রিকা বিক্রি করতে হিমশিত খেতে হয় হয়েছে। সবার হাতে হাতে মোবাইল ও ইন্টারনেট থাকায় সকলে সেখানেই খবর পড়ে। আগের চেয়ে এখন পত্রিকা কম চলে। তবুও পত্রিকা বিক্রি করছি, নিজেদের খরচ বাড়লেও পত্রিকার দামও আমাদের পাওনা তো বাড়ে না। বছরে দুইটি ঈদ ও একটি পূজোয় পত্রিকার হকাররা পান না কোন অতিরিক্ত মূল্য বা বাড়তি সুযোগ সুবিধা।