নির্বাচনে আনতে কাউকে ‘ফোর্স’ করা সম্ভব নয় : সিইসি

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব। তবে কাউকে নির্বাচনে আনতে জোর (ফোর্স) করা কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

গতকাল ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে কর্মরত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপে এসব কথা বলেন সিইসি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করছে ইসি। এর অংশ হিসেবে গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে কর্মরত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে ইসি সংলাপের আয়োজন করে। চার নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।

সংলাপে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, সেটা জোর (ফোর্স) করা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কমিশনের দায়িত্ব থাকবে সবাইকে নির্বাচনে অংশ নিতে আহ্বান জানানো। সব দল নির্বাচনে অংশ না নিলে তা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না। গণতন্ত্র বিকশিত হবে না।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, আপনারা বিদগ্ধজন। সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে আপনাদের পরামর্শ কাজে লাগবে। আমরা চাই, আস্থার সংকট থাকলে তা কাটিয়ে উঠে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক। আপনাদের পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী কর্মকৌশল ঠিক করব। একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। ইসি যে সংলাপ করছে, তা অর্থহীন নয়।

সংলাপে অংশ নেয়া ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তাদের

মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন। রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে আনার ক্ষেত্রে ইসির ভূমিকা নিয়ে আজকের সংলাপে দুই ধরনের মত উঠে আসে।

কেউ কেউ বলেন, সব দলকে নির্বাচনে আনতে সচেষ্ট হতে হবে। আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আস্থার সংকট ইসির মূল চ্যালেঞ্জ।

তবে কেউ কেউ বলেছেন, কোন দল নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, সেটা সেই দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এখানে ইসির কিছু করণীয় নেই।

বিগত নির্বাচনের সময় বিভিন্ন কেন্দ্রে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখাসহ নানা অনিয়মের কথাও তোলা হয় সংলাপে। এমন প্রেক্ষাপটে সবার জন্য আস্থার পরিবেশ তৈরি করা ইসির জন্য জরুরি বলে মন্তব্য করেন অনেকে।

ইসি সূত্র জানায়, এ ধাপের সংলাপে দেশের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, হেড অব নিউজ, প্রধান বার্তা সম্পাদক, বার্তা সম্পাদকসহ ৩৯ জন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সংলাপে উপস্থিত হন ২৬ জন।

সংবাদ সংস্থা ও অনলাইন সংবাদপত্রের মধ্যে বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজী খালিদী, জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে এম জিয়াউল হক এবং বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ মাসুদ কামাল সংলাপে অংশ নেন।

টেলিভিশনগুলোর মধ্যে ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক ও সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম, একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, গ্লোবাল টিভির এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, একুশে টিভির হেড অব নিউজ রাশেদ চৌধুরী, আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমান এবং যমুনা টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন, নিউজ ২৪-এর নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা, স্পাইস টিভির এডিটোরিয়াল হেড তুষার আবদুল্লাহ, চ্যানেল আইয়ের প্রধান বার্তা সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান, এনটিভির বার্তা প্রধান জহিরুল আলম, বাংলাভিশনের হেড অব নিউজ আবদুল হাই সিদ্দিক, মাই টিভির হেড অব নিউজ শেখ নাজমুল হক সৈকত, সময় টিভির হেড অব নিউজ মুজতবা দানিশ, ইনডিপেনডেন্ট টিভির চিফ নিউজ এডিটর আশিস সৈকত, মাছরাঙ্গা টিভির হেড অব নিউজ রেজোয়ানুল হক রাজা, চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন, নাগরিক টিভির হেড অব নিউজ দীপ আজাদ, দেশ টিভির চিফ নিউজ এডিটর বোরহানুল হক সম্রাট সংলাপে অংশ নেন।

এছাড়া জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ও মোস্তফা ফিরোজও অংশ নেন সংলাপে।

ইসি বলছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য পরামর্শ নিতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে তারা সংলাপ করছে। সংলাপে আসা সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে নিজেদের কর্মপন্থা ঠিক করবে ইসি। এরপর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করা হবে।

এর আগে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন গত ১৩ মার্চ প্রথম দফায় ৩০ শিক্ষাবিদকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তাতে ১৭ জনই সাড়া দেননি। দ্বিতীয় দফার সংলাপে ৪০ বিশিষ্ট নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হলেও পরে একজনকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। ওই পর্যায়ে ৩৯ বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে সংলাপে অংশ নেন ১৯ জন।

এরপর তৃতীয় দফায় জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপে ২৩ সম্পাদকসহ ৩৪ সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। এরমধ্যে ২৩ জন সংলাপে অংশ নিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২ , ০৬ বৈশাখ ১৪২৮ ১৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

নির্বাচনে আনতে কাউকে ‘ফোর্স’ করা সম্ভব নয় : সিইসি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব। তবে কাউকে নির্বাচনে আনতে জোর (ফোর্স) করা কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

গতকাল ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে কর্মরত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপে এসব কথা বলেন সিইসি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করছে ইসি। এর অংশ হিসেবে গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে কর্মরত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে ইসি সংলাপের আয়োজন করে। চার নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।

সংলাপে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, সেটা জোর (ফোর্স) করা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কমিশনের দায়িত্ব থাকবে সবাইকে নির্বাচনে অংশ নিতে আহ্বান জানানো। সব দল নির্বাচনে অংশ না নিলে তা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না। গণতন্ত্র বিকশিত হবে না।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, আপনারা বিদগ্ধজন। সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে আপনাদের পরামর্শ কাজে লাগবে। আমরা চাই, আস্থার সংকট থাকলে তা কাটিয়ে উঠে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক। আপনাদের পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী কর্মকৌশল ঠিক করব। একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। ইসি যে সংলাপ করছে, তা অর্থহীন নয়।

সংলাপে অংশ নেয়া ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তাদের

মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন। রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে আনার ক্ষেত্রে ইসির ভূমিকা নিয়ে আজকের সংলাপে দুই ধরনের মত উঠে আসে।

কেউ কেউ বলেন, সব দলকে নির্বাচনে আনতে সচেষ্ট হতে হবে। আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আস্থার সংকট ইসির মূল চ্যালেঞ্জ।

তবে কেউ কেউ বলেছেন, কোন দল নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, সেটা সেই দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এখানে ইসির কিছু করণীয় নেই।

বিগত নির্বাচনের সময় বিভিন্ন কেন্দ্রে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখাসহ নানা অনিয়মের কথাও তোলা হয় সংলাপে। এমন প্রেক্ষাপটে সবার জন্য আস্থার পরিবেশ তৈরি করা ইসির জন্য জরুরি বলে মন্তব্য করেন অনেকে।

ইসি সূত্র জানায়, এ ধাপের সংলাপে দেশের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, হেড অব নিউজ, প্রধান বার্তা সম্পাদক, বার্তা সম্পাদকসহ ৩৯ জন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সংলাপে উপস্থিত হন ২৬ জন।

সংবাদ সংস্থা ও অনলাইন সংবাদপত্রের মধ্যে বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজী খালিদী, জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে এম জিয়াউল হক এবং বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ মাসুদ কামাল সংলাপে অংশ নেন।

টেলিভিশনগুলোর মধ্যে ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক ও সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম, একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, গ্লোবাল টিভির এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, একুশে টিভির হেড অব নিউজ রাশেদ চৌধুরী, আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমান এবং যমুনা টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন, নিউজ ২৪-এর নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা, স্পাইস টিভির এডিটোরিয়াল হেড তুষার আবদুল্লাহ, চ্যানেল আইয়ের প্রধান বার্তা সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান, এনটিভির বার্তা প্রধান জহিরুল আলম, বাংলাভিশনের হেড অব নিউজ আবদুল হাই সিদ্দিক, মাই টিভির হেড অব নিউজ শেখ নাজমুল হক সৈকত, সময় টিভির হেড অব নিউজ মুজতবা দানিশ, ইনডিপেনডেন্ট টিভির চিফ নিউজ এডিটর আশিস সৈকত, মাছরাঙ্গা টিভির হেড অব নিউজ রেজোয়ানুল হক রাজা, চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন, নাগরিক টিভির হেড অব নিউজ দীপ আজাদ, দেশ টিভির চিফ নিউজ এডিটর বোরহানুল হক সম্রাট সংলাপে অংশ নেন।

এছাড়া জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ও মোস্তফা ফিরোজও অংশ নেন সংলাপে।

ইসি বলছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য পরামর্শ নিতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে তারা সংলাপ করছে। সংলাপে আসা সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে নিজেদের কর্মপন্থা ঠিক করবে ইসি। এরপর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করা হবে।

এর আগে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন গত ১৩ মার্চ প্রথম দফায় ৩০ শিক্ষাবিদকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তাতে ১৭ জনই সাড়া দেননি। দ্বিতীয় দফার সংলাপে ৪০ বিশিষ্ট নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হলেও পরে একজনকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। ওই পর্যায়ে ৩৯ বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে সংলাপে অংশ নেন ১৯ জন।

এরপর তৃতীয় দফায় জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপে ২৩ সম্পাদকসহ ৩৪ সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। এরমধ্যে ২৩ জন সংলাপে অংশ নিয়েছিলেন।