হাওরে আর সড়ক নয়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রয়োজনে উড়াল সেতু হবে

দেশের সব হাওরসহ নিচু অঞ্চলসমূহে সাধারণ সড়কের পরিবর্তে উড়াল সড়ক নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বৃষ্টি ও বন্যার পানির অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে এই নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

বৈঠকে ‘হাওর পরিস্থিতি’ নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, মৎস্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী এবং পরিকল্পনামন্ত্রী বৈঠকে কথা বলেছেন। হাওর ও নিচু অঞ্চলগুলোতে বছরে প্রায় পাঁচ হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।

তবে গত ১ থেকে ৬ এপ্রিলের মধ্যেই এক হাজার ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে উল্লেখ করে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওপর থেকে পানি চলে এসেছে। প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। আজও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে কথা বলেছি।’ নতুন করে ভারী বৃষ্টি না হলে হাওর ভালো অবস্থায় থাকবে বলে জানান সচিব।

হাওরে প্রতি বছর ৩০ এপ্রিলের মধ্যে মোটামুটি সব ধান কাটা হয়ে যায় উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘হাওরে এপ্রিলের শেষ থেকে মে’র প্রথমেই পানি চলে আসে, এটা আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। আগামী ৮ থেকে ১০ দিন যদি বৃষ্টি না হয়, আশা করা যায় বড় কোন ক্ষতি হবে না।’

হাওর এলাকায় এখন থেকে কোন রকমের সাধারণ রাস্তাঘাট আর করা যাবে না-জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আজ ক্লিয়ার ইন্সট্রাকশন (সুস্পষ্ট নির্দেশনা) দিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এখন থেকে হাওরে কোন সড়ক হলে সেটি এলিভেটেড (উড়াল) হতে হবে। যেন বৃষ্টি বা বন্যার পানি চলাচলে বাধা না আসে। পারটিকুলারলি এটা দেখতে বলা হয়েছে।’

সম্প্রতি একনেক সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প পাস হয়েছে। সুনামগঞ্জের সেই প্রকল্পেও এলিভেটেড হচ্ছে। শুধু হাওর নয়, নিচু এলাকায় কোন সড়ক হলে সেগুলো অবশ্যই এলিভেটেড সড়ক করতে হবে।

সিলেটের পানি মূলত কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলা হয়ে নামে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এখানে যে রাস্তাটা করা হয়েছে মিঠামইন থেকে অষ্টগ্রাম, সেটাতে কোন ইফেক্ট হলো কি-না, এটাও দেখতে বলা হয়েছে। আমরা নিজেরাও রোডস অ্যান্ড হাইওয়েকে বলেছি, এটা রিভিউ করে প্রতি আধা কিলোমিটার পরপর দেড়শ’ থেকে দুইশ’ মিটার ব্রিজ করে দেয়া যায় কি-না, তা দেখতে। এরইমধ্যে যেসব রাস্তা হয়ে গেছে সেখানেও দেখতে বলা হয়েছে।’

কিশোরগঞ্জ জেলায় হাওরের মাঝখানে ‘ইটনা থেকে মিঠামইন হয়ে অষ্টগ্রাম’ পর্যন্ত ২৯.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর চালু হয়। হাওরের মাঝখানে এই সড়ক এখন আকর্ষণীয় পর্যটনস্থলে পরিণত হয়েছে। শুকনো মৌসুমে হাওরবাসীর চলাচলও সহজ হয়েছে। তবে এই সড়কের কারণে

বর্ষায় পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন পরিবেশবিদরা।

দেশের হাওরাঞ্চলে ‘আর্লি ভ্যারাইটি সোয়িং’ করা যায় কি-না সে বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় চেষ্টা করছে- জানিয়ে সচিব বলেন, ‘যেন এপ্রিল মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের দিকেই ধান কেটে ফেলা যায়।’

মন্ত্রিসভার বরাত দিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, পরিকল্পনামন্ত্রী অনুরোধ করেছেন, ‘হাওর বা নিচু এলাকায় যেসব বাঁধ দেয়া হয়েছে, সেগুলো ফ্রুটফুল কি-না বা কোয়ালিটি ঠিক আছে কি-না, তা যেন খতিয়ে দেখা হয়। এ বর্ষায় তো আর কিছু করা যাবে না। আগামী বর্ষার আগে যেন এটা রিভিউ করে সংস্কার করা হয়।’

দেশের যেসব নদী-নালা ও হাওরে অতিরিক্ত পলি পড়েছে, সেগুলোকে পুনর্খনন করতে আগামী বর্ষার আগেই প্রকল্প গ্রহণ করে কাজ শুরু বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২ , ০৬ বৈশাখ ১৪২৮ ১৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

হাওরে আর সড়ক নয়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রয়োজনে উড়াল সেতু হবে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দেশের সব হাওরসহ নিচু অঞ্চলসমূহে সাধারণ সড়কের পরিবর্তে উড়াল সড়ক নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বৃষ্টি ও বন্যার পানির অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে এই নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

বৈঠকে ‘হাওর পরিস্থিতি’ নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, মৎস্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী এবং পরিকল্পনামন্ত্রী বৈঠকে কথা বলেছেন। হাওর ও নিচু অঞ্চলগুলোতে বছরে প্রায় পাঁচ হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।

তবে গত ১ থেকে ৬ এপ্রিলের মধ্যেই এক হাজার ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে উল্লেখ করে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওপর থেকে পানি চলে এসেছে। প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। আজও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে কথা বলেছি।’ নতুন করে ভারী বৃষ্টি না হলে হাওর ভালো অবস্থায় থাকবে বলে জানান সচিব।

হাওরে প্রতি বছর ৩০ এপ্রিলের মধ্যে মোটামুটি সব ধান কাটা হয়ে যায় উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘হাওরে এপ্রিলের শেষ থেকে মে’র প্রথমেই পানি চলে আসে, এটা আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। আগামী ৮ থেকে ১০ দিন যদি বৃষ্টি না হয়, আশা করা যায় বড় কোন ক্ষতি হবে না।’

হাওর এলাকায় এখন থেকে কোন রকমের সাধারণ রাস্তাঘাট আর করা যাবে না-জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আজ ক্লিয়ার ইন্সট্রাকশন (সুস্পষ্ট নির্দেশনা) দিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এখন থেকে হাওরে কোন সড়ক হলে সেটি এলিভেটেড (উড়াল) হতে হবে। যেন বৃষ্টি বা বন্যার পানি চলাচলে বাধা না আসে। পারটিকুলারলি এটা দেখতে বলা হয়েছে।’

সম্প্রতি একনেক সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প পাস হয়েছে। সুনামগঞ্জের সেই প্রকল্পেও এলিভেটেড হচ্ছে। শুধু হাওর নয়, নিচু এলাকায় কোন সড়ক হলে সেগুলো অবশ্যই এলিভেটেড সড়ক করতে হবে।

সিলেটের পানি মূলত কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলা হয়ে নামে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এখানে যে রাস্তাটা করা হয়েছে মিঠামইন থেকে অষ্টগ্রাম, সেটাতে কোন ইফেক্ট হলো কি-না, এটাও দেখতে বলা হয়েছে। আমরা নিজেরাও রোডস অ্যান্ড হাইওয়েকে বলেছি, এটা রিভিউ করে প্রতি আধা কিলোমিটার পরপর দেড়শ’ থেকে দুইশ’ মিটার ব্রিজ করে দেয়া যায় কি-না, তা দেখতে। এরইমধ্যে যেসব রাস্তা হয়ে গেছে সেখানেও দেখতে বলা হয়েছে।’

কিশোরগঞ্জ জেলায় হাওরের মাঝখানে ‘ইটনা থেকে মিঠামইন হয়ে অষ্টগ্রাম’ পর্যন্ত ২৯.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর চালু হয়। হাওরের মাঝখানে এই সড়ক এখন আকর্ষণীয় পর্যটনস্থলে পরিণত হয়েছে। শুকনো মৌসুমে হাওরবাসীর চলাচলও সহজ হয়েছে। তবে এই সড়কের কারণে

বর্ষায় পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন পরিবেশবিদরা।

দেশের হাওরাঞ্চলে ‘আর্লি ভ্যারাইটি সোয়িং’ করা যায় কি-না সে বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় চেষ্টা করছে- জানিয়ে সচিব বলেন, ‘যেন এপ্রিল মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের দিকেই ধান কেটে ফেলা যায়।’

মন্ত্রিসভার বরাত দিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, পরিকল্পনামন্ত্রী অনুরোধ করেছেন, ‘হাওর বা নিচু এলাকায় যেসব বাঁধ দেয়া হয়েছে, সেগুলো ফ্রুটফুল কি-না বা কোয়ালিটি ঠিক আছে কি-না, তা যেন খতিয়ে দেখা হয়। এ বর্ষায় তো আর কিছু করা যাবে না। আগামী বর্ষার আগে যেন এটা রিভিউ করে সংস্কার করা হয়।’

দেশের যেসব নদী-নালা ও হাওরে অতিরিক্ত পলি পড়েছে, সেগুলোকে পুনর্খনন করতে আগামী বর্ষার আগেই প্রকল্প গ্রহণ করে কাজ শুরু বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।